<p>ইসলাম সম্পদ বণ্টনের যে ব্যবস্থা দিয়েছে, তার অন্যতম হলো মিরাস। ইসলামের আগে জাহেলি আরবে শুধু পুরুষরাই মিরাস পেত। কোনো কোনো ধর্মে শুধু বড় ছেলেই মিরাস পেত, অন্য কেউ মিরাস পেত না। কখনো এতিম শিশুদেরও মিরাস থেকে বঞ্চিত করা হতো। এ ক্ষেত্রে ইসলাম একটি সুষম বণ্টননীতি প্রণয়ন করেছে। সম্পদ শুধু বংশের এক-দুজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে মা-বাবা, সন্তানাদি, স্বামী-স্ত্রী প্রমুখকে মিরাসে অংশীদার বানিয়ে দিয়েছে। নারীকেও মিরাসের অধিকার দিয়েছে ইসলাম।</p> <p>মৃত ব্যক্তির পরিত্যাজ্য সম্পত্তির দ্বারা ঋণ ও অসিয়ত পূরণ করার পর সম্পদ অবশিষ্ট থাকলে তা নিম্নবর্ণিত তফসিল অনুযায়ী উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে—</p> <p><strong>জীবিত বাবার প্রাপ্য : </strong></p> <p>(১) মৃতের পুত্র বা পৌত্র অথবা অধস্তন পুত্র থাকলে মৃতের বাবা এক-ষষ্ঠাংশ পাবে।</p> <p>(২) মৃতের কন্যা বা পুত্রের কন্যা অথবা অধস্তন কেউ থাকলে মৃতের বাবা এক-ষষ্ঠাংশ ও ‘আসাবা’ হিসেবে অংশ পাবে। যেসব উত্তরাধিকারীর অংশ নির্ধারিত রয়েছে, তারা নিজ অংশ নেওয়ার পর অবশিষ্ট সম্পদ যারা গ্রহণ করে, তাদের আসাবা বলা হয়।</p> <p>(৩) মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান অথবা অধস্তন কেউ না থাকলে মৃতের বাবা শুধু আসাবা হিসেবে অংশ পাবে।</p> <p><strong>জীবিত স্বামীর প্রাপ্য : </strong></p> <p>(১) মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান অথবা অধস্তন কেউ না থাকলে স্বামী পূর্ণ সম্পত্তির অর্ধেক পাবে।</p> <p>(২) মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান অথবা অধস্তন কেউ থাকলে স্বামী এক-চতুর্থাংশ পাবে।</p> <p><strong>জীবিত স্ত্রীর প্রাপ্য : </strong></p> <p>(১) মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান অথবা অধস্তন কেউ না থাকলে স্ত্রী এক-চতুর্থাংশ পাবে।</p> <p>(২) মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান অথবা অধস্তন কেউ না থাকলে স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ পাবে।</p> <p><strong>মৃত ব্যক্তির কন্যার অংশ : </strong></p> <p>(১) মৃতের কন্যা একজন থাকলে সে পূর্ণ সম্পত্তির অর্ধেক পাবে।</p> <p>(২) মৃতের কন্যা একাধিক থাকলে তারা দুই-তৃতীয়াংশ পাবে।</p> <p>(৩) মৃতের কন্যা ও পুত্র থাকলে এক কন্যা যা পাবে, তার দ্বিগুণ এক পুত্র পাবে।</p> <p><strong>পুত্রের কন্যাদের অংশ : </strong></p> <p>(১) মৃতের কন্যা না থাকাকালীন পুত্রের কন্যা একজন থাকলে সে সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক পাবে।</p> <p>(২) মৃতের কন্যা না থাকাকালীন পুত্রের কন্যা একাধিক থাকলে তারা দুই-তৃতীয়াংশ পাবে।</p> <p>(৩) মৃতের এক কন্যা থাকলে পুত্রের কন্যা এক-ষষ্ঠাংশ পাবে।