<p style="text-align: justify;">ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের বড়হিত উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর আয়া পদে চাকরি করেন মাজেদা খাতুন। তার এই পদটি ছিল অস্থায়ী। আশায় বুক বেঁধে ছিলেন নিজে অস্থায়ীভাবে দীর্ঘ সময় চাকরি করলেও মেয়ে হাদিছা খাতুন এক দিন এই স্কুলেই আয়া পদে স্থায়ী চাকরি পাবেন। কিন্তু বিধিবাম। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেও কোনো লাভ হয়নি হাদিছা খাতুনের। মায়ের অস্থায়ী আয়া পদে স্থায়ীভাবে চাকরি পাওয়ার আশা ভেস্তে গেল টাকার কাছে।</p> <p style="text-align: justify;">মাজেদার অভিযোগ, বিপুল অর্থের বিনিময়ে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় তৃতীয় হওয়ায় একজনকে এই পদে গত সোমবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেছেন মাজেদা খাতুন।  </p> <p style="text-align: justify;">স্থানীয়রা জানায়, ঈশ্বরগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে বড়হিত উচ্চ বিদ্যালয়টির অবস্থান। দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যালয়টিতে আয়া পদ ছাড়াও নিরাপত্তাকর্মী ও অফিস সহকারী পদসহ বিভিন্ন পদ শূন্য ছিল। এর মধ্যে বিদ্যালয়ের পাশের বৃ-পাঁচাশি গ্রামের দরিদ্র চান মিয়ার স্ত্রী মাজেদা খাতুন ২০১১ সালে মাসিক ৫০০ টাকা বেতনে বিদ্যালয়টিতে আয়া পদে কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে প্রাইমারি শেষ করে মায়ের স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন মেয়ে হাদিছা খাতুন। ওই স্কুল থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৪.৭১ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি কলেজে ভর্তি হন হাদিছা। </p> <p style="text-align: justify;">মাজেদা খাতুন জানান, আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় কলেজে ভর্তির পর হাদিছাকে ঢাকায় একটি গার্মেন্টেসে চাকরি ব্যবস্থা করা হয়। বর্তমানে সেখানেই চাকরি করছেন তিনি। </p> <p style="text-align: justify;">এর মধ্যে গত বছরের ৫ জুলাই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বড়হিত উচ্চ বিদ্যালয়ে বিভিন্ন পদ ছাড়াও আয়া পদে লোক নেওয়া হবে। এই বিজ্ঞপ্তি দেখে আয়া পদে আবেদন করেন হাদিছা। এরপর ওই বছরের ২৮ ডিসেম্বর নান্দাইল চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাদিছাসহ আরো পাঁচজন অংশ নেন। পরীক্ষা শেষে ওইদিনই ফলাফল ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু রাত ১০টার দিকে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায় ফলাফল এখন প্রকাশ করা হবে না। এর মধ্যে কেটে গেছে চার মাস। এই সময়ে ফলাফল প্রকাশ না করে গত ৩০ এপ্রিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়া নাজমা বেগম নামের একজনকে ডেকে নিয়ে নিয়োগপত্র তুলে দেন। </p> <p style="text-align: justify;">মাজেদা আরো বলেন, গোপন সূত্রে জানতে পেরেছি, আমার মেয়ে পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে। যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তিনি পরীক্ষায় তৃতীয় হয়েছেন। প্রায় আট লাখ টাকার বিনিময়ে তার চাকরি হয়েছে। </p> <p style="text-align: justify;">তিনি আরো বলেন, ‘অনেক আশায় আছলাম যে, আমি কুলুর বলদের মতো কাম কইর‌্যা অইলেও মেয়েডারে এইহানো ঢুহাইয়াম। কিন্তু যোগ্যতা ছাড়াও ভালো করলেও চাকরিডা অইছেনা। পরীক্ষায় খারাপ কইর‌্যা যে টেহা দিছে তারডা অইছে।’</p> <p style="text-align: justify;">এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান উদ্দিন জানান, তিনি অনেক আগেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া পুরো বিষয়টি সর্ম্পকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবগত রয়েছেন। </p> <p style="text-align: justify;">জানতে চাইলে বড়হিত উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. শাহ জালাল টাকার বিনিময়ে কোনো নিয়োগ হয়নি বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘বোঝা-পরামর্শ ও মিটিং করতে করতে দেরি হইছে। অন্য কিছু না।’</p> <p style="text-align: justify;">নিয়োগ পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও ‍উচ্চ শিক্ষা মহাপরিচালকের প্রতিনিধি ছিলেন নান্দাইল চন্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল্লা। তিনি বর্তমানে ময়মনসিংহের একটি সরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। </p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, ওই সময় পরীক্ষা শেষে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে ফলাফল ঘোষণার জন্য প্রধান শিক্ষককে বলা হয়। তিনি কেন ঘোষণা করেননি এটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। তবে নিয়মানুযায়ী প্রার্থীদের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করতে হয়। কেন চার মাস পর নিয়োগপত্র দেওয়া হলো, তা বোধগম্য নয়।</p> <p style="text-align: justify;">জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাটি তদন্ত করতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে।</p>