এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর প্রতিবছর সেই ফল পর্যালোচনার জন্য শিক্ষার্থীদের আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৪ সালে আট সাধারণ বোর্ডসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী। গত বছর সে সংখ্যা ছিল এক লাখ ২৯ হাজার ৩০১ জন। এ বছর আবেদন করেছিল এক লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ শিক্ষার্থী।
পরীক্ষার খাতা দেখায় নৈরাজ্য
শরীফুল আলম সুমন

পুনর্নিরীক্ষার আবেদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফল রদবদলের হারও বেড়েছে। ২০১৫ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১০ শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছিল দুই হাজার ৯১ শিক্ষার্থীর। এর মধ্যে অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছে ৪০৪ জন, নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৪১ জন। বাকিদের গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, ভালো পরীক্ষা দেওয়া সত্ত্বেও পরীক্ষকদের অবহেলা ও অদক্ষতায় শিক্ষার্থীরা যথাযথ ফল পাচ্ছে না।
আবার যেসব শিক্ষার্থী ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করছে তারাও শুভংকরের ফাঁকিতে পড়ছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মনে করছেন ফল পুনর্নিরীক্ষণের অর্থ নতুন করে খাতা দেখা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। মূলত উত্তরপত্রের নম্বর যোগ ও বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না, তা দেখেই পুনর্নিরীক্ষণ শেষ করা হয়। মূল খাতায় হাতই দেওয়া হয় না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ফল পুনর্নিরীক্ষণে সাধারণত চারটি দিক খেয়াল করা হয়—সব প্রশ্নের উত্তরে নম্বর সঠিকভাবে দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর (অপটিক্যাল মার্ক রিডার) শিটে তোলা হয়েছে কি না এবং নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট ঠিক আছে কি না। তবে উত্তরপত্র পুনরায় মূল্যায়ন করা হয় না। অর্থাত্ কোনো শিক্ষার্থী কোনো প্রশ্নে নম্বর কম বা বেশি পাবে কি না, তা দেখা হয় না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নম্বর যোগ-বিয়োগের ভুলেই প্রতিবছর একেকটি পাবলিক পরীক্ষায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এ ক্ষেত্রে পুনরায় খাতা দেখলে আবেদনকারীদের বেশির ভাগেরই ফল পরিবর্তন হতো। পরীক্ষকদেরও আরো কয়েক গুণ ভুল ধরা পড়ত।
বরিশাল বোর্ডের এবারের এসএসসির ফল বিশ্লেষণ করলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অভিযোগের সত্যতা মেলে। গত ১১ মে এসএসসির ফল প্রকাশিত হয়। তাতে বরিশাল বোর্ডে হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়। তাদের মধ্যে সর্বজিত্ ঘোষ হৃদয় নামে এক পরীক্ষার্থী ছিল। ঘোষিত ফল অনুযায়ী, বরিশাল মহানগরের উদয়ন স্কুল থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া হৃদয় চার বিষয়ে জিপিএ ৫ পেলেও হিন্দু ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল। বিপর্যয় সামলাতে না পেরে সেদিন দুপুরে আত্মহত্যা করে সে। ঘটনার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ফল পুনর্মূল্যায়ন করে। তাতে দেখা যায়, ভুল বোর্ডেরই। ‘খ’ সেটের খাতা মূল্যায়ন হয়েছিল ‘গ’ সেট দিয়ে। ১৪ মে নতুন করে ফল ঘোষণা করে বরিশাল বোর্ড। পুনর্মূল্যায়নে হিন্দু ধর্মে জিপিএ ৫ পায় হৃদয়। এ ছাড়া রদবদল হয় এক হাজার ৯৯৪ জনের ফল।
ফল বিপর্যয়ের বিষয়টি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দুই পরীক্ষক বরিশাল মহানগরের ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক জুরানচন্দ্র চক্রবর্তী ও বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক বীরেন চক্রবর্তীর দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পায়। কমিটির সুপারিশ অনুসারে গত জুন থেকে তাদের এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) স্থগিত করা হয় এবং সব পরীক্ষার কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু সম্প্রতি এমপিও ছাড়ের জন্য ওই দুই শিক্ষক মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন। বরিশাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ওই ঘটনাকে শিক্ষকদের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল’ আখ্যা দিয়ে বেতন ছাড়ের সুপারিশ করেছেন।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যে পরীক্ষকরা ভুল করেছেন, তাঁরা এখন ক্ষমা চান। কিন্তু এখানে তো আমাদের কিছু করার নেই। যারা শাস্তি দিয়েছে আমরা তাদের কাছে ওই দুই পরীক্ষকের আবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’
এ বছর এসএসসির ফল প্রকাশের পর চট্টগ্রাম বোর্ডে গণিতের ফল নিয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে বিক্ষোভের মুখে ১৯ মে পুনরায় ফল প্রকাশ করে। তাতে এক হাজার ১১৫ জন পরীক্ষার্থী গণিতে নতুন করে জিপিএ ৫ পায়। বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের কারিগরি ভুলের কারণেই ফলে সমস্যা হয়েছিল।
ঢাকা বোর্ডের অধীনে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় ময়মনসিংহের নান্দাইল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৮ জন রসায়নে অকৃতকার্য হয়। তাদের মধ্যে এমনও শিক্ষার্থী আছে, যে সাত বিষয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে অথচ রসায়নে অকৃতকার্য হয়েছে। জানা যায়, এই স্কুলের পরীক্ষা কেন্দ্র ছিল নান্দাইল পৌরসভার চণ্ডীপাশা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। রসায়নে ওই কেন্দ্রের জন্য নির্ধারিত ছিল ‘ক’ সেট প্রশ্নপত্র। কিন্তু পরীক্ষা নেওয়া হয় ‘খ’ সেট দিয়ে। অথচ খাতা মূল্যায়ন করা হয়েছে ‘ক’ সেট দিয়ে।
