<p>সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বার্ষিক সাধারণ সভার (এজিএম) পর সভাপতি-সম্পাদকসহ নবনির্বাচিত কার‌্যনির্বাহী কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। </p> <p>সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এজিএম ও দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে ছিলেন না সদস্য পদে নির্বাচিত বিএনপিপন্থী তিন আইনজীবী। অনুষ্ঠানে আওয়ামী পন্থী আইনজীবীদের পাশাপাশি খোকনের অনুসারী বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের অনুষ্ঠানে দেখা গেছে। দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটির আহ্বায়ক আবুল খায়েরসহ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হকের হাত ধরে উঁচিয়ে ধরেন। এসময় করতালি দিয়ে নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানান অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া বিপুল সংখ্যক আইনজীবী।</p> <p>দায়িত্ব নেওয়ার আগে আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে সমমনা ও অনুসারী বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপি নেতা খোকন। সেখানে তিনি সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহণ, ভোট গণনা নিয়ে প্রার্থীদের অবস্থান, হট্টগোল-মারামারি এবং ভোট গণনার চিত্র তুল ধরেন। এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানেই সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব না নিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নির্দেশনার বিরোধীতা করেন।</p> <p>দায়িত্ব নেওয়ার পর সভাপতি খোকন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ কমিটির আশু কর্তব্য হচ্ছে আইনজীবীদের মধ্যে ভাতৃত্ব, শিষ্টাচার-পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সুসংহত করে সমিতির হৃত ঐতিহ্য-গৌরব ফিরিয়ে আনা। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সমিতির ভূমিকা ও অবস্থানকে আরও দৃঢ় করা।’</p> <p>প্রতি বছর সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদে নির্বাচন হয়ে থাকে। সভাপতি, সম্পাদকসহ সম্পাদকীয় পদ ৭টি। বাকি ৭টি সদস্য পদ। পেশাজীবী সংগঠন হলেও আওয়ামী পন্থী প্রার্থীরা সাদা ও বিএনপি পন্থীর নীল প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বিঘ্ন ভোট হলেও ভোট গণনা কখন হবে এ নিয়ে বিবাদ তৈরি হয় প্রার্থীদের মাঝে। এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনাও ঘটে। পরিচিত দুই প্যানেলের বাইরে সম্পাদক পদের প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি সমিতির নির্বাচনে বহিরাগতদের দিয়ে সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ অন্য প্রার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে গত ৯ মার্চ ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটি।</p> <p>ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সংখ্যা গরিষ্ঠ জয় পায় আওয়ামী পন্থী সাদা প্যানেল। সম্পাদকসহ ছয়টি দাপ্তরিক পদ ও চারটি সদস্য পদে জয় পায় এ প্যানেলের প্রার্থীরা। আর সভাপতি ও তিনটি সদস্য পদে জয় পায় নীল প্যানেল অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা। ওইদিন মাহবুব উদ্দিন খোকন ও তাঁর এজেন্টরা ভোট গণনায় অংশ নিলেও বিএনপি পন্থী অন্য প্রার্থী বা তাঁদের কোনো এজেন্ট গণনায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। ফলাফলে সভাপতি জয়ী হলেও গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে পুননির্বাচন দাবি করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেয় পুননির্বাচনের জন্য যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার। আর এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে নির্বাচিত চার জনকে সংশ্লিষ্ট পদের দায়িত্ব গ্রহণ না করতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দেওয়া হয়। সে চিঠি উপেক্ষা করেই সভাপতি পদে বসলেন বিএনপি নেতা খোকন।</p>