ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭

জামায়াত-শিবির থেকে আ. লীগে পদধারী

লায়েকুজ্জামান
লায়েকুজ্জামান
শেয়ার
জামায়াত-শিবির থেকে আ. লীগে পদধারী

রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে দলবদল বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। নীতি-আদর্শের কথা ভুলে ফায়দা লুটতে অতীতে অনেকেই যোগ দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলে। এক দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ার এই প্রক্রিয়া বর্তমানে অনেকটা পাল্টে গেছে। বর্তমানে যে প্রক্রিয়ায় নিজ দল ছেড়ে ক্ষমতাসীন দলে যোগ দেওয়া হচ্ছে তাকে আর দলবদল বলা যায় না।

বলা যায়, অনুপ্রবেশ। এই প্রক্রিয়ায় বিএনপি ও জামায়াত-শিবির ছেড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ শুরু হয় ২০০৯ সাল থেকে। আর এই অনুপ্রবেশ স্রোতের আকার ধারণ করে ২০১৪ সালে চারদলীয় জোটের সহিংস আন্দোলন দমে যাওয়ার পর থেকে। ২০১৫ সালের ৮ নভেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘জামায়াত-শিবির ও বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে নয়।
’ কিন্তু তার পরও অনুপ্রবেশ থেমে নেই। নানা প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির-বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের পর অনেকে পদ-পদবিও বাগিয়ে নিচ্ছেন। বর্তমানে ঢালাওভাবে এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও এরই মধ্যে যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে বসে পড়েছেন।

যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর দেশের যে কয়েকটি স্থানে বেপরোয়া নাশকতার ঘটনা ঘটে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট ও সাতক্ষীরা।

এই তিন জেলায় নাশকতা মামলার একাধিক অভিযুক্ত জামায়াত-শিবির নেতা বর্তমানে আওয়ামী লীগে।

২০১৬ সালে বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগে যোগ দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার বারঘরিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের আমির মাওলানা আবুল খায়ের। তার আগে একই বছর ১ অক্টোবর জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা সোহরাব আলী, জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় নেতা আফরোজ জুলমত আলী, জামায়াত নেতা আবদুল্লাহহেল বাকী, মিজানুর রহমান আওয়ামী লীগে যোগ দেন। এঁরা সবাই একাধিক নাশকতা মামলার আসামি। যোগ দেওয়ার পর ধীরে ধীরে তাঁদের মামলাগুলো অন্তরালে চলে যেতে থাকে।

 

২০১৫ সালের ৮ জুন জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগের এমপি সামছুল আলম দুদুর হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন নাশকতা ও সহিংসতার ১০ মামলায় অভিযুক্ত পাঁচবিবি উপজেলার কুসুম্বা ইউনিয়ন জামায়াতের আমির আবদুস সালাম। ২০১৩ সালের ৩ মার্চ পাঁচবিবি থানায় দায়ের হওয়া আওয়ামী লীগের কর্মী ও সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি মামলাসহ ৯টি মামলা রয়েছে তাঁর নামে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সামনে রেখে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা কাউন্সিল শুরু হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে। চলে ২০১৬ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে তৃণমূলে কোন্দল ও রাজনৈতিক চাপে প্রায় ৫০ ভাগ ইউনিটে কাউন্সিল হতে পারেনি। এসব কাউন্সিল না করেই কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হয়েছিল।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, জামায়াত থেকে যারা ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদের একটি অংশ দলীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের পদ-পদবি পেয়েছে। যারা পদ-পদবি পায়নি তাদের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মাদরাসা পরিচালনা পরিষদ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সূত্র ও কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে ৬২টি যোগদানের ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যার দিক দিয়ে যোগদানে বিএনপির সংখ্যা বেশি হলেও জামায়াত থেকে যোগদান করা নেতা-কর্মীদের সংখ্যা সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার। ইতিমধ্যে যোগদান করা এসব জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের পদ-পদবি পেয়েছে। যার পরিমাণ ৪ শতাংশ।

