<p>বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে উব্দাখালী নদী। বছর দুয়েক ধরে ওই নদীতেই খেয়ানৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন পঞ্চাশোর্ধ্ব রিনা বেগম। প্রতিদিন সকাল ৬টায় শুরু হয় বৈঠা হাতে খেয়া পারাপার, চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। এখান থেকে যে সামান্য আয় করে তা দিয়েই চলে রিনার সংসার।<br /> রিনা বেগম (৫১) সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের উব্দাখালী নদীপার ঘেঁষা তেলীপাড়া গ্রামের মৃত মারফত আলীর স্ত্রী। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জননী।</p> <p>গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে রিনার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় তিনি জানান, ৩৫ বছর আগে একই গ্রামের আরেক গাইন পরিবারের সদস্য  মারফত আলীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী মিলে গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র বিক্রি করতেন। যা আয় হতো তা দিয়েই চলত সংসার। দাম্পত্যজীবনে একে একে তাঁদের ঘরে আসে দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বছর সাতেক আগে হঠাৎ তাঁর স্বামী মারা যান। এরপর কখনো অন্যের বাসাবাড়িতে, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ফেরি করতেন। এভাবে শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেন। এসব করেই ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ মেরামতের কাজ করে তাঁদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সংসার চালান। কিন্তু বছর দুয়েক ধরে অন্য কোনো কাজ করতে না পারায়, বাড়ির পাশের উব্দাখালী নদীতে খেয়ানৌকায় যাত্রী পারাপারের কাজ শুরু করেন তিনি।</p> <p>রিনা জানান, স্বামীর কোনো জায়গাজমি না থাকায় তিনি তাঁর সন্তানদের নিয়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে ঘর বেঁধে বসবাস করছেন। বারবার জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারি দপ্তরের কর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েও গৃহহীন হিসেবেও আজ পর্যন্ত তাঁর ভাগ্যে জোটেনি সরকারি কোনো ঘর অথবা একখণ্ড খাসজমি এমনকি সরকারি ভাতাও। </p> <p>তেলীপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিধবা রিনা বেগমের দুই ছেলে থাকার পরও তাঁরা সংসার নিয়ে আলাদা বসবাস করছেন। রিনা বেগম এই বয়সে এসেও নিজেই খেয়ানৌকায় যাত্রী পারাপার করে মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে যে সামান্য আয় করেন সেই আয়েই তাঁর সংসার চলে। রিনা বেগম আমাদের নারীদের কাছে অনুপ্রেরণা।’ </p> <p>উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অতীশ দর্শী চাকমা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রিনা বেগমের কথা শুনেছি। যেহেতু  তাঁর স্বামী নেই। সে জন্য অচিরেই তাঁকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।’ </p>