<p>যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে গত শনিবার রাতে সন্ত্রাসী হামলার পর উগ্রবাদ মোকাবেলা উদ্যোগ ও নিরাপত্তাই বড় ইস্যু হয়ে উঠেছে। হামলায় সন্দেহভাজন তিন হামলাকারীসহ মোট ১০ জন নিহত এবং প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বড় দলগুলো এক দিনের বিরতির পর গতকাল সোমবার থেকে আবার নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলেও এখনো সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।</p> <p>লন্ডন হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। আইএসের বার্তা সংস্থা আমাক রবিবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলেছে, আইএস যোদ্ধারা বিচ্ছিন্নভাবে লন্ডনে হামলাটি চালিয়েছে।</p> <p>ব্রিটিশ পুলিশ জানিয়েছে, লন্ডন ব্রিজ ও বরো মার্কেট এলাকায় সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত তিনজনের পরিচয় তারা নিশ্চিত হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই প্রকাশ না করলেও যত দ্রুত সম্ভব প্রকাশ করা হবে। রবিবার রাতে পূর্ব লন্ডন ও বার্কিং এলাকা থেকে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিবিসি জানিয়েছে, পূর্ব লন্ডনের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়েছে।</p> <p>শনিবার স্থানীয় সময় রাত ১০টার দিকে লন্ডন ব্রিজে ভিড়ের মধ্যে একটি ভ্যান চালিয়ে দেয় তিন হামলাকারী। এর পরপরই তারা সাদা রঙের ওই ভ্যান থেকে ছুরি হাতে বেরিয়ে আসে এবং কাছের বরো মার্কেট এলাকায় সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালায়। হামলায় সাতজন নিহত ও ৪৮ জন আহত হয়। হামলাকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ ৫০টি বুলেট ছোড়ে। এতে তিন হামলাকারীও নিহত হয়। </p> <p>ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও কনজারভেটিভ দলের নেতা টেরেসা মে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের কঠোর হাতে দমনের অঙ্গীকার করেছেন। এ জন্য বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ওপর গুরুত্বারোপ করার পাশাপাশি উগ্রবাদী প্রপাগান্ডা মোকাবেলায় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে লেবার, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস ও ইউকেআইপির মতো দলগুলো অতীতে পুলিশের সংখ্যা কমানোর সমালোচনা করছে।</p> <p>ডাউনিং স্ট্রিটের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে সন্ত্রাস, ব্রেক্সিট ও অর্থনীতি সামাল দিতে সক্ষম এমন বলিষ্ঠ এক নেতা বেছে নেওয়ার ওপর জোর দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। লন্ডন হামলার পর গত রবিবার এক বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়। সব কিছু যেভাবে চলছে সেভাবে চলতে দিতে পারি না, দেওয়াও যাবে না।’</p> <p>ব্রিটিশ সংস্কৃতিমন্ত্রী কারেন ব্রান্ডলে বিবিসিকে বলেন, অনলাইনে উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর অর্থ হলো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কিত আরো বেশি বেশি তথ্য পাওয়া।</p> <p>ব্রিটিশ সরকার ‘এনক্রিপট মেসেজ সার্ভিসে’ (গোপনীয়) ঢুকতে চাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে কারেন ব্রান্ডলে বলেছেন, অতীতে প্রযুক্তি শিল্প তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে স্পর্শকাতর ছবি সরিয়ে নিয়েছে। এখন মন্ত্রীরা অনলাইনে উগ্রবাদী প্রচারণার ব্যাপারে একই উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন।</p> <p>নির্বাচনে ভোটাররা বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানগুলোর পার্থক্য থেকে নিজেদের পছন্দ ঠিক করেন। তবে আগামী বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের মাত্র চার দিন আগে সন্ত্রাসী হামলা রাষ্ট্রের সুরক্ষার বিষয়টিকে ভোটারদের সামনে বড় ইস্যুতে পরিণত করেছে।</p> <p>ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে উগ্রবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় রূপরেখা তুলে ধরছেন। তবে পুলিশের জন্য টোরিদের ব্যয় সংকোচন নীতি নিয়ে তাঁকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হচ্ছে।</p> <p>অন্যদিকে লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন বারবার আশ্বাস দিচ্ছেন, পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য তিনি খরচ কমাবেন না বরং বাড়াবেন। তাঁর মতে, নিরাপত্তা খরচ কমিয়ে বা কিপটেমি করে সরকার জনগণকে রক্ষা করতে পারছে না।</p> <p>করবিন দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী হলে জনগণের নিরাপত্তায় তিনি অবশ্যই প্রয়োজনীয় ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।</p> <p>টোরিদের বিরুদ্ধে লেবারের অভিযোগ, ২০১০ সাল থেকে সশস্ত্র পুলিশ সদস্যের ঘাটতি মোকাবেলায় উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এ কারণে প্রয়োজনের তুলনায় যুক্তরাজ্যে পর্যাপ্ত সশস্ত্র পুলিশ সদস্য নেই। আর সন্ত্রাসীরা এ সুযোগে বারবার মাথাচড়া দিচ্ছে। তবে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক সিলেক্ট কমিটির সাবেক সভাপতি ইভেটি কপারের মতে, পুলিশের সদস্য সংখ্যা অপ্রতুলতার সঙ্গে হামলার সরাসরি যোগসূত্র খোঁজা ঠিক হবে না। যদিও পুলিশের সংখ্যার ঘাটতির কারণে অনেক সময় গোয়েন্দা তথ্য ও হামলার ঝুঁকি নিরূপণ করা কঠিন হয়।</p> <p>লিবারেল ডেমোক্র্যাট নেতা টিম ফ্যারনও পুলিশের জন্য বাজেট কমানোর সমালোচনা করেছেন।</p>