গ্রাম আমাকে আহ্বান করে নিরন্তর। আমি আজও ভূতে পাওয়া মানুষের মতো এখন-তখন গ্রামমুখী হই। ঢাকায় বসবাস আমার। অনেকের মতে, অবাসযোগ্য একটি শহর।
গ্রাম আমাকে আহ্বান করে নিরন্তর। আমি আজও ভূতে পাওয়া মানুষের মতো এখন-তখন গ্রামমুখী হই। ঢাকায় বসবাস আমার। অনেকের মতে, অবাসযোগ্য একটি শহর।
আবার শীতকালে ধূসর পৃথিবী। ধানক্ষেত ঢেকে যায় কুয়াশায়। সেদিকে তাকিয়ে বসে থাকি। কিছুই করি না, সেটাই অনেক কিছু করা বলে মনে হয়। না করায়ও যে করার আনন্দ আছে, সেটি শুধু আমাদের গ্রামগঞ্জে গেলেই টের পাওয়া যায়। সঞ্জীবিত হয়ে যাই। মাঝেমধ্যে কাগজ-কলম নিয়ে বসি কিছু লেখার জন্যে। কিন্তু সে চিন্তা হারিয়ে যায় গ্রামের আদিগন্ত সুন্দর যে ল্যান্ডস্কেপ সেদিকে তাকিয়ে থেকে। এভাবেই আমি গ্রামমুখী। এভাবেই আমার বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। অসাধারণ এক অনুভূতি আমাদের বাংলার গ্রামে। বাল্যকাল থেকে বিভিন্ন ধরনের বাংলা সাহিত্যের বই পড়ে আমি বড় হয়েছি। বিশেষ করে গল্প ও উপন্যাস। যদি শরত্চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে দিয়েই শুরু করি, তাঁর বর্ণনায় কি তারও আগে, বা কিছু পরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ’পথের পাঁচালী’—সব কিছুতেই যেন গ্রামবাংলার চিত্রটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আমাদের সাহিত্যে। সেখান থেকেই গ্রামবাংলার প্রতি আমার আকর্ষণ আরো বেশি বেড়ে গেছে। সেসব বই পড়ে, সেসব বইয়ের ভেতরে গ্রাম সম্পর্কে যে বিবরণ লেখা আছে, সেই বিবরণ জেনে যেন দিব্য চোখে দেখতে পেয়েছি নানা দৃশ্য।
বাঁশঝাড় নুয়ে পড়েছে মেঠোপথে। বাঁশের পাতা আমার শরীরে আদরের মতো করে যেন হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এই দৃশ্য কল্পনার চোখে দেখেছি একসময়। অনুভব করেছি। তারপর বাস্তবে তা পরিণত হয়েছে আমার গ্রামে বা আমি যেসব গ্রামে যাই, সেসব গ্রামের পথে। বাঁশঝাড়ের নিচে শুয়ে থেকে বৈশাখের অগ্নিতপ্ত দিন পার করে দিয়েছি মৃদুমন্দ বাতাসে। অসাধারণ সেই অনুভূতি। বস্তুতপক্ষে বিশ্বের প্রধান প্রধান শহরের সবই আমার দেখা। কিন্তু বারবার আমি ফিরে এসেছি আমার গ্রামে, আমাদের গ্রামে। আমি অনেক সময় বন্ধুবান্ধবকে ঠাট্টা করে বলি যে নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে সড়ক ফিফ্থ এভিনিউ, সেই ফিফ্থ এভিনিউ দিয়ে হাঁটছি, সব কিছুই সূচারু, ভারি সুন্দর দৃশ্য। পাশেই সেন্ট্রাল পার্ক। ফুলে-ফুলে ভরা। হঠাৎ আমার মন উড়ে যায় আকাশে। প্রায় অর্ধ-বিশ্ব অতিক্রম করে পৌঁছে যায় আমার গ্রাম রতনপুরে। সবুজ ধানক্ষেতের বুকচিরে যে মেঠোপথ, সেই পথ বেয়ে আমি হেঁটে চলি দূর দিগন্তের দিকে। সামনেই আঁকাবাঁকা নদী বর্ষায় থাকে যৌবন সর্বে-মত্ত। শুকনো মৌসুমে বার্ধক্যে পায় তাকে। বাংলার ষড়ঋতু দেখতে হলে, গ্রামে যাওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। সে মোহেই আমি পৌঁছে যাই গ্রামে যখন-তখন।
এই যে আমার নিত্য যাওয়া-আসা, এরও প্রায় দুই যুগ হয়ে গেল। লক্ষ করিনি, এরই মধ্যে আস্তে আস্তে পরিবর্তন আসে পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুতেই। শুরুতে ছিল খালে খালে নৌকা বেয়ে গ্রামে যাওয়া, গ্রাম থেকে আসা। অনেক সময় লাগত তাতে। কিন্তু তাতে কী? স্বচ্ছ পানির বুকচিরে নৌকা এগিয়ে যেত গন্তব্যের দিকে। নৌকার চালের ওপর বসে বাতাসের গান শুনতে শুনতে কখন যে পৌঁছে যেতাম তা লক্ষও করিনি অনেক সময়। তারপর চোখের সামনে যেন নদী ক্রমেই হয়ে এলো ক্ষয়িষ্ণু। বছরের বেশির ভাগ সময় নাব্য থাকে না আর। অতএব শরৎ থেকে শুরু করে গ্রীষ্মের দাবদাহ পর্যন্ত দুটি নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি করে গিয়ে হেঁটে