<p>চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গাজী শাহজাহান জুয়েল এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী আব্দুল্লাহ আল হাসানকে বিএনপির সব পর্যায়ের পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগের পরিপ্র্রেক্ষিতে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। তাঁরা এখন থেকে দলের কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে থাকতে পারবেন না।</p> <p>গতকাল বুধবার বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীমকে তাঁর দায়িত্ব যথাযথভাবে ও সতর্কতার সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কর্মিসভায় সংঘর্ষের কারণে ওই দুই নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার রাতে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে চট্টগ্রামের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি নেতাদের শাসিয়েছিলেন। ওই বৈঠকেই এ দুই নেতাকে বহিষ্কার, সাংগঠনিক সম্পাদককে সতর্ক এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ভর্ত্সনার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিতে বলেছিলেন।</p> <p>তবে গাজী শাহজাহান জুয়েল ও কাজী আব্দুল্লাহ আল হাসান কী ধরনের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডবিরোধী কাজে জড়িত ছিলেন, তা বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।</p> <p>দুই শীর্ষ নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি ও কেন্দ্রীয় নেতাকে ভর্ত্সনার ঘটনায় চট্টগ্রাম বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একপক্ষ মনে করছে, অব্যাহতি ও ভর্ত্সনার ঘটনায় দলের ক্ষতি হচ্ছে; অন্য পক্ষ মনে করছে, দলীয় চেয়ারপারসন যথাযথ সিদ্ধান্তই নিয়েছেন।</p> <p>বিএনপি নেতারা জানান, দল গোছানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে সেদিন ওই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিষয়ে তিনি দলীয় নেত্রীর কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। তাতে বলা হয়, ২ মে উত্তর চট্টগ্রাম জেলা বিএনপির সমাবেশে মঞ্চ দখলকে কেন্দ্র করে গিয়াস কাদের চৌধুরী ও আসলাম চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে চেয়ার ছোড়াছুড়ি এবং ৩ মে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সমাবেশে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। খন্দকার মোশাররফ হোসেন প্রতিবেদনে গাজী শাহজাহান জুয়েল, আব্দুল্লাহ আল হাসান ও গিয়াস কাদের চৌধুরীকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের ব্যর্থতার কথাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। এ প্রতিবেদনের ওপর আলোচনার জন্যই চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে সোমবার গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করেন খালেদা জিয়া। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের পর গতকাল দলের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গাজী শাহজাহান জুয়েল ও আব্দুল্লাহ আল হাসানকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতির তথ্য জানানো হয়।</p> <p>গাজী শাহজাহান জুয়েলের অব্যাহতির বিষয়ে জানতে চাইলে পটিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংঘর্ষের ঘটনায় সংগৃহীত তথ্যের মধ্যে কিছুটা ঘাটতি আছে। আগে থেকেই পটিয়া ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি নেতাদের মধ্যে একটি বিরোধ ছিল। তাই সমাবেশের আগেই শীর্ষ নেতাদের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল। বিএনপির মতো একটি বড় সংগঠনের কিছু নেতার মধ্যে বিরোধ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকতে পারে। এ ধরনের ঘটনার জন্য বহিষ্কার কাম্য নয়। গাজী জুয়েলের কিছু ঘাটতি আছে। কিন্তু দলের জন্যও তাঁর অবদান আছে। তবে আমরা নেত্রীর সিদ্ধান্তই মেনে চলব।’</p> <p>পটিয়ার তৃণমূল পর্যায়ের নেতা শোভনদণ্ডী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ রশীদ বেলাল ও জিরি বিএনপি নেতা আকতার হোসেন শিকদার বলেন, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তা-ই সঠিক। এমন সিদ্ধান্তের ফলে আর কেউ শৃঙ্খলাভঙ্গের সাহস পাবে না।</p> <p>লোহাগাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি আসহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গাজী শাহজাহান জুয়েল দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অতীতে দলে তাঁর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তবে আন্দোলন-সংগ্রামের সময় তিনি বেশির ভাগ সময় বিদেশে ছিলেন। বর্তমানে দেশে এসে দুঃসময়ের পরীক্ষিত নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রুপিং করছেন। নেত্রীর সিদ্ধান্তই সঠিক।</p> <p>চন্দনাইশ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নিজের কর্মকাণ্ডের জন্যই জুয়েলকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।</p> <p>তবে চন্দনাইশ পৌরসভা বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার চৌধুরী বলেন, শাহজাহান জুয়েল দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার মতো কোনো দোষ আমি খুঁজে পাচ্ছি না। এর পরও কেন অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তা নেত্রী ভালো জানেন।</p> <p>সাতকানিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, গাজী শাহজাহান জুয়েলকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ম্যাডাম নিয়েছেন। তাই এ সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে নিতে হবে।</p> <p>চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বাঁশখালী উপজেলার গণ্ডমারা ইউপির চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, ‘দলের এই দুঃসময়ে সংগঠনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের বহিষ্কারের বিষয়টি পুনবির্বেচনা করা উচিত।’</p> <p>বোয়ালখালী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত সঠিক। তবে রাজনীতির চলমান এই সংকটে মাঠপর্যায়ে যাতে কোনো ধরনের হতাশা তৈরি না হয়, সেদিকেও দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।</p> <p>চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির আনছার বলেন, জেলার সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অপ্রত্যাশিত বলে মনে হয়েছে। দলের এই দুঃসময়ে এখনই বহিষ্কার না করে কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করে দিলে হয়তো ভালো হতো।</p> <p>তবে কাজী হাসানকে অব্যাহতি দেওয়ায় খুশি হয়েছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির তৃণমূল নেতারা। তাঁরা বলছেন, কাজী হাসানের একপেশে সিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় বিএনপি কয়েক টুকরো হয়ে পড়েছিল।</p> <p>মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে দলের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে নেত্রীর সিদ্ধান্তই সঠিক বলে মনে করছি।’ মিরসরাই সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আনোয়ারুল হক বলেন, ‘দলের চেয়ারপারসন সময়োপযোগী একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’</p> <p>সীতাকুণ্ড উপজেলা বিএনপির নেতারাও কাজী হাসানের অব্যাহতির সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে মনে করছেন। সীতাকুণ্ড পৌরসভা বিএনপির সভাপতি মো. ইউসুপ নিজামী বলেন, ‘কাজী হাসান সঠিকভাবে তাঁর দায়িত্ব পালন করেননি।’ তবে গিয়াস কাদেরকে ভর্ত্সনা ও কাজী হাসানকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘটনায় রাউজানের বিএনপি নেতারা নাম প্রকাশ করে কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।</p> <p>(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন জাহাঙ্গীর আলম (সাতকানিয়া), এনায়েত হোসেন মিঠু (মিরসরাই) ও জাহেদুল আলম (রাউজান)</p>