ঋণের নামে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের ফাঁদে দেশের অর্থনীতি। কয়েক বছরে মাত্র পৌনে পাঁচ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাওয়ার জন্য এখন এই সংস্থার শর্তের চাপে পিষ্ট হচ্ছে আর্থিক-রাজস্বসহ বেসরকারি খাতও। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্পে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে। নতুন ৩৩টি শর্তের গ্যাঁড়াকলে পড়ে সংস্থাটির মন রক্ষা করতে সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানও গলদঘর্ম।
আইএমএফের ঋণ
কঠিন শর্তে অর্থনীতির সর্বনাশ
ফারুক মেহেদী

আইএমএফের ঋণের শর্ত পর্যালোচনা, সরকারি ও বেসরকারি খাতের স্টেকহোল্ডার ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ এখন রীতিমতো আইএমএফের ঋণের ফাঁদে পড়েছে। কয়েক বছরে তারা কয়েক কিস্তিতে যে পরিমাণ ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে বাংলাদেশের লাভের চেয়ে বরং ক্ষতির প্রভাবই বেশি।
বছর দুয়েক আগে ডলার সংকটে অর্থনীতি কঠিন খাদের কিনারে চলে গেলে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কঠিন শর্তে রাজি হয়েই ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয় আইএমএফের কাছ থেকে। আর ঋণের কিস্তি দিয়েই শর্ত ও নজরদারি শুরু করে সংস্থাটি। একটার পর একটা কিস্তির সময় আসে, আর তাদের শর্ত কতটা মানা হলো তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব বুঝে নেয় তারা। আর এর প্রভাবে চাপ পড়তে থাকে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন স্তরে।
বিশ্লেষকরা দাবি করেন, সংস্থাটির কিছু কিছু শর্ত অর্থনীতির জন্য সহায়ক হলেও কিছু কিছু শর্ত স্বার্থবিরোধী। এসব শর্ত মানতে গিয়ে জ্বালানি, কৃষি ও সারে ভর্তুকি কমানো, রাজস্ব বাড়ানোর চাপে বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ও উদীয়মান শিল্পে করছাড় তুলে দেওয়া, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তুকি ও ধার না দেওয়া, বেসরকারি খাতের ঋণের কিস্তি শোধের সময় এগিয়ে আনা ইত্যাদি নীতির বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। এর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব ভোক্তাসাধারণসহ ঘুরেফিরে সব স্তরেই পড়ছে। এর বাইরেও সরকারের অনেক সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর খাতে নজরদারির মতো কাজেও যুক্ত হতে চায় সংস্থাটি। সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সফটওয়্যার আইবাস (ইন্টিগ্রেটেড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং সিস্টেম) কিভাবে কাজ করে, তা দেখতে এতে প্রবেশের সুযোগও চেয়েছিল সংস্থাটি। সব শর্ত সরকার বাস্তবায়ন করতে পারছে না। অনেক ক্ষেত্রে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে সরকারও বেশ অসন্তোষের মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও একের পর এক শর্ত পালনের পরও ঋণের দুটি কিস্তি ঝুলিয়ে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি গত মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আইএমএফের সব শর্ত মেনে আমরা ঋণ নিতে চাই না। কারণ বাংলাদেশ এখন আর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল নয়। তারা বলেছে, বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে। আমরা বলেছি, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তা পুরোপুরি বাজারে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়।’
৯ মাসেও আইএমএফের কাঙ্ক্ষিত ঋণের কিস্তি না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা একটা শক্ত পদক্ষেপ নেব। আমরা যদি না নিই, দেখবেন ওখানে কয়জনের চাকরি যায়।’
ঋণের শর্ত প্রসঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘কিছু শর্ত আছে, যেগুলোর সব আমরা পরিপালন করতে চাই না। তারা বলেছে, এটি করো, সেটি করো, আমরা সেই পথে হাঁটব না।’
