<p>রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার শিক্ষক দিবস উপলক্ষে ড. শামসুজ্জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অথচ শিক্ষক দিবসের এই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিলো না বললেই চলে। হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলো ও শিক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর পরও তাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হওয়াকে নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকরা।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রসায়ন বিভাগের আয়োজনে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ সিনেট ভবনে ড. জোহা স্মারক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার জন্য বেশ কয়েকদিন আগ থেকেই বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি অনুষদের অন্তর্ভূক্ত ৫৯টি বিভাগ এবং পাঁচটি পৃথক ইনস্টিটিউট মিলিয়ে এক হাজার দুইশো’র মতো শিক্ষক রয়েছেন। অথচ শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০জনের মতো শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। যা মোট শিক্ষকের পাঁচ ভাগ মাত্র। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্যান্য বিভাগের মাত্র দুয়েকজন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।</p> <p>বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, ড. জোহা শুধুমাত্র রসায়ন বিভাগেরই শিক্ষক ছিলেন না। তিনি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু তাঁর অনুষ্ঠানে অন্যান্য বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এ রকম উপস্থিতিতে তারা আশাহত। তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই ড. জোহার সম্পর্কে জানে না। শিক্ষকদেরকে স্ব-উদ্যোগে এবং প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার পর শিক্ষার্থীদেরকে ড. জোহা সম্পর্কে অবহিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি।</p> <p>অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. তারিকুল হাসান বলেন, আমরা প্রতিটি বিভাগকে আলাদাভাবে চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তবে অন্যান্য বারের তুলনায় এ বছর শিক্ষকদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বেশি।</p> <p>রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন হাওলাদার বলেন, আমরা জোহা স্যারের প্রতি সম্মান জানিয়ে প্রতিবছরই এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। আমরা সবাইকেই আমন্ত্রণ জানাই। বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে হয়তো শিক্ষকরা উপস্থিত হতে পারেননি। তবে আমরা শিক্ষকদের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ কামনা করি।</p> <p>জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, আজকের অনুষ্ঠানে (আজকের স্মারক বক্তৃতা) শিক্ষকদের উপস্থিতি যে ছিলো না তা নয়। তবে এ ধরনের অনুষ্ঠানে শিক্ষকদের আরও বেশি আমরা আমা করি।</p> <p>এদিকে অনুষ্ঠানে ‘চরিতার্থ এক বিজ্ঞান জীবন: নির্মিতি ও সমকালের ভাবনা’ বিষয়ে স্মারক বক্তৃতা পাঠ করেন কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্যামল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এটা চিরসত্য যে ড. জোহা আর জন্মগ্রহণ করবেন না। তবে আমরা যে ড. জোহার মতো আর কাউকে পাবো না বিষয়টি তেমন নয়। আমাদেরকে এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে তাদের চিত্তে ড. জোহার আদর্শকে লালন ও ধারণ করে শিক্ষার্থীদেরকেও সেভাবে তৈরি করতে হবে।</p> <p>অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়েল উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মো. জাকারিয়া প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন হাওলাদার।</p> <p>এর আগে গতকাল সূর্যদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালযের বিভিন্ন ভবনে কালো পতাকা উত্তোলণ করা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ড. জোহার মাজার ও জোহা স্মৃতিফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে কোরআনখানি ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল ও প্রদীপ প্রজ্জ্বালন অনুষ্ঠিত হয়। আগামী ১৩ মার্চ বিকেল ৪টায় মিলনায়তনে ড. জোহা স্মরণে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় আলোচক হিসেবে নীলফামারী-২ আসনের সাংসদ আসাদুজ্জামান নূরের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।</p>