<p>একটা সময় মনে করা হতো, মহাকর্ষীয় ভর আর বস্তুর আসল ভর এক। আদৌ তা নয়। মহাকর্ষীয় ভর বলে আমরা যেটাকে জানি, যার কারণে আমাদের ভারী আর হালকার অনুভূতি হয়, সেটা আসলে ওজন। মহাকর্ষ বলের প্রাবল্য যেখানে কম, সেখানে আপনার ওজন অনেক কম হবে, নিজেকে তত হালকা মনে করবেন আপনি। আর মহাকর্ষ প্রাবল্য খুব বেশি যেখানে, সেখান থেকে আপনি পা তুলতেই হিমশিম খাবেন। আর যেটাকে আমরা আসল ভর বা প্রকৃত ভর বলছি, সেটা সব সময়, সব স্থানে, সব ধরনের মহাকর্ষীয় প্রাবল্যে সমান। মহাকর্ষ বল তার ওপর দাদাগিরি করতে পারে না।</p> <p>কিন্তু কী এই প্রকৃত ভর, কীভাবেই-বা এর পরিমাপ হলো? </p> <p>বস্তুর ভেতরে মোট যে পদার্থের পরিমাণ, সেটাই তার প্রকৃত ভর। কিন্তু একটু পরিষ্কার চিন্তা করলেই দেখা যাবে, এ ধারণা মার খেয়ে যাচ্ছে। বস্তুর ভেতর পদার্থ বলতে কী বোঝানো হয়েছে, সেটা কী তার উপাদান? সেটা কি পরমাণু? পরমাণুকে একসময় মৌলিক কণিকা মনে করা হতো।</p> <p>কিন্তু পরে দেখা গেল, সব মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ভর, যেটাকে আমরা দাঁড়িপাল্লায় মাপা ভর বলছি, সেটা সমান নয়। কারণ, পরমাণু নিজেই পদার্থের মৌলিক উপাদন নয়। এগুলো তৈরি ইলেকট্রন, প্রোটন আর নিউট্রন দিয়ে। অন্যদিকে প্রোটন আর নিউট্রন তৈরি হয় কোয়ার্ক দিয়ে। অর্থাৎ ইকেলট্রন আর কোয়ার্কই হলো বস্তুর মৌলিক উপদান। সব মৌলিক পদার্থের পরমাণুর ভেতর ইলেকট্রন ও প্রোটনের সংখ্যা এক নয়, প্রতিটার আলাদা। তাই এক মৌলের পরমাণুর সঙ্গে আরেক মৌলের পরমাণুর ভরের পার্থক্য দেখা দেবে, সেটা নিশ্চিত। আবার পরমাণুকে ভেঙেও যদি আপনি খ্ল খ্ল করেন, অর্থাৎ কোয়ার্ক আর ইলেকট্রনে ভাগ করেন, দেখবেন তাদের ভরও এক নয়।</p> <p>ইলেকট্রন আর কোয়ার্কের ভরের পার্থক্য অনেক। তাই বস্তুর মোট পদার্থের পরিবর্তন দিয়েও ঠিকভাবে নাগাল পাওয়া যায় না প্রকৃত ভরের। সবই আমরা তুল্য ভর হিসেবে পাই।</p> <p>তুল্য ভরটা আবার কী?</p> <p>দাঁড়িপাল্লায় মাপার ভরই তুল্য ভর। দাঁড়িপাল্লার একদিকে একটা বস্তু রাখা হয়, সেটা ভর মাপার জন্য।</p> <p>অন্য পাল্লায় তখন রাখা হয় একটা তুল্য বস্তু। ধরুন, আপনার দাঁড়িপাল্লার একদিকে এক প্যাকেট চাল আছে। জানেন না সে প্যাকেটের ভর কত। আপনি সেটা জানতে চান। ধরা যাক, আপনার কাছে অনেকগুলো এক কেজি ওজনের বাটখারা আছে। আপনি প্রথমে একটা বাটখারা চাপিয়ে দেখলেন।</p> <p>দাঁড়িপাল্লার দুটো পাল্লা সমান হলো না। এরপর আপনি একটা করে বাটখারা বাড়াতে লাগলেন। ঠিক ১০টা বাটখারা চাপানোর পর দেখলেন পাল্লা দুটো সমান হয়েছে। তার মানে আপনি চালের প্যাকেটের ভর পেয়ে গেলেন ১০ কেজি। এটাই সেই তুল্য ভর। আসল ভরটা জানার প্রক্রিয়া জানাই ছিল না বিজ্ঞানীদের ১৯০৫ সালের আগ পর্যন্ত। ভর বেশি হলে বস্তুকে ঠেলতে বেশি বল প্রয়োজন হবে, কম হলে বল লাগবে কম। এটা নিউটনের ভরবেগের সূত্র সারকথা। কিন্তু নিউটন বলতে পারেননি ভরটা আসলে কী।