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আর্থিক খাতে যত শর্ত দেওয়া হয়েছে, দীর্ঘ মেয়াদে এর কিছু ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষতির মাত্রাও কম নয়। সুদের হার, মুদ্রার বিনিময় হার, খেলাপি ঋণ কমানো, ডলারের দর বাজারমুখী করা, রিজার্ভ গণনাসহ এমন সব শর্তের কথা বলা হয়, যার ফলে অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ হিসাব করার ক্ষেত্রে শর্ত দেওয়া হয় যে তিন মাস পর্যন্ত কিস্তি না দিতে পারলে তা গ্রহণযোগ্য। এর পরে তা খেলাপি হিসেবে গণনা করা হবে। আগে নিয়ম ছিল টানা ছয় মাস কিস্তি না দিতে পারলেও খেলাপি দেখানো হতো না। আইএমএফ তা তিন মাস করার কারণে লাগামহীনভাবে খেলাপি ঋণ বাড়তে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাবে দেখা যায়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। অথচ এর ছয় মাস আগেও তা অনেক কম ছিল। মাত্র তিন মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) এক ধাক্কায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। এতে শিল্প গ্রুপ ও বড় বড় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই ঋণখেলাপির তালিকায় উঠে যায়। অথচ নানা কারণে একজন উদ্যোক্তা ছয় মাস পর্যন্ত ঋণের কিস্তি দেওয়ায় সংকটে পড়তে পারেন। এরই মধ্যে আবার সংকট কাটিয়ে ঋণ নিয়মিতকরণও করতে পারেন। কিন্তু সংস্থাটির শর্তের কারণে ওই শিল্প গ্রুপটিকে ঋণখেলাপির তকমা নিতে হচ্ছে। এর প্রভাবে দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি তুলে দিতে চাপ দেয় সংস্থাটি। অলাভজনক বিবেচনায় এসব প্রতিষ্ঠানকে আর সহায়তা না দিতে পরামর্শ দেয় আইএমএফ। তবে লোকসানি হলেও সরকার চাইলেই অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান সহসা বন্ধ করে দিতে পারে না। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এগুলো সরকারকে মুনাফা দেয় না সত্য, তবে অর্থনীতিতে, মানুষের জীবনমানে এসব সংস্থার অবদান রয়েছে। অনেক লোক সেখানে কাজ করে জীবন নির্বাহ করেন। আকস্মিক ভর্তুকি তুলে দিলে অনেক খাত বসে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
সার ও কৃষি উপকরণে ভর্তুকি তুলে দেওয়ারও চাপ আছে সংস্থাটির। কিন্তু কৃষিতে হঠাৎ করে ভর্তুকি তুলে দিলে কৃষির খরচ বাড়ে, জিনিসপত্রের দাম ব্যয়বহুল হয়। খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসেও ভর্তুকি তুলে দিলে পুরো অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ে। মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়ে যায়। সরকারও বড় চাপে পড়ে। সংস্থাটির ঋণ নেওয়ার পর থেকেই ধাপে ধাপে জ্বালানি খাতের ভর্তুকি কমিয়ে দিচ্ছে সরকার। এর ফলে জ্বালানি ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে। সর্বশেষ কিছুদিন আগেও নতুন শিল্প স্থাপনে এক লাফে ৩৩ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়। এর ফলে বিনিয়োগ স্থবির হওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা। এমনিতেই দেশে বিনিয়োগ নেই। বেসরকারি খাতে আস্থাহীনতা কাজ করছে। তার মধ্যে এক লাফে গ্যাসের দাম এভাবে বাড়ানোর ফলে শিল্পের প্রসার থমকে যাবে বলে এরই মধ্যে উদ্যোক্তারা বলতে শুরু করেছেন।
এ ব্যাপারে সিনিয়র ব্যাংকার ও সিটি ব্যাংক এনএর সাবেক সিইও মামুন রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আসলে সব দেশে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন কাজ করে না। তারা হচ্ছে সব মানুষের জন্য একই ওষুধ দিয়ে থাকে। এটা হয় না। বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা নয়। সেখানে তাদের ফর্মুলা কাজ করলেও বাংলাদেশে কাজ করে না। তাদের অনেক শর্তের জালে আটকা পড়ে যান কর্মকর্তারা। ফলে প্রকৃত যে সংস্কার, সেটা বিলম্বিত হয়। সংস্থাটি নির্দিষ্ট ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে কাজ করে। তবে অতিমাত্রায় নজরদারি সব সময় সুফল দেয় না।’
ঢালাও করছাড় তুলে দিতে সংস্থাটি অনেক চাপ দিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মাস আগে একসঙ্গে প্রায় ৬৪টি পণ্যে নতুন করে ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়। এর ফলে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনা হয়। ভোক্তারাও দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করে। পরে সমালোচনার মুখে দু-একটি পণ্যের বর্ধিত ভ্যাট স্থগিত করা হয়। কিন্তু বেশির ভাগই বহাল থাকে, যার প্রভাব পড়ে জিনিসপত্রের দামে। ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