যাওয়া-আসা করতে হয়। এরই মধ্যে ওই জলমগ্ন জনপদে ছোট ছোট সড়ক নির্মাণের প্রচেষ্টা গ্রহণ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেসব সড়কে একটির বেশি গাড়ি চলতে পারে না। অতএব রিকশানির্ভর। আবার বর্ষার তোড় শুরু হলে ওসব সড়ক ভাঙতে শুরু করে। তখন হয়ে যায় তা বিপজ্জনক। আমি মাঝেমধ্যে ভাবি, এ যেন অতি পরিশ্রম করে, অনেক পরিচর্যা করে যা হওয়ার নয় তাই করার প্রচেষ্টা চলে আমাদের গ্রামগুলোয়। অথচ উচিত হতো এই যে যেখানে যেমন অবস্থা, তা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ওই জলো জায়গায় সড়ক নির্মাণ ও সংরক্ষণে অত পয়সা খরচ না করে নদী ও খালগুলোর নাব্য ফিরিয়ে আনা ও জলযানগুলোকে আধুনিক করা।
আমাদের দেশ বঙ্গের সমতট এলাকায়, যদি রাঢ়বঙ্গের মতো আচরণ করি আমরা, তাহলে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। পূর্ববঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত রতনপুর তো আর উত্তরবঙ্গের রংপুরের মতো হতে পারে না? অথচ তাই চলছে এখন। ফলে চরিত্র হরণ হচ্ছে আমাদের গ্রামগুলোর। ক্রমেই এসব গ্রাম জীর্ণশীর্ণ হয়ে হারিয়ে যাবে কোথায় কে জানে? লক্ষণ এখন নিত্যই দৃষ্ট। গ্রামের সব মানুষ এখন নগরমুখী। কেউ আর গ্রামোন্নয়নের কথা বলে না। ভাবে না এর সম্পর্কে আদৌ। পারলে বাড়িঘর, সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে দূরে কোথাও পাড়ি জমাতে চায় সব সময়।
বাল্যকাল থেকে ছোট-বড় নানা শহরে মানুষ হয়েছি আমি। বাবার ছিল বদলির চাকরি। সে সুবাদে নানা শহরে বড় হয়ে ওঠা। আমার স্মৃতির উন্মেষ কুষ্টিয়ার অন্তর্গত মেহেরপুর মহকুমায়। সেখানে বাবা তখন মহকুমা হাকিম। মেহেরপুর শহরের উপকণ্ঠে একটি বাঘ ধরা পড়ে। সেই বাঘ খাঁচায় ভরে রাখা হয়। আমাকে বাবার এক সহকর্মী কোলে করে বাঘের খাঁচার কাছে নিয়ে যায়। বাঘের গর্জনে আমি কেঁদে ফেলি। সেই থেকে আমার স্মৃতির পদচারণা শুরু। এরপর ফেনী, মাদারীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া হয়ে ঢাকা। আমার মনে আছে, ছোটবেলা থেকেই বছরে অন্ততপক্ষে একবার আমার দাদার আদি নিবাস ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তর্গত একটি অজপাড়াগাঁয়ে আমরা বেড়াতে যেতাম। সাধারণত যেতাম অগ্রহায়ণ মাসে অর্থাৎ হেমন্তকালে। শিশির ভেজা মাঠে খালি পায়ে হেঁটে বেড়াতাম। খেলতাম গ্রামের ধানক্ষেতে। ধান কেটে নেওয়ার পর যে নাড়া পড়ে থাকত, সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হতো। তারপর সেটি ক্রমে ছাই, পরিণত হতো সারে। সেই কালো কালো পোড়া মাঠে ফুটবল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি জীবনে কখনো ভুলব না। বাড়ি যখন ফিরতাম সন্ধ্যাবেলায়, তখন কালো ছাইয়ে সর্বাঙ্গ ঢেকে গেছে। মা বলতেন, পুকুরে ডুব দিয়ে আয়। এই সুযোগটির অপেক্ষায়ই থাকতাম। আবার সন্ধ্যাবেলায় পুকুরে ঝাঁপাঝাঁপি।
মাঝেমধ্যে এ রকমও হতো যে দেশে দুবার যাওয়া হতো। একবার শীতে, একবার গ্রীষ্মে। গ্রীষ্মের ছুটি, সে এক মহাআনন্দের সময়। প্রচণ্ড গরম থাকত কিন্তু তাতে করে আমাদের কোনো অসুবিধা হতো না। ওই বয়সে অমন আগ্রহ ও উত্তেজনা নিয়ে কোনো কিছুকেই বাধা বলে মনে হয়নি। দৌড়ে লাফিয়ে বেড়াতাম এখানে সেখানে। নদী আর খালগুলো পরিপূর্ণ থাকত জলে। সেই স্রোতস্বিনী ছোট নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতার কাটা জীবনে কখনো ভোলা যায় না। শীতকালের অন্য রূপ। সব বাড়িতে পিঠা তৈরি হতো। পিঠে ও চিঁড়ার সমারোহ। ভোর থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন দিনে আমরা আবারও মাঠে ফুটবল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতাম।