<br />  <br /> ২.<br /> ১৯০৫ সাল। আলবার্ট আইনস্টাইনের একটা গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ হয় ‘অ্যানালেন ডার ফুর ফিজিক’-এ। বাংলা পরিভাষায় সেটার শিরোনাম ‘জড়তা কি বস্তুর শক্তির ওপর নির্ভরশীল?’ কোটি টাকার প্রশ্ন। নিউটন যেটাকে ভরবেগ বলছেন, অ্যারিস্টটল যেটাকে জড়তা বলছেন, আইনস্টাইন সেটাকে পরিচয় করিয়ে দিলেন ইনার্শিয়া (inertia) নামে একটা শব্দ ব্যবহার করে। কিন্তু প্রবন্ধে কিছুটা এগিয়ে গিয়েই আইনস্টাইন ইনার্শিয়াকে একটানে বস্তুর ম্যাস (Mass) বা ভর হিসেবে প্রকাশ করছেন। সেই প্রবন্ধেই জন্ম হয় সেই বিখ্যাত ভরশক্তির সমীকরণের।</p> <p>একই বছর আইনস্টাইন আরও চারটি পেপার প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল বিখ্যাত বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। অবশ্য পৃথিবীর সর্বকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমীকরণটি বিশেষ আপেক্ষিকতা নামের বৃক্ষ থেকে শাখা হিসেবে বেরিয়ে এসেছে। বস্তুর তুল্য ভরের কথা সবাই জানে তখন। কিন্তু প্রকৃত ভরটা বের করা যায়নি। কারণ, তখনো পরম কোনো রাশি পাওয়া যাচ্ছিল না, যেটা সব প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে একই মান দেয়। কিন্তু এর বহুদিন আগেই ম্যাক্সওয়েলের বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গের হিসাব থেকে বেরিয়ে আসে আলোর বেগ পরম রাশি। তারপর মাইকেলসন-মোর্লির সেই বিখ্যাত ব্যতিচার পরীক্ষা থেকে প্রমাণ হয়, আলোর বেগ সব জায়গায় এক।</p> <p>গ্যালিলিও থেকে নিউটন—সবাই মনে করতেন পৃথিবীর অন্য সব বস্তুর গতির মতো আলোর বেগ আপেক্ষিক। অর্থাৎ একজন গতিশীল পর্যবেক্ষক যদি আলোকে মুখোমুখি আসতে দেখেন, তাহলে তাঁর কাছে আলোর বেগ অনেক বেশি মনে হবে। আর আলোকে যদি তাকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে দেখেন, তাহলে তাঁর কাছে মনে হবে আলোর বেগ অনেকটাই কম। কিন্তু মাইকেলসন-মোর্লির পরীক্ষার পর, পরপর অনেকগুলো পরীক্ষা করা হয়। শেষমেশ প্রমাণিত হয়, আলোর বেগ অসীম যেমন নয়, আপেক্ষিকও নয়। আলোর কণা বা তরঙ্গ ছোটে সেকেন্ডে ৩ লাখ কিলোমিটার বেগে। যে প্রসঙ্গ কাঠামো থেকেই দেখুন, যেখান থেকেই মাপুন, এর নড়চড় হবে না কখনো। সুতরাং পদার্থবিজ্ঞান তখন ইতিহাস তছনছ করে দেওয়া এক তত্ত্বের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।