ঢাকা, মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫
১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৩ সফর ১৪৪৭

ঢাকা, মঙ্গলবার ২৯ জুলাই ২০২৫
১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৩ সফর ১৪৪৭

আলোচনায় একরামুল নিজাম হাজারী দ্বন্দ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আলোচনায় একরামুল নিজাম হাজারী দ্বন্দ্ব
একরামুল হক (বাঁয়ে), নিজাম হাজারী
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও  উপজেলা চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পর আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে সদর আসনের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য নিজাম হাজারীর সঙ্গে একরামের বিরোধের বিষয়টি। বলা হচ্ছে, নিজাম হাজারী ফেনীর রাজনীতিতে একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতেন একরামকে।
১৯৮৩ সাল থেকে ফেনীর রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন একরাম। জয়নাল হাজারীর অনুসারী ছিলেন তিনি।
এক-এগারোর সময় জয়নাল হাজারী ফেনী থেকে বিতাড়িত হলেও জেলার রাজনীতিতে অবস্থান ধরে রাখেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ফেনী-১ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন একরাম। তবে রাজনৈতিক কৌশলে ধরাশায়ী হয়ে মনোনয়নবঞ্চিত হতে হয় তাঁকে। তবে পিছু হটেননি তিনি।
অভিযোগ আছে, মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর নিজাম হাজারী তাঁকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য উৎসাহ দেন, যাতে এ ছুতো ধরে পরে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করার সুযোগ পাওয়া যায়। তবে সে প্রলোভনে পা দেননি একরাম। আবারও নির্বাচন করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে। তত দিনে ফেনীর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যান নিজাম উদ্দিন হাজারী।
এমপি হয়ে উপজেলা নির্বাচনেও একরামকে অসহযোগিতা করতে শুরু করেন তিনি। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে শুধু নিজের রাজনৈতিক কৌশল দিয়ে একরাম জিতে আসেন উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে। 
নিজাম হাজারী ফেনীতে ঘাঁটি করে নেওয়ার পর এ পর্যন্ত একরামের সঙ্গে ছোট-বড় অসংখ্য বিরোধের সৃষ্টি হয়। ফেনীর কয়েকজন প্রবীণ নেতা বলেন, এত বড় একটি ঘটনা ঘটেছে ফেনীতে, কিন্তু প্রতিবাদের ভাষা নেই বললেই চলে। মুখ খুলতে চান না অনেকেই।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টেন্ডার বাণিজ্য, ফেনীর ডায়াবেটিক হাসপাতালের আধিপত্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটি ঘোষণা নিয়ে ফেনী-২ আসনের এমপি নিজাম হাজারীর সঙ্গে একরামের বিরোধ শুরু হয়। ফেনীর পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার একপর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন একরাম চেয়ারম্যান। এ নিয়ে দু-তিন দফা নিজাম হাজারীর বাহিনীকে আটকে রাখে একরামের দলবল। ডায়াবেটিক হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণ ছিল একরামের কাছে। গত বছর এর আধিপত্য নিতে যায় নিজাম হাজারীর ঘনিষ্ঠ ও তাঁর ‘বুদ্ধিদাতা’ হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদ। তাঁরা