ভর্তুকি ও ছাড়ের বিষয়ে সংস্থাটির অবস্থান হলো আর কতকাল এসব সহায়তা দেওয়া হবে? তবে ভর্তুকির কারণে এর সুফল পায় সাধারণ মানুষ। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কৃষি ভর্তুকির ফলে কৃষি খাতের ফলনে এর সরাসরি প্রভাব পড়ে। তা না হলে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যেত। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম আরো বাড়ত। জ্বালানিতে ভর্তুকি না দিলে সব কিছুতে এর প্রভাব পড়ে। জ্বালানি দেশের অর্থনীতির খুব প্রভাবশালী পণ্য হিসেবে বিবেচিত। এর দামের হেরফের হলেই টালমাটাল হয়ে যায় অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য। মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব পড়ে। পরিণামে তা সরকারের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও প্রভাব ফেলে। জনগণের স্বার্থের কারণে সরকারও একে রাজনৈতিক পণ্য হিসেবেই দেখে।
প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানের ব্যবসায় পরিবেশ সত্যিকার অর্থে ব্যবসাবান্ধব নয়। আগের সরকারও বিভিন্ন সময়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসবের জন্য ব্যবসা সাফার করে। এখনো যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে এগুলো ব্যবসাবান্ধব নয়। আমরা তো ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েই কাজ করি। সত্যি কথা কি ব্যবসা-বাণিজ্য খুব খারাপ অবস্থায় আছে। আইএমএফ যদি কঠিন শর্ত দেয়, তাহলে সব পরিষ্কার করে বলেন, জাতিকে জানান। আমরা তো ১৮ কোটি মানুষের দেশ। তারা তা জানে। তাদের বোঝাতে হবে। আমরা হয়তো তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হচ্ছি। কর্মকর্তারা যদি তাদের বোঝাতে ব্যর্থ হন, তাহলে আমাদের বলুক। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করব। কিন্তু ব্যর্থ বাঙালি হতে চাই না।’
ঢালাওভাবে করছাড় তুলে দেওয়ার বিষয়ে কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবার ওপর সমান কর আরোপসহ আইএমএফের বেশ কিছু বিষয়ে পরামর্শ ভালো। তবে পর্যালোচনা করে তাদের পরামর্শের কিছু অংশ যদি দেশ, জনগণ ও শিল্পস্বার্থবিরোধী হয়, সে ক্ষেত্রে সরকার নিজের স্বার্থ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
দেশের আইসিটি খাতের কর অবকাশ সুবিধা তুলে দেওয়ারও চাপ রয়েছে। এ ছাড়া উৎপাদনমুখী শিল্প খাতের কর অবকাশ সুবিধাও তুলে দেওয়ার পক্ষে আইএমএফ। সংস্থাটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কম্পানির গেইন ট্যাক্স, বন্ড, জিরো কুপন বন্ডসহ আরো বিভিন্ন মুনাফার ওপর সুদকে করমুক্ত রাখার বিপক্ষে। সংস্থাটি চায়, এসব সুদ বা মুনাফার ওপর করমুক্ত সুবিধা বাতিল করতে হবে। কিন্তু বর্তমানে পুঁজিবাজার এমনিতেই সংকটময় সময় পার করছে। একে প্রণোদনা না দিয়ে উল্টো শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করলে এই বাজার আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
আইএমএফ রাজস্ব, আর্থিক, জ্বালানি, সামাজিক নিরাপত্তা—এই চারটি খাতেই দৃশ্যমান বড় সংস্কার করতে চায়। এনবিআর জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের হিসাবে, দেশে বছরে এক লাখ ২৫ হাজার ৮১৩ কোটি টাকার আয়কর ছাড় দেওয়া হয়। দুই শতাধিক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসব করছাড় দেওয়া হয়েছে। এনবিআরের এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে ৯৭টি খাতে করছাড় দেওয়া হয়। সমাজকল্যাণ, বিনিয়োগ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, শিল্প খাতে সহায়তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে সুরক্ষা, শেয়ারবাজার চাঙ্গা করা, তথ্য-প্রযুক্তি খাতে সহায়তা, রপ্তানি উন্নয়ন, শিক্ষা সহায়তাসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে এসব করছাড় দেয় এনবিআর।
আইএমএফ শর্ত পূরণ করতে তিন অর্থবছরে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসাবে দুই লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করতে হবে। তাদের পরামর্শে রাজস্ব খাতে এমন সব নীতি-কৌশল নেওয়া হচ্ছে, যার ফলে ভোক্তার ওপর বাড়ছে করের বোঝা। সব মিলিয়ে এসবের ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ফল গিয়ে পড়ছে মানুষের জীবনযাপনে। সংস্থাটি চায়, এনবিআর প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৬ শতাংশ হারে শুল্ক-কর তথা রাজস্ব আদায় বাড়াতে হবে।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর শর্ত ছিল জিডিপির ০.৫ শতাংশ। কিন্তু সেই লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি এনবিআর।
