<p>১৬ মার্চ, ২০১৮। রাত সাড়ে ৩টা। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের প্রধান কার্যালয়। বাংলাদেশ থেকে আসা পর্যটক শামীমা বসে আছেন একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার সামনে। তাঁর বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন তিনি।</p> <p>আপনি কেন মালয়েশিয়ায় এলেন? জবাবে শামীমা বলেন, ভ্রমণে এসেছি। দেখতে এসেছি। কেন দেখতে এসেছেন? আমার স্বামী মালয়েশিয়া থাকেন, চাকরি করেন, তাই এসেছি। শামীমার উত্তরে ভ্রু কোঁচকান ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা।</p> <p><img alt="" src="data:image/png;base64,iVBORw0KGgoAAAANSUhEUgAAAHsAAADCCAIAAADmYCqVAAANsklEQVR4nO2dUa60KBCF2cGsRtYDmzGyFUJcisbHWYWJvYCZBxAKKJS2bRu9mMrkzx0b9RMB4XiK/Fe3azfy6xP4c1slfvVWiV+9lU78X/LPvWL3iirxStzffk6wEi89dq+oEq/EwfZzfKfj/q8S/zHxeXnVOCUq8Ur86VGJV+JPj0q8En96VOKV+NOjEn8vpOor8WuJcy7vQ3xqOW0oIYQ0lGYF0dv2bu8USGNe+qz2T0P/VnLz73YsnfjUUoOvVdOguKFJhRynYTOSOyi+/vy1XYIfyOkld1aiIVyuh2t4P3SU8D5VTknEFSeEEAKq2Ni3nDNKGyoG/94M47R7/2THGSXE/nachni3sZeql0fRzMtrHkUDz1mJVnHCP2rKryFuKjhT6FX1jPeal35m9dZwEUMcxp5Rtw8g3kuFHHHdjR/kHhBfetmJ5g7EewbphJdECCFNN63Eaat6qYRXhfWNsRApZcq0KusOU9s5EENnd9W8pjajxxsUNw03F+YOhcRfkpM71HHF0QpuW3ONO76eoaP6V0Nn231QWz3ir6ETEvzQ3py1i+vZJinJ3U8a+8ObEh86SkhYxQbTshOmXKsNr2dYXvMoWDeZR4SQZm18UOLrzvrf5ifEDU6mFhmo2Fj3tzVj7Bnl8sbE4ybFtif2EXbXY66fcW4grreHwGFZQHx5SU7hoM3vgTeJrycDH7h5FIzzuxJ3lxHciRWkrunmetz1u6sdVC87wSh4LCLi8yiwEfd6e6LnDMbaaXt9rOSEPIm422HsGaVMuesZlGCg7nux7owQN3eRtso7nOkwdknFo9LoPt2D+Ky4IT72UiXRD51gudczSc7bDiE+g0dHDzxI9Li8ETdtx+elZ90UDATR2L6eoeMNpXY4LHlixKkfETAeb1KPS86Z35P4a+h4q/aJz+PG+4UdTqzd4yii99UgpgF9F30jwv72NsRnUEO3GaWnQ8HMzFphB7Vd2gkBh/mz7hLuQvyMmD6dJykg7kX8CVGJV+JPj0q8Ej8a+sWHpd+wConbEx9U33LOOCWENN3XB4t/mrhbLIUb5XJ/0a4SP4DbTJ5QpsxbpdSvKuMkO86wFbtC4qbE9Ru/NxvurUgs06D6D4Ulf5O4NysCJgB6hs3PSE7xxeuSomzio2gBQU8Phc5vjKIhpUMvhfigBNPaKM7degJYDJOetsJMfDemMXf6KTgznlZshb9KCri+MIdTAnGnLQE4xGCI01ZNUiuhVj2UVNMw9i0lTMWiLcEIIYS3mMaq5evso5rg2l6rfBUYJx8Kr4omji0wTq0Rq/TMdo+hHmpqKSo5Wu9fPHVudWHgQGY4TynodU+YBC+ZuFtnYE61sjYOnWBAcOLrobaIN13f0qBr3dSFLZPklEBp2HOJT61pMfvWiFepraGSc0bdENAHkSLeM401WBTWbQiuC1vVXmvD/WziIBRvggZBcTjoziFudHQjQO+Kwu6Qbc3BzfgjxLH2V/ecucQn+HyszYtpWFBd2GxleP5a4N8grh/t8KkHPecmcbB4b/ePiCNNils7ZWAW7G8QX17BG+YbxF3LAMch3ntpWqUEJbviL/Scm5HZqoyiiadq/T5gVxemp8Aa02NX4tvEERXn1FKfWp4ubB4F430lvktcz8A4KXNLoY5ZR9+mdGHmj9Q+MYxW4rvEl9c8TnL9ao1hi0FaF8Yi4m66xkrXO/pXiWsRs1Ng+fOF4bc