<p><span style="color:#A52A2A"><em>তরুণদের স্বপ্ন দেখাতে এবং সফল হওয়ার কলাকৌশল শেখাতে কালের কণ্ঠের অনলাইনে শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক আয়োজন ‘আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখো।’ সাহিত্যিক ও সাংবাদিক মোস্তফা কামাল নিয়মিত লিখছেন। স্বপ্ন দেখাবেন তরুণদের। স্বপ্ন আর আশাজাগানিয়া লেখা পড়ুন কালের কণ্ঠ অনলাইনে।</em></span></p> <p>সৎ ও কর্মনিষ্ঠ কোনো ব্যক্তি জীবনে ব্যর্থ হয় না। হতে পারে না। দেরিতে হলেও তার জীবনে সফলতা আসবেই। সফলতার জন্য কেউ হয়তো শর্টকাট পথ খোঁজেন। মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে এগিয়ে যান। নিজে যা না, তার চেয়ে অনেক বেশি জাহির করেন। এতে হয়তো তিনি সাময়িকভাবে লাভবান হতে পারেন। কিন্তু অচিরেই তার জীবনে ধস নেমে আসবে। ভেতরটা ফাঁপা হলে বেশি দূর যাওয়া যায় না। </p> <p>প্রকৃতির বিচার বলে একটা কথা আছে। কেউ অসততা কিংবা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাময়িক সুবিধা লাভ করলেও প্রকৃতির বিচারের মুখোমুখি তাকে হতেই হবে। প্রকৃতি অন্যায় কোনো কিছুই সহ্য করে না। এ রকম হাজারো উদাহরণ দিতে পারব।   </p> <p>এ প্রসঙ্গে একটি গল্প বলছি। দুই বন্ধু শাকিল আহমেদ ও শাহেদ আহমেদ। তারা উভয়েই বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ করেছে। শাকিলের চিন্তা, কী করে দ্রুত বড়লোক হবে। কিন্তু শাহেদের দ্রুত বড়লোক হওয়ার চিন্তা নেই। সে সৎভাবে ব্যবসা করে ভালোভাবে চলতে চায়। দুজনেই শুরু করল ব্যবসা। <br /> <br /> শাকিল তর তর করে এগিয়ে যাচ্ছে। আর শাহেদ ঢিমেতালে চলছে। এভাবে বছরের পর বছর যায়। </p> <p>শাকিলের ব্যবসা এতোই দ্রুত এগিয়ে যায় যে, শাহেদের নাগালের বাইরে চলে যায় সে। এক পর্যায়ে দুই বন্ধুর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। শাকিলের বিয়েতে শাহেদ নিমন্ত্রণ থেকেও বঞ্চিত হয়। শাকিলের বিয়ের কিছুদিন পর শাহেদ বিয়ে করে। সেই বিয়েতে শাহেদ শাকিলকে নিমন্ত্রণ করলেও দরিদ্র বন্ধুর বিয়েতে সে যায় না। এতে ভীষণ কষ্ট পায় শাহেদ। </p> <p>একদিন শাহেদ তার স্ত্রীর কাছে শাকিলের দ্রুত বড়লোক হওয়ার কাহিনী বলে। এই বলাটাই মনে হয় তার ভুল হয়েছে। এখন প্রায় প্রতিদিনই শাহেদের স্ত্রী তাকে টিপ্পনি কেটে বলে, তোমরা দুই বন্ধু এক সঙ্গে ব্যবসা শুরু করলে; সে কোথায় আর তুমি কোথায়? শাহেদ আর কী বলবে। সে বলল, সবই ভাগ্যের লিখন!</p> <p>কিছুদিন পর পত্রিকায় শাকিলের ছবিসহ একটি খবর দেখে শাহেদ চমকে উঠল। সে খবরটি এক নিঃশ্বাসে পড়ল। পড়ে দেখে, শাকিল চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। স্ত্রীকে খবরটি দেখাল। </p> <p>খবর দেখে শাহেদের স্ত্রী বলল, থাক বাবা, আমাদের ওতো টাকা পয়সার দরকার নাই। যা আছি ভালোই আছি!</p> <p>শাহেদ কিন্তু ধীরে ধীরে বড় ব্যবসায়ী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। আর শাকিল একজন অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত হলো। </p> <p>একই ধরনের আরেকটি গল্প বলছি। এই গল্পটিও দুই বন্ধুকে নিয়ে। রহমান ও জামান দুই বন্ধু। রহমান মেধাবী। উচ্চ শিক্ষিত। জামান মাঝারি গোছের। তেমন পড়ালেখা নেই। তবে সে বাচাল প্রকৃতির মানুষ। নিজেকে নির্লজ্জভাবে তুলে ধরতে পারে। রহমান তা পারে না। </p> <p>দুই বন্ধু একসঙ্গে সাংবাদিকতা পেশায় ঢুকেছে। তারা একই পত্রিকায় চাকরি করে। বাচাল বন্ধুটি তিলকে তাল বানিয়ে রিপোর্ট করে। সেই রিপোর্ট বড় বড় করে ছাপা হয়। আর রহমানের ভালো রিপোর্ট ছাপা হয় ভেতরের পাতায়। কালেভদ্রে প্রথম পাতায় তার রিপোর্ট যায়। তারপরও রহমান মিথ্যা কোনো রিপোর্ট করে না। </p> <p>জামান ভুল রিপোর্ট করেই অতি অল্প সময়ে পদোন্নতি পায়। রহমান হয়ে যায় জামানের জুনিয়র! জামানকে নিয়ে সবাই নাচানাচি করে। রহমান থেকে যায় আলোচনার বাইরে। </p> <p>একদিন ঠিকই তার কর্তৃপক্ষের কাছে ধরা পড়ে। সম্পাদক ডেকে পাঠান দুই বন্ধুকে। তিনি বলেন, তোমরা দুই বন্ধু? একসঙ্গে এখানে কাজ শুরু করেছিলে? দুই বন্ধু মাথা নেড়ে সায় দেয়। </p> <p>সম্পাদক বললেন, জামান বিশেষ প্রতিনিধি। আর রহমান স্টাফ রিপোর্টার? </p> <p>কেউ কোনো কথা বলে না। সম্পাদক আবার বলেন, জামান তিলকে তাল বানিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি আর তালকে তিল বানিয়ে স্টাফ রিপোর্টারই আছো! </p> <p>রহমান বিস্ময়ের সঙ্গে জানতে চায়, তিলকে তাল মানে কী?</p> <p>মানে বোঝো না? তোমার কাছে ভালো ভালো রিপোর্ট। অথচ তুমি কথা না বলার কারণে সেগুলো ভেতরে যায়। আর জামান ছোটখাটো বিষয়কেও এতো বড় করে উপস্থাপন করে যে, আমরা মিসগাইড হয়ে বড় করে ছাপি! আর তার ভুল রিপোর্টের কারণে আমাদের অনেকগুলো মামলা খেতে হয়েছে। জামান, তোমার চাকরি নট। আর রহমান, তোমার প্রতি সত্যিই অবিচার করা হয়েছে। তোমাকে আমি একবারে ডবল পদোন্নতি দিয়ে বিশেষ প্রতিনিধি করে দিলাম।</p> <p>রহমানের আনন্দ তখন কে দেখে!</p> <p><span style="color:#A52A2A"><strong>লেখক : সাহিত্যিক ও নির্বাহী সম্পাদক, কালের কণ্ঠ </strong></span></p> <p>পড়ুন আগের কিস্তি...</p> <p><a href="http://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2019/03/24/750707">জীবন এক অমূল্য পরশপাথর</a></p>