সম্পর্কিত খবর

ব্যর্থ মেহেদী হাসান মিরাজ


বেশি দামে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনল বাংলাদেশ ব্যাংক
নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণার দিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানিয়েছিলেন, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ করবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজন হলে ডলার কিনব, আবার প্রয়োজন হলে বিক্রিও করব।
খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এর মাধ্যমে একদিকে যেমন বাজারে ‘আপওয়ার্ড সিগন্যাল’ দেওয়া হচ্ছে, অন্যদিকে চাহিদা-জোগানের ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। এতে করে ডলারের রেট একদিকে পুরোপুরি বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকছে, অন্যদিকে প্রয়োজন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিগত উপস্থিতিও বজায় থাকছে। এই কৌশল মুদ্রাবাজারে অস্থিতিশীলতা নিয়ন্ত্রণ এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ উভয় উদ্দেশেই সহায়ক হিসেবে কাজ করছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী করার ইঙ্গিত দিয়ে নিলামের মাধ্যমে আরো ১০ মিলিয়ন বা এক কোটি ডলার কিনেছে। গত ২৩ জুলাই এই নিলামে কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয় ১২১.৯৫ টাকা, যা আগের তুলনায় ০.৪৫ টাকা বেশি। এর মাধ্যমে মাত্র আট দিনের ব্যবধানে নিলামে ডলারের রেট উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হলো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাংকের দর দেখে ১২১ টাকা ৯৫ পয়সায় এক কোটি ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য একজন কর্মকর্তা জানান, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৌশলগত পদক্ষেপ। এই নিলামে ডলারের কাট-অফ রেট নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১.৯৫ টাকা।
ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ ও বাজারে প্রতিক্রিয়া : শীর্ষস্থানীয় একটি বেসরকারি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য আমাদের আমন্ত্রণ জানায়। তবে এবার আগের মতো অনেক ব্যাংক আগ্রহ দেখায়নি। কারণ অনেক ব্যাংক ধারণা করছে, সামনে ডলারের দাম আরো বাড়বে। তাই তারা অপেক্ষা করছে। চড়া দর সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করতে পেরেছে। এ থেকেই বোঝা যায়, বাজারে প্রত্যাশা কিভাবে গড়ে উঠছে।’
ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ মোহাম্মদ মারুফ মনে করেন, এ মুহূর্তে ব্যাংকগুলো চাচ্ছে, যে ডলার রয়েছে সামনে সেটা দিয়েই দায় পরিশোধ করবে। তা ছাড়া চলতি মাসেই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে। যে কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে তেমন আগ্রহী ছিল না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
মারুফ বলেন, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে যা উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিয়েছে। এটা দিয়ে বোঝায় যে ব্যাংকের কাছে যে পরিমাণ উদ্বৃত্ত ডলার ছিল তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ে গেছে এবং যে পরিমাণ তারল্য রয়েছে, আসলে এত দরকার নেই।’
বাজার পরিস্থিতি ও এলসির চাপ : পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘সম্প্রতি ডলারের বাজার কিছুটা টাইট। কারণ ব্যাংকগুলো আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ বাড়াচ্ছে। তবে আগামী সপ্তাহে ডলারের প্রবাহ বাড়লে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘ডলারের বাজার স্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করে। সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। আগের অস্থিরতা অনেকটাই কেটে গেছে, তবে আরো কিছুদিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার।’
