<p>প্রত্যাশার আগুনে পারফরম্যান্সের বারুদ জ্বলে উঠছিল না কিছুতেই। ৮ খেলায় ২১০ রান আর এমন কী! ক্রিস গেইলের ব্যাটে আরো বড় বিস্ফোরণের আশায়ই তো গত বিপিএলে তাঁকে নিয়ে এসেছিল রংপুর রাইডার্স। ক্যারিবিয়ান দানবের সেই ভেজা বারুদে অবশেষে আগুনের স্পর্শ টুর্নামেন্টের শেষ ভাগে। প্লে-অফে বাঁচা-মরার এলিমিনেটরে ৫১ বলে অপরাজিত ১২৬ রানের ইনিংস। এক ম্যাচ বিরতিতে ফাইনালে ৬৯ বলে অপরাজিত ১৪৬ রানের আরেকটি খুনে ইনিংসে গেইল একাই শিরোপা জেতান রংপুর রাইডার্সকে।</p> <p>রংপুর রাইডার্সের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবারের বিপিএলে। গেলবার হাঁচড়ে-পাঁচড়ে প্লে-অফে ওঠা দলটি এবার লিগ পর্বের সেরা দল হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে সেখানে। সর্বশেষ ছয় ম্যাচ জয়ের টগবগে আত্মবিশ্বাস নিয়ে আজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে খেলবে প্রথম কোয়ালিফায়ার। জিতলে ফাইনাল, হারলেও  চূড়ান্ত মহারণের টিকিট পাওয়ার আরেকটি সুযোগ থাকবে।</p> <p>তবে রংপুর রাইডার্সের অবস্থার পরিবর্তন হলেও গেইলের রানরেখা ঘুরছে গেলবারের কক্ষপথেই। গত বিপিএলের প্লে-অফের আগে ৮ ম্যাচে ২১০ রান ছিল তাঁর; এবার ১০ খেলায় মাত্র ১৪২ রান। খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে ৫৫ রানের ইনিংস বাদে বলার মতো স্কোর নেই কোনো। টুর্নামেন্টে ১৫.৭৭ গড় গেইলের জন্য যতটা বিব্রতকর, তার চেয়ে কম নয় ১০৬.৭৬ স্ট্রাইকরেট। কে জানে, শেষের জন্যই হয়তো সবটা জমিয়ে রেখেছেন গেইল! ঠিক গতবারের মতো!</p> <p>রংপুর রাইডার্স খুব করে তা চাইবে। বিশেষত এবি ডি ভিলিয়ার্স চুক্তি শেষে ফিরে যাওয়ার পর। ইনজুরির কারণে অ্যালেক্স হেলসও চলে যাওয়ার পর।</p> <p>ফাইনালে ওঠার প্রথম সুযোগ আজ মাশরাফি বিন মর্তুজার দলের সামনে। প্রতিপক্ষ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, যে দলটিকে ঢাকা ডায়নামাইটসের সঙ্গে ব্র্যাকেটবন্দি করে বিপিএলের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ দলের স্বীকৃতি দেন রংপুর অধিনায়ক। তাদের বিপক্ষে খেলার আগে মাশরাফির দলের আকাশছোঁয়া আত্মবিশ্বাস থাকার কথা। প্রথমত সর্বশেষ ছয় ম্যাচে টানা জয়ের কারণে। দ্বিতীয়ত কুমিল্লার বিপক্ষে লিগ পর্বের দুটি ম্যাচের ফলের কারণে।</p> <p>ওই দুই মুখোমুখিতেই জয় রংপুর রাইডার্সের। এটুকুতে আসলে সব বলা হচ্ছে না। দুই খেলাতেই ৯ উইকেটের জয়ও বলছে না সব। ম্যাচগুলোয় মাশরাফির দলের দাপট কতটা ছিল, সেটি বুঝবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে দুই খেলাতেই এক শর নিচে গুটিয়ে দেওয়ার রেকর্ডে। একবার ৬৩, আরেকবার ৭২ রানে। সর্বশেষ ম্যাচটি আবার মাত্র দিন দুয়েক আগের ঘটনা। মাশরাফি তাই কুমিল্লাকে টুর্নামেন্টের অন্যতম ভারসাম্যপূর্ণ দলের স্বীকৃতি দিলে কী হবে, আজ ফেভারিট হিসেবে নামবে রংপুর রাইডার্সই।</p> <p>সেই ফেভারিটদের দুশ্চিন্তার জায়গা ডি ভিলিয়ার্স ও হেলসের চলে যাওয়া। টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে ছয় ম্যাচ খেলে গেছেন ‘৩৬০ ডিগ্রি’ ব্যাটসম্যান। প্রতিটিতেই জিতেছে দল। ৬১.৭৫ গড়ে ২৪৭ রান করে ফিরে গেছেন তিনি চুক্তি শেষে। সর্বশেষ চার ম্যাচে এক সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি করা হেলসের টুর্নামেন্ট শেষ ইনজুরির কারণে। টপ অর্ডারের চার দানবের মধ্যে রয়েছেন শুধু রাইলি রুশো ও গেইল। স্থানীয় ক্রিকেটারদের ওপর তাই আজ ভরসা করতে হবে রংপুরকে। বিপিএলে ১২ ম্যাচ খেলেও ফিফটির দেখা না পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন, ছয় ম্যাচে মোটে ৬০ রান করা মেহেদী মারুফদের সে আস্থার প্রতিদান দেওয়ার পালা।