<p>সমাজ উন্নয়ন ও মানবতার সেবায় রোজার বহু উপকারিতা রয়েছে। কিন্তু রোজার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো তাকওয়া অর্জন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগের লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া বা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)</p> <p>তাকওয়া অর্থ বাঁচা, আত্মরক্ষা করা, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অপরাধ, অন্যায় ও আল্লাহর অপছন্দনীয় কথা ও কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নাম তাকওয়া। একবার হজরত উবাই ইবনে কাব (রা.)-কে হজরত ওমর (রা.) তাকওয়ার স্বরূপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেছেন, ‘হে ওমর, পাহাড়ের দুই ধারে কাঁটাবন, মাঝখানে সরু পথ। এমতাবস্থায় কিভাবে চলতে হবে?’ হজরত ওমর (রা.) জবাব দিলেন, ‘গায়ে যেন কাঁটা না লাগে, সাবধানে পথ চলতে হবে।’ হজরত কাব (রা.) বললেন, ‘এটাই তাকওয়া।’</p> <p>হজরত ওমর (রা.)-এর জীবনের আরো একটি ঘটনা থেকে তাকওয়ার মর্ম উপলব্ধি করা যায়। খলিফা থাকা অবস্থায় তিনি লোকজনের খোঁজখবর নেওয়ার জন্য রাতের বেলা অলিগলিতে বের হতেন। এক রাতে তাহাজ্জুদের পর তিনি হাঁটছেন। হঠাৎ দেখলেন, একটি ঘর থেকে কথাবার্তার শব্দ শোনা যাচ্ছে। সাধারণত কারো ব্যক্তিগত কথা আড়ি পেতে শোনা বৈধ নয়, কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যক্তির জন্য প্রয়োজনে তা বৈধ। কথাবার্তার ধরন দেখে ওমর (রা.)-এর কৌতূহল জন্মে। তিনি ঘরের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ালেন। তিনি শুনতে পেলেন, এক বৃদ্ধা তার মেয়েকে বলছে, ‘বেটি! আজ তো উটের দুধ কম হয়েছে। এত অল্প দুধ বিক্রি করে দিন গুজরান করা কষ্টকর হবে। তাই দুধের সঙ্গে একটু পানি মিশিয়ে দাও।’</p> <p>মেয়ে জবাব দিল, ‘মা! আমিরুল মুমিনিন তো দুধের সঙ্গে পানি মেশাতে নিষেধ করেছেন?’ বৃদ্ধা বললেন, ‘আমিরুল মুমিনিন কি আমাদের দেখছেন? তিনি হয়তো নিজ ঘরে ঘুমিয়ে আছেন। তুমি নিশ্চিন্তে পানি মেশাতে পারো।’ এ কথার জবাবে মেয়ে বলল, ‘মা, আমিরুল মুমিনিন এখানে নেই এবং তাঁর কোনো লোকও নেই। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তো আছেন! তিনি তো দেখছেন! তাঁঁর কাছে আমরা কী জবাব দেব?’</p> <p>ওমর (রা.) দেয়ালের ওপাশ থেকে সব কথা শুনতে পাচ্ছিলেন। এতটুকু শুনেই তিনি চলে এলেন। পরদিন লোক পাঠিয়ে সে ঘরের খোঁজখবর নিলেন। তারপর বৃদ্ধার কাছে পয়গাম পাঠালেন—‘আপনি সম্মত হলে আপনার মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের বিয়ে দিতে চাই।’</p> <p>এভাবে তাকওয়ার বদৌলতে মেয়েটি আমিরুল মুমিনিনের পুত্রবধূ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। এই বরকতময় ঘরের তৃতীয় পুরুষে জন্মগ্রহণ করেন খলিফা ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.), যাঁকে পঞ্চম খলিফায়ে রাশেদ বলা হয়।</p> <p>আসলে মানুষের অন্তরে সর্বক্ষণ এই ধ্যান জাগ্রত থাকা যে ‘আল্লাহ আমাকে দেখছেন’—এর নামই তাকওয়া। মাহে রমজান মানুষের মধ্যে এমনই বিশ্বাস বদ্ধমূল করতে চায়। তাই মাহে রমজান মূলত তাকওয়া ও খোদাভীরুতার প্রশিক্ষণের মাস।</p> <p>তাকওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে পবিত্র কোরআনে প্রায় আড়াই শর বেশি আয়াত আনা হয়েছে। কেবল সুরা বাকারায়ই প্রায় ৩০ বার তাকওয়া শব্দের ব্যবহার করা হয়েছে। তাকওয়াই হলো ইবাদতের প্রাণশক্তি। এ জন্য পবিত্র কোরআনে প্রতিটি বিধিবিধানের পরই তাকওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তাকওয়াবিবর্জিত ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ শুধু মুত্তাকিদের আমল কবুল করেন।’ (সুরা : মায়েদা, আয়াত : ২৭)</p> <p>লেখক : সিইও, সেন্টার ফর ইসলামিক ইকোনমিকস বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা</p>