তবে সব পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন সব মাধ্যমে প্রচার করলে সমান ফল পাওয়া যায় না। সম্ভাব্য ক্রেতার কাছে সঠিক মাধ্যম কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞাপন পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে মিডিয়া বায়ার। ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এ ধরনের কাজ করে ঘণ্টাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব।
ক্লায়েন্টের পণ্য বা সেবার ধরন এবং বাজেট অনুযায়ী বিজ্ঞাপনের স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা মিডিয়া বায়ারদের কাজ। এ ক্ষেত্রটিতে অভিজ্ঞতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। যারা অন্তত কয়েক বছর বিজ্ঞাপন নিয়ে কাজ করেছে, বোঝে কোন ডেমোগ্রাফিকের কাছে কী ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পৌঁছানো সম্ভব—তারাই মিডিয়া বায়ার হিসেবে সফল হয়।
পাবলিক রিলেশনস ম্যানেজার
পাবলিক রিলেশনস (পিআর) ম্যানেজাররা কাজ করে প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র হিসেবে। এ ধরনের কাজের মূল লক্ষ্য, জনসাধারণের মধ্যে পরিচিতি ও মর্যাদা ধরে রেখে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কার্যকলাপ সম্পর্কে প্রচারণা চালানো। প্রতিদিনের কাজের মধ্যে রয়েছে প্রেস রিলিজ লেখা এবং বিভিন্ন ধরনের গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্মে সেগুলো প্রকাশ করা। সে জন্য প্রতিটি পিআর ম্যানেজারের সঙ্গে সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের সুসম্পর্ক থাকা জরুরি। প্রতিষ্ঠানের কার্যকলাপ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হয় পিআর ম্যানেজারদের। এই ক্ষেত্রটিতে কাজ করার বড় দায়িত্ব হলো ক্রাইসিস মোকাবেলা করা। কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা নষ্ট করা যাবে না।
ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মগুলোতে পিআর ম্যানেজারের কাজ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণ প্রতিবছর অন্তত ৭ শতাংশ করে বৃদ্ধি পাবে। পিআর ম্যানেজারদের আয় ঘণ্টাপ্রতি ৫০ থেকে ১০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।
সাইবার সিকিউরিটি ডেভেলপার
প্রতিনিয়ত নতুন ধরনের সাইবার হামলা ও ম্যালওয়্যার তৈরি করছে হ্যাকাররা, তাদের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে যা করণীয় সবই সাইবার সিকিউরিটি ডেভেলপারের কাজ। ওয়েবসাইট বা সফটওয়্যারের ত্রুটি সারানো, ফায়ারওয়াল এবং অথেন্টিকেশনের নিরাপত্তা জোরদার করা থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নিরাপত্তা সিস্টেম তৈরি করারও প্রয়োজন হতে পারে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ভিন্ন, একই নিরাপত্তাব্যবস্থা সব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। সঠিক নিরাপত্তাব্যবস্থা ঠিক করার মতো অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মগুলোতে এ ধরনের কাজ করে ঘণ্টাপ্রতি ৪০ থেকে ৯০ ডলার পর্যন্ত আয় করা যায়। এ ক্ষেত্রটিতে কাজের সুযোগও বাড়ছে দ্রুত, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বছরপ্রতি ৩৩ শতাংশ হারে এ কাজের পরিধি বাড়বে।
ভিডিও এডিটিং
ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ভিডিও এডিটর নিয়োগ করে অনেক কনটেন্ট নির্মাতা। কাজের দক্ষতা অনুযায়ী ঘণ্টাপ্রতি ১০ থেকে ৭০ ডলার পর্যন্ত আয়ের সুযোগ আছে। ইউটিউব এবং টিকটকের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর জনপ্রিয়তা এবং কনটেন্টের চাহিদা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ক্ষেত্রটিতে কাজের সুযোগও বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