রতনপুরের সেই সবুজ ধানক্ষেত পেরিয়ে শ্মশানঘাট। শ্মশানঘাটের পরেই কুলকুল করে বয়ে যাওয়া আমাদের গ্রামীণ নদী, যার নাম গ্রামবাসী রেখেছে ‘যমুনা’। নদীটি ছিল নামহীন, এখন নাম পেয়ে যেন আরো ফুর্তি তার বক্ষে। এসব পাগলামি আমার আছে। আমি প্যারিসে গিয়েও বাংলার গ্রাম দেখতে পাই, লন্ডনেও দেখি। আর দেশে ফিরে এসেই প্রথম যে কাজটি করি সেটি হচ্ছে গ্রামে ফিরে যাওয়া। এই গ্রাম নিয়ে অনেক রোমান্টিসিজম আমার আছে। অনেক লেখালেখি করেছি। সারা জীবন লিখে গেলেও এই লেখা ফুরাবে না কোনো দিন। ফুরাতে চায় না, ফুরানোর দরকার নেই।
কিন্তু আজ বোধ হয় সময় এসেছে নির্মোহ দৃষ্টিতে গ্রামবাংলার দিকে দেখার। তাকানো দরকার। গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে। গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে প্রধানত দ্রুত ও অপরিকল্পিত নগরায়ণে। আমরা দেখতে পাই শহরমুখী মানুষ। একটু পয়সা হলে পরেই গ্রামে ধানি জমি কিনে সেগুলো আবাসিক জমিতে পরিণত করছে তারা। তৈরি হচ্ছে ইমারত। ছোট, অতি কুৎসত, রংবেরঙে ছাওয়া এক-একটি বাসা, যেখানে তারা খুঁজে পাচ্ছে তাদের বাসস্থান। এই করেই গ্রামের কৃষিজমি ক্রমেই পরিণত হচ্ছে আবাসিক জমিতে। এই করেই বাধার সৃষ্টি হচ্ছে জলপ্রবাহের। আমি যে গ্রামের অধিবাসী, সেখানে বর্ষায় ছোট নদীর দুই কুল ছাপিয়ে পানি গ্রামের ভেতরে প্রবেশ করে এবং তখন আমাদের নৌকা ছাড়া গত্যন্তর নেই এখান থেকে ওখানে যাওয়ার। এটি আমাদের পছন্দ হয়নি। আমরা তৈরি করেছি ছোট ছোট গ্রাম্য হেঁটে চলার পথ। যার ফলে বাধাগ্রস্ত হয়েছে পানি। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে অন্যান্য দিক এবং পলিমাটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। যেখানে ধানের চাষ হতো, পাটের চাষ হতো, চাষ হতো নানা রকম রবিশস্যের, সেই ক্ষেতগুলো এখন অনুর্বর ক্ষেতে পরিণত হচ্ছে। হয়তো অনেকে বলবেন যে নগরায়ণে ক্ষতি কী? সব জায়গাই তো নগর হয়ে যাচ্ছে, নিশ্চয়ই ক্ষতি নেই। কিন্তু সেটি পরিকল্পিতভাবে হতে হবে।
এই যে আমাদের দেশ থেকে অনতিদূরে অবস্থিত এই এশিয়ারই একটি শহর সিঙ্গাপুর। সেটিও সুচারু পরিকল্পনার মাধ্যমে নির্মিত। আমরা সিঙ্গাপুরকে বলতে পারি নগর দেশ বা নগররাষ্ট্র। সিটি স্টেট। এই নগররাষ্ট্রে কোনো গ্রাম নেই, গ্রাম থাকার কথাও নয়। পুরো দেশটি একটি নগরের চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবুও কি সুন্দরভাবে পরিকল্পিত ওই শহর! ওখানেও এন্তার খালি জায়গা-জমি। কিছু জায়গায় বসতি। সেই বসতি ঘিরে আছে মানুষের নিত্যদিন যা যা প্রয়োজন, বাচ্চাদের খেলার পার্ক, স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল সব কিছু। আর সেখান থেকে আবার আরেকটি বসতিতে যাওয়ার পথ একেবারে উন্মুক্ত—চারদিকে কেবল বৃক্ষরাজি, ফুল ও নীল আকাশ। ওই নগররাষ্ট্রের মধ্যেও কৃষির জন্য হয়েছে কিছু কিছু জমি, যেখানে নানা ধরনের আনাজপাতি জন্মাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেছে এখন একটি আদর্শ নগররাষ্ট্র, আদর্শ শহর। যেখানে কখনোই মনে হয় না দম বন্ধ হয়ে আসে। কোনো চোরাগলি পথ নেই। কোনো জায়গায় জল জমে থাকে না, এতই সুন্দর পরিকল্পিত জায়গা সেটি। কিন্তু আমাদের গ্রামগুলোয় যখন আমরা আমাদের বাসগৃহ তৈরি করছি সেটি সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে, যার যেমন ইচ্ছা সেভাবেই তৈরি হচ্ছে। যার ফলে কদাকার একটি জনপদে পরিণত হচ্ছে আমাদের গ্রামগুলো। এই যে ঘটনাটি ঘটছে, এটি আমাদের পরবর্তী বংশধরদের জন্য, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করবে। গ্রামগুলো ক্রমেই পরিণত হবে অপরিকল্পিত শহরে। ঢাকাকে আমরা আজ বলি কদাকার নগরী, তখন সারা দেশটি কদাকার জনপদে রূপান্তর হবে।
