<p>বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ঢাকা ডায়নামাইটসের ‘দাপট’ শুরু থেকেই। কাল শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের মাঠ-গ্যালারিতে আরো কয়েক প্রস্ত উদাহরণ যোগ হলো, এই যা! তা গ্যালারিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ওই দলের সমর্থকদের ঝামেলায় যেমন, তেমনি আউটের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় ভব্যতার সীমা ছাড়িয়ে আম্পায়ারের ওপর সাকিব আল হাসান, আবু জায়েদদের চড়াও হওয়াতেও। তাতে চাপে পড়েই কি না, খুলনা টাইটানসের প্রথম চার উইকেটের দুটিতেই ভুল সিদ্ধান্ত দিয়ে গেলেন আম্পায়াররা!</p> <p>অক্রিকেটীয় এসব দাপটের পাশাপাশি অবশ্য ঢাকা ডায়নামাইটসের ক্রিকেটীয় দাপটও কম ছিল না। তাতেই প্রথম দল হিসেবে এবারের বিপিএলে ফাইনাল নিশ্চিত করে তারা। প্রথম কোয়ালিফায়ারে খুলনা টাইটানসকে ৫৪ রানে হারিয়ে। অবশ্য হেরেও খুলনার বিপিএল শেষ হচ্ছে না। শিরোপার মহারণে নামার আরেকটি সুযোগ পাচ্ছে তারা আজ। কাল এলিমিনেটরে চিটাগং কিংসের বিপক্ষে তিন উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পাওয়া রাজশাহী কিংসের সঙ্গে লড়বে তারা। এই ম্যাচের বিজয়ী দল পরশুর ফাইনালে ঢাকা ডায়নামাইটসের প্রতিপক্ষ।</p> <p>কাল কোয়ালিফায়ারে মাঠের প্রথম পর্বের লড়াই ছিল ঢাকার ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে খুলনার জুনায়েদ খানের। তাতে বিজয়ী ওই পাকিস্তানি পেসার। তাঁর তিন শিকারে ২৮ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে ফেভারিটরা। পরে নাসির হোসেন (১৩) ও সাকিব আল হাসান (১৮) বিদায় নিলে ৬৫ রানে ইনিংসের অর্ধেক হাওয়া। দলের ভীষণ এই প্রয়োজনের সময় জ্বলে ওঠে আন্দ্রে রাসেলের ব্যাট। ২৫ বলে ৪৬ রানে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। ২০ ওভারে আট উইকেটে ১৪০ রানে লড়িয়ে পুঁজি পায় ঢাকা ডায়নামাইটস।</p> <p>জবাবে শুরুটা মন্দ হয়নি খুলনার। ওপেনিং জুটিতে উঠে যায় ৩৪ রান। কিন্তু ১৯ রানের মধ্যেই যে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে! এর মধ্যে হাসানুজ্জামানের বেলায় বল লেগ স্টাম্প পেরিয়ে গেলেও এবং বেনি হাওয়েলের ক্ষেত্রে ইনসাইড এজ হলেও উঠে যায় আম্পায়ারের আউটের আঙুল। এই ধাক্কা আর সামলে ওঠা সম্ভব হয়নি খুলনার। ১৬.২ ওভারে মাত্র ৮৬ রানে অল আউট হয়ে ম্যাচ হেরে যায় ৫৪ রানে। লিগ পর্বে দুই ম্যাচেই কিন্তু এই খুলনা টাইটানস হারিয়েছিল ঢাকা ডায়নামাইটসকে। যদিও এর মধ্যে শেষ ম্যাচটি নিয়ে ক্রিকেটাঙ্গনে গুঞ্জন রয়েছে বিস্তর।</p> <p>এর আগে কাল দিনের প্রথম ম্যাচটি হয়েছে দুর্দান্ত। সেখানে চিটাগং ভাইকিংসের ক্রিস গেইলের মঞ্চের সবটুকু আলো কেড়ে নেন রাজশাহী কিংসের আরেক ক্যারিবিয়ান ড্যারেন স্যামি। তা পুরো দলবল নিয়ে কাল্পনিক সেলফি তোলার উদ্যাপনে শুরুতে; পরে নিজে ২৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংসে দলকে জিতিয়ে। এরপর ডাগ-আউট থেকে ছুটে আসার পুরো দলকে থামিয়ে সঙ্গী ফরহাদ রেজাকে নিয়ে স্যামির পোজ দেওয়া এবং অন্যদের ছবি তোলার ভঙ্গিও ছিল ম্যাচের বড় বিনোদন।</p> <p>৪০, ১৯, ১, ৫—এবারের বিপিএলে ক্রিস গেইলের প্রথম চারটি ইনিংস। প্রত্যাশার প্রতিফলন যে পারফরম্যান্সে নেই, তা বলাই বাহুল্য। চিটাগং ভাইকিংস তাই খুব করে তাকিয়ে ছিল ক্যারিবিয়ান দানবের ব্যাটের দিকে। বাঁচা-মরার ম্যাচে গেইলের ব্যাট পুরোপুরি হতাশ করেনি সত্য। কিন্তু তা আরো কত আশার আলোই না ছড়াতে পারত! ৩০ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে যে ছিল বড় কিছুর প্রতিশ্রুতি!</p> <p>ঠিক চিটাগং ভাইকিংসের ইনিংসের মতোই। ২০ ওভারে আট উইকেটে ১৪২ রানে আটকে যায় তারা। অথচ তামিম ইকবাল ও গেইলের ব্যাটিংয়ের সময় আরো বড় ইনিংসের স্বপ্ন দেখার আশা বাড়াবাড়ি ছিল না মোটেও। একাদশ ওভারে এক উইকেটে ৮২ রানে পৌঁছে যায় যে চিটাগং! তিনে নামা গেইল রয়েসয়ে শুরুর পর বারুদে আগুন জ্বালাচ্ছিলেন তখন। মেহেদী হাসানের পর পর দুই বলে ছক্কা; আগের ম্যাচে অভিষেকে পাঁচ উইকেট নিয়ে চমকে দেওয়া আফিফ হোসেনের এক ওভারেও ছক্কা দুটো। জেমস ফ্রাঙ্কলিনের ওই ঘাতক ওভারেও বল উড়িয়ে সীমাছাড়া করেন একবার। কিন্তু এক বল বিরতিতে ধরা পড়ে যান লং অনে। তখনো বোঝা যায়নি, দেড় শর কমে থেমে যাবে চিটাগংয়ের ইনিংস।</p> <p>মূল ভরসা হয়ে ক্রিজে ছিলেন তামিম, বিপিএলে যাঁর ব্যাট হাসছে নিয়মিত। কালও ৪৬ বলে ৫১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলেন। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের শীর্ষে জাঁকিয়ে বসেন আরো। কিন্তু শোয়েব মালিক (১৪) আউট হওয়ার আট বলের মধ্যে তামিমের বিদায়ে বড় হোঁচট খায় তারা। শেষ দিকে আর কেউ প্রত্যাশিত রান না পেলে ১৪২-এ আটকে যায় চিটাগং। ম্যাচের যে অর্ধে চার-ছক্কা কিংবা উইকেটপতনের চেয়ে দর্শকদের কম আনন্দ দেয়নি রাজশাহী কিংসের উদ্যাপন। অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি এবং চার উইকেট পাওয়া কেসরিক উইলিয়ামস—দুই ক্যারিবিয়ান মিলে নেতৃত্ব দেন কাল্পনিক সেলফি তোলায়, যে উদ্যাপন অনেক দিন মনে রাখবে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দর্শকরা।</p> <p>লক্ষ্য খুব বড় না, কিন্তু রাজশাহী কিংস ভজকট পাকিয়ে ফেলে প্রায়। সাব্বির রহমান, মমিনুল হক, জেমস ফ্রাঙ্কলিনরা রান পান না তেমন, ১১ ওভারে ৫৭ রান তুলতেই হারিয়ে বসে ছয় উইকেট। বাকি ৯ ওভারে ৮৬ রানের প্রয়োজনীয়তা মেটানো সম্ভব বলে মনে হচ্ছিল না তখন। কিন্তু স্যামি আছেন যে! সেলফি উদ্যাপনে সবাইকে মাতিয়ে তোলা এই ক্যারিবিয়ান উৎসব তো মাটি করে দিতে পারেন না। আরো একবার তাই ঝলসে ওঠে তাঁর ব্যাট। মেহেদী হাসানের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটিতে জাহাজের টলোমলো অবস্থা সামলান; এরপর ফরহাদ রেজার (১৯*) সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রানে কিংসদের জাহাজ নিয়ে যান জয়ের বন্দরে। ২৭ বলে অপরাজিত ৫৫ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন স্যামি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়তো ইনিংসের ১৬তম ওভার। ৩০ বলে ৪৩ রান দরকার—এই অবস্থায় শুরু হওয়া ওভারে টানা তিনটি চার মেরে দেন স্যামি। এরপর আর রোখা যায়নি রাজশাহী কিংসকে।</p> <p>আজ খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে বিপিএল ফাইনালে যাওয়ার আরেকটি সুযোগ তাদের। আর দর্শকদের সামনে সুযোগ অন্তত আরো এক ম্যাচে স্যামির নেতৃত্বে ক্যারিবীয় উদ্যাপন উপভোগের।</p>