স্পট ও আন্ত ব্যাংক বিনিময় হার : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ জুলাই স্পট বিনিময় হার ছিল ১২১.৯৪ টাকা। আন্ত ব্যাংক বাজারে ডলার লেনদেন হয় ১২১.৬০ থেকে ১২২.০২ টাকার মধ্যে। শীর্ষস্থানীয় আরেক ব্যাংকের কর্মকর্তা বলেন, ‘বুধবার আন্ত ব্যাংক বাজারেই ডলারের দাম ১২২ টাকা ছাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপওয়ার্ড সিগন্যালের ফলে আগামীকাল এটি আরো বাড়তে পারে।’
আইএমএফের শর্তে বাজারভিত্তিক নীতি : বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী এক কর্মকর্তা জানান, আইএমএফের ঋণচুক্তির আওতায় এখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি হস্তক্ষেপ করে নির্দিষ্ট রেটে ডলার কেনে না। মে মাস থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালু হওয়ায় এখন নিলামের মাধ্যমে ডলার কেনা হয়। এতে করে ডলারের মূল্য নির্ধারণে বাজার প্রভাবশালী ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, ‘আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজেরা রেট নির্ধারণ করত। এখন মার্কেট রেটেই লেনদেন হচ্ছে। এই পদ্ধতিই দীর্ঘ মেয়াদে বাজারকে আরো স্বচ্ছ করবে।’

ফিরে দেখা ২৫ জুলাই ’২৪
মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব জাতিসংঘের
নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দেয় জাতিসংঘ। ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে এই প্রস্তাব দেন। অন্যদিকে ভারতের নয়াদিল্লিতে এক ব্রিফিংয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় উল্লেখ করে বাংলাদেশে শিগগিরই শান্তি ফিরবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে হতাহতের ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত চেয়েছে বিএনপিও।
এদিকে এদিনই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে প্রবাসী ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিক্ষোভ করে তাদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য চায় সরকার। বিশ্বের নানা দেশে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাস, হাইকমিশন এবং অনাবাসিক মিশনগুলোর মাধ্যমে হোস্ট গভর্নমেন্টের কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এদিন সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টা খোলা ছিল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত অফিস। রাজধানীতে দূরপাল্লার গণপরিবহনে যাত্রীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। কারফিউ বলবৎ থাকায় রাজধানীতে ছিল কঠোর সেনা টহল।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) তথ্য অনুযায়ী, এদিন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আর কেবল কোটা সংস্কারের ইস্যুতে সীমাবদ্ধ নেই।’ তিনি বলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারির সঙ্গেই এই আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটবে না।
অন্যদিকে ২৩ জুলাই (২০২৪) প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আংশিক বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানায় ‘সাধারণ শিক্ষার্থী মঞ্চ’। বিবৃতিতে ৯১ জন শিক্ষার্থী স্বাক্ষর করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আটটি বার্তা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হত্যা ও হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার জন্য চাপ তৈরি, হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের সহযোগিতা, রংপুরের আবু সাঈদসহ নিহত সবার কবর জিয়ারত, রুহের মাগফিরাত কামনা এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো।
২৫ জুলাই সারা দেশে ইন্টারনেট চালু, কারফিউ তুলে দেওয়াসহ ‘জরুরি’ চার দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হয়। তবে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে না পারায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি তারা। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে আরেক অংশের একটি বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। এর সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের বরাত দিয়ে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, পরদিন ২৬ জুলাই বাদ জুমা সারা দেশে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে প্রার্থনা ও শোক মিছিল করা হবে।
