<p><strong>সৃজনশীল প্রশ্ন</strong></p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Print-2017/April/18-4-2017/kalerkantho_com-18-04-17-46.jpg" style="height:273px; width:281px" /></p> <p>ক. নেয়ানডারথাল মানুষ কোন যুগের প্রধান অধিবাসী ছিল?</p> <p>খ. নগর পরিকল্পনার সিন্ধু সভ্যতার অবদান বুঝিয়ে লেখো?</p> <p>গ. চিত্রটি কোন তত্ত্বকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।</p> <p>ঘ. বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কি উক্ত তত্ত্বের প্রয়োগ আছে? যুক্তিসহ মতামত দাও।</p> <p><strong>উত্তর :</strong></p> <p>ক. নেয়ানডারথাল মানুষ মধ্য প্রাচীন প্রস্তর যুগের প্রধান অধিবাসী ছিল।</p> <p>খ. পৃথিবীর প্রাচীনতম নগর পরিকল্পনার প্রকাশ ঘটেছিল সিন্ধু সভ্যতায়। পরিকল্পিত নগরব্যবস্থা সিন্ধু সভ্যতার বিশেষ অবদান।</p> <p>এই প্রাচীন সভ্যতা নদ-নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। এখানে গড়ে উঠেছিল পরিকল্পিত নগর সভ্যতা। যেমন সুরম্য ও কারুকার্য খচিত অট্টালিকা, একতলা ও দোতলাবিশিষ্ট বাড়ি। প্রতিটি বাড়িতেই পানির ব্যবস্থা ছিল। সে সময় বাড়িতে বৈঠকখানা, গোসলখানা ও স্যানিটারি ব্যবস্থা দেখা গেছে। বাড়ি প্রতিরক্ষার জন্য নিরাপদ আশ্রয় ছিল। প্রতিটি রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্ট ছিল।</p> <p>তাই বর্তমান নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে সিন্ধু নদের তীরবর্তী প্রাচীন ভারতীয় নগর পরিকল্পনার গুরুত্ব বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।</p> <p>গ. অনুচ্ছেদের চিত্রটি সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বটিকে নির্দেশ করে।</p> <p>সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বটির মূল কথা হচ্ছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির ফলে বস্তুগত সংস্কৃতি দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত হচ্ছে, যার সঙ্গে অবস্তুগত সংস্কৃতি খাপ খাইয়ে বা তাল মিলিয়ে ওই একই গতিতে এগিয়ে চলতে পারছে না।</p> <p>ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সাংস্কৃতিক পশ্চাৎপদতা বা পিছিয়ে পড়া। অগবার্ন (W. F. Ogburn) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Social change’-এ সংস্কৃতির পশ্চাৎপদতার ব্যবধান তত্ত্ব প্রদান করেছেন।</p> <p>W. F. Ogburn সামাজিক ঐতিহ্য সংস্কৃতিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন। নিচে শ্রেণিবিন্যাস চিত্রের সাহায্যে উল্লেখ করা হলো :</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/2017/Print-2017/April/18-4-2017/kalerkantho_com-18-04-17-47.jpg" style="height:123px; width:380px" /></p> <p>এই তত্ত্বের মূল কথা হলো সংস্কৃতির সহযোগী দুটি অংশের মধ্যে একটি কোনো একসময় অন্যটি থেকে দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে পড়ার ফলে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়, এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অংশটিকে অগ্রসর অংশটির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। সংস্কৃতির এক অংশের এই পিছিয়ে পড়া এবং সেই অংশের তা কাটিয়ে ওঠার প্রবণতাই হচ্ছে সাংস্কৃতিক ব্যবধান। উদাহরণস্বরূপ নানাবিধ আবিষ্কার ও উদ্ভাবনের ফলে সমাজের অবস্তুগত দিক যেমন—ধর্ম, শিক্ষা, মূল্যবোধ প্রভৃতি অপেক্ষা বস্তুগত দিক যেমন বাসস্থান, হাতিয়ার, তৈজসপত্র প্রভৃতি দ্রুততর গতিতে পরিবর্তিত হয়। ফলে বস্তুগত অংশের সঙ্গে অবস্তুগত অংশের ব্যবধান সৃষ্টি হয়। পিছিয়ে পড়া অবস্তুগত সংস্কৃতিকে তখন শূন্যতা বা অসামঞ্জস্যতা মোকাবিলায় তৎপর হতে হয়।</p> <p>ঘ. হ্যাঁ, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ব্যবধান তত্ত্বের প্রয়োগ আছে।</p> <p>বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ব্যবধানের যে যে প্রয়োগ লক্ষণীয় তা নিম্নরূপ :</p> <p>১। কৃষি ক্ষেত্রে : বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষিতে অনেক উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটেছে। যেমন—পাওয়ার টিলার, সেচযন্ত্র, নিরানি যন্ত্র, মাড়াই মেশিন, শস্যকর্তন মেশিন ইত্যাদি। কিন্তু প্রযুক্তিগত জ্ঞান তথা অবস্তুগত সংস্কৃতির অভাবের কারণে দেশের সাধারণ কৃষক এসব উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে পড়ছে। ফলে সাংস্কৃতিক ব্যবধানের সৃষ্টি হয় এবং দেশের আর্থসামাজিক উন্নতি ব্যাহত হচ্ছে।</p> <p>২। শিক্ষা ক্ষেত্রে : শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, পৃথিবীতে সেই জাতি বা গোষ্ঠীসহ উন্নত, যারা শিক্ষা-দীক্ষায় বেশি অগ্রসর। উন্নত বিশ্ব আজ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। ওই সব দেশে উন্নত শিক্ষা উপকরণের কারণে শিক্ষাপদ্ধতি অনেকটা সহজ হয়েছে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে উন্নত উপকরণ কিছু থাকলেও তা ব্যবহার করার উপযোগী জ্ঞান বা জনবল নেই। ফলে উন্নত শিক্ষাপদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা দান করতে আমরা ব্যাহত হচ্ছি। এতে এক ধরনের সাংস্কৃতিক ব্যবধানের সৃষ্টি হচ্ছে।</p> <p>৩। তথ্যপ্রযুক্তি : বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। তথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর উন্নতি ঘটেছে কম্পিউটার, ডিজিটাল, টেলিফোন ও সাবমেরিন কেবলের সহায়তায়। মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ইন্টারনেটের কল্যাণে বিশ্বের সব নাগরিক সমাজ একে অন্যের অতি নিকটে চলে এসেছে। তবে প্রযুক্তিগত অগ্রগতিতে দৌড়ে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। ফলে বস্তুগত ও অবস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে একটা বড় ব্যবধানে লক্ষ করা যাচ্ছে, যা উন্নয়নের পথে অন্তরায় তৈরি করছে।</p> <p>৪। নগরায়ণ : নগরায়ণ হলো নগর তৈরির প্রক্রিয়া। দেশের নগরায়ণের বৃদ্ধির হার দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে। তবে দেশে নগরায়ণ যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে নগর মানসিকতা সে তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ বস্তুজগতের উন্নতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মনোজগতের উন্নতি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সাংস্কৃতিক ব্যবধান দেখা দিচ্ছে। এতে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে।</p> <p>সবশেষে বলা যায়, আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে নানা ধরনের বস্তুগত আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। একটি সুস্থ, সাবলীল ও গতিশীল সমাজের বিশিষ্ট্য হলো—সমাজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন অংশ ও উপাদানের মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা। সেটা রক্ষিত না হলেই সৃষ্টি হয় সাংস্কৃতিক ব্যবধান, যা দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক এমনকি সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের গতিকে ব্যাহত করে।</p> <p> </p>