<p> বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখিকা সেলিনা হোসেনকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। চুক্তিভিত্তিতে দুই বছরের জন্য তিনি এ নিয়োগ পেয়েছেন।<br /> বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করেছে। আদেশে বলা হয়েছে, অন্য সব প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে তাঁকে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যোগদানের তারিখ থেকে নিয়োগ কার্যকর হবে।<br /> সর্বশেষ মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শেখ আব্দুল আহাদ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছিলেন।<br /> সেলিনা হোসেনের জন্ম ১৪ জুন, ১৯৪৭, রাজশাহী শহরে। তাঁর পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলার হাজিরপাড়া গ্রাম। বাবা এ কে মোশাররফ হোসেন এবং মা মরিয়মুন্নেসা বকুল। তিনি পিতা মাতার চতুর্থ সন্তান। বাবা এ কে মুশাররফ হোসেনের আদিবাড়ি নোয়াখালী হলেও চাকরিসূত্রে বগুড়া ও পরে রাজশাহী থেকেছেন দীর্ঘকাল; কাজেই সেলিনাকে একেবারে মেয়েবেলায় নোয়াখালীতে বেশি দিন থাকতে হয়নি। সেলিনা হোসেনের মায়ের নাম মরিয়ামুন্ননেছা বকুল। মুশাররফ-মরিয়ামুন্ননেছা দম্পতির সব মিলিয়ে সাত ছেলেমেয়ে। সেলিনা ভাইবোনদের মধ্যে চতুর্থ।<br /> মহান ভাষা আন্দোলনের দুই বছর পর পর (অর্থাৎ ১৯৫৪ সালে) বগুরার লতিফপুর প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হলে বালিকা সেলিনা। ক্লাস থ্রিতে। ১৯৫৯ সালে রাজশাহীর নাথ গালর্স স্কুলে ক্লাস এইটে ভর্তি হন তিনি। নাথ গালর্স স্কুলের বেশির ভাগ শিক্ষক-শিক্ষকাই ছিলেন উদার আর মহৎ। কেননা, ছাত্রীদের তারা কেবল সিলেবাসে আটকে রাখেননি। নাথ গালর্স স্কুল থেকেই ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৬২ সালে। পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে রাজশাহী উইমেন্স কলেজে ভর্তি হন তিনি। কলেজ জীবন শেষ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এবার জীবনে যুক্ত হলে নিবিড় সাংস্কৃতিক ও গভীর রাজনৈতিক অধ্যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বি এ অনার্স পাস করলেন ১৯৬৭ সালে। এম এ পাস করেন ১৯৬৮ সালে।<br /> সেলিনা হোসেনের কর্মজীবন শুরু হয় ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে। তিনি ১৯৬৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত বিভিন্ন পত্রিকাতে উপসম্পাদকীয়তে নিয়মিত লিখতেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি বাংলা একাডেমীর 'অভিধান প্রকল্প', 'বিজ্ঞান বিশ্বকোষ প্রকল্প', 'বিখ্যাত লেখকদের রচনাবলি প্রকাশ', 'লেখক অভিধান', 'চরিতাভিধান' এবং 'একশত এক সিরিজের' গ্রন্থগুলো প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ২০ বছরেরও বেশি সময় 'ধান শালিকের দেশ' পত্রিকা সম্পাদনা করেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম মহিলা পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকরি থেকে অবসর নেন। প্রথম গল্পগ্রন্থ উৎস থেকে নিরন্তর প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ভ্রমণ তাঁর নেশা। তাঁর মোট উপন্যাসের সংখ্যা ২১টি, গল্প গ্রন্থ সাতটি এবং প্রবন্ধের গ্রন্থ চারটি।<br /> কথা সাহিত্যে অবদানের জন্য সেলিনা হোসেন ড. মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক (১৯৬৯), বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮০), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), একুশে পদকসহ (২০০৯) বহু পুরস্কার পেয়েছেন।</p>