ডায়াবেটিক হাসপাতালে একরামের রুমে তালাও ঝুলিয়ে দেন। পরে জেলার অন্য নেতাদের মধ্যস্থতায় আধিপত্য একরামেরই থাকে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে চরম বিরোধ সৃষ্টি হয় নিজাম হাজারীর সঙ্গে একরামের। একরামের রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলায় একরাম চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হন। এটা মেনে নেননি নিজাম হাজারী। ফলে নির্বাচনে পরাজিত করতে ভেতরে ভেতরে নিজাম হাজারী বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মিনার চৌধুরীর সঙ্গে হাত মেলান। এতে বেকায়দায় পড়ে যান একরাম। তবে একরাম উপজেলা নির্বাচনে এমপির বিরোধিতার জবাব দেন অন্যভাবে। একসময়ের নিজাম হাজারী ও একরামের রাজনৈতিক গুরু ফেনীর গডফাদারখ্যাত জয়নাল হাজারীকে হেলিকপ্টারযোগে ফেনী পাইলট হাই স্কুল মাঠে নিয়ে আসেন একরাম। বলা হয়, এর মধ্য দিয়ে নিজাম হাজারীকে হুমকি প্রদর্শন করে একরাম। এ বিষয়টিও ভীষণভাবে ক্ষুব্ধ করে নিজাম হাজারীকে। এর ফলে দুজনের বিরোধ আরো চাঙ্গা হতে শুরু করে। নিজাম হাজারী তখন থেকে মনে করে, জয়নাল হাজারীর সঙ্গে একরামের যোগাযোগ রয়েছে। এটি যেকোনো সময়ে তাঁর জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারে। এরই সূত্র ধরে উপজেলা নির্বাচনে একরামের নির্বাচনী গণসংযোগেও প্রথম প্রথম যাননি নিজাম হাজারী। বরং অভিযোগ আছে, একরামের নির্বাচনী গণসংযোগে নিজাম বাহিনীর লোকজন কয়েক দফা হামলা চালায়। আরো অভিযোগ আছে, একরামের নির্বাচনী প্রচারণায় থাকা দুটি গাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় নিজাম বাহিনীর দলবল। অবশ্য পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যস্থতা ও কেন্দ্রীয় উদ্যোগের ফলে নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে একরামের পক্ষে সমর্থন দেন নিজাম হাজারী।
আরো জানা গেছে, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন ফুলগাজী উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী। এলাকায় তাঁর নেতিবাচক ইমেজের কারণে একরাম তাঁকে প্রার্থী হতে দিতে চাননি। জানা গেছে, জাহিদ চৌধুরী নিজাম হাজারীর ঘনিষ্ঠ কর্মী। একরামের এ আচরণেও ক্ষুব্ধ হন নিজাম হাজারী ও জাহিদ চৌধুরী।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে সাজা কম খেটে জালিয়াতি করে জেল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার যে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে, এর সঙ্গে একরামের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে সন্দেহ করে নিজাম হাজারী। এ বিষয়টি নিয়ে ভীষণ ক্ষুব্ধ হন নিজাম হাজারী। একরামকে সরাসরি দোষারোপ করেন তিনি। একরামের ঘনিষ্ঠ আরেক সহকর্মী জানান, নিজাম হাজারী একরামকে দেখে নেওয়া হবে বলেও হুমকি দেন। একরামের রাজনৈতিক সহকর্মী দুজন নেতা বলেন, ফেনীতে নিজাম হাজারী সব সময় তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন একরামকে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে নিজাম উদ্দিন হাজারী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একরামের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক কোনো বিরোধ ছিল না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সারজিস আলম