/GaWhurB1jAju34Y07OnEr4oP5YmVeMFRiVfiT49KvBJ/etyTOFgh+/3JPJu4+3gZbF9aAq7E9RuQkHAVWPUtp/ufF5UUtyLeiTZlkKIECxc2C407EYfyFT2f3VAgblmmlpYuDyqX+Ma0xqB9ajrOONeiImCAsPu94e+jVOJvGIBN0q/mhx2snkQ8w/2L0obQhlNoALY2Hbth99RDF/3fN5VveYf7/BuM6+r4kKc6CwzApELEbGkDM62YSCrfVrMx2iaKzXFBuw1xXdmzVGe7BmBjvz40wUjc16gsmPLNX+XIOefQBe1WxMFlbKnOtgzAzNcRQD8FEAfEMeVbSHwalGBQ0GsPlHJBux/xDNWZ9xfw8b3GHa6Zud/6xFHlmyM+Sf8N1t3jHRe0exHPU52Bv0zBpxGEeH6aW8RR5ZshDuz5KLAiy3NBuw/xbNUZ+EvfdoiA33LcII4r37zXKD32gOaAeS5otyGerTpzf/G+p3KObQnDvoh42hHNM+aDLVWeC9pdiL8yVWewjrPAYs83/N0mjs60AP2tuwew8clyQbsPcXudW6oz+BfJtz5GPkDcf019BepG/yS3XNDuRtxcEq468/5iNVOct6qXLqZwz6jnzFK+7cwNbLmg3ZD4gqvOwnswek5jcIzcbhDfUL75EVhTzu+4oN2QOKY6w7WW4zTo2u3ev3tf0Rm+c6aUb/Fdb71B5AEXtFsRj1Vn7xiA+RbAIbt8RzTkM61vuKAVQrzA+JYLWiV+dVTilfjToxL/k8TvYir2GOLmS/rC1+CfRbxgW6tHEl9Nxf5GFEHcnwR/eFxDPPyuKZZcbZuKnfXl2fe+YCuMeDTXgUiuNk3FPs/ReG45BRHfNRjbkFytOyRzNAb753qMReUguR7HHNWYf3pH/cxOJL5vMDaMk9ySXGGmYon9Q6XVGbke4UFZlyr2Uz+z04jnGowtG5KrhKlYvD/iMYbF4VyPo2CUtsm5w4/8zM4inm8w9kpLrlKmYognGUl6jKWJ5+V6BJm49AUhci17Jgf8zM4i/obBWPrkEqZi6LJnnO3qpFyPoM8wvx0Ub+O7e9TP7LRWxcWewVjq5JKmYqEoDlFanZnrcdWrwKdBdrGULmwAf0V832AMO7ktU7Fgf0xpdXqux6D38+chPvMzO5t4hsFYSHDPVAwhjog312HSR7keJxlNqBmFrV8/PvEz+0Krsmcw5p1chqlYTBzzwY5HSkdyPeJZ+JBV/ON+Zt8gHlf8dKuSYSqWQ3xezsr16BooQnQnfLKf2a+J55iKRT1nntLqaM85TlIJRune0NA7UL6f2c+J55iKhVK3TKXV57kedapWNI/8YT+zAogv+6ZiUY7xPKXVWbkezcgnOiXTd7znZ3YJcd9gbH4/52K8f57S6sxcj0FRh/3MLiL+jJChEO6In1klfnVU4pX406MSr8SfHpX4o4mvuTR5e+B7g/tnEb+U+Oe5NMMXkNvGFcTjXJom3sqlqTghlHEhvQ8M9yazyosLiGO5NL3IzaWJPyhwOukOcRHxc33xPJWI6u0M9Qkln/RB22+JJ3JpnhpDF8msflrOr4g7aRnBcmlu2Yy95yvm2pdcGZuddNQz4KsuDohV9s7z6FP79TpuvyzGcmlC5RjuEBar3YwxAuorllLEATnc7ERxWixGCCEN53oGXy9by8yiyiRuKrvLluQJE3aWCDC1m+Tv9wrR8pv+o15aW0vrGRf77kxoUUUTX7wEJ0HCmSH6FUHEQB7xYcyYpI4w+R7Pq4uhEvseE3ck3qKyCLNsuJ9RExB3al7fj2ZPDmddgsDG1GvteNwRc5R15RP3FGXaRcPzZNtUu/nEodLBUMiRw7nukYvgnkH5Uaay7gbE4QgMSvGZcahZ9ZWor5jfqkgwtLCCRa/W43K4SXL7rjvJjtvlbEA8V1l3A+Ja3QEuHjyzy2tWwg3UsCY16jmNJZ9c3pDDpcId9OOiSiK++Z2VtfPZ8BXzek5dzaHZDza8QR+XLeIfF1UW8fU7Kx+okQcJ+4DvEh/s8NErZ18Ol0P8w6IKI75YvQdlnDPO2Sqr3PUVMzJzK1TLsf3NbnxTTdmBosojvsR+Y0GtT6ndoAFq5jRIKIc7Tjy7qCKJ64sck9PcW2q396zAYz3pYeK5Rf2W+JFcmhZ6jtoto5zMJSREtH+0qN8Sr1GJV+J/JSrxSvzpUYlX4vtxQlKeSvydiPxx7hU3JL70jFLWAVlWJ8zkjBY1lm3kd0fiaQN4b4rm1yf5KOImpqRhz9hD74ISDMmeQXzrZkAPxRIMycohPrlEyRkGY/hunQh9xUDzAgzJkmVuK8XONdT9LXGQPEBNcJmYhZIokwZSKlSN1Rvn21il1dHAkCzOIskSCq8TM0QWQzxaMxtMOl8aJXQMUuRNvjAo9GPxj4IZku14m52cIbIQ4psGY6Nou2kebUINRxwILqyLT0TcW5+MDcmSh/5ShshCiMP8ddj9WNv31b+PMBU44OjUmr1PfJK2ucCz7aWySH4xQ2QZxPFUjqENaMNFyynrxFrHrXDHtkW9VJA4KtQKctyGh/52hsgiiOOSKyU8rKgibhSMBwvKXqsCdV4t5osXHfrrGSKLIY5cD1ynh/83SqAc/cpvx40hK1rHkUN/OUNkKcQTdleobc97xBGhlk88PvRXM0SWTRyPd4ibCks9Peke8eCWn5shsgjibxiM7RPXqmguVd/ySNuF9Zx7hz45Q2QZxJee5RqM7RP3DAijicM4Ozyq9vpehshCiBvJ1UnEX+ZLXKzOxl8bYWqvL2aILIX4/Jbk6qiqa04YkkWH/mKGyIKIFxbfyhBZif8yKvFK/OlRiVfiT49KvBJ/elTilfjToxKvxJ8elXgl/vSoxCvxp0cu8Xj7l/xzo9i+lkK2SvzqbYv4zwk+D/d/lfj1WyV+9VaJX73t9Jx1O32rxK/eKvGrt0r86u1/exIruwBqXooAAAAASUVORK5CYIIA" style="float:left" />পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনার কাছে টাকা (রিংগিত) আছে? শামীমার উত্তর, আছে। কত রিংগিত আছে দেখান। শামীমা হাতব্যাগ থেকে রিংগিত বের করে দেখান। সন্তুষ্ট হতে পারেন না ওই কর্মকর্তা। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শামীমা কাকুতি-মিনতি করেন, তাঁর স্বামী মালয়েশিয়া থাকেন। তিনিই তাঁর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কর্ণপাত না করে একটি নোট দিয়ে শামীমার পাসপোর্ট পেছনের টেবিলে পাঠিয়ে দেন। আধাঘণ্টা পর শামীমাকে আরেকজন কর্মকর্তা ডেকে পাঠান। একপর্যায়ে শামীমাকে নিয়ে যাওয়া হলো অন্য জায়গায়। পরে তাঁর ব্যাগ, মোবাইল ফোনসেট রেখে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আটক কেন্দ্রে (ডিটেনশন সেন্টার)। কাঁদতে কাঁদতে শামীমা চলে যান সেখানে।</p> <p>ইমিগ্রেশন থেকে আটক কেন্দ্রে নেওয়ার সময় শামীমা কালের কণ্ঠকে বললেন, এর আগেও তিনি একাধিকবার এসেছেন। স্বামীর সঙ্গে কয়েক দিন থেকে আবার ফিরে গেছেন দেশে। এবার কী কারণে তাঁকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না তিনি বুঝে উঠতে পারছেন না। আগে কখনো এমন হয়রানির শিকার হননি তিনি।</p> <p>শুধু শামীমা নন, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়া আসা পর্যটকদের এভাবে প্রতিদিন কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হয়রানি করা হচ্ছে। ভ্রমণ ভিসা নিয়ে যারা মালয়েশিয়া যায়, বিমানবন্দরে তাদের অপ্রত্যাশিত বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। আধাঘণ্টা থেকে চার-পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয় ইমিগ্রেশনে। অনেককে হয়রানির চূড়ান্ত করে প্রবেশের অনুমতি দিলেও অনেককে আটকে রাখা হয়।