<p>আন্তর্জাতিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও দিনে দিনে আত্মপ্রকাশ ঘটছে কৃষিসংশ্লিষ্ট নানা শিল্প খাতের। একই সঙ্গে এসব শিল্পে বাড়ছে নানামুখী আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। আসছে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। বাড়ছে সম্ভাবনা। এমনই বাস্তবতায় রাজধানী ঢাকায় বসেছে আন্তর্জাতিক কৃষি শিল্প প্রদর্শনী—অষ্টম অ্যাগ্রোটেক বাংলাদেশ-২০১৮। এতে অংশ নিয়েছে ২০টি দেশের প্রায় ৬০০ প্রতিষ্ঠান।</p> <p>ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) গতকাল বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া এই প্রদর্শনীকে বলা যায় শিল্প-প্রযুক্তির এক বিশাল আয়োজন। আইসিসিবির চারটি হলে ৬৫২টি স্টলে প্রদর্শন করা হচ্ছে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব কৃষিসংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি। তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। কোনো প্রবেশ ফি ছাড়াই মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকছে।</p> <p>কৃষি উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী সব ধরনের পণ্য এক ছাদের নিচে প্রদর্শনের এই আয়োজন করেছে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং লিমরা ট্রেড ফেয়ারস অ্যান্ড এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেড। আয়োজকরা জানান, আন্তর্জাতিক কৃষি শিল্প প্রদর্শনীতে চারটি হলে প্রদর্শন করা হচ্ছে চেনা-অচেনা বিপুলসংখ্যক প্রযুক্তি-পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে অটো ও সেমি অটো রাইস মিল, ফিড মিল, সুজি ও ফ্লাওয়ার মিল, অয়েল মিল ও ডাল মিল, কোল্ড স্টোরেজ মেশিন টেকনোলজি, বেকারি আইটেম ও কোমল পানীয় তৈরির মেশিনারি, চা ও কফি প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং মেশিনারি, ইংকজেট প্রিন্টার, বার কোড প্রযুক্তি, মিট প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং মেশিনারি, গুদামজাতকরণ প্রযুক্তি, কৃষি যন্ত্রপাতি, ডেইরি মিল্কিং মেশিন, কুলিং ট্যাংক, দুধ প্রক্রিয়াজাত ও মোড়কজাতকরণ  যন্ত্রপাতি, গবাদি পশু-পাখি ও মাছের খাদ্য উৎপাদন, পুষ্টি, বর্জ্য পানি শোধন প্রক্রিয়া, পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া, পানি বোতলজাতকরণ প্রক্রিয়া, সেচ প্রকল্প, পানির পাম্প ও ফিল্টার, পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, কেমিক্যাল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ।</p> <p>দেশের সর্ববৃহৎ এই কৃষি শিল্প প্রদর্শনীতে আরো রয়েছে কালার সর্টার মেশিন, সাইলো, বয়লার, পার-বয়েলিং মেশিন, রাবার রোলার, ড্রায়ার, কুলার, সিড ক্লিনিং, বেকারি মেশিনারি, ল্যাব সরঞ্জাম, হার্ডওয়্যার ও টুলস, পরিমাপ যন্ত্র, জেনারেটর, পাওয়ার স্টেশন, ধানের তুষ থেকে ভোজ্য তেল ও বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রযুক্তি, ধান রোপণ ও কাটার মেশিন, ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার, পরিবেশবান্ধব অটো ব্রিকস তৈরি প্রযুক্তি ইত্যাদি।</p> <p>মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠান আইকন ইন্টারন্যাশনালের প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘একটি চালকল তৈরি করতে যে ধরনের যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তার সবই আমাদের কাছে রয়েছে। বয়লার, পার বয়েলিং, ড্রায়ার, মিলিং মেশিনারি ১১টি, চাল বাছাইয়ের জন্য কালার সর্টারস সব কিছুই রয়েছে।’ মেলার প্রথম দিনেই ক্রেতা-দর্শনার্থীর উপস্থিতি বেশ ভালো বলে উল্লেখ করেন তিনি।</p> <p>কৃষকদের শস্য বীমা সুবিধা দিতে মেলায় অংশ নিয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স কম্পানি লিমিটেড। এটি আবহাওয়া সূচকভিত্তিক শস্য বীমা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট তানভির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণরূপে অ্যাগ্রিকালচার বীমা কম্পানি। আমাদের দেশের গরিব কৃষকদের জন্য আমরাই বীমা ব্যবস্থা চালু করেছি। আবহাওয়ার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আমাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ সুবিধা নিয়ে সেই কৃষক বা উদ্যোক্তা নতুন করে উৎপাদনে যেতে পারবেন। এ ছাড়া আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও ফসলের ব্যাপারে কৃষকদের বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে থাকি। দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে একজন কৃষক মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ফসলের ব্যাপারে করণীয় জানতে আমাদের সহযোগিতা নিতে পারবেন।’</p> <p>মোনাজ এয়ার টেকনোলজির এক্সিকিউটিভ শায়লা আক্তার জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এয়ার কম্প্রেসার প্রদর্শন করা হচ্ছে। মেলা উপলক্ষে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে পণ্যটি।</p> <p>মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান লিমরা ট্রেড ফেয়ারস অ্যান্ড এক্সিবিশনস প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী সারওয়ার উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘২০টি দেশের প্রায় ৬০০ প্রতিষ্ঠান এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। ভারত, ইতালি, ভিয়েতনাম, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, চায়না, রাশিয়াসহ বিশ্বের অনেক খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান মেলায় এসেছে। একজন উদ্যোক্তা একটি মিল স্থাপন করতে গেলে তাকে বিদেশে ঘুরে ঘুরে মেশিন বা কল-কারখানা কিনতে হয়। এই মেলায় উদ্যোক্তারা বিনা খরচে ঘুরে ঘুরে যন্ত্রপাতি দেখতে পারবে। প্রয়োজনীয় সব কিছু কিনতেও পারবে। আশা করছি, ভবিষ্যতেও এ ধরনের কাজ অব্যাহত থাকবে।’</p>