প্রসঙ্গত চলে আসে অভিবাসনের কথা। গ্রামগুলো যখন তার চরিত্র-সংস্কৃতিতে শহরমুখী হয়ে পড়েছে তখন একইভাবে গ্রামের মানুষগুলোও ইদানীং সবাই নিজ বাসভূমি পরিত্যাগ করে শহরে চলে যেতে বদ্ধপরিকর। এর পেছনে একাধিক কারণ আছে। অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ যেটা ছিল একসময় তা হচ্ছে দারিদ্র্য। প্রচণ্ড অভাব ছিল আমাদের গ্রামগুলোয়। কৃষকরা তাদের ন্যায্য পারিশ্রমিক পেতেন না। আবাদি ভূমি অনুর্বর থাকত। সেখানে বৈজ্ঞানিক উপায়ে চাষবাসের তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হতো না বিভিন্ন ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের ক্ষমতাধরদের দ্বারা। অতএব গ্রামে অভাব লেগেই থাকত। সে কারণে একটা মাইগ্রেশন হতো সেখান থেকে শহরে। মানুষ অন্নাভাবে শহরমুখী হতো কোনোমতে কাজ করে পেট চালানোর জন্য। ক্রমে গ্রামের অবস্থা ফিরে যায়। তার পেছনে অনেক কারণ আছে। কিন্তু সে কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় এখনো আসেনি অথবা সে কারণগুলো নিয়ে আজকে আলোচনা করতে চাই না। সংক্ষেপে বলি, আমাদের শহরগুলোয় নানা ধরনের শিল্প-কারখানার ব্যাপ্তি, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের। তারপর আমাদের দেশ থেকে বাইরে নানা ধরনের শ্রমিকের যে চাহিদা, সেটিও একটি কারণ। ফলে অর্থ সমাগম হচ্ছে গ্রামে। গ্রামেরই অনেক মানুষ এখন বহির্মুখী। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় তারা শ্রমিকের কাজ করছে এবং সেখান থেকে প্রতিনিয়ত গ্রামে টাকা পাঠাচ্ছে। যার কারণে আজ গ্রামের অর্থনীতি অনেক বেশি চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। বস্তুতপক্ষে এখন গ্রামবাংলায় আর কাঁচাবাড়ি দেখা যায় না বললেই চলে। গ্রামে কাজ করার জন্য কৃষিশ্রমিক আর পাওয়া যায় না। সবাই এখন শহরমুখী। আরো যে কারণটি দারিদ্র্য ছাড়াও আমাকে ভাবিত করে এই শহরমুখী প্রবণতার বিষয়ে সেটি হলো শহরের প্রতি এক যুক্তিহীন আকর্ষণ। গ্রামবাসী অনেকেই মনে করে যে শহরের রাস্তাঘাটে খুঁজলেই সোনা পাওয়া যাবে। সেটা যে কত বড় ভুল ধারণা, সেটা যখন তারা একবার শহরমুখী হয়, তখনই বুঝতে পারে। কিন্তু তখন বড্ড দেরি হয়ে যায়। অনেকে যারা বিদেশ যেতে পারে না তারা নিজেদের সহায়সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও শহরে একটা নিজস্ব জায়গা গড়ে তুলতে চায়। ভাড়া বাড়ি হলেও আসে। এক কদর্য আবাসে তাদের বসবাস। যার গ্রামে বাড়ি ছিল পরিচ্ছন্ন ছিমছাম একটি বাসা। সামনে একটু উঠোন। সেখানে কিছু আনাজপাতি ধরত। সেখানে জমিতে চাষ করে দুই মুঠো খেতে পেত। শহর নামক তথাকথিত স্বর্গে এসে তারা দুর্বিষহ জীবনের মুখোমুখি হয়ে পড়ে।
আমার ধারণা এ এক চিন্তার দেউলিয়াপনা। এই দেউলিয়াপনা ঠেকাতে কাজ করতে হবে সবাইকে। সর্বাগ্রে শহরবাসী আমাদেরই প্রধানত। গ্রামের সঙ্গে যোগ আরো বাড়াতে হবে। বুদ্ধিবৃত্তির যে নাগরিক বিষয়গুলো আছে, তা গ্রামে নিয়ে যেতে হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডগুলোকে শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে গ্রামের তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে ওসব কর্মকাণ্ডে। গ্রামের মানুষের রুচি এমন একপর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে যেন তারা অপরিকল্পিত নাগরিক জীবনের চাকচিক্যের প্রতি মোহগ্রস্ত হয়ে না পড়ে।
লেখক : নাট্যজন
সম্পর্কিত খবর
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় এক বছর উপলক্ষে জুলাই ও আগস্ট মাসজুড়ে বেশ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানসূচি ঘোষিত হয়েছে ইন্টেরিম সরকারের তরফে। কিন্তু এক বছরে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কতটা মেলানো গেল? জুলাইয়ের সুফল কার ঘরে কতটা উঠল?