</p> <p>সরেজমিন কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে গত ১৬ মার্চ দেখা যায়, বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট অবতরণ করে রাত ৩টায়। সাড়ে ৩টার দিকে সারি বেঁধে যাত্রীরা ইমিগ্রেশনের কাউন্টারের সামনে দাঁড়ায়। যারা ভ্রমণ ভিসা নিয়ে গেছে তাদের কাউন্টার থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বিশেষ কাউন্টারে। সেখানে দু-তিনজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা কম্পিউটারের সামনে বসা। একটি ঝুড়িতে যাত্রীরা পাসপোর্ট জমা দিচ্ছে। আর একজন একজন করে নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। যাত্রীরা কর্মকর্তার সামনে গেলে তাঁকে অপ্রত্যাশিত জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে।</p> <p>ঢাকার সায়েদাবাদের আলী হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় দেখা গেছে, তিনি ঘেমে একাকার। তাঁর ভিসা বৈধ এবং সঙ্গে যথেষ্ট টাকা রয়েছে। হোটেল বুকিং রয়েছে। কিন্তু তাঁকেও মালয়েশিয়া প্রবেশের অনুমতি না দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় আটক কেন্দ্রে। আলী হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, ৯ দিন পর ফিরে আসবেন বলে তিনি ফিরতি টিকিট করেছেন। কিন্তু হোটেল বুকিং এক দিন বেশি দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।</p> <p>আলী হোসেন জানান, ভুলক্রমে এক দিন বেশি বুকিং দেওয়া হয়েছিল। এটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। যেভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন তিনি, তা জীবনেও ভুলবেন না।</p> <p>মোমিনুর রহমান নামের সাতক্ষীরার আরেকজন জানান, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ান দূতাবাস তাঁকে ভিসা দিয়েছে। তাঁর পাসপোর্টে সামান্য পানি লেগেছিল ভিসা দেওয়ার আগে। সেটা দেখেশুনেই ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। কিন্তু ইমিগ্রেশন তাঁকে মালেয়েশিয়া প্রবেশের ছাড়পত্র দেয়নি।</p> <p>মোমিনুর জানান, তাঁকে ইমিগ্রেশনে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। একাধিক কর্মকর্তা বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। বাংলাদেশ থেকে যত পর্যটক গেছে, সবাইকেই এভাবে হেনস্তা করা হয়। একই দিনে এক ফ্লাইটের ১৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটকে রাখা হয়। আর যাদের মালয়েশিয়া প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়, তাদের ব্যাপক হয়রানি করা হয়।</p> <p>এক বছর আগে থেকে মালয়েশিয়া বিমানবন্দরে বাংলাদেশিদের এমন হয়রানি শুরু হয়। সরকারি সফরে গিয়ে গত বছর হেনস্তার শিকার হয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের একাধিক যুগ্ম সচিবসহ ১২ সরকারি কর্মকর্তা। সফররত সবার সরকারি পাসপোর্ট। কিন্তু কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে তাঁদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, ইমিগ্রেশনে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহারও করা হয়েছিল তাঁদের সঙ্গে। গত বছর ২০ এপ্রিল পদ্মা বহুমুখী সেতুর পরামর্শক প্রকৌশলী আবদুল মজিদকেও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।