<p>  <p><strong><span style="font-size:20px">সুভা</span></strong></p> </p> <p><strong>রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর</strong></p> <p><strong>নিচের উদ্দীপকটি পড়ে প্রশ্নের উত্তর দাও :</strong></p> <p>আমার ভাইপো বলাই—তার প্রকৃতিতে গাছপালার মূল সুরগুলোই হয়েছে প্রবল। ছেলেবেলা থেকেই চুপচাপ চেয়ে চেয়ে দেখাই তার অভ্যাস, নড়েচড়ে বেড়ানো নয়। পুব দিকের আকাশে কালো মেঘ স্তরে স্তরে স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়ায়, ওর সমস্ত মনটাতে ভিজে হাওয়া যেন শ্রাবণ-অরণ্যের গন্ধ নিয়ে ঘনিয়ে ওঠে; ঝম্ ঝম্ করে বৃষ্টি পড়ে, ওর সমস্ত গা যেন শুনতে পায় সেই বৃষ্টির শব্দ।</p> <p>ক) সুভা কোথায় বসে থাকত?</p> <p>খ) ‘তাহার মর্ম তাহারা ভাষার অপেক্ষা সহজে বুঝিত’—ব্যাখ্যা করো।</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2019/January/22-01-2019/dui/kalerka--2a--2019-01-22-12.jpg" style="float:right; height:365px; width:158px" />গ) উদ্দীপকের বলাইয়ের সঙ্গে ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রটির সাদৃশ্যপূর্ণ দিকটি আলোচনা করো।</p> <p>ঘ) ‘উদ্দীপকে সুভার ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতা অনুপস্থিত’ মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো।</p> <p>উত্তর : ক) সুভা তেঁতুলতলায় বসে থাকত।</p> <p>খ) আলোচ্য উক্তটি দ্বারা বাকপ্রতিবন্ধী সুভার সঙ্গে গাভি দুটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে।</p> <p>নিঃসঙ্গ সুভার অন্তরঙ্গ বন্ধু গোয়ালের দুটি গাভি—সর্বশী ও পাঙ্গুলি। সুভার পায়ের শব্দও তারা চিনত। বাকহীন সুভার মনের কথাও তারা বুঝত। সুভার ভালোবাসা, তিরস্কার সব কিছুই এ অবলা প্রাণী দুটির বোধগম্য ছিল। আর এই বোবা প্রাণী দুটির সঙ্গে বাকশক্তিহীন সুভার অন্তররঙ্গ সম্পর্ককে বোঝাতে আলোচ্য উক্তিটি করা হয়েছে।</p> <p>গ) উদ্দীপকের বলাই এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভা উভয়ই প্রকৃতিপ্রেমী।</p> <p>উদ্দীপকের বলাই প্রকৃতিঘনিষ্ঠ। গাছপালা নিয়ে তার আগ্রহের কমতি নেই। নড়াচড়া করার পরিবর্তে পর্যবেক্ষণ করতে সে ভালোবাসে। প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান তার পছন্দের। আকাশের কালো মেঘ তার মনকে আলোড়িত করে, আবার বৃষ্টির ঝমঝম শব্দও সে তার অন্তরে অনুভব করে।</p> <p>‘সুভা’ গল্পের সুভা বাকপ্রতিবন্ধী। ভাষাবিশিষ্ট জীবের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভাষাহীন প্রকৃতির সঙ্গে সুভার যোগাযোগ নিবিড় হয়ে ওঠে। নদীর কলতান, পাখির কূজন, গাছপালার মর্মর ধ্বনি—সব কিছুই যেন তার সঙ্গে কথা বলে। আবার মধ্যাহ্নের নীরব প্রকৃতিও যেন সুভার মুখোমুখি বসে থাকে।</p> <p>আর তাই বলা যায়, প্রকৃতি প্রেমই উদ্দীপকের বলাই এবং ‘সুভা’ গল্পের সুভাকে একসূত্রে গেঁথেছে।</p> <p>ঘ) ‘উদ্দীপকে সুভার ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতা অনুপস্থিত’—উক্তিটি যথার্থ।</p> <p>উদ্দীপকের বলাই প্রকৃতি প্রেমিক। দুরন্তপনা তার পছন্দ নয়। স্থিরভাবে প্রকৃতির উপাদানগুলো পর্যবেক্ষণ করাই তাকে আনন্দ দেয়। আকাশের কালো মেঘ এবং বৃষ্টির ঝম্ঝম্ শব্দ সে তার অস্তিত্বে অনুভব করে। ‘সুভা’ গল্পের সুভা চরিত্রটিও প্রকৃতিকে ভালোবাসে। প্রকৃতির ভাষাহীন ধ্বনি সে বুঝতে পারে। পাখির কলকাকলি, পাতার মর্মর শব্দ, নদীর বয়ে চলার কলধ্বনি—সব কিছুর ভাষাই সুভার কাছে পরিচিত।</p> <p>উদ্দীপকে সুভার প্রকৃতি প্রেমের চিত্রায়ণ ঘটলেও ভাষাবিশিষ্ট মানুষের সঙ্গে সুভার বিচ্ছিন্নতাবোধ উদ্দীপকে প্রতিভাত হয়নি। বাবা বাণীকণ্ঠের সঙ্গে আন্তরিক সম্পর্ক থাকলেও সুভার মা সুভাকে গর্ভের কলঙ্ক হিসেবে মনে করত। আবার গ্রামের লোকজন তাকে বিধাতার অভিশাপ মনে করত। গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও তার সঙ্গে খেলাধুলা করত না। এসব বিষয় তার কিশোর মনে হীনম্মন্যতা তৈরি করে। সে নিজেকে সব সময় অন্যের কাছ থেকে আড়াল করে রাখত। আর এসব বিষয় উদ্দীপকে প্রতিভাত হয়নি।</p> <p>তাই বলা যায়, উদ্দীপকে সুভার প্রকৃতির প্রতি গভীর মমত্ববোধ প্রকাশিত হলেও তার ব্যক্তিজীবনের নিঃসঙ্গতার বিবরণ উদ্দীপকে উপস্থিত হয়নি।</p>