গণ-অভ্যুত্থান নিজেই একটি বড় প্রাপ্তি। যে অভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগের মতো একটি নিকৃষ্ট ফ্যাসিস্ট শাসকগোষ্ঠীর পতন হলো, তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি এ দেশের জনগণের জীবনে খুব কমই আছে। এই অভ্যুত্থানের আগে-পরে দেশে যে বিপুল জনসচেতনতা ও সৃষ্টিশীল গণক্ষমতার উদ্বোধন আমরা দেখেছি, তরুণদের মধ্যে যে স্বচ্ছ রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ও দেশ গঠনের দৃঢ় প্রত্যয় জন্ম নিতে দেখেছি, তা এককথায় মহাকাব্যিক।
গত বছর ৮ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার ভারত পলায়নের পরিপ্রেক্ষিতে যে সরকারটি গঠিত হয়, তার ধরনটি ঠিক কী হবে, কী হলে আরো ভালো হতো, এ নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা আছে। অন্তর্বর্তী এই সরকারটি গঠিত হয়েছে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই; আবার গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের কেউ কেউ এ সরকারের অংশ হয়েছেন।
জুলাইয়ের বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্বর্তী সরকারের এই ধরন ও রাজনৈতিক শক্তিগুলোর অবস্থান—এই তিনের টানাপড়েন শেষমেশ যে জাতীয় আকাঙ্ক্ষায় থিতু হয়েছে, তার আলংকারিক নাম : সংস্কার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগ থেকেই বেশ কিছু রাজনৈতিক দল ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্ল্যাটফর্মের কারণে ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ ধারণাটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ফলে সেটির প্রায়োগিক ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে এবং কিভাবে ও কতটুকু হবে এই সংস্কার—সেটিই প্রধান আলোচ্য বিষয়। বেশ কয়েকটি সংস্কার কমিশন হয়েছে দেশে এবং সেসব কমিশন বড় বড় রিপোর্টও তৈরি করেছে।
রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের স্বাভাবিক ফলাফল হিসেবেই যে সামাজিক ফ্যাসিবাদ ও ধর্মীয় চরমপন্থা সুপ্তাবস্থায় প্রায় এক যুগ ধরে আস্তে আস্তে গাঢ় হয়ে উঠছিল, তা অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে নিঃশেষিত হয়নি, বরং নানা ধরনের সামাজিক ও ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী প্রবণতা নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন শক্তিতে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে পরাজিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ও তার দেশি-বিদেশি এজেন্টরা এই প্রবণতাগুলোকে অনেক রংচং মেখে বাস্তবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিকট করে উপস্থাপন করার চেষ্টায় রত। জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন ও মেরুকরণও এই পরিস্থিতিটিকে বেশ ঘোলাটে করে তুলছে। সে ব্যাপারে সতর্ক থেকেও বলা যায় যে এই ঘটনাগুলো ঘটছে।
‘মব’ শুনলেই অনেকে খেপে যান আজকাল, তার সংগত কারণও আছে নিশ্চয়ই। কিন্তু সত্য কথা এটিই যে ৫ আগস্টের পর দেশে নানা রকম মব তৈরি হয়েছে। সামাজিক-নৈতিক পুলিশগিরি বাড়ছে। এসবের সঙ্গে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বা বিপ্লবী তৎপরতার যোগ সামান্য। ধর্মীয় চরমপন্থাও এই পরিস্থিতিকে একটি সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে।
বিপ্লবী ছাত্র-জনতা ও সরকারের কাজ ছিল সমাজে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা এই নতুন প্রতিবিপ্লবী, হঠকারী ও ফ্যাসিস্ট তৎপরতাগুলোরও বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, যেখানে মোটাদাগে স্পষ্টতই তারা ব্যর্থ হয়েছে। এতে সমাজে সরকার ও অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের ব্যাপারে যে মাত্রারই হোক, একটি নেতিবাচকতা তৈরি হয়েছে।
৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ের একটি প্রধান জনদাবি ও গুরুতর কাজ ছিল বিচার ও আনুষ্ঠানিক রিকনসিলিয়েশন প্রসেস শুরু করা। কিন্তু এই দাবিটি বিদ্যমান কোনো রাজনৈতিক শক্তিই সততার সঙ্গে সামনে আনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। নির্বাচনী রাজনীতির হিসাব-নিকাশ, সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপড়েন, মামলা বাণিজ্যের পলিটিক্যাল ইকোনমি, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারিদের নানা রকম অপতৎপরতা, বিচারহীন পুনর্বাসনের বিবিধ উদ্যোগ আর সরকারের অস্পষ্ট ও গতিহীন নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে বিচারের দাবিটির বহুলাংশ অপচয় হয়েছে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকারকে উত্খাত করার পর অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার পাশাপাশি জাতীয় অখণ্ডতা রক্ষা ও সামাজিক-রাজনৈতিক রিকনসিলিয়েশন নিশ্চিতে যে ধরনের ব্যাপক, বহুমুখী ও কুশলী প্রাতিষ্ঠানিক তৎপরতা প্রয়োজন ছিল, সরকার সেটি করতে বেশ খানিকটা ব্যর্থই হয়েছে বলা যায়।
অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলটিকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতূহল, আকাঙ্ক্ষা ও দরদ তৈরি হয়েছে। তবে এই আকাঙ্ক্ষা নিরঙ্কুশ নয়। নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকে পড়ায় বিদ্যমান রাজনৈতিক কাঠামোর অনেক বিষয়ই আত্তীকৃত করতে হয়েছে দলটির, যা তাদের নানাভাবে বিতর্কিত করেছে। আবার এই দলটির গতি-প্রকৃতি কী হবে, তার কল্পনার বাংলাদেশটি ঠিক কেমন হবে—এসব বিষয়েও নানা ধরনের অনুমান তৈরি হয়েছে। এসব সত্ত্বেও পরিবর্তনকামী বা সংস্কারবাদীরা এখনো এই দলটির ওপর ভরসা রাখতে চাইছেন বলেই মনে হয়।
প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এই হিসাব চলবে। কিন্তু জুলাইয়ে ঘটে যাওয়া মহাকাব্যিক অভ্যুত্থানটি আমাদের জাতীয় জীবনে যে বিপুল পরিবর্তনের সম্ভাবনা হাজির করেছে, তা অসামান্য। আমরা এর কতটা কাজে লাগাতে পারব, তা এখনো অনিশ্চিত। তবে বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন মুক্তির এই অসামান্য সম্ভাবনা এ দেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যাবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক : কবি, অনুবাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য
করোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমে যে ছেদ তৈরি হয়েছিল, তা এখনো আমরা কাটিয়ে উঠতে পারিনি। এ ছাড়া গত বছরের গণ-আন্দোলনে তিন-চার মাস আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত আমাদের এইচএসসি নামক পাবলিক পরীক্ষা। কোনো কারণে এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে আমাদের ভর্তি কার্যক্রমও পিছিয়ে যায়।
আমরা যদি জানুয়ারি মাসে এসএসসি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারি, তাহলে জুলাই মাসে উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
উচ্চশিক্ষা যেহেতু বহু রকমের, সেহেতু এখানেও অনেক বিষয় রয়েছে। মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ দ্বারা পরিচালিত হয়। তাই তারা বেশ দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যদি একটি পরীক্ষায় ভর্তি নিতে পারত, তাহলেও সময় বাঁচত। কিন্তু তা সম্ভব হয়ে উঠছে না। আমাদের মানে শিক্ষকদের এখানে করণীয় রয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ভাবতে হবে। আমরা প্রতিবছর একই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা এবং এর কার্যক্রম সম্পন্ন করি। ফলে দ্রুত কার্যক্রম শুরু করতে সমস্যা নেই। ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, এক মাসের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা এবং সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে পুরো ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব।
আমাদের কাছে মনে হয়, সরকারের আন্তরিকতা এবং শিক্ষকদের সহযোগিতা এখানে মুখ্য বিষয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, কতটা সহজে এবং দ্রুত আমরা আমাদের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারি। আমাদের টার্গেট যদি থাকে জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন ক্লাস শুরু করা, তাহলে টার্গেট অনুযায়ী কাজটি করতে হবে। একদিকে শিক্ষার্থীরা পাবলিক পরীক্ষা দেবে, অন্যদিকে আমরা ভর্তি পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করব। সরকার যদি পাবলিক পরীক্ষা আগে এবং দ্রুত সম্পন্ন করতে পারে, তাহলে আমরাও দ্রুত ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারব। ধরুন, এখন এইচএসসি পরীক্ষা চলছে। আশা করা যায়, সেপ্টেম্বরে ফলাফল প্রকাশিত হবে। আমরা অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে পারি। তিন মাসে কি ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করা যথেষ্ট নয়? আমাদের দরকার সরকারের ইচ্ছা এবং সবচেয়ে বড় দরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয়, শিক্ষকদের মধ্যে সহযোগিতা ও আন্তরিকতা। আমরা আশা করব, আগামী শিক্ষাবর্ষে যেন জানুয়ারি মাসেই শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয়।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
nahmed1973@gmail.com
