<p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রাণিকুলের নিরাপদ আধার ও ভবিষ্যতের আশ্রয় হিসেবে প্রধানত অনুকূল পরিবেশকেই বিবেচনা করা হয়। প্রকারান্তরে এই পরিবেশ যখন অনুকূল অবস্থা থেকে প্রতিনিয়ত প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে উঠে তখন মানুষসহ অন্যান্য জীবজগৎ ও উদ্ভিদকুলের স্বাভাবিক বিকাশ চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয় এবং অনিবার্যভাবে একটা ক্ষতিকর অবস্থার উদ্ভব ঘটে। নির্বিচারে বৃক্ষনিধন তথা বনভূমি উজাড়</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার, ফসলি জমিতে সার ও কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ, শিল্প-কারখানার বর্জ্য, যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া, ওজোনস্তরের ক্ষয়, প্লাস্টিক দ্রব্যের যাচ্ছেতাই ব্যবহার, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ইত্যাদির পরিণামে পরিবেশ খুব দ্রুতই প্রতিকূল হয়ে উঠছে। বলাই বাহুল্য যে যদি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা না করে আমরা একের পর এক পরিবেশবিরোধী অপরিণামদর্শী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে থাকি, তাহলে পরিবেশের এই সংকট আমাদের মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে।</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/06.June/09-06-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="211" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/06.June/09-06-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />বিপন্ন পরিবেশের ফলে সৃষ্ট এই সংকট পুরো বিশ্বের জন্যই হুমকি ও বিপর্যয় ডেকে আনবে। জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচির ২৪১টি নির্দেশনার মধ্যে ২৫টিই পরিবেশসংক্রান্ত। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের প্রতিবেদন ২০২১ অনুসারে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, ১৬৫টি দেশের মধ্যে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। বলার অপেক্ষা রাখে না যে পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের উদাসীনতা ও ব্যর্থতাই এ অবস্থার জন্য দায়ী। কেননা বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী ও গাছপালা নিশ্চিহ্ন হয়েছে, হারিয়ে যাচ্ছে নির্মল ও বিশুদ্ধ বাতাস, সুপেয় পানি ও মাটির উর্বরা শক্তি; সুবিস্তীর্ণ অরণ্য, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং স্বাভাবিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবের জন্য তো আমাদের নিজেদের আত্মঘাতী কাজকর্মই দায়ী। বায়ু ও শব্দদূষণে রাজধানী ঢাকার শীর্ষস্থানে অবস্থান করার কথা এখন আর আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই। </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফ্রন্টিয়ার্স ২০২২-নয়েজ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, ব্লেজেস অ্যান্ড মিসম্যাচেস</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রতিবেদন অনুসারে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, শব্দদূষণের তালিকায় বিশ্বের ৬১টি নগরীর মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান প্রথম, যেখানে সর্বোচ্চ ১১৯ ডেসিবেল শব্দমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গ্রিনপিসের বায়ুদূষণ-২০২১ মতে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশের মধ্যে বাংলাদেশ প্রথম। আর সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের মধ্যে ঢাকা তৃতীয়। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সারা দেশে ৫৯ শতাংশ ইটভাটা বেড়েছে এবং সংখ্যায় তা চার হাজার ৯৫৯টি থেকে বেড়ে আট হাজার ৩৩টি হয়েছে। যার মধ্যে দুই হাজার ৮৩৭টির পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নেই। পরিবেশগত ছাড়পত্র নেই দুই হাজার ৫৩১টির এবং দুটোর কোনোটিই নেই এমন ইটভাটা রয়েছে প্রায় তিন হাজার। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক গ্রাউন্ডস ওয়েল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবীতে পরিবেশগত বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং তা ২০৫০ সাল নাগাদ ভয়াবহ রূপে আবির্ভূত হতে পারে। আর তখন জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী অভিবাসনের মুখে পড়ে যেতে পারে, যার বেশির ভাগই বাংলাদেশি জনগোষ্ঠী হতে পারে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে উন্নত ও ধনী দেশগুলোর বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রতিযোগিতার কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করছে। ভারসাম্যমূলক প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার জন্য একটি দেশের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। আমাদের দেশে সরকারি হিসেবে সেটি ১৬ শতাংশে ধরা হলেও বাস্তবে আছে মাত্র ৯ শতাংশের মতো। অধিকন্তু জনগণের আবাসভূমি স্থাপনের প্রয়োজনে প্রতিবছর বন উজাড় হচ্ছে ৯.৪ শতাংশ। তদুপরি পাহাড় কেটে বসতবাড়ি নির্মাণে পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্যও বিনষ্ট হচ্ছে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিবছরের মতো এবারও ৫ জুন বিশ্বব্যাপী পরিবেশ দিবস পালিত হয়েছে। এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভূমি পুনরুদ্ধার</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, মরুকরণ এবং খরা স্থিতিস্থাপকতা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">। এ থেকে আমরা সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনাও পেতে পারি। নদী খননের মাধ্যমে নদীর তীরসংলগ্ন ভূমি পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া আবশ্যক। নদীর নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য খননের ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত। এর ফলে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি ও প্রশস্ততা হ্রাস করে ভূমি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া সহজ করা যাবে। অতি সম্প্রতি সরকার </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">যমুনা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">-পদ্মা নদীর তীর স্থিরকরণ এবং ভূমি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ উন্নয়নে প্রস্তাবিত পাইলট প্রকল্প</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামে এমন একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছে। এই প্রকল্পে নদী খননসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদীপথ সংরক্ষণের মাধ্যমে গড়ে ১৬ কিলোমিটার প্রশস্ততাকে সাত থেকে আট কিলোমিটারে নামিয়ে এনে প্রায় এক হাজার ৬০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি পুনরুদ্ধার ও ৩৫০ কিলোমিটার নৌপথ সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, যা রীতিমতো একটি মাইলফলক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নদ-নদীর অবদান অপরিসীম। এদিক বিবেচনায় নদীগুলোতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করা দরকার। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী মরুকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। মরুকরণ আমাদের জন্যও তীব্র হুমকি হিসেবে ধেয়ে আসছে। মরুকরণের কথা চিন্তা করলে দুটি বিষয় সামনে আসে। প্রথমত</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">, একটি বিস্তীর্ণ এলাকার মাটি অনুর্বর হতে থাকে, দ্বিতীয়ত, অনাবৃষ্টি ও খরতাপের দরুন নদী, খাল-বিলসহ জলাধারগুলো শুকিয়ে যেতে থাকে। আর আমাদের দেশের কিছু অংশে বিগত বছরগুলোতে এ লক্ষণগুলোই বেশি পরিমাণে দেখা যাচ্ছে। খরাপ্রবণ এলাকার জন্য ১২ মাসের কৃষি ও উপযোগী শস্য বিন্যাসের পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে সমস্যার দিকগুলো চিহ্নিত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। জীবাণু ও জৈব সারের ভূমিকা সম্পর্কে চাষাবাদে যুক্ত লোকজনকে প্রশিক্ষণ দিলে নিশ্চয় এর সুফল পাওয়া যাবে। সর্বোপরি বিপন্ন পরিবেশকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কৃষিজমি সংরক্ষণ, কৃষিকাজে জৈব সার ব্যবহারে কৃষকদের উৎসাহিতকরণে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পাশাপাশি নদীর পানিপ্রবাহকে অবাধ করাসহ খাল-বিল ও জলাভূমিগুলেঅ সংরক্ষণে সচেষ্ট থাকতে হবে। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"> : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></span></span></p>