গ্রাহকরা সাধারণত নিজেদের শুট করা ফুটেজ এবং ভয়েস ওভার রেকর্ড করে পাঠিয়ে দেয়। তাদের চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভিডিও তৈরি করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিছু ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের কাজও করতে হয়। তাই এ কাজের জন্য প্রয়োজন শক্তিশালী পিসি এবং উচ্চগতির ইন্টারনেট।
বিজনেস ও ফিন্যানশিয়াল কনসালট্যান্ট
ব্যবসার মুনাফা বাড়াতে সেটি সঠিকভাবে পরিচালনা করা এবং মূলধন ও অন্যান্য সম্পদের যথাযথ ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজনেস ও ফিন্যানশিয়াল কনসালট্যান্টদের নিয়োগ করে থাকে। এ ধরনের কাজের মজুরি ঘণ্টাপ্রতি ২৮ থেকে ১০০ ডলারেরও বেশি হতে পারে। এ দুটি ক্ষেত্রে কাজের পরিমাণও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ২০৩৩ সাল পর্যন্ত ১১ শতাংশ হারে কাজের সুযোগ বাড়তে থাকবে।
বিজনেস কনসালট্যান্টদের কাজ প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রম কিভাবে আরো সুচারুভাবে পরিচালনা করা যায় সেটি বের করা। সে জন্য অপ্রয়োজনীয় কর্মচারী ছাঁটাই করা, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় সংকোচন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশেষায়িত ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করার মতো অনেক ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বিজনেস কনসালট্যান্টদের দায়িত্ব ধাপগুলোর পূর্ণাঙ্গ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা এবং বাস্তবায়ন।
প্রতিষ্ঠানের মূলধন এবং স্থাবর সম্পত্তিগুলোর সর্বোচ্চ লাভজনক ব্যবহার বের করা ফিন্যানন্সিয়াল কনসালট্যান্টদের দায়িত্ব। ব্যক্তি পর্যায়েও একই কাজ করে থাকে তারা। সেটা হতে পারে বিনিয়োগের পোর্টফোলিও সাজিয়ে দেওয়া, অবসরপ্রাপ্তদের পেনশনের লাভজনক বিনিয়োগের পরামর্শ দেওয়া বা ট্যাক্সের বোঝা কমানোর উপায় বের করা।
ডেটা অ্যানালিস্ট
প্রতিটি ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ তথ্য প্রতিনিয়ত সংগ্রহ করে। ক্রেতাদের তথ্য, বিক্রীত পণ্যের লেজার অথবা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাজিরার তথ্য—সব কিছু থেকেই প্রতিষ্ঠানকে আরো সুচারুভাবে পরিচালনার উপায় এবং কোথায় লোকসান হচ্ছে—সেটিও বের করা যায়। এ কাজগুলোর জন্য ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ডেটা অ্যানালিস্ট নিয়োগ করে তারা। ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ২০ থেকে ৫০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে, তবে দক্ষ ডেটা অ্যানালিস্টদের ফুলটাইম চাকরিও দেয় অনেক প্রতিষ্ঠান, সে ক্ষেত্রে আয়ের পরিমাণ বেশি।
এ কাজগুলোর জন্য স্ট্যাটিসটিক্যাল অ্যানালিসিসে বিশেষায়িত সফটওয়্যারগুলো ব্যবহারে পারদর্শী হতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্কিল বাড়ালে লস নেই, ২০৩৩ সাল পর্যন্ত অন্তত ২৩ শতাংশ হারে কাজের সুযোগ বাড়তে থাকবে।
এছাড়াও
সেরা সাতটি ফটো ফ্রিল্যান্স জবের বাইরে এডিটিং, এআই প্রফেশনাল, ব্লকচেইন ডেভেলপার, ডিজাইনার বা অ্যাপ ডেভেলপারের মতো আরো অনেক ধরনের কাজ করেও সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া সম্ভব। সফল ফ্রিল্যান্সার হতে চাইলে প্রয়োজন প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে কী ধরনের কাজ বেশি পাওয়া যাচ্ছে সে অনুযায়ী নিজের দক্ষতা তৈরি করা। এ ক্ষেত্রে সফলতার আসল চাবিকাঠি দক্ষতা বাড়ানো।