সমাজ ও বৃহত্তরভাবে রাষ্ট্র মেরামত কিংবা পরিবর্তনের জন্য যেসব কাঙ্ক্ষিত বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়, মূলত সেগুলোকেই সংস্কার বা ‘রিফর্ম’ বলা হয়। দেশের সংবিধান থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নাগরিকরা কিংবা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সেসব সংস্কারের উদ্যোগ নিতে পারেন। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় কিংবা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেসব সংস্কার প্রস্তাবকে কার্যকর করতে হলে একটি আইনানুগ ভিত্তি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশে চব্বিশ সালের গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর সময়ে অতীত স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী শাসন এবং আর্থ-সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার অবসানের জন্য দল-মত-নির্বিশেষে সবাই রাষ্ট্র মেরামতের একটি জোরালো দাবি উত্থাপন করেছে।
এ কথা ঠিক যে বিগত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান কোনো সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব ছিল না। তবু সেটি আমাদের বিগত ৫৩ বছরের স্বাধীনতা-উত্তর আন্দোলনের ইতিহাসে একটি বিরাট মাইলফলক। স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী শাসন-শোষণের কবল থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে একটি বিশাল পদক্ষেপ। সুতরাং কোনো বিবেচনায়ই সে অভ্যুত্থানকে খাটো করে দেখা যাবে না।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান অধ্যাপক ড. ইউনূসসহ আমাদের রাজনৈতিক মহলের অনেকেই এরই মধ্যে গণ-অভ্যুত্থান-উত্তর বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন। এতে তাঁদের অনেকের মধ্যেই বিগত ১১ মাসে ঘটে যাওয়া অনেক ব্যর্থতার চিত্র প্রতিফলিত হয়েছে। এর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অনেকে দায়ী করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতা ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে চিন্তা-চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাবকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাবেক নেতারা এরই মধ্যে বহুবার অভিযোগ করেছেন যে অভ্যুত্থান-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সময়োচিতভাবে একটি ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণার অভাবে রাজনৈতিক মহলে এখনো অনেক বিভ্রান্তি এবং ভবিষ্যৎ দিকদর্শনের অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। ফলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই তাদের নিজ নিজ দলের পতাকাতলে অবস্থান নিয়েছে। ভুলে গেছে সেই মহান গণ-অভ্যুত্থানের জাতীয় প্রেক্ষাপটটি। রাজনৈতিক ঐক্য কিংবা রাজনৈতিক কর্মসূচিগত সমন্বয়ের বিষয়টি। ফলে চারদিকে মাথা তোলার অবকাশ বা সুযোগ পেয়েছে পতিত আওয়ামী সরকারের দোসর কিংবা বশংবদরা। সে পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস হতাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আমাদের একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বিফলে যেতে বসেছে। আমরা মুখে বলছি, সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রতিনিধিরা এখনো সর্বত্র বসে রয়েছে। আমরা তাদের সরাতে পারিনি। আমরা তাদের স্বভাব-চরিত্র বদলাতে পারিনি।’ এ অবস্থায় অনতিবিলম্বে সর্বক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে না পারলে এবং সব জায়গায় কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কিংবা পরিবর্তন সাধন করতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে ক্ষমতার রাজনীতিতে কোনো নির্বাচিত সরকারই স্থিতিশীল হতে পারবে না। এতে অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জাতীয় জীবনের সব ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন, উন্নয়ন কিংবা সমৃদ্ধি আশা করা হয়েছিল, তা বিফলে যেতে বাধ্য হবে। এখানেই অতীতে সংঘটিত সব গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে ২০২৪-এর জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের মৌলিক এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগত কিছু পার্থক্য ছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারটি ছিল গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী একটি ভিন্নধর্মী রাজনৈতিক উদ্যোগের ফসল, কিন্তু তাতে অন্য অনেক কিছু থাকলেও ছিল না রাজনৈতিক দূরদর্শিতা।