২০১৫ সালে শিবির থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেন রাজশাহী বাগমারার উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মোল্লা এম আলতাফ হোসেন। একসময় তিনি ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবির রাজশাহী পশ্চিম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। একই বছর আওয়ামী লীগে যোগ দেন বাগমারায় বাংলা ভাইয়ের সহযোগী হিসেবে পরিচিত জেএমবি নেতা আবদুস সালাম। তিনি বর্তমানে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষিবিষয়ক সম্পাদক। একই সঙ্গে যোগ দেওয়া বাগমারা উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নুরুল ইসলামকে করা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাগমারা উপজেলার বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদরাসার পরিচালনা পর্ষদ থেকে পুরনো আওয়ামী লীগ নেতাদের সরিয়ে জামায়াত নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ঝালকাটির রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল শিকদার একসময় ছিলেন রাজাপুর উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি। বর্তমানে তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

ঝালকাটির সৌজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও নৌকা প্রতীকে বিজয়ী ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান রিপন একসময়ে ছিলেন বরগুনার বেতাগী কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি।

ঝালকাটির রাজাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন মাদবর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল শিকদার একসময় ছাত্রশিবিরের নেতা ছিলেন, এটা এলাকার সব মানুষ জানে। এমপি তাঁকে দলে এনেছেন। আমরা প্রতিবাদ করেছি, লাভ হয়নি।’

কাঁঠালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তরুণ শিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, মাহমুদ হাসান রিপন সৌজালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি একসময়ে বেতাগী কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিল। এরা স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের লোক। এমপি বি এইচ হারুন এই স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের লোকদের দলে জায়গা দিয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হয়েছেন ওই উপজেলা জামায়াতের সদস্য আবু তাহের খান।

দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নির্বাচনী এলাকা পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক শেখ শামীম বর্তমানে একই ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।

ইন্দুরকানীর পাড়েরহাট ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সদস্য দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ঘনিষ্ঠ বলে এলাকায় পরিচিত গিয়াসউদ্দিনকে ওই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

ইন্দুরকানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন—শুনেছি, ছাত্রশিবির থেকে একজন যোগ দিয়েই যুবলীগের বালিপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এ বিষয়ে যুবলীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বললে ভালো হয়। গিয়াসউদ্দিন সম্পর্কে তিনি বলেন—শুনেছি, তিনি ছাত্রজীবনে অন্য রাজনীতি করতেন, তবে অনেক দিন ধরে আওয়ামী লীগ করেন। তিনি স্থানীয় একটি মাদরাসার সুপার। এ বিষয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমরাও শুনেছি শামীম ছাত্রশিবির করতেন, তবে কোনো প্রমাণ পাইনি।’ ইন্দুরকানী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন গাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, শেখ শামীম ছিলেন বালিপাড়া ইউনিয়ন শিবিরের সাধারণ সম্পাদক। তাঁকে দলে আনার প্রতিবাদে এলাকায় মানববন্ধন হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার কাপাসাঁথিয়া ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সদস্য রওশন আলী বর্তমানে ওই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি। ২০১০ সালে হরিণাকুণ্ডু উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন আহ্বায়ক বর্তমান সভাপতি মশিউর রহমান জোয়ার্দারের মাধ্যমে তিনি দলে যোগ দেন।

নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার উপজেলার খাককান্দা ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক প্রচার সম্পাদক তোফাজ্জেল হোসেনকে ইউনিয়ন ওলামা লীগের সভাপতি করা হয়েছে।

বরিশালের গৌরনদী উপজেলা জামায়াতের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ নুরুল হক বর্তমানে গৌরনদী উপজেলা ওলামা লীগের সভাপতি। ওলামা লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার আগে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সদস্য মাওলানা আনিসুর রহমান। তাঁকে বর্তমান কমিটির সদস্য করা হয়েছে। অন্যদিকে অন্য কোনো কমিটির কাউন্সিল না হওয়া ও ওলামা লীগে জামায়াত থেকে যোগ দেওয়াদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে উপজেলা জামায়াতের সাবেক সদস্য জাফর শরীফকে স্থানীয় আল-হেলাল স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম জয়নাল আবেদীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাফেজ নুরুল হক, মাওলানা আনিসুর রহমান ও জাফর শরীফ—সবাই জামায়াতের রাজনীতি করতেন। তবে নুরুল হক বর্তমানে ওলামা লীগে নেই। সম্প্রতি কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা তিনজন পদে না থাকলেও আমাদের দলে আছেন্। আমাদের সঙ্গে মিটিং-মিছিল করেন।’