</p> <p>অনেকেই কোমর বেঁধে লেগেছিলেন সেই নতুন তত্ত্বের খোঁজে। কিন্তু সুইজারল্যান্ডের বার্ন শহরের পেটেন্ট অফিসের কেরানিটি সবাইকে টেক্কা দিয়ে নাড়িয়ে দিলেন পদার্থবিজ্ঞানের চিরচেনা জগত্টাকে।</p> <p>দেখালেন, আলোর বেগ ধ্রুবক হলে নতুন করে লিখতে হবে নিউটনের গতিবিদ্যার সূত্রগুলোকে। তিনি দেখালেন, কোনো বস্তু যদি গতিশীল হয়, তাহলে সেটার দৈর্ঘ্য কমে যায় বেড়ে যায়, ভর যায় বেড়ে, ধীর হয়ে যায় তার ঘড়ি। এমন আজগুবি কথা বিজ্ঞানজগৎ ফিসফিসানি শুনলেও প্রমাণ ছিল না কোনো। আইনস্টাইন গণিতের ভাষায় বিজ্ঞানের ছন্দে সেটাকে এক মহাসংগীতের মতো করে শোনালেন যেন।<br /> নতুন প্রবন্ধে তিনি বললেন, গতিশীল বস্তুর ভর যদি বাড়ে, তাহলে এই ভরের একটা হেস্তনেস্ত হওয়া দরকার। আগে প্রকৃত ভর মাপার জন্য পরম কোনো তুল্য বস্তু ছিল না। এখন আছে, আলোর বেগ।</p> <p>এটাকেই সমীকরণের মারপ্যাঁচে আবদ্ধ করতে পারলেই কেলস্না ফতে। E=mc² সমীকরণ সেই বাজিমাতই করেছিল। বলেছিল, বস্তুর প্রকৃত ভর জানা খুব সহজ, যদি তার শক্তির মান জানা যায়।</p> <p>অথবা যদি আপনার জানা থাকে বস্তুর ভর, তাহলে সেটার সঙ্গে আলোর বেগের বর্গ গুণ করলে পাওয়া যাবে তার শক্তি। শক্তি আর ভরের মধ্যে স্পষ্ট একটা সম্বন্ধ দেখিয়ে দিলেন আইনস্টাইন। যুগ যুগ ধরে ভরকে, জড়তাকে বস্তুর জন্য মৌলিক রাশি বলে মনে করতেন যাঁরা, তাঁদের আসন টলে গেল। ভর নির্ভরশীল হয়ে উঠল বস্তুর শক্তির ওপর। আগে ভর আর শক্তির সমীকরণের আলাদা আলাদা সংরক্ষণশীলতা নীতি ছিল। আইনস্টটাইন তাঁর ভরশক্তির সমীকরণে দেখালেন, ভর আর শক্তি আলাদাভাবে সংরক্ষণশীলতার আওতায় না আনলেও চলে। ভর ও শক্তি পরস্পরের পরিপূরক।</p> <p>তাই দুটোকে এক করে একটা সংরক্ষণশীলতার নীতি দাঁড় করানো যায়(ভরশক্তির সংরক্ষণশীলতা নীতি।</p> <p>এই যে ভরশক্তির সমীকরণ আইনস্টাইন দাঁড় করালেন। এটার কথা কিন্তু আইনস্টাইনই প্রথম বলেননি। অর্থাৎ E=mc² নামের যে বিখ্যাত সমীকরণের জনক বলে আমরা জানি, এই সমীকরণের প্রবক্তা আইনস্টাইন নিজে নন। হেনরি পয়েনকেয়ার, যাঁকে মনে করা হতো বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্য আইনস্টাইনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, তিনিই এই সমীকরণের প্রথম প্রবক্তা। কিন্তু তাঁকে বাদ দিয়ে আইনস্টাইনই কীভাবে মেরেকেটে বেরিয়ে গেলেন?<br />  <br /> ৩.<br /> ভরের উত্স কী, এ প্রশ্নের জবাব ছিল না নিউটনীয় গতিবিদ্যায়। তারপর যখন তড়িত্গতিবিদ্যার জন্ম হলো স্কটিশ বিজ্ঞানী জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েলের হাতে, তখন বিজ্ঞানীরা রায় দিলেন, নিউটনীয় বলবিদ্যার চেয়ে নতুন এই বলবিদ্যা আরও মৌলিক। পদার্থের অনেক গভীরের খবর এই বলবিদ্যা দিতে পারে। তখন অনেকেই ভাবলেন তড়িত্গতিবিদ্যার জগৎ থেকেই বেরিয়ে আসতে পারে বস্তুর ভরের কারণ।