</p> <p>বাংলাদেশি যাত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করলে একজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা বলেন, ‘নো টক (কথা নয়)।’</p> <p>মালয়েশিয়া যাতায়াতকারী অনেকের সঙ্গে কথা হয় বিমানে। প্রায় সবাই জানায়, যেকোনো সময়ের চেয়ে মালয়েশিয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশিদের প্রবেশ অনেক বেশি কঠিন। কেউ কেউ প্রবেশ করলেও যথেষ্ট হেনস্তা হতে হচ্ছে। প্রতিদিন যে কয়টি বিমানের ফ্লাইট মালয়েশিয়া যায়, এর মধ্যে গড়ে ৫০ জনের বেশি বাংলাদেশিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। আর হয়রানির শিকার হতে হয় শতভাগ যাত্রীকে। এ নিয়ে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো ভূমিকা নেই বলেও যাত্রীরা এ প্রতিবেদককে জানায়।</p> <p>আগে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা কোনো যাত্রীকে সন্দেহ করলে তাকে ফেরত পাঠাতেন। বর্তমানে তা না করে ডিটেনশন সেন্টারে আটক রেখে হয়রানি করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে এ প্রতিবেদক ওই দৃশ্য দেখে এসেছেন। কোনো কোনো ফ্লাইটের ৯০ শতাংশ যাত্রীকেও ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হচ্ছে। পরে ফেরত পাঠানো হয়। আর ডিটেনশন সেন্টারে চলে অমানবিক নির্যাতন।</p> <p>হেনস্তার শিকার যাত্রীরা অভিযোগ করে, বৈধ ভিসা, হোটেল বুকিংয়ের কাগজপত্র, পর্যাপ্ত ডলার থাকার পরও ইমিগ্রেশনে এভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।</p> <p>গেস্টহাউসের নামে ডিটেনশন সেন্টারে অমানুষিক নির্যাতন : কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরের একটি বদ্ধ ঘরের এক কোণে মেঝেতে শুয়ে আছেন ২৫ বছরের এক যুবক। বালিশ নেই, বিছানা নেই। শার্ট-প্যান্ট পরা এ যুবককে ডাক দিতেই উঠে দাঁড়ান। নাম মো. শহীদুল। নাটোর জেলার নলডাঙ্গা থানার খাজুরা গ্রামে তাঁর বাড়ি। জানালেন, চাকরি নিয়ে সাত দিন আগে মালয়েশিয়া কলিং ভিসায় এসেছেন তিনি। কিন্তু তাঁকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পাঠানো হয়েছে এই বদ্ধ কক্ষে। এটিই ডিটেনশন সেন্টার। বাড়ির সঙ্গে বা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগও করতে পারছেন না।</p> <p>শহীদুল জানান, চাকরি করতে আসায় তাঁর ফিরতি ফ্লাইট নেই। তাই তাঁর দেশে ফেরা অনিশ্চিত। যদি কেউ নতুন করে বিমানে টিকিট করে দেয়, তাহলেই কেবল তাঁকে ছাড়া হবে। তাঁর কাছে টাকা-পয়সা কিছু নেই। তাই তাঁকে খাবারও দেওয়া হয় না। বাংলাদেশি যারা এই সেন্টারে আসে তাদের মধ্যে যারা টাকা দেয়, তাদের খাবার দেওয়া হয়। ওই খাবার ভাগজোক করে তারা খায়। দুই দিন তিনি শুধু পানি খেয়ে আছেন।