<p>বছরে এক কোটি ৬০ লাখ বাড়তি যাত্রীসেবার লক্ষ্য নিয়ে আজ শনিবার উদ্বোধন হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাত্রীদের মতো সব প্রক্রিয়া শেষে তৃতীয় টার্মিনালে ঢুকে নির্ধারিত হলরুমে গিয়ে তাঁর সরকারের এই বড় প্রকল্প আংশিকভাবে চালুর প্রক্রিয়া উদ্বোধন করবেন। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হবে।</p> <p>নতুন এই টার্মিনালের নকশা করেছেন সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরসহ অনেক বিখ্যাত স্থাপত্যের স্থপতি রোহানি বাহারিন। এভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়ামের (এডিসি) মাধ্যমে জাপানের মিৎসুবিশি ও ফুজিতা এবং কোরিয়ার স্যামসাং এই টার্মিনালের নির্মাণকাজ করছে। </p> <p>জানা গেছে, উদ্বোধনের পরপরই বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইট তৃতীয় টার্মিনাল ব্যবহার করে ঢাকা ত্যাগ করবে। সেই ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংও করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইনস। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।</p> <p>হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালের বে, বোর্ডিং ব্রিজ ব্যবহার করে ফ্লাইট পরীক্ষা করা হচ্ছে। অন্যান্য আয়োজনও পরীক্ষা করে প্রস্তুত করা হয়েছে।’</p> <p>এই টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হলে বর্তমানের দ্বিগুণ বেশি যাত্রীকে সেবা দেওয়া যাবে। পুরনো দুটি টার্মিনালের বছরে ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে।</p> <p>বেবিচক বলছে, এই টার্মিনাল পুরোদমে চালুর মাধ্যমে দেশের আকাশপথের যাত্রীসেবায় দিনবদল ঘটবে। এর অত্যাধুনিক নানা ব্যবস্থা বিশ্বপরিমণ্ডলে দেশের এভিয়েশন সেবাকে নতুনভাবে তুলে ধরবে।</p> <p>বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা প্রকল্প উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। উদ্বোধনের আগে ৯০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি।’ তিনি বলেন, যখন প্রকল্প শুরু হয় তখন করোনা মহামারি এলো।</p> <p>কিন্তু কাজ অব্যাহত ছিল। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পের (প্রথম পর্যায়) আওতায় শুধু টার্মিনাল ভবন নয়, আমদানি ও রপ্তানির কার্গো ভবনও নির্মাণ করা হয়েছে। কার্গো কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। আগামী মার্চ-এপ্রিলের দিকে কার্গো কমপ্লেক্স ব্যবহার করা যাবে।</p> <p>বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, এখন ক্যালিব্রেশন, ট্রায়ালের পাশাপাশি যারা এগুলো পরিচালনা করবে, তাদের প্রশিক্ষণের পর এটি হস্তান্তর করা হবে। ভালো মানের সেবা দিতে জাপানি ঠিকাদারকে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে।</p> <p><strong>নির্ধারিত সময়ের আগেই দৃশ্যমান</strong></p> <p>এই প্রকল্পের মেয়াদ চার বছর হলেও নির্মাণ শুরুর তিন বছর ৯ মাসেই পুরোপুরি দৃশ্যমান হলো তৃতীয় টার্মিনাল। এই প্রকল্পে ব্যয় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণ হিসেবে জাইকা দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা, সরকার দিচ্ছে পাঁচ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা।</p> <p>হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যাত্রা শুরু ১৯৮০ সালে। এত দিন দেশের প্রধান এই বিমানবন্দর দুটি টার্মিনাল নিয়ে চলছিল। এসব টার্মিনালে প্রতিদিন প্রায় ৩০টি এয়ারলাইনসের ১২০ থেকে ১৩০টি ফ্লাইট ওঠানামা করে। এসব ফ্লাইটের ১৯ থেকে ২১ হাজার যাত্রী প্রতিদিন এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। এসব যাত্রীকে মানসম্মত সেবা দিতে বিমানবন্দরে বর্তমানে চালু থাকা কম আয়তনের দুটি টার্মিনাল যথেষ্ট নয়। এ কারণে মূল টার্মিনালের দক্ষিণ পাশে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারিতে (পিপিপি) এই টার্মিনালের রক্ষণাবেক্ষণ ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পাচ্ছে জাপান।</p> <p>বেবিচক সূত্র বলছে, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টার্মিনালটি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ জাপানকে দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হতে আরো ছয় মাস সময় লাগতে পারে।</p> <p>নতুন টার্মিনাল নির্মাণের পর সুইস এয়ার, এয়ার কানাডা, এয়ার ফ্রান্সসহ অন্তত ১৫টি নতুন বিদেশি এয়ারলাইনস এরই মধ্যে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।</p> <p><strong>বিশেষজ্ঞ ও খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা  যা বলছেন</strong></p> <p>বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিমানবন্দর একটা দেশের ড্রয়িংরুমের মতো। আমাদের দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু একটা সুন্দর এয়ারপোর্ট ছিল না। ফলে নতুন এই উদ্যোগ খুবই দরকার হয়ে পড়েছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমরা হিথরো, জন এফ কেনেডি, চাঙ্গি এয়ারপোর্ট দেখেছি। সব কিছু দেখেই আমরা একটি অত্যাধুনিক বিমানবন্দর যাত্রীদের উপহার দিচ্ছি। এটি পুরোপুরি চালু হলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হবে।’</p> <p>বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার কমোডর (অব.) এম ইকবাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘থার্ড টার্মিনাল না হওয়া পর্যন্ত আগামী চার বছরে যে হারে যাত্রী বাড়বে, তা সামাল দিতে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’</p> <p>এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা আধুনিক চাকচিক্যময় অবকাঠামো তৈরি করলাম, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আনলাম। কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি পরিচালনার পেছনের যে মানুষটি, তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। নতুন টার্মিনালেও যদি কেউ ঘুষ চায়, নিরাপত্তায় ছাড় দেয়, তাহলে যাত্রীসেবার মান উন্নত হবে না। জাপান এই বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব নিলেও সেই আগের লোকদেরই যদি অত্যাধুনিক বিমানবন্দরটিতে বসিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি পাবে কি না সন্দেহ।’</p> <p><img alt="বিমানবন্দর" height="246" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/October-2023/07-10-2023/Pic-01.jpg" width="640" /></p> <p>হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। বিমানবন্দর সড়ক থেকে টার্মিনালের সামনের ছবি। ছবি : লুৎফর রহমান</p> <p><img alt="বিমানবন্দর" height="384" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/October-2023/07-10-2023/Pic-02.jpg" width="640" /></p> <p>হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আংশিক উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। ছবি : কালের কণ্ঠ</p> <p><img alt="বিমানবন্দর" height="384" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/Harun/October-2023/07-10-2023/Pic-03.jpg" width="640" /></p> <p>তৃতীয় টার্মিনালের ভেতরের অংশ। ছবি : কালের কণ্ঠ</p>