<p><strong>রচনা</strong></p> <p><strong>বৈশাখী মেলা</strong></p> <p>ভূমিকা : বিভিন্ন উৎসব ও মেলার মধ্য দিয়ে কোনো দেশের সামগ্রিক চিত্র পরস্ফুিটিত হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেমন পৌষ মেলা, বসন্ত মেলা, নবান্ন উৎসব ও বৈশাখী মেলা। এসব মেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে। দৈনন্দিন জীবনের সংকীর্ণ গণ্ডি থেকে বেরিয়ে লোকজন এই মেলার দিনগুলোতে পারস্পরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে। এসব মেলার মধ্যে অন্যতম হলো বৈশাখী মেলা। কারণ বাঙালি সংস্কৃতিতে বৈশাখী মেলা জাতীয়ভাবে পালিত হতে হতে চিরন্তন আবেদনের একটি অংশ হয়ে গেছে। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সব উৎসবমুখর পরিবেশে এ মেলায় অংশগ্রহণ করে থাকে। হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতিকে জানতে ও চিনতে এ মেলা তাই সর্বজনীন উৎসব।</p> <p>মেলার স্থান : বৈশাখী মেলা বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে, গ্রামেগঞ্জে, এমনকি প্রতিটি শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। দেশের নানা স্থানে এই মেলা বসে। স্থানীয় লোকজনই এ মেলার আয়োজন করে থাকে। গ্রামে সাধারণত মেলার স্থান হিসেবে বিস্তীর্ণ মাঠ, নদীতীরের খোলা প্রান্তর, বটমূল অথবা বিদ্যালয়ের বিশাল প্রাঙ্গণ নির্ধারণ করা হয়। রাজধানী ঢাকা শহরে প্রতিবছর এই বৈশাখী মেলা রমনার বটমূলে বাঙালির ঐতিহ্য অনুসারে বর্ষবরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি, শিশু একাডেমির প্রাঙ্গণেও এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়।</p> <p>মেলা ভালো লাগার কারণ : বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে। মেলার মতো উৎসবের মধ্য দিয়েই আমরা এ ঐতিহ্যকে স্মরণ করে থাকি। বৈশাখী মেলা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে এ দেশের সব মানুষ আনন্দ ঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালন করে। বাঙালি সংস্কৃতি এ দিনে পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হয়। এ দিন সাহেবী পোশাক ঝেড়ে ফেলে আমরা সবাই বাঙালি পোশাক পরি। বাঙালি সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখার জন্য শপথ নিই। এ দিনে এই দেশের মানুষ বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে পানাহারে মেতে যায়, বটের তলায় জড়ো হয়ে গান গায়, হাতে তালি বাজায়, মুখে বাঁশি ফুঁকে। সব কিছু মিলে সারা মেলার পরিবেশ উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বলেই মেলা আমাদের ভালো লাগে।</p> <p>প্রাপ্ত দ্রব্যাদি : বৈশাখী মেলায় দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক কিছুই পাওয়া যায়। মেলার প্রাণ হিসেবে মৃিশল্প থাকে প্রধানভাবে। বাঁশের তৈরি কুলো, ডালা, ঝুড়ি, চালুন, মাছ ধরার চাই, খলুই ছাড়াও থাকে কুমারদের নিপুণ হাতে গড়া মাটির হাঁড়ি, সরা, টেপা পুতুল, শখের হাঁড়ি, বাঁশের বাঁশি, শিকা, হাতপাখা, মাটি বা কাঠের তৈরি হাতি, ঘোড়া, বাঘ ও রান্নাঘরের তৈজসপত্র, দেশীয় শাড়ি, মুড়ি-মুড়কি জিলাপি, বাতাসাসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার। এ ছাড়া ছোটদের পছন্দ অনুযায়ী খেলার সামগ্রীসহ নানা ধরনের দ্রব্য মেলায় থাকে, যেগুলো আমাদের জীবনের সঙ্গে জড়িত।</p> <p>উপসংহার : বৈশাখী মেলা বাংলা নববর্ষের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও সর্বজনীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাঙালি সংস্কৃতির পরিচয়, অভ্যাস ও বিবর্তন এ মেলায় পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ পায়। জাতীয় দিক থেকে বিশ্বের কাছে আপন সংস্কৃতির মৌলিকত্ব তুলে ধরতেও এ মেলা আদর্শ।</p>