</p> <p>ডি ভিলিয়ার্স, হেলসের অনুপস্থিতিতে কুমিল্লার বিপক্ষে আজকের লড়াইয়ে খেলবেন রবি বোপারা। দলের পরিকল্পনায় ব্যাপক রদবদলের কিছু দেখছেন না। জয়ের জন্য যথাযথ কাজটুকুন করার ব্যাপারেও আশাবাদী তিনি, ‘আগে বোলিং করলে চাইব, ওদের যত কম রানের মধ্যে সম্ভব আটকে রাখতে। ব্যাটিং করলে চাইব, জেতার মতো রান করতে। রাতের ম্যাচে ১৫০-১৬০ রান করতে হবে। দিনের খেলায় অনেক সময় ১২০ রানও ভালো স্কোর।’</p> <p>কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে আগের মুখোমুখি দুই লড়াইয়ে ৬৩ ও ৭২ রানে আটকে দেওয়া রংপুর রাইডার্সের জন্য বোপারার বলা স্কোরই তো যথেষ্ট হওয়ার কথা।</p> <p>রংপুর-কুমিল্লার এ দ্বৈরথে পরাজিত দলেরও ফাইনাল খেলার আশা টিকে রইবে। ঢাকা ডায়নামাইটস-চিটাগং ভাইকিংসের তা নয়। এই এলিমিনেটরে যে দল হারবে, তারাই বাদ। টানা পাঁচ হারে প্লে-অফের আগেই বাদ পড়ার পথে ছিল ঢাকা। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে খুলনা টাইটানসকে হারিয়ে তবে মুখরক্ষা।</p> <p>দলের অধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পরও ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ আশাবাদী। চিটাগং ভাইকিংসের কাছে লিগ পর্বের দুটো ম্যাচ হারার রেকর্ডও বিচলিত করতে পারছে না তাঁকে, ‘আমাদের জন্য এখন নক আউট পর্ব। জিতলে থাকব, হারলে বিদায়। এমন একটি অবস্থায় অবশ্যই এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। আমরা এর আগে চিটাগংয়ের বিপক্ষে হেরেছিলাম লিগ পর্বে। তবে কাল (আজ) তো নতুন দিন।’ সেই নতুন দিনে নতুন পারফরম্যান্সের আশা তাঁর। বিশেষত তারকা ক্রিকেটারদের কাছ থেকে, ‘আমাদের বিদেশি ক্রিকেটাররা এখনো সেভাবে পারফরম করেনি। হয়তো বা এই সময়ের জন্যই করেনি। এখন হয়তো জ্বলে উঠবে। আন্দ্রে রাসেল এমন একজন ক্রিকেটার, যে একাই ম্যাচ জিতিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে। সাকিবের কাছ থেকেও রান পাইনি কয়েকটি ম্যাচে। এখন আমরা যদি পরিকল্পনা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারি, তাহলে অবশ্যই ভালো সুযোগ আছে আমাদের।’</p> <p>চিটাগং ভাইকিংসের সুযোগও বা কম কী! তার ওপর যদি ইনজুরি কাটিয়ে আজ একাদশে ফেরেন রবি ফ্রাইলিঙ্ক। কাল একাডেমি মাঠে যেভাবে ব্যাটিং-বোলিং অনুশীলন করেছেন, তাতে তাঁর না খেলার কারণ নেই। তবে দলের প্রতিনিধি হিসেবে গণমাধ্যমের সামনে এসে পেসার খালেদ আহমেদ নিশ্চিত করেননি তা, ‘এটি আমি বলতে পারব না। ম্যানেজমেন্ট এবং কোচিং স্টাফরা জানেন। আমি যা দেখছি, ফ্রাইলিঙ্ক মোটামুটি সুস্থ। সুতরাং খেলতেও পারে।’ প্রতিপক্ষ ঢাকা ডায়নামাইটসকে বড় দলের স্বীকৃতি দিলেও তাতে যে ভীত নন, সেটিও জানিয়ে যান চিটাগং ভাইকিংসের পেসার, ‘ঢাকা অনেক বড় দল। তবে বড় দল হলে সমস্যা নেই। গত দুই ম্যাচে আমরা তাদের হারিয়েছি। এই ম্যাচেও চাইব ভালো খেলতে। ভালো খেলেই জিততে চাইব আমরা।’</p> <p>এ দ্বৈরথে জিততেই হবে যে! নইলে বিপিএল থেকে বিদায়। রংপুর রাইডার্স-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের লড়াইয়ে পরাজিত দলের সামনেও থাকবে ‘লাইফলাইন’। লিগ পর্বের শীর্ষ দুই দলে থাকার একটা সুবিধা আছে না!</p>