<p>স্বাধীনতা পদকের অর্থমূল্য বাড়াচ্ছে সরকার। বর্তমানে পদকপ্রাপ্তদের ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ নির্মিত ৫০ গ্রাম ওজনের মেডেল ও সম্মাননাপত্রের সঙ্গে দুই লাখ টাকা দেওয়া হয়। সেটা বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছে। এ ছাড়া এখনকার চেয়ে আরো বেশি জনকে পদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একসঙ্গে সর্বোচ্চ ১৩ জনকে এই পদক দেওয়া যায়। নতুন নিয়মে সর্বোচ্চ ১৪ জনকে এই পদক দেওয়া যাবে।</p> <p>স্বাধীনতা পদক হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় পুরস্কার। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ১৩টি ক্ষেত্রের যেকোনোটিতে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রাখলে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য যোগ্য বিবেচনা করা হয়। ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, চিকিৎসাবিদ্যা, শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, পল্লী উন্নয়ন, সমাজসেবা বা জনসেবা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, জনপ্রশাসন, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সরকার নির্ধারিত ক্ষেত্র। স্বাধীনতা পুরস্কারের চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাইয়ের সময় দেশ ও মানুষের কল্যাণে অসামান্য অবদান রয়েছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকেই বাছাই করা হয়। এই ক্ষেত্রে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক কৃতিত্বই বেশি করে বিবেচনায় আনা হয়। কিভাবে  স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা তৈরি হয় জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেপ্টেম্বর মাসে পরের বছরের স্বাধীনতা পুরস্কার কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পেতে পারে তার প্রস্তাব সব মন্ত্রণালয়ের কাছে আহ্বান করে। বিভিন্ন সময় এই পদকপ্রাপ্তদের কাছেও একইভাবে প্রস্তাব চেয়ে পাঠানো হয়। এসব প্রস্তাব বাছাই করে প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি। তাদের কাছ থেকে প্রস্তাবটি যায় জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে। এসব প্রস্তাবকেই চূড়ান্তভাবে অনুমোদন দেন প্রধানমন্ত্রী। পুরস্কারের জন্য মনোনীত কোনো ব্যক্তি পুরস্কার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে বা নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিত হয়ে পুরস্কার গ্রহণ করতে না চাইলে তাঁকে চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। আর মরণোত্তার পুরস্কারপ্রাপ্তদের পুরস্কার গ্রহণের জন্য কোনো উত্তরাধিকারী না পাওয়া গেলে সেই পুরস্কার জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়।  </p> <p>স্বাধীনতা পুরস্কার চালু হয় ১৯৭৭ সালে। এ পর্যন্ত ২৪৪ জন ব্যক্তি, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। প্রথম বছর সর্বোচ্চ এ পুরস্কার পেয়েছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, কবি কাজী নজরুল ইসলাম, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, ড. মোকাররম হোসেন খন্দকার, মাহবুব আলম চাষী, ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান চৌধুরী, ডা. মো. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শিল্পী রুনা লায়লা, হাবিলদার মোস্তাক আহমদ ও এনায়েত করিম। ভিনদেশি ভেলেরি এ টেইলর সমাজসেবার জন্য ২০০৪ সালের স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন।</p> <p>বিভিন্ন সময় স্বাধীনতা পুরস্কার নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। ১৯৮০ সালে শর্ষিনার পীর মওলানা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁকে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখার জন্য এ পদক দেওয়া হয়েছিল। ২০০৩ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই পুরস্কার দেয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ এ পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করার জন্যই জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছিল।</p> <p>চলতি বছরের একুশে পদকেরও অর্থমূল্য বাড়ানো হয়েছে। আগে একুশে পদকের অর্থমূল্য ছিল এক লাখ টাকা। বর্তমানে সেটি বাড়িয়ে দুই লাখ টাকা করা হয়েছে। সম্প্রতি একুশে পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম চূড়ান্ত করার বৈঠক ছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির প্রধান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বৈঠকের এক পর্যায়ে বলেন, বর্তমান বাজারে সব কিছুর দাম বেড়েছে। পুরস্কারের অর্থমূল্যও বাড়ানো উচিত। তিনি একুশে পদক এক লাখ টাকার পরিবর্তে দুই লাখ টাকা করার সুপারিশ করেন। এই সুপারিশ ইতিমধ্যে কার্যকরও করা হয়েছে। কিন্তু সমস্যা বাধে স্বাধীনতা পুরস্কার দিতে গিয়ে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগেই পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হবে। স্বাধীনতা পুরস্কার দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার হলেও অর্থমানের দিক দিয়ে একুশে পদকের সমান হয়ে গেছে।</p> <p>এই পর্যায়ে গত সপ্তাহে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বাধীনতা পুরস্কারের অর্থমূল্য দুই লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে তিন লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন। দু-এক দিনের মধ্যেই গেজেট জারি করা হবে বলে জানা গেছে। তবে স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত একজনের নিকটাত্মীয় বলেছেন, একুশে পদকের অর্থমূল্য শতভাগ বেড়েছে। আর সর্বোচ্চ সম্মানের স্বাধীনতা পুরস্কারের অর্থমূল্য ৫০ শতাংশ বেড়েছে। দুই পুরস্কারের অর্থমূল্য সমান অনুপাতে বাড়লে তা যুক্তিযুক্ত হতো।</p>