<p>মুসলমানদের জীবনে রমজান আসে জীবনকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর তাগিদ নিয়ে। রমজান এলো, রমজান গেল; কিন্তু আমাদের প্রাপ্তি কতটুকুু—এ নিয়ে হিসাব-নিকাশ করা জরুরি। রমজান হলো মুমিনের জন্য বার্ষিক সুযোগ, যেন সে অন্ধকার থেকে আলোর পথে, গোমরাহি থেকে হেদায়েতের পথে আসতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)</p> <p>মাহে রমজানের রোজা মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজজীবনে অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চলার শিক্ষা দেয়। হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি ও আত্ম-অহংবোধ ভুলে গিয়ে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধিশালী সমাজ প্রতিষ্ঠার মাসই হলো মাহে রমজান। ভাবার বিষয় হলো, আমরা কতটুকু আমল করতে পেরেছি, কতটুকু নিজেকে আলোকিত মানুষরূপে গড়ে তুলতে পেরেছি? আত্মশুদ্ধির এই মাসে আমরা নিজেদের কতটা শুধরে নিতে পেরেছি? ইবাদতের বসন্ত মৌসুমে কী পরিমাণ পুণ্যের ফসল ঘরে তুলতে পেরেছি? কোরআন নাজিলের মাসে আমাদের জীবনকে কতটা কোরআনময় করতে পেরেছি? তাকওয়া অর্জনের মাসে আমরা কতটা খোদাভীতি অর্জন করতে পেরেছি? রমজানের দাবি আমাদের জীবনে কী পরিমাণ বাস্তবায়িত হয়েছে—এসবের যোগ-বিয়োগ করা জরুরি। সুফিবাদের পরিভাষায় এ হিসাব-নিকাশ করাকে ‘মুহাসাবা’ বলা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ তারা এখনো উদাসীনতার মধ্যে বিমুখ হয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১) এ বিষয়ে হজরত ওমর (রা.)-এর একটি চমৎকার কথা রয়েছে—‘তোমার হিসাব নেওয়ার আগে তুমি নিজেই তোমার হিসাব নিয়ে নাও।’ আল্লাহ তাআলার অশেষ মেহেরবানিতে যাঁদের যথাযথ আল্লাহর রহমত অর্জনের তাওফিক হয়েছে, তাঁরা খুবই ভাগ্যবান। কিন্তু যাঁরা এ মাসের বরকত থেকে বঞ্চিত, তাঁরা সবচেয়ে হতভাগা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপ ক্ষমা করাতে পারেনি, তার নাক ধুলায় ধূসরিত হোক।’ (জামেউল উসুল, হাদিস-১৪১০)</p> <p>প্রতিটি বস্তুর ফলাফল প্রকাশের আগেই কিছু আলামত দ্বারা তা প্রস্ফুটিত হয়ে যায়। সূর্য ওঠার আগেই পূর্ব দিগন্তে রক্তিম আভা দেখা যায়। ঠিক তেমনি পরকালের চূড়ান্ত বিচারের আগে দুনিয়ায়ও আমল কবুল হওয়ার কিছু আলামত প্রকাশিত হয়। মুসলিম মনীষীরা বলে থাকেন, ‘নেক কাজের প্রাথমিক প্রতিদান হলো—এর পর আরো আমলের তাওফিক লাভ করা।’ রমজান তাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, যারা রমজানের পরও আমলের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পেরেছে। রমজানের পর যদি ওয়াক্তমতো নামাজ পড়ার তাওফিক হয়, নফল রোজা রাখতে মন সায় দেয়, দাড়ি রাখার অভ্যাস হয়, হালাল উপার্জনে মন সন্তুষ্ট থাকে, সুদ-ঘুষ ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি হয়, গিবত ও পরনিন্দা ত্যাগ করা সহজ হয়, ইসলামসম্মত পোশাক পরিধানের অভ্যাস হয়, তাহলে রমজান আপনার জীবনে আশীর্বাদ হিসেবে এসেছে। অন্যথায় রমজান এসেছে অভিশাপ নিয়ে। রমজান এলো, রমজান গেল—এই আসা-যাওয়া আপনার জন্য কোনো কল্যাণ বয়ে আনেনি।</p> <p><strong>লেখক : </strong>ইসলামী গবেষক</p>