জুলাই আহতদের দেখতে উপদেষ্টাদের চেয়েও বেশি গেছেন সেনাপ্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই আহতদের দেখতে উপদেষ্টাদের চেয়েও বেশি গেছেন সেনাপ্রধান

জুলাই আহতদের দেখতে উপদেষ্টারা যতবার হাসপাতালে গেছেন, তার চেয়েও বেশি গেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম গতকাল রবিবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক বার্তায় এ কথা জানান।

কয়েকটি আনপপুলার (অজনপ্রিয়) তথ্য দেই শিরোনামে সারজিস আলম লিখেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আজ অবধি সেনাপ্রধান প্রতি শনিবার সিএমএইচে গিয়ে জুলাইয়ে আহতদের দেখতে গেছেন। ব্যতিক্রম কয়েকটি সপ্তাহ ছাড়া এই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে, যা উপদেষ্টাদের সম্মিলিত ভিজিট সংখ্যার চেয়েও বেশি।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ঢাকা সিএমএইচেই সবচেয়ে গুরুতর আহতদের মানসম্মত চিকিৎসা ও ব্যয়বহুল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দ হয়েছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানই আহত ও শহীদ পরিবারদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন বলেও দাবি করেন সারজিস।

মন্তব্য

কেন্দ্রীয় বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কেন্দ্রীয় বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঘিরে সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকার শাহবাগে সংগঠন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে যারা কোনো প্রকার অপকর্ম করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও আহবান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ।

তিনি বলেন, গতকালের (২৬ জুলাই) ঘটনা  এবং তার মাঝের অনেকগুলো ঘটনায় আমরা দেখতে পেয়েছিবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে নামে-বেনামে অনেক ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা যেদিন আত্মপ্রকাশ করেছিলাম সেদিনই এ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম যে এ ধরনের কোনো কিছু বরদাশত করা হবে না।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলো যখন গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটি গঠনের দায়িত্বে যারা ছিল, তারা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দল ও মতের ভেতরে চলে গেছে। অনেক সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধা যারা, তারাও বিপথগামী হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে তাদের মাঝে কিছু দুর্নীতির বিষয় আমার লক্ষ করেছি, যেটা এ মুহূর্তে কন্ট্রোল করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সংগঠনের সব সদস্যের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উপনীত হয়েছে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম আজ (রবিবার) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হলো। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগামী কার্যক্রম কোন উপায়ে পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে একটা রূপরেখা তৈরি করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি বলেন, যাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঢাল হয়ে গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের ধারক ও বাহক হওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন, তাঁদের আমরা একটা কথা বলতে চাইএখান থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা বা কোনো ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুবিধা পাবেন না।

যাঁরা এ সংগঠনের সঙ্গে থাকার জন্য আশা ব্যক্ত করেছেন আপনাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। শিগগিরই আমাদের আগামী সাংগঠনিক কার্যক্রম কোন উপায়ে পরিচালিত হবে তা জানিয়ে দেব।

সংবাদ সম্মেলনে গত শনিবারের ঘটনার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্বীকার করছে কি না, জানতে চাইলে রিফাত রশীদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কী করে? যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তারা সে জিনিসটা নিয়ে ঘোরায়। তারা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকে অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে খেলার চেষ্টা করে।

আমরা দায় স্বীকার করেছি এবং দায় স্বীকার করে সারা বাংলাদেশে সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছি।

মন্তব্য
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

বার্নে দীর্ঘ অপেক্ষা বাসায় ফিরল দুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বার্নে দীর্ঘ অপেক্ষা বাসায় ফিরল দুজন

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ ৩৪ জন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে। তাদের বাসায় নিয়ে যেতে সাত দিন ধরে আইসিইউয়ের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। তবে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বারবার হিসাবে গরমিল দেখা দিয়েছে।

ডিএনএ পরীক্ষার পর মোট নিহতের সংখ্যা কমে ৩৫ থেকে হয়েছে ৩৪। গতকাল বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পর আজ কাজী আমজাদ সাইদ (২০) ও সবুজা (৪০) নামের দুজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে চারজন রয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে ৩৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ২৮ জনই শিশু।
ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক। এ ছাড়া মেডিক্যাল এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন তিনজন, ফিমেল এইচডিইউতে ছয়জন, পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে আটজন এবং কেবিনে আছে ১২ জন। সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে অর্থাৎ তাদের চেয়ে একটু কম গুরুতর অবস্থায় রয়েছে ৯ জন। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।
আপাতত ভর্তি থাকা ৩৪ জন রোগীর মধ্যে শরীরে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে এমন রোগী ছয়জন।

এখনো হাসপাতালে ৪৮ জন : এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৮ জন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৬ জন, সিএমএইচে ১১ জন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন।

এর আগে সিআইডি জানায়, ডিএনএ ল্যাবের সদস্যরা সিএমএইচে রাখা অশনাক্ত মৃতদেহ ও দেহাংশ থেকে মোট ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। সেসব নমুনা বিশ্লেষণ করে মোট পাঁচজনের ডিএনএ প্রফাইল পাওয়া যায়।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু : মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্ঘটনার পরপরই গত ২৩ জুলাই থেকে কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক এই কাউন্সেলিংয়ে অংশ নিয়েছেন।

গতকাল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাউন্সেলিং কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শাহ পরানেওয়াজ ইশা বলেন, দুর্ঘটনার সময় আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। মানসিকভাবে তারা এখনো ট্রমার মধ্যে আছে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের ভয় কাটিয়ে তুলে আবারও স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে তারা। ২ আগস্ট পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য
জুলাই ঘোষণা ৫ আগস্টের মধ্যেই!