নিহত ১৭০ জনের বেশি, আহত হাজারের বেশি— জাতিসংঘ : জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হালনাগাদ তথ্য থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে ১৭০ জনেরও বেশি লোক নিহত এবং হাজারের বেশি আহত হয়েছে। তাদের অনেকে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র ও তরুণদের প্রতিবাদ কর্মসূচির পর অনেকে নিখোঁজ রয়েছে। অন্তত দুজন সাংবাদিক নিহত এবং আরো অনেকের আহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের কয়েক শ লোকের গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিনই এক যৌথ বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণ জবাবদিহির আহবান জানান জাতিসংঘের ১৩ জন স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বাংলাদেশে সহিংস দমন-পীড়নের অভিযোগ এনে তা বন্ধ করার আহবান জানান।
ক্ষতিগ্রস্ত মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বিচার চাইলেন জনগণের কাছে : এদিন সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বরে মেট্রো রেল স্টেশন পরিদর্শন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্ত স্টেশন ঘুরে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় তাঁকে চোখের পানি মুছতেও দেখা যায়। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের জনগণকে তাদের (দেশব্যাপী তাণ্ডবের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের) বিচার করতে হবে। আমি জনগণের কাছে ন্যায়বিচার চাইছি। ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনা দেওয়ার মতো আমার আর কোনো ভাষা নেই।’
মামলা ও গ্রেপ্তার : ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সূত্র দিয়ে দেশের গণমাধ্যমগুলো জানায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নাশকতার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে এদিনও অভিযান অব্যাহত ছিল। এদিন বিকেলে রাজধানীর নিউ এলিফ্যান্ট রোড থেকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য আন্দালিব রহমান পার্থকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রসঙ্গ শুল্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ২৯ জুলাই চূড়ান্ত আলোচনা
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রধান বাণিজ্য আলোচনাকারী সংস্থা ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) বাংলাদেশকে আগামী ২৯ জুলাই তৃতীয় ও চূড়ান্ত শুল্ক আলোচনায় বসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সংবাদ সংস্থা বাসসকে এই তথ্য জানিয়েছেন বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান। তিনি জানান, এর আগে বাংলাদেশ ২২ জুলাই ইউএসটিআরের কাছে নিজেদের অবস্থানপত্র পাঠায় এবং ২৬ জুলাই চূড়ান্ত দফার আলোচনা শুরুর প্রস্তাব দেয়।
বাণিজ্যসচিব জানান, ইউএসটিআর ২৯ জুলাই দিন ধার্য করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশের জন্য বিদ্যমান ৩৫ শতাংশ শুল্ক হার হ্রাস করবে। কারণ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ, ভিয়েতনামের জন্য ২০ শতাংশ এবং ফিলিপাইনের জন্য ১৯ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে মার্কিন পণ্য, যেমন—তুলা, গম, তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), বিমান ও অন্যান্য কৃষিপণ্য শুল্কমুক্ত আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াতে বাংলাদেশ ২০ জুলাই মার্কিন গম সরবরাহকারীদের সঙ্গে সাত লাখ টন গম আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে সাংবাদিকরা শুল্ক আলোচনার সর্বশেষ অগ্রগতি জানতে চান। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ নিয়ে বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে, এমন কোনো কাজ করা হবে না।
শুল্ক আলোচনায় বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রচারণা নাকচ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে আমরা কেন এমন কাজ করব? তাহলে তো আন্ত মন্ত্রণালয় মিটিংয়ের দরকার হয় না। কিছু জিনিস মেনে নিয়ে কাজটা করে ফেললেই তো হয়ে যায়। সম্পূরক শুল্কের মতো আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়গুলোতে লবিইস্ট নিয়োগ করে ভালো ফল পাওয়া যায় না।’