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মাহাবুবুর রহমান ছিলেন সদর উপজেলা জামায়াতের সদস্য। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাষক মামুনকে। মামুন হত্যাসহ দুটি হত্যা মামলার আসামি এই মাহাবুবুর রহমান ।

সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান সহসভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হন। ওই সময় তিনি জামায়াত নেতা ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর দলে যোগ দেন।

বর্তমানে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বনি আমিন একসময় ছিলেন ওই ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি। একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সহসভাপতি আবুল হোসেন ছিলেন ওই ওয়ার্ড ছাত্রশিবিরের সহসভাপতি।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার প্রভাবশালী জামায়াত নেতা, উপজেলা জামায়াতের সাবেক সদস্য রেজাউল করিমকে শ্যামনগরের কৈখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে।

শ্যামনগরের আটালিয়া ইউনিয়ন শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান বর্তমানে ওই ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগরদাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান জামায়াত নয়, বিএনপি করতেন। তবে তিনি সাঈদীর মামলার রায়ের পর জামায়াতের হাতে নিহত আওয়ামী লীগ নেতা প্রভাষক মামুন হত্যা মামলার আসামি। মাহবুবুর রহমান কি জামায়াত অফিস থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, উনি বিএনপি হিসেবে গ্রেপ্তার হন।

নাটোরের লালপুর বিলমারিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং দুরদুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ করা হয়েছে ছাত্রশিবির নেতা আবু রায়হানকে। তিনি আবদুলপুর কলেজ ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিলেন। ২০০৩ সালে আবদুলপুর কলেজে ছাত্রলীগ-শিবির সংঘর্ষের সময় ছাত্রশিবিরের নেতারা ছাত্রলীগ নেতা আহসান হাবিব বকুলের হাত কেটে নিয়ে উল্লাস মিছিল করে। সে মামলার আসামি ছিলেন এই আবু রায়হান।

লালপুরের আরবাব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য করা হয়েছে আবু তালেবকে। তিনি ছিলেন উপজেলা জামায়াতের সদস্য। দয়ারামপুর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি আলী আকবর বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য। তাঁকে তালতলা মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।

লালপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য করা হয়েছে ছাত্রশিবিরের সক্রিয় কর্মী জামিল আকতারকে। তাঁর চাচা আলাউদ্দিন জামায়াতের কেন্দ্রীয় কমিটির রোকন।

লালপুর উপজেলা জামায়াতের সদস্য বিত্তবান আমজাদ হোসেনকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।

লালপুর উপজেলা ছাত্রশিবির নেতা নয়া দিগন্ত পত্রিকার স্থানীয় সংবাদদাতা আবু রায়হানকে উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে।

লালপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক নেতা, সাবেক এমপি মমতাজউদ্দিনের ছেলে শীমম আহমেদ সাগর বলেন, ‘দলে জামায়াত-শিবিরকে স্থান দেওয়ার প্রতিবাদ করায় আমি ও আমার মা সাবেক এমপি শেফালী মমতাজকে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।’

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা জামায়াতের সভাপতি আবু বকর খান আওয়ামী লীগে যোগ দেন ২০১৬ সালে। যোগদান অনুষ্ঠানে ঘোষণা করা হয়, দলীয় কাউন্সিল হয়ে যাওয়ায় তাঁকে আপাতত কমিটিতে পদ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে যোগদানকারী সবাইকে আওয়ামী লীগের সদস্য করে নেওয়া হলো।

জামায়াত-জেএমবি থেকে দলে আসা নেতাদের আওয়ামী লীগের পদ-পদবি দেওয়ার কথা স্বীকার করে বাগমারা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এদের দলে নেওয়ার বিষয়ে প্রতিবাদ করে কোনো প্রতিকার পাইনি। এখানে এমপির কথায় সংগঠন চলে, দলের নেতাদের পাত্তা নেই।’

২০১৫ সালে রাজশাহীর পুটিয়ায় একসঙ্গে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এক ডজন জামায়াত নেতা। তাঁদের মধ্যে পুটিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন  কৃষক লীগের সভাপতি করা হয়েছে উপজেলা জামায়াতের প্রভাবশালী সদস্য আরিফ হোসেনকে। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে জামায়াত নেতা মজিবুর রহমানকে, সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে পুটিয়া থানা জামায়াতের আরেক নেতা কাদের আলীকে।

পুটিয়া আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য এমপি প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহসান-উল হক মাসুদ বলেন, জামায়াত-বিএনপি থেকে দলে লোক এনে পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে, এটা সত্য। তিনি বলেন, এখানে উপজেলা ও জেলার রাজনীতির মধ্যে সমন্বয় নেই। এমপিরা যেমন মনে করেন প্রশাসন তাঁদের কথায় চলবে, তেমনি মনে করেন দলও তা-ই।

এ বিষয়ে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘শুনেছি, বিএনপি-জামায়াতের হাজার ত্রিশেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে আমি এখনো কাজ করিনি। তবে সংখ্যা যা-ই হোক, এরা অনুপ্রবেশ করে দলে পদ পেয়েছে—এ কথা সত্যি। সংখ্যা ৩০ না হয়ে যদি তিন হাজারও হয় বা ৩০০-ও হয়, ওরা কিন্তু সিদ্ধান্ত নিয়ে অনুপ্রবেশ করেছে—এটা উদ্বেগজনক। কারণ জামায়াত ও বিএনপির জামায়াতপন্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েই প্রবেশ করে। কারণ তারা জঙ্গি হয়ে বাইরে থেকে কিছু করতে পারেনি, এখন ভেতরে থেকে কিছু করতে চায়।’

দলে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশ ও পদ-পদবি পাওয়াদের সংখ্যা নিয়ে দ্বিমত প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিছু অনুপ্রবেশ তো ঘটেছে, হয়তো তাদের কেউ কেউ গোপনে পদও বাগিয়ে নিয়েছে। আমরা বিষয়টি দেখব। জামায়াত-শিবিরের জায়গা আওয়ামী লীগে কেন হবে?’

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ

সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

রাজধানীতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।

বিক্ষোভে তাঁদের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্লোগানে বলা হয়, চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে, চাঁদাবাজদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না ইত্যাদি।

এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে বয়কটের ঘোষণাও দেয় তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।

সরকারকে বিব্রত করতে এবং বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এসব অপকৌশল।

রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।

একইভাবে মিছিলে অংশ নেওয়া মিজু নামে আরেক শিক্ষার্থী সাভারের বাসিন্দা এবং তিনিও ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তে এসেছে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।

মন্তব্য
বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং

১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি। 

অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।

এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।

২০২৩ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩১৯টি, খুন তিন হাজার ২৩টি, ধর্ষণ পাঁচ হাজার ১৯১টি, নারী নির্যাতন ১১ হাজার ২৭টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৭১৩টি। ২০২২ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪০৬টি, খুন তিন হাজার ১২৬টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩২টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৫১৮টি এবং শিশু নির্যাতন তিন হাজার ২০৫টি। ২০২১ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০৮টি, খুন তিন হাজার ২১৪টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩৪১টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৮৫৫টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯২৮টি। ২০২০ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০২টি, খুন তিন হাজার ৫৩৯টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৫৫৫টি, নারী নির্যাতন ১৩ হাজার ৪৩১টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৫১৫টি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছেএমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।

তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।

দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে অন্য একজনকে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিছানার ওপর স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।

সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এদিকে ছেলের বউ রুবি ওষুধ আনার কথা বলে তার নিজের দুই সন্তান রেখে বাড়ির বাইরে গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরেনি। তার যমজ শিশু দুটি নিজেদের ঘরের ভেতর যেতে ভয় পাচ্ছিল। সন্দেহ হলে ঘরের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে খাটের নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় হাজেরার মরদেহ পাওয়া যায়। 

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। 

অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।

নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।

ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।

নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার  যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।

পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।

গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা

হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।

এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।

কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে রেখেছে আয়কর গোয়েন্দা। এই গোয়েন্দা ইউনিটে চালুর অপেক্ষায় ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ডেটা এনালিসিস ব্যবস্থা।

আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।

প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার হিসেবে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন আয়কর ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আবদুর রকিব। তাঁর নেত্বত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের মেধাবী আয়কর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আয়কর গোয়েন্দারা তাঁদের লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছেন।

কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা, যানবাহন, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ঘাটতি আছে এই ইউনিটে।

জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।

জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