<article> <p style="text-align: justify;">দেশের সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ খাতকে এগিয়ে নিতে স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো এককভাবে প্রাণিসম্পদ জরিপ কার্যক্রম চলছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় চার হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ে ‘প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প’ নামে পরিচালিত এই প্রকল্প ২০২৫ সালের অক্টোবরে শেষ হওয়ার কথা। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে সরকারের এই উদ্যোগকে খামারিরা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। একই সঙ্গে প্রকল্পের ধীরগতি ও অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে খামারিদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;"><img alt="প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে খামারিদের সংশয়" height="360" src="https://www.kalerkantho.com/_next/image?url=https%3A%2F%2Fcdn.kalerkantho.com%2Fpublic%2Fnews_images%2F2024%2F03%2F29%2F1711655398-ae7e0ee6ff36340922ec15a9e5fce510.jpg&w=1920&q=100" width="600" /></p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময় দ্য লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট-এলডিডিপি বা ‘প্রাণিসম্পদ  ও ডেইরি উন্নয়ন’ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রাণিজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি, মার্কেট লিংকেজ ও ভ্যালু চেইন উন্নয়ন, ক্ষুুদ্র ও মাঝারি খামারিদের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ প্রাণিজ খাদ্য উৎপাদন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণিসম্পদ খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের মূল লক্ষ্য নিয়ে মাঠ পর্যায়ে এই প্রকল্পের কাজ চলছে। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এটি বাস্তবায়ন করছে।</p> <p style="text-align: justify;">বিশ্বব্যাংকের তিন হাজার ৮৮৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সহায়তাসহ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদ দিয়ে ৬১টি জেলার ৪৬৫টি উপজেলায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন কার্যক্রম চলছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক আবদুর রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ২০১৯ সালে নেওয়া প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল চার হাজার ২৮০ কোটি ৩৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। বর্তমান ডলার মূল্যে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৩৮৯ কোটি ৯২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। প্রকল্পের সময়সীমা ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">প্রকল্পের অধীন চট্টগ্রামসহ সারা দেশে প্রায় পাঁচ হাজার ২৯৪টি খামারি গ্রুপ গঠন করা হয়েছে। প্রায় সাত হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও লাইভস্টক সার্ভিস প্রভাইডারকে (এলএসপি) বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নে ৩০ থেকে ৪০ জন খামারি বা পশু পাখি পালনকারীদের নিয়ে সমিতি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামে ১৪৪টি সমিতি গঠিত হয়েছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গত অর্থবছরের আট মাসে ৪১ হাজার খামারিকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে বলে চট্টগ্রাম জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম জানান।</p> <p style="text-align: justify;">এলডিডিপি প্রকল্পের আওতায় প্রাণিসম্পদ সেবা বা পশুর চিকিৎসা সুবিধা উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের খামার বা কৃষকের বাড়িতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬০টি গাড়ি কিনে ভ্রাম্যমাণ ভেটেরিনারি ক্লিনিক করা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এসব ক্লিনিক গাড়ি খামারে যায় না।</p> <p style="text-align: justify;">চট্টগ্রাম ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন বা দুধ উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সারা দেশের ২০ লাখ খামারি এই প্রকল্প থেকে কী সুবিধা পাচ্ছে বা পাবে, তা আমরা বুঝতে পারছি না।’</p> <p style="text-align: justify;">চট্টগ্রামে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে কাজ করেন এমন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২০১৯ সাল থেকে সাড়ে চার বছরে প্রকল্পের মাত্র ৪৮ শতাংশ কাজ হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">মাঠের এসব কর্মকর্তার ভাষ্য, প্রশিক্ষিত খামারি গড়ার আগে মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারের জন্য দেওয়া যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এলডিডিপি প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ে কাজ এগিয়ে নিতে না পারায় এই অবস্থায় প্রকল্পের সময়সীমা আরো ২২ মাস বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রকল্পে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। চট্টগ্রামসহ সারা দেশের জন্য ৩৬০টি মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের গাড়ি কেনা হয়েছে। প্রতি উপজেলায় এসব গাড়ি সরবরাহ করা হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের গাড়ির বিষয়ে প্রাণিসম্পদ বিভাগে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা বেশ কয়েকজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভেটেরিনারি ক্লিনিকের গাড়ির সেবা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো যাচ্ছে না। কারণ ক্লিনিকের গাড়ি উপজেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা নিজেই তাঁর কাজে ব্যবহার করছেন।</p> <p style="text-align: justify;">এমন অভিযোগ চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও। তবে মোবাইল ভেটেরিনারি ক্লিনিকের গাড়ি উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই বলে জানান চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম। কারণ এসব গাড়ি জিপিএস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে মনিটর করা হয়।</p> <p style="text-align: justify;">চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশন সাধারণ সম্পাদক মলিক মোহাম্মদ ওমর বলেন, দেশের সম্ভাবনাময় প্রাণিসম্পদ, বিশেষ করে পশুসম্পদ খাতকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যই সরকার স্বাধীনতার ৫২ বছর পর এককভাবে প্রাণিসম্পদের জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কিন্তু এই উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দিহান চট্টগ্রাম জেলা ডেইরি ফার্মস অ্যাসোসিয়েশনের এই নেতা।</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, দেশের প্রাণিসম্পদের মধ্যে পশুসম্পদ খাতের উন্নয়নে, বিশেষ করে দুধ উৎপাদন বাড়াতে উন্নত জাতের গাভি বা বীজ সুনিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি পশু বা প্রাণীর খাদ্য ও ওষুধ এবং খামারের প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সুলভ মূল্যে প্রান্তিক খামারিদের কেনার আওতায় রাখতে হবে। অন্যথায় ডেইরি ফার্ম খাত শুধু নয়, পুরো প্রাণিসম্পদ খাদ পিছিয়ে থাকবে।</p> <p style="text-align: justify;">বৃহত্তর চট্টগ্রাম পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রিটন চৌধুরী প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের মুরগির খামারের সঙ্গে জড়িত অনেকে কিছুই জানেন না। এমনকি তিনি নিজেও এর আগে এই প্রকল্পের বিষয়ে কিছুই জানতেন না।</p> <p style="text-align: justify;">এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলার প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এই এলডিডিপি প্রকল্পটা নেওয়া হয়েছে ডেইরি খাতের, বিশেষ করে দুগ্ধ উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে। তবে এখানে দেশি জাতের মুরগি পালনকারীদের ক্ষুদ্র একটা অংশকে এই প্রকল্পে যুক্ত করা হয়েছে। দেশের প্রচলিত পোল্ট্রি খাতকে এই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। </p> <p style="text-align: justify;">চট্টগ্রামের বোয়ালখালী ও পটিয়া উপজেলার কয়েকজন খামারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রশিক্ষণের জন্য সারা দিন বসিয়ে কিছু নিয়ম-কানুন শিখিয়ে তাদের ২০০ টাকা ধরিয়ে দিচ্ছে। এ সময় কর্মকর্তারা ফ্যাট ট্রান্সফার বা ক্রিম সেপারেটর মেশিনসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র কেনার পরামর্শ দেন।</p> <p style="text-align: justify;">শাহদাত হোসেন নামে বোয়ালখালীর এক খামারি বলেন, “দুই বছর আগে আমাকে একটা ‘ফ্যাট ট্রান্সফার বা ক্রিম সেপারেটর মেশিন’ দেওয়ার কথা বলে তা আর দেওয়া হয়নি।”</p> </article>