<p>ঈদ পৃথিবীর ১৬০ কোটি মুসলমানের সংস্কৃতি। এটি বাঙালি সংস্কৃতিরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ঈদের জামাতে ধনী-গরিব সবাই এক কাতারে দাঁড়িয়ে যাওয়া, শুভেচ্ছা বিনিময় করা, প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া বাঙালির ঐতিহ্য। আমাদের দেশে ‘ঈদ মোবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর প্রচলন আছে। কিন্তু সালামের আগেই ‘ঈদ মোবারক’ বলে শুভেচ্ছা বিনিময় করা বৈধ নয়। ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার সর্বোত্তম পদ্ধতি হলো এ দোয়া পাঠ করা—‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ বলা। এর অর্থ হলো, আল্লাহ আমাদের ও আপনার পক্ষ থেকে কবুল করুন। হজরত ওয়াসিলা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ঈদের দিন সাক্ষাৎ করলাম। আমি বললাম, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। মহানবী (সা.) বললেন, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা।’ (বায়হাকি : ৩/৪৪৬)</p> <p>তা ছাড়া ঈদের দিন সালাম ও মুসাফাহা ইসলামী শিষ্টাচারের অনুষঙ্গ। সালামের মাধ্যমে মহান আল্লাহ পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার না হওয়া পর্যন্ত তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর একে অন্যকে ভালো না বাসলে ঈমানদার হতে পারবে না। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজ শিখিয়ে দেব, যা করলে তোমরা পরস্পরে ভালোবাসতে পারবে? (সে কাজটি হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করো।’ (মুসলিম : ১/৪৭)</p> <p>পারস্পরিক সাক্ষাতে মুসাফাহা বা হাত মেলানোর অনেক ফজিলত রয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি দুজন মুসলিম সাক্ষাৎ করে পরস্পর মুসাফাহা করে, তাহলে তারা (ওই স্থান থেকে) পৃথক হওয়ার আগেই তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি : ৫/৭৪, ইবনে মাজাহ : ২/১২২০)</p> <p>নিয়ম হলো দুই হাতে মুসাফাহা করা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, (মুসাফাহার সময়) আমার হাতটি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দুই হাতের মধ্যে ছিল। (বুখারি : ৫/২৩১১) আর মুসাফাহার সময় এ দোয়া পড়বে—‘ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম।’ মুসাফাহার পর হাত বুকে লাগানোর বিধান নেই।</p> <p>মুআনাকা বা কোলাকুলি মুসলিম সংস্কৃতির অংশ। কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হলে মুআনাকা করা সুন্নত। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা পরস্পর সাক্ষাৎ হলে হাত মেলাতেন। আর তারা সফর থেকে আগমন করলেও মুআনাকা করতেন। (তাবরানি : ৩/২২)</p> <p>ঈদের দিন যদি কারো সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয়, তাহলে মুআনাকা করতে কোনো বাধা নেই। কিন্তু একে ঈদের দিনের করণীয় মনে করা যাবে না।</p> <p>ইসলামী অভিবাদনের আরেকটি বৈধ বিষয় হলো চুমু খাওয়া। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা পরস্পরের হাতে চুমু খেয়েছেন। বহু তাবেয়ি সাহাবিদের হাতে চুমু খেয়েছেন। সন্তান, পিতা-মাতা, উস্তাদ, আলেম বা নেককার লোকদের হাতে চুমু খাওয়া ইসলামী শিষ্টাচারের অংশ। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.) মদিনায় আগমন করে আমার বাড়ির বাইরে এসে হাজির হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর দিকে দৌড়ে গেলেন এবং তাকে জড়িয়ে ধরেন ও চুমু খান।’ (তিরমিজি : ৫/৭৬)</p> <p><strong>লেখক :</strong> খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ড বাজার (আ. গনি রোড), গাজীপুর</p>