</p> <p>(৪) মৃতের একাধিক কন্যা থাকলে পুত্রের কন্যা বঞ্চিত হবে।</p> <p>(৫) মৃতের পুত্রের কন্যার সঙ্গে পুত্রের পুত্র বা পৌত্রের পুত্র থাকলে তারা আসাবা হবে।</p> <p>(৬) পুত্র থাকলে পুত্রের কন্যা বঞ্চিত হবে।</p> <p><strong>মৃত ব্যক্তির সহোদর বোনের অংশ : </strong></p> <p>(১) মৃতের সহোদর বোন একজন থাকলে সে সমুদয় সম্পত্তির অর্ধেক পাবে।</p> <p>(২) মৃতের সহোদর বোন একাধিক থাকলে তারা দুই-তৃতীয়াংশ পাবে।</p> <p>(৩) মৃতের সহোদর বোনের সঙ্গে সহোদর ভাই থাকলে ভাই বোনকে আসাবা বানিয়ে দেবে এবং দুই বোনের সমান এক ভাই পাবে।</p> <p>(৪) মৃতের কন্যা বা পুত্রের কন্যার সঙ্গে সহোদর বোনেরা ‘আসাবা’ হয়ে যাবে।</p> <p>(৫) মৃতের পুত্র বা পৌত্র বা অধস্তনের কেউ অথবা বাবা কিংবা দাদা থাকলে সহোদর বোন বঞ্চিত হবে।</p> <p><strong>মৃতের মায়ের প্রাপ্য অংশ : </strong></p> <p>(১) মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান অথবা অধস্তনের কেউ কিংবা যেকোনো ধরনের দুজন ভাই-বোন থাকলে মা সমুদয় সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পাবে।</p> <p>(২) মৃতের সন্তান বা পুত্রের সন্তান অথবা অধস্তনের কেউ কিংবা যেকোনো ধরনের দুজন ভাই-বোন না থাকলে মা সমুদয় সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ পাবে।</p> <p>(৩) মৃতের স্বামী বা স্ত্রী ও মা-বাবা থাকলে স্বামী বা স্ত্রীকে সম্পদ দেওয়ার পর মা অবশিষ্ট সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ পাবে।</p> <p><strong>মৃতের দাদি বা নানির অংশ : </strong></p> <p>(১) মৃত ব্যক্তির এক বা একাধিক দাদি বা নানি একই স্তরের থাকলে দাদি বা নানি সমুদয় সম্পত্তির এক-ষষ্ঠাংশ পাবে।</p> <p>(২) মৃতের মা থাকলে দাদি ও নানি বঞ্চিত হবে আর বাবা থাকলে শুধু দাদি বঞ্চিত হবে। এ ছাড়া অবস্থা অনুযায়ী মিরাসের অংশীদার হবে দাদা, বৈমাত্রেয় বোন ও বৈপিত্রেয় ভাই-বোন। (সিরাজি : ১-৩৫, কামুসুল ফিকহ : ৫/১৫৪-১৬০)</p> <p>মৃত্যুর পর যথাসাধ্য তাড়াতাড়ি সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টন করে দিতে হবে। অন্যথায় একজন আরেকজনের অংশ খেতে থাকে। এমনকি এতিমের অংশও তছরুপ হতে থাকে, যা স্পষ্ট হারাম। বোনদের অংশ না দেওয়া বা কিছু দেওয়া অথবা কৌশলে তাদের অংশ নিয়ে নেওয়া সম্পূর্ণ হারাম। বিধবা নারী অন্য কারো বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হলেও স্বামীর মিরাস থেকে বঞ্চিত হবে না। জীবদ্দশায় কোনো ওয়ারিশের ওপর অসন্তুষ্ট থাকলে বা তাকে সম্পত্তি না দেওয়ার কথা বলে গেলেও এ কারণে কোনো ওয়ারিশ মিরাস থেকে বঞ্চিত হবে না। (আহকামে মাইয়িত : ১৪৬-১৪৯, মেশকাত : ২/৪১৯, ফাতাওয়া রহিমিয়া : ২/২৫৫, রদ্দুল মুহতার : ৭/৫০৫, তাকমিলা ফাতহুল মুসলিম : ২/৭১)</p> <p><strong>লেখক :</strong> শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।</p>