অনেক রাজনৈতিক দল কিছুই জানে না

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
অনেক রাজনৈতিক দল কিছুই জানে না

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মধ্যেই জুলাই ঘোষণা প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের কাছে ঘোষণাপত্রের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

সরকারের একটি সূত্র বলেছে, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যেই এই ঘোষণা হতে পারে।

সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক দলিল, যা ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেবে, সেই ঘটনার পটভূমি ও পরিণতি তুলে ধরবে এবং ভবিষ্যতে এসব বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ভিত্তি গড়বে। সরকারের নেতৃত্বে এটি তৈরি হচ্ছে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতেই এর চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি সবাই বা বেশির ভাগ পক্ষ একমত হতে পারে, তাহলে ২০২৫ সালের ৫ আগস্টের আগেই এটি ঘোষণা করা হতে পারে।

যদিও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সরকার ব্যর্থ হলে ৩ আগস্ট তারা তাদের নিজস্ব বিকল্প ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ছিল অভ্যুত্থানকারীদের। সে লক্ষ্যে গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও সরকারের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করতে হয়। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ঘোষণা না আসায় গত ২৯ জুন এক সভায় এনসিপি ঘোষণা দেয়, আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তারা জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।

ওই সভায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো ঘোষণা প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ছাত্র-জনতার ঐক্যে এনসিপি নিজ উদ্যোগেই এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জুলাই মার্চে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই এ ঘোষণা তৈরি হয়েছে এবং এতে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে।

জানা যায়, এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। এরই মধ্যে জুলাই ঘোষণার একটি খসড়াও তৈরি করে তা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কাছে সরকার এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি তাদের মতামত সরকারের কাছে পাঠিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে  তাদের মতামত সরকারের কাছে পাঠাবে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা একটি প্রস্তাব পেয়েছি। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে পাঠাব। সব দলের মতামত নিয়েই এটি চূড়ান্ত করা উচিত।

তবে অনেক দল এ বিষয়ে এখনো অন্ধকারে আছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বাম দলের অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আমাদের তেমন কিছু জানা নেই। আমাদের কাছে কিছু পাঠানো হয়নি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছে। তবে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সিপিবির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। ঘোষণাপত্র করতে হলে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই করতে হবে।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, খসড়া প্রণয়ন করতেও হলে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হওয়া দরকার। এখনো বাসদকে কিছু জানানো হয়নি।

বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক আহমেদ বলেন, অন্য কোনো দলের কাছে পাঠানো হলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। এটি প্রণয়ন করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। খসড়া পেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত দেওয়া হবে।

বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, গণ-আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতির জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা এখনো অন্ধকারে। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এটি প্রণয়ন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জানা যায়, জুলাই ঘোষণার খসড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলকে একনায়কতান্ত্রিক ও গণবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, সংবিধান একপক্ষীয়ভাবে সংশোধনে সব কিছুই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ও শাসনব্যবস্থার বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে গণ-অভ্যুত্থান ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত করে। খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম। আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করা হবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।

এতে আরো বলা হয়, আমরা এই ঘোষণা প্রদান করলাম যে, ১৯৭২ এবং ১-১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আমাদের একটি নতুন জনতন্ত্র (রিপাবলিক) প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রে সকল ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটাবে এবং এ দেশের তরুণসমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারবে। আমরা এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম যে এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। এ ছাড়া ঘোণাপত্রের খসড়ায় প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ (দ্বাদশ সংসদ) ভেঙে দেওয়ার এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথাও উল্লেখ করা হয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এই উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে জানায়। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়।

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে গত ১৬ জানুয়ারি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