কয়েক বছর ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশিত হচ্ছে। জানা যায়, একজন পরীক্ষককে সাধারণত ৩০০ থেকে ৪০০ খাতা দেওয়ার কথা। কিন্তু এ নিয়ম ভেঙে অনেককেই আরো বেশি খাতা দেওয়া হয়। পরীক্ষকরা যেদিন খাতা নেন সেদিন থেকে সর্বোচ্চ ১৪ দিন সময় পান। খাতার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে সময় বাড়ে কমে না। ফলে যাঁরা বেশি খাতা নেন তাঁদের তাড়াহুড়া করতে হয়। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষক বাদে বেসরকারি শিক্ষকরাও খাতা দেখেন। কিন্তু এসব শিক্ষক ভুল করলেও বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো শাস্তি দেওয়ার উপায় থাকে না। আবার শিক্ষকরা বলছেন, খাতা দেখার টাকা পেতেও হয়রানি পোহাতে হয়। অনেক সময় বছর পার হলেও টাকা মেলে না।
গত বছর ঢাকা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় নার্গিস বেগম নামের একজন পরীক্ষককে রসায়ন বিষয়ের এক হাজার ৫৩০টি খাতা দেওয়া হয়। তিনি প্রশিক্ষণে থাকা অবস্থায় মাত্র ১০ দিনের মধ্যে সেই খাতা দেখে প্রধান পরীক্ষকের কাছে জমা দেন। অথচ শিক্ষাবিদরা বলছেন, সৃজনশীল বিষয়ের খাতা দেখাটা কঠিন। পুরো উত্তর না পড়ে কোনোভাবেই মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের চলতি বছরের সর্বশেষ একাডেমিক সুপারভিশন রিপোর্টে দেখা যায়, সারা দেশের ৪৫ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রশ্ন করতে পারেন না। তবে শিক্ষক সমিতিগুলোর হিসাবে এ সংখ্যা অন্তত ৮০ শতাংশ। সম্প্রতি শেষ হওয়া জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায়ও (জেএসসি) গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন তুলে দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য শাস্তি হিসেবে প্রশ্ন প্রণয়নে জড়িত পাঁচ শিক্ষককে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়।
একাডেমিক সুপারভিশন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বরিশাল অঞ্চলের ৯২ শতাংশ শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না। ঢাকা বিভাগে এমন শিক্ষকের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৫৫ শতাংশ, সিলেটে ৪৬ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৫০ শতাংশ, রংপুরে ৪৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ২০ শতাংশ, খুলনায় ৩৯ শতাংশ ও কুমিল্লায় ৪৭ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেসব শিক্ষক সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারেন না, তাঁরা কিভাবে সৃজনশীল খাতা দেখেন? ফলে খাতা মূল্যায়ন অবশ্যই ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য প্রায় আড়াই লাখ আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে ফল পরিবর্তন হয় প্রায় দুই হাজার ৮০০ শিক্ষার্থীর। ঢাকা বোর্ডে ৩৩ হাজার ৪৯৬ শিক্ষার্থী ফল পরিবর্তনের আবেদন করে। এর মধ্যে ৬৮৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়। নতুন করে জিপিএ ৫ পায় ৮১ জন, অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয় ১৯৯ জন।
চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণার পর তিন লাখ ৩৩ হাজার ৩২২টি উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে শিক্ষার্থীরা। তাদের মধ্যে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়।
সম্প্রতি পরীক্ষার ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন বেড়ে যাওয়ায় ও পরীক্ষকদের ভুল নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ বিষয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিটকে (বেডু) দায়িত্ব দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের গবেষণায়ও খাতা মূল্যায়ন ত্রুটিপূর্ণ হচ্ছে বলে প্রমাণ মেলে। তারা বলছে, ভুল উত্তরের জন্য নম্বর দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু অনেক সময় সঠিক উত্তরের ক্ষেত্রেও নম্বর কম দেওয়া হচ্ছে। প্রধান পরীক্ষকদের খাতা ফের দেখে দেওয়ার কথা থাকলেও তাঁরা সে কাজ ঠিকভাবে করেন না। এ ছাড়া স্কুল-কলেজের নামকরা শিক্ষকরা খাতা দেখেন না বলেও প্রমাণ পেয়েছে বেডু। এসব শিক্ষক খাতা দেখার পেছনে সময় না দিয়ে কোচিং ও প্রাইভেট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।
চলতি মাসেই আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভায় পরীক্ষকদের ভুল নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় কিভাবে খাতা দেখায় পরীক্ষকদের ভুল কমিয়ে আনা যায় সে লক্ষ্যেও কিছু ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছায় বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ। সে অনুযায়ী আগামী এসএসসি পরীক্ষা থেকে আবশ্যিকভাবে খাতা দেখায় নামি-দামি শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। পরীক্ষকের খাতা মূল্যায়ন শেষে নিয়ম অনুযায়ী প্রধান পরীক্ষককে খাতা চেক করা নিশ্চিত করতে হবে। আর খাতা দেখার সম্মানীও বাড়াতে হবে।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অনেক সময়ই ব্যাপক নম্বরের হেরফের হয়। একেকজন পরীক্ষকের দৃষ্টিভঙ্গিও একেক রকম থাকে। এখন নম্বর কমবেশি হলে তো শিক্ষকদের ওইভাবে শাস্তি দেওয়া যায় না। হয়তো যাঁদের বেশি সমস্যা তাঁদের পরের বার খাতা দেওয়া হয় না। আমরা চেষ্টা করছি এবার থেকে খাতা দেওয়ার আগে পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার, যাতে সবাই মোটামুটি একইভাবে নম্বর দেন। আর পরীক্ষকদের ডিজিটাল ডাটাবেইসও করা হচ্ছে। তবে শতভাগ নিয়মনীতি মেনে পরীক্ষক বানানোটা খুব কষ্টকর। আগামী এসএসসি পরীক্ষায় আগের চেয়ে খাতার মূল্যায়ন অনেক ভালো হবে, এটা বলতে পারি।’