</p> <p>১৮৮৮ সালের ব্রিটিশ বিজ্ঞানী স্যার জে জে টমসন প্রথম কণাদের ভর নিয়ে কাটাছেঁড়া করেন। তিনি দেখান, দুটি চার্জিত গোলক যদি ঘুরতে থাকে, তাহলে সেটা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র তৈরি করে। সেই ক্ষেত্রের কিছু বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে গোলকটির ভেতরেই ঘুমিয়ে আছে তার ভর। তিনি একটা থট এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন। ধরা যাক, একটা টেনিস বল আপনি মাটিতে ছুড়ে আঘাত করলেন। বলটি মাটিতে বাউন্স করে বেশ কিছুটা ওপরে উঠে যাবে। কিন্তু পৃথিবীর মহাকর্ষ বল আবার বলটিকে মাটিতে নামিয়ে আনবে। বলটি মাটিতে পড়বেও, কিন্তু মহাকর্ষীয় বল যেভাবে আকর্ষণ করবে টেনিস বলটিকে, তার জন্য যে গতিতে বলটার নিচে পড়া উচিত ছিল, সেই গতিতে নামতে পারবে না।</p> <p>বলটির পতনে বাধা হয়ে দাঁড়াবে বাতাসের বাধা। অর্থাৎ বলটি শূন্যস্থানে পৃথিবীর টানে মাটিতে পড়ত, সেই বেগ অর্জন করতে পারবে না বাতাসের বাধার কারণে। বস্তু যত ভারী, গতির সূত্রানুযায়ী তাকে গতিশীল করতে তত বেশি বল প্রয়োগ করতে হবে। বাতাসের বাধার কারণে মনে হবে বলটির ভর বেড়ে গেছে, বলটিকে স্বাভাবিক গতিতে পড়তে হলে আরও বেশি মহাকর্ষীয় টান দরকার হবে। বাড়তি যতটুকু ভর বেড়েছে বলে মনে হচ্ছে, সেটাসহ মোট ভরই হলো বলটির কার্যকরী ভর। অন্যদিকে টেনিস বলটির নিজের ভেতরে যে ভর ঘুমিয়ে আছে, সেটাকে বলে স্থির ভর বা রেস্ট ম্যাস।</p> <p>টমসন বললেন, চার্জিত একটা গোলক যখন তার চারপাশে বিদ্যুেক্ষত্র তৈরি করে, তখন আরেকটা চার্জিত কণা যদি গোলকটার আকর্ষণে ছুটে যায়, তখন বিদ্যুেক্ষত্র দ্বারা সেটা বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং কণাটির ভর বেড়ে যাবে। তখন কণাটির ভর মাপলে যা পাওয়া যাবে, সেটা কার্যকরী ভর। সেটা কণাটির স্থির ভরের চেয়ে বেশ বেশি।</p> <p>টমসন একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন বস্তর ভরের বিষয়ে। ব্যাখ্যাটি বেশ জটিল। সেটার সঙ্গে বস্তুর চার্জ, ব্যাসার্ধ আর চুম্বকক্ষেত্র জড়িত। কিন্তু সেই ব্যাখ্যা পরিপূর্ণ ছিল না। পরের বছর আরেক ইংরেজ বিজ্ঞানী অলিভার হেভিসাইড দেখালেন বস্তুর কার্যকরী ভর হবে m= 4E/3c²। এখানে E চার্জিত গোলকটির বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের শক্তি। এরপর জার্মান বিজ্ঞানী ভিলহেম ভিন আর ম্যাক্স আব্রাহাম কৃষ্ণবস্তুর মধ্যে বিকিরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দেখান, যে ‘বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় ভর’-এর কথা বলছেন টমসন বা অলিভার, সেটা শুধু চার্জিত বস্তু বা কণার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। সব বস্তুকণার ক্ষেত্রে সেটা প্রয়োগ করা যাবে না। তখন এই বিজ্ঞানীদ্বয় শক্তি আর ভরের মধ্যে সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা করলেন। কিন্তু সফল হননি।