ফরাসি বিপ্লব রাশিয়ায় সংঘটিত সমাজতান্ত্রিক (বলশেভিক) বিপ্লবের মতো ছিল না। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রায় শেষ দশকে (১৭৮৯-১৭৯৯) ফ্রান্সে সংঘটিত সে বিপ্লব ছিল একটি ‘দশক স্থায়ী সামাজিক-রাজনৈতিক অভ্যুত্থান’। ফ্রান্সের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের উল্লেখযোগ্য সময়। সে অভ্যুত্থানের শুরুতেই অর্থাৎ ১৭৮৯ সালে তার নেতারা ফ্রান্সের নাগরিক কিংবা মানুষের অধিকার নিয়ে ফ্রেঞ্চ চার্টার নামে একটি সনদ ঘোষণা করেন। সে সনদই ফরাসি বিপ্লবের মৌলিক চরিত্র বা বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে। তাদের মুক্তি, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের নীতি প্রকাশ করে। এর পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার ও দায়দায়িত্বের পথনির্দেশ প্রদান করে। সেদিক থেকে পর্যালোচনা করলে বাংলাদেশে সংঘটিত জুলাই-আগস্টের বিপ্লবও ছিল মূলত একটি গণ-অভ্যুত্থান। কিন্তু সে সফল অভ্যুত্থানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতাদের কী প্রত্যাশা ছিল, সেগুলো তাঁরা একটি সনদ আকারে নিজেরা প্রকাশ করেননি। তাঁরা অপেক্ষা করেছেন এই দায়িত্বটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে একটি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য, যাদের সঙ্গে সে গণ-অভ্যুত্থান কিংবা রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই। সে কারণেই জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত ‘জুলাই সনদ’ ঘোষণা কিংবা নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়টি অনিশ্চিতভাবে ঝুলে রয়েছে। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের কোনো কিছু উদযাপনের ক্ষেত্রেই কোনো গুরুত্ব দেখা যাচ্ছে না। এ রকম একটি রাজনীতিগত দোদুল্যমান অবস্থায় কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থান আমাদের জীবনে কী পরিবর্তন এনেছে? যদি কোনো পরিবর্তন না-ই হয়ে থাকে, তাহলে দেশে ফ্যাসিবাদের পতন বা তাদের উত্খাত করা হলো কিভাবে? কেন এত বিশাল গণ-আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের এত আত্মত্যাগ? অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান বলেছেন, ‘অতীতের অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী কিংবা ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন বদলাতে আমরা রাষ্ট্র মেরামতসহ সর্বত্র সংস্কার সাধনের যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি, সেগুলো আমাদের প্রস্তাবিত জুলাই সনদে স্থান পেতে হবে।’ দল-মত-নির্বিশেষে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে প্রস্তাবিত ঘোষণাগুলো বাস্তবায়িত করতে হবে। কিন্তু কী সে প্রস্তাবিত ঘোষণা, তা এখনো জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেক দলই জানে না। বিএনপিসহ বিভিন্ন দেশপ্রেমিক দলের নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনায়ই এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বসা হয়নি। কারা কারা হবেন এই প্রস্তাবিত সনদে স্বাক্ষরকারী? এ পর্যন্ত তারও কোনো হদিস নেই। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং দেশি-বিদেশি আধিপত্যকে প্রতিরোধ করে আমরা কিভাবে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করব—প্রস্তাবিত সনদে আমরা সে ব্যাপারে সবার সম্মিলিত প্রতিশ্রুতি চাই।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
gaziulhkhan@gmail.com
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাসে জুলাই ২০২৪ মাসটি এক অনন্য মর্যাদার দাবিদার। এই মাসে বারবার রক্ত ঝরেছে, শিক্ষার্থী-শ্রমিক-জনতার আহ্বানে কেঁপে উঠেছে শাসকের প্রাসাদ। সেই উত্তাল জুলাইয়ের সূচনা ঘটেছিল রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) মাটি রঞ্জিত করে আবু সাঈদ নামের এক শিক্ষার্থীর রক্তে। পীরগঞ্জের বাবনপুর নামক গ্রামে একটি বাঁশের বেড়া দেওয়া কবরে তিনি শুয়ে আছেন নীরবে, নিঃশব্দে।
রংপুরে শিক্ষার বাতিঘর হয়ে উঠেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের অব্যবস্থাপনা, নিয়োগ বাণিজ্য, রাজনৈতিক দখল ও অবমূল্যায়নের কারণে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বারবার পরিণত হয়েছে ক্ষোভের আগ্নেয়গিরিতে।
জুলাই বিপ্লব তাই কেবল রংপুরের বা বেরোবির নয়।
এই শহীদ যেন আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলাদেশে ছাত্ররাই বারবার যুগ পরিবর্তনের সূচনা করেন। হোক তা ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার সংগ্রাম কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী লড়াই। আমরা চাই, এই শহীদের রক্ত বৃথা না যাক।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদের স্মরণে রাষ্ট্র কি আরো একটু নত হবