<p>মস্তকাবরণ হিসেবে ব্যবহৃত অন্যতম পোশাক মাথার রুমাল। আরবিতে একে ক্বানা বলা হয়। যা দিয়ে নারীরা মুখ আবৃত করে, তাকে আরবিতে বলা হয় ক্বানা। ইংরেজিতে াবরষ, যবধফ াবরষ, সধংশ.</p> <p>এ অর্থের জন্য ব্যবহৃত আরবি দ্বিতীয় শব্দ ‘তাইলাসান’। শব্দটি ফারসি ‘শাল’ শব্দের আরবি রূপ। ইংরেজিতে : a shawl-like garment worn over head and shoulders.</p> <p>আল্লামা আবদুর রাউফ আল-মুনাবী বলেন : হাদিসে বর্ণিত ক্বানা শব্দ দ্বারা যেকোনো ধরনের চাদর বা কাপড় দ্বারা মাথা ও মুখের একাংশ আবৃত করা বোঝানো হয়েছে।</p> <p>রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো কখনো তাঁর মাথা রুমাল বা চাদর দিয়ে আবৃত করতেন বলে বর্ণিত হয়েছে। তবে এভাবে মাথা আবৃত করা তাঁর রীতি ছিল কি না এবং মাথায় রুমাল ব্যবহার করা উচিত কি না সে বিষয়ে আলেমদের মতভেদ রয়েছে। মতভেদের কারণ এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলোর অর্থগত পার্থক্য। কোনো কোনো হাদিসে রুমাল বা শাল দিয়ে মাথা আবৃত করাকে ইহুদিদের অভ্যাস বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, মুসলমানদের উচিত নয় এভাবে মাথায় রুমাল ব্যবহার করা। অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) মাথায় রুমাল ব্যবহার করতেন। রুমাল ব্যবহারের প্রশংসায় কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।</p> <p><strong>মাথায় রুমাল ব্যবহারের বিধান</strong></p> <p>আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ শামী ও অন্যান্য আলেম উল্লেখ করেছেন যে প্রথম যুগের অনেক ইমাম ও ফকিহ মাথায় রুমাল, চাদর বা শাল ব্যবহার অপছন্দ করেছেন বা মাকরুহ মনে করেছেন।</p> <p>অন্যদিকে প্রথম হিজরি শতাব্দী বা সাহাবিদের যুগের শেষ দিক থেকেই ব্যাপকভাবে আলেম ও ধার্মিক মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে মাথায় শাল বা রুমাল ব্যবহারের প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে। পরে বেশির ভাগ আলেম এগুলোর ব্যবহার সমর্থন করেছেন। আল্লামা সুয়ুতি (৯১১ হি.) এ বিষয়ে ‘শাল-রুমালের ফজিলতে হাসান হাদিসসমূহ’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। যেসব হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) রুমাল বা চাদর দিয়ে মাথা আবৃত করতেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব হাদিসের ওপর তাঁরা নির্ভর করেছেন।</p> <p>সহিহ বুখারিতে সংকলিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হিজরত সম্পর্কিত ঘটনাবলি উল্লেখ করে আয়েশা (রা.) বলেন, আবু বকর (রা.) হিজরতের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে চাইলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে একটু অপেক্ষা করতে বলেন, হয়তো একত্রে হিজরতের অনুমতি আল্লাহ দান করবেন। আবু বকর (রা.) প্রস্তুতি নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। অপেক্ষার দিনগুলোর বর্ণনায় আয়েশা (রা.) বলেন : ‘একদিন আমরা আমাদের বাড়িতে বসে আছি, বেলা তখন ঠিক দুপুর, এমতাবস্থায় একজন আবু বকর (রা.)কে বললেন : ওই  তো রাসুলুল্লাহ (সা.)। তিনি মাথা আবৃত করে (ভরদুপুরে) এমন এক সময় আমাদের বাড়িতে আসছেন, যে সময় তিনি কখনো আমাদের বাড়িতে আসেন না।</p> <p>সহিহ বুখারির অন্য হাদিসে ইবনে উমার (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) যখন (তাবুক গমনের পথে) সামুদ সম্প্রদায়ের আবাসস্থল হিজর প্রান্তর অতিক্রম করছিলেন তখন তিনি বলেন : এসব সম্প্রদায়ের ওপর যে গজব নিপতিত হয়েছিল, তোমাদের ওপরও তদ্রূপ গজব আসতে পারে তার ভয়ে ক্রন্দন করতে করতে এসব অত্যাচারী গজবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের আবাসস্থলে প্রবেশ করবে। এভাবে ক্রন্দনরত অবস্থায় ছাড়া এ এলাকায় প্রবেশ করবে না। এরপর তিনি উটের পিঠে আরোহিত অবস্থায়ই নিজের গায়ের চাদর দিয়ে মাথা ও মুখের কিয়দংশ আবৃত করে চলতে থাকেন।</p> <p>আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন : [রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ইন্তেকালের কয়েক দিন আগে অসুস্থ অবস্থায়] একদিন তিনি তাঁর কাপড় দিয়ে মাথা আবৃত করেন (বুখারির বর্ণনায় : একটি কালো কাপড় মাথায় পেঁচিয়ে) বেরিয়ে আসেন...। এ অর্থে বর্ণিত বিভিন্ন হাদিসে দেখা যায় যে রাসুলুল্লাহ (সা.) ওহি নাজিলের তীব্র চাপের সময় কোনো অপছন্দনীয় বিষয় দেখলে বা অনুরূপ অনেক সময় নিজের গায়ের চাদর দিয়ে মাথা আবৃত করে নিতেন।</p> <p>শৌচাগারে গমনের সময় মস্তক আবৃত করার বিষয়ে অন্য একটি হাদিস দুর্বল সনদে বর্ণিত হয়েছে। ইবনে সাদ, বাইহাকি প্রমুখ মুহাদ্দিস তাঁদের সনদে দ্বিতীয় হিজরি শতাব্দীর তাবে-তাবেয়ি আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবু মারিয়াম (মৃত্যু ১৫৬ হি.) থেকে বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন শৌচাগারে প্রবেশ করতেন তখন তাঁর জুতা পরিধান করতেন এবং মাথা আবৃত করতেন।’</p> <p>সার কথা হলো, ইসলামের প্রথম যুগে মাথায় রুমাল বা চাদর পরিধান করতে নিষেধ করা হয়েছিল। পরে তার অনুমতি দেওয়া হয়। এবং সাহাবি ও তাবেয়িদের যুগ থেকেই মাথায় রুমাল বা চাদর পরিধানের প্রচলন হয়।</p> <p><strong>লেখক :</strong> ইসলামী গবেষক</p>