অযোগ্য পরীক্ষক ঠেকাতে সম্প্রতি আন্তশিক্ষা বোর্ড পরীক্ষকদের ডিজিটাল ডাটাবেইস করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু কোনো ধরনের গাইডলাইন ছাড়া তৈরি এই ডাটাবেইসেও ঢুকে পড়ছেন অযোগ্য শিক্ষকরা। প্রতিষ্ঠানপ্রধান সম্মতি দিলেই একজন শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষক। এতে জুনিয়র সেকশনের শিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন মাধ্যমিকের পরীক্ষক, কলেজের শিক্ষকরাও মাধ্যমিকের পরীক্ষক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। আবার কোনো শিক্ষক যদি স্বল্প সময়ের জন্যও কোনো একটি বিষয় পড়ান, তাহলেও তিনি ওই বিষয়ে খাতার দেখার আবেদন করতে পারছেন। এভাবেই এক বিষয়ের শিক্ষক হয়েও অন্য বিষয়ের পরীক্ষক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা।
জানা যায়, ডিজিটাল ডাটাবেইস করার সময় গাইডলাইন না দিলেও পরীক্ষক হওয়ার জন্য একটি নীতিমালা রয়েছে। এতে প্রধান পরীক্ষক হতে গেলে কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। আর পরীক্ষক হওয়ার জন্য লাগে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা। এ ছাড়া একজন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ফলও পরীক্ষক হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় আনার কথা রয়েছে। যদিও এই নীতিমালা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মানা হয় না।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক তপন কুমার সরকার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একেকজন শিক্ষকের চিন্তাভাবনা একেক রকম। একজন হয়তো হার্ড (কট্টর), আরেকজন হয়তো লিবারেল (উদার)। তাই তাঁদের নম্বর দেওয়ার মধ্যেও পার্থক্য রয়েছে। আমরা সবাইকে একটা স্ট্যান্ডার্ডে আনার চেষ্টা করছি। এ জন্য আরো সময় প্রয়োজন। তবে পুনর্নিরীক্ষার আবেদন অনলাইনে হওয়ায় সহজেই শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারছে। তাই দিন দিন আবেদনকারীর সংখ্যাও বাড়ছে।’
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম রনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যিনি যে বিষয়ের শিক্ষক, তাঁকে সেই বিষয়েরই খাতা দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদেরই খাতা দেখতে দেওয়া উচিত, যাতে কোনো ভুল করলে তাঁদের ধরা যায়। বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়ন শেখানো উচিত। খাতা দেখার সময়ও বাড়ানো উচিত।’
সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে ‘সাধারণ শিক্ষার্থী’র ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।
এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।
রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া ‘আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী’ ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।
নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।’
এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।’
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেন, “পুলিশের তদন্তে এসেছে ‘ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব’ থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।”

বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।
গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।
অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।
এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে—এমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।
প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।
স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।
রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।
সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে।
অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।
চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।
নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।’
ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।
বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।
নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।
পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।
গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি
নিজস্ব প্রতিবেদক

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।
এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।
আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।
কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।
জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।’
জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।