<p>বাংলাদেশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এ দেশের মুসলমানরা অত্যন্ত ধর্মভীরু। স্বাভাবিকভাবেই প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামবিষয়ক লেখাগুলো সর্বাধিক পঠিত হয়ে থাকে। ফলে জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রাত্যহিক ও সাপ্তাহিক ধর্মীয় লেখা ছাপা হয়ে থাকে। অনলাইনগুলোতে ইসলামী টপিক নিয়ে লেখার পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।</p> <p>বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর মধ্যে কালের কণ্ঠ, ইত্তেফাক, নয়া দিগন্ত, যুগান্তর ও ইনকিলাব প্রতি শুক্রবার পুরো এক পৃষ্ঠায় ইসলামবিষয়ক লেখা প্রকাশ করে থাকে। দৈনিক সমকাল আগে শুক্রবার এক পৃষ্ঠা প্রকাশ করলেও বর্তমানে আধাপৃষ্ঠা ইসলামের জন্য ছেড়ে দেয়। দৈনিক জনকণ্ঠ প্রতি শুক্রবার ইসলাম বিষয়ে নিবন্ধ প্রকাশ করে থাকে।</p> <p>কালের কণ্ঠ বাংলাদেশের একমাত্র পত্রিকা, যেখানে সূচনালগ্ন থেকে প্রতিদিন ধারাবাহিকভাবে পবিত্র কোরআনের তাফসির ছাপানো হয়।</p> <p>বাংলাদেশ প্রতিদিন শুক্রবারসহ প্রতিদিন সিঙ্গল কলামে ইসলামবিষয়ক একটি বা দুটি লেখা প্রকাশ করে থাকে। ওই পত্রিকায় প্রতিদিন ধর্মীয় লেখা ছাড়াও ‘রকমারি’ বিভাগে ধর্মীয় বিষয় নিয়ে মাঝেমধ্যে পুরো পৃষ্ঠা ফিচার করা হয়।</p> <p>দৈনিক প্রথম আলো হজ, হজ গাইড, রমজান, সমসাময়িক ইস্যু কাভারেজ দিয়ে ‘ক্লিন ইমেজ’ তৈরি করেছে।</p> <p>আর প্রায় সব পত্রিকা রমজান উপলক্ষে প্রতিদিন প্রথম পৃষ্ঠায় বা ভেতরের পৃষ্ঠায় বিশেষ লেখা প্রকাশ করে থাকে।</p> <p>বাংলাদেশে মূলধারার জাতীয় দৈনিকে এখনো এক পৃষ্ঠাব্যাপী ইসলাম নিয়ে কোনো আয়োজন করা হয়নি, যদিও এর চাহিদা আছে। তবে আলোকিত বাংলাদেশ ১২ পৃষ্ঠার দৈনিক হিসেবে সর্বপ্রথম এই উদ্যোগ নিয়েছে। সদ্য প্রকাশিত সময়ের আলো প্রতিদিন আধাপৃষ্ঠাব্যাপী ইসলাম নিয়ে পাতা করছে। এ ছাড়া দৈনিক বাংলাদেশের খবর ও মানবকণ্ঠ প্রতিদিন সিঙ্গল কলামে ইসলাম বিষয়ে লেখা প্রকাশ করে থাকে। নতুন পত্রিকা দেশ রূপান্তরে ‘বিশেষ করে’ বিভাগে প্রায়ই ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পৃষ্ঠাব্যাপী বিশেষ আয়োজন করা হয়। এতে বোঝা যায়, জাতীয় দৈনিকগুলো ‘ইসলাম বিভাগ’ দৈনিক ছাপার পথে হাঁটছে।</p> <p>টিভি চ্যানেলগুলো প্রতি জুমাবার, রমজানের প্রতিদিন প্রায় সব টিভি চ্যানেলে কমবেশি ইসলামবিষয়ক প্রগ্রাম থাকে। তা ছাড়া প্রায় প্রতিটি চ্যানেল সারা বছর নির্ধারিত সময়ে আজান ও ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করে থাকে। অনেক চ্যানেলে সারা বছরই ইসলামবিষয়ক প্রগ্রাম থাকে। যেমন—নিউজ টোয়েন্টিফোর, এনটিভি, বৈশাখী টিভি, এটিএন বাংলা ও চ্যানেল আইয়ে প্রায় দিনই ইসলামবিষয়ক অনুষ্ঠান থাকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশনেও ইসলামবিষয়ক অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয়। তবে প্রগ্রামগুলোতে ইসলামী বিধান অনুসরণ করা হয় কি না, এগুলোর পেছনে বাণিজ্য আছে কি না—এসব প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ইসলামবিষয়ক প্রগ্রাম বাড়ছে কিংবা বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে।</p> <p>বাংলাদেশের রেডিওগুলোও প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে আজান ও ইসলামের মর্মবাণী প্রচার করে থাকে। এর বাইরে শুক্রবার বিশেষ আয়োজন করে থাকে। কোনো কোনো রেডিও স্টেশনে ইন্টারনেট থেকে কোরআন তিলাওয়াত আবার কোথাও বাংলা অর্থসহ কোরআন তিলাওয়াত প্রচার করা হয়। আবার অনেক রেডিওতে ইসলামী ব্যক্তিত্বদের নিয়ে আলোচনানির্ভর অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। যেমন—ক্যাপিটাল এফএম, কালারস এফএম, রেডিও ভূমিতে ইসলাম বিষয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। এগুলোর মধ্যে কেউ কেউ প্রতিদিন প্রশ্ন-উত্তর, হামদ-নাত ইত্যাদি সম্প্রচার করে। তবে প্রতিটি রেডিওতে রমজান মাসে ইসলাম বিষয়ে প্রতিদিনই প্রগ্রাম থাকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বেতারের কার্যক্রম প্রশংসনীয়।</p> <p>বিশ্বজুড়ে সংবাদ ও সাংবাদিকতার ভবিষ্যৎ অনলাইনে।  বর্তমানে বাংলাদেশে কতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। কারো কারো মতে, এর সংখ্যা ১০ হাজারের চেয়ে বেশি। বেশির ভাগ অনলাইনে ইসলামবিষয়ক লেখা, ফিচার ও খবর রয়েছে; যদিও এসবের ক্ষেত্রে লেখকস্বত্ব সংরক্ষণ না করার অভিযোগ আছে। কিন্তু এটি সত্য যে অনলাইনগুলোতে ইসলামবিষয়ক লেখার পরিমাণ বাড়ছে। কয়েকটি অনলাইনে ইসলাম বিষয়ে অবগত তরুণদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>এসব চিন্তা থেকে কালের কণ্ঠ প্রতি শুক্রবার পুরো পৃষ্ঠাব্যাপী ‘ইসলামী জীবন’ প্রকাশের পাশাপাশি রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার প্রতিদিন আধাপৃষ্ঠাব্যাপী ‘ইসলামী জীবন’ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথম সারির দৈনিকগুলোর মধ্যে এটি বাংলাদেশে প্রথম উদ্যোগ। এর জন্য কালের কণ্ঠ সাধুবাদ পেতেই পারে।</p> <p>লেখক : ইনচার্জ, ধর্ম বিভাগ</p> <p>kasemsharif@gmail.com</p>