</p> <p>কাকুতি জানিয়ে শহীদুল বলেন, ‘আমাকে বের করে নেন ভাই। বাড়ি গিয়ে জমাজমি যা আছে বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করে দেব।’</p> <p>মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন কোনো যাত্রীকে সে দেশে প্রবেশে অনুমতি না দিলে তাকে এই ডিটেনশন সেন্টারে নেওয়া হয়। যদিও মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ এই কেন্দ্রের নাম দিয়েছে ‘মানসম্মত অতিথিশালা’। এই অতিথিশালা গত ১৬ মার্চ পরিদর্শন করেন এই প্রতিবেদক।</p> <p>ওই কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ এটাকে অতিথিশালা নাম দিলেও মূলত এটি ডিটেনশন সেন্টার। এখানে চলে অমানুষিক নির্যাতন। ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকে যাদের এখানে আনা হয়, প্রথমেই তাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয় মোবাইল ফোন। এরপর হাতব্যাগসহ অন্য মালামালও নিয়ে নেওয়া হয়। পায়ের জুতা খুলে রেখে দেওয়া হয়। খালি পায়ে ডিটেনশন সেন্টারে ঢোকানো হয়। এরপর আটকে রাখা হয়। ওই সেন্টারে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, সুদান, ইরাকের নাগরিক রয়েছে। তবে পর্যটকদের মধ্যে সবাই বাংলাদেশি।</p> <p>এক হাজার বর্গফুটের কক্ষে দেড় শতাধিক আটক ব্যক্তি : ডিটেনশন সেন্টারটি আনুমানিক এক হাজার বর্গফুট হবে। সেখানে আটকে রাখা হয়েছে দেড় শতাধিক যাত্রীকে। মাঝেমধ্যে ২০০-৩০০ যাত্রীকেও সেখানে আটকে রাখা হয়। সেখানে আটক ব্যক্তিদের ঘুমানোর জন্য কোনো বিছানা-বালিশ নেই। ৩০-৪০টি চেয়ার আছে। কেউ চেয়ারে বসে ঘুমায়, কেউ মেঝেতে ঘুমায়। অনেক সময় শুয়ে-বসে কাটানোর জায়গাও থাকে না। প্রতিদিন নতুন নতুন যাত্রীকে এই সেন্টারে নেওয়া হয়।</p> <p>খাবার পর্যাপ্ত নেই : ডিটেনশন সেন্টারে যারা থাকে, তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেওয়া হয় না। যারা খাবারের টাকা পরিশোধ করতে পারে, তাদেরই কেবল খাবার দেওয়া হয়। প্রতিবার খাবার বাবদ ২০ রিংগিত পরিশোধ করতে হয়। টাকা নেওয়া হয় ইমিগ্রেশন থেকে যখন এ কেন্দ্রে নেওয়া হয় তখনই। খাবারের টাকা যারা দিতে পারে না, তাদের না খাইয়ে রাখা হয়।</p> <p>সারা দিন চলে মানসিক নির্যাতন : ওই সেন্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তারা দিনভর আসেন। গালাগাল করেন। কখনো দাঁড় করিয়ে রাখেন। আবার সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কখনো কখনো কক্ষ ঝাড়ু দিতে বলা হয়। ওই সেন্টারে গত ১৭ মার্চ ৫০ জনের বেশি আটক বাংলাদেশি পুরুষ-নারীকে দেখতে পেয়েছেন এই প্রতিবেদক। তাঁরা সবাই জানায়, এমন মানবেতর জীবন যাপন করলেও বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।</p>