</p> <p>৩.<br /> ১৯০০ সালে এসে হেনরি পয়েনকার দিলেন এক নতুন সমীকরণের হদিস। তত দিনে ম্যাক্স পস্নাঙ্ক কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রকাশ করে ফেলেছেন। অন্যদিকে মেরি কুরি গবেষণা করছেন তেজস্ক্রিয় ক্ষয় নিয়ে। দেখা যায়, তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করার ফলে মৌলের পরমাণুর ভর কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ যে তেজস্ক্রিয় শক্তির বিকিরণ হচ্ছে, সেটার জন্ম হচ্ছে বস্তুর ভর থেকে। পয়েনকার ভর আর শক্তির সেই সম্পর্কটা বের করে ফেললেন, সেটা সেই বিখ্যাত সমীকরণ E=mc²। তখন বৈজ্ঞানিক মহল এই সমীকরণ হজম করতে পারেনি। কারণ, নিউটনীয় বলবিদ্যার মোহ তখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বৈজ্ঞানিক সমাজ। পয়েনকেয়ার পারেননি নিউটনীয় বলবিদ্যার সাহায্যে এর ব্যাখ্যা করতে। ব্যাখ্যা করতে পারেননি আপেক্ষিকতার ছাঁচে ফেলেও। কারণ, আপেক্ষিতার বিষয়টা তিনি কিছুটা বুঝতে পেরেছিলেন, কিন্তু আইনস্টানের মতো স্পষ্ট করে আপেক্ষিতার জগত্টা তিনি দেখতে পারেননি। আর কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সাহায্য নেওয়া তো দূর অস্ত।</p> <p>সেই কাজগুলোই করলেন বার্নের পেটেন্ট অফিসের অখ্যাত কেরানিটি। তিনি বিশেষ আপিক্ষকতার অবতারণা করেন, যেটার চেষ্টা পয়েনকেয়ারও করেছিলেন। আইনস্টাইন স্থানকাল আর ভরশক্তির যেমন সমন্বয় করেন বিশেষ আপেক্ষিকতায়, কিন্তু কোয়ান্টাম তত্ত্বের সঙ্গে বিরোধে যাননি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা দিয়েও E=mc²-এর হিসাব বের করা যায় সহেজেই। সেটাই আইনস্টাইন করেছিলেন।<br /> সুতরাং আইনস্টাইনই তাই ভরশক্তির সমীকরণের প্রতিষ্ঠাতা।</p> <p>আইনস্টাইনের সমীকরণ যে ঠিক, চারপাশ থেকে তার প্রমাণ আসতে শুরু করে। আইনস্টাইনের ব্যাখ্যা ছাড়া এ সমীকরণ ব্যবহার করে বের করা যেত না নিউক্লিয়াসের ভর সমস্যার সমাধান।</p> <p>একটা পরমাণুর ভর হিসাব করে দেখা গেছে, একটা নিউক্লিয়াসের মোট যা ভর হওয়া উচিত, পরীক্ষা করে তার ভর শতগুণ বেশি পাওয়া যায়। বাড়তি এই ভরের হিসাব মেলে কেবল আইনস্টাইন প্রতিপাদিত ভরশক্তির সমীকরণ থেকেই।<br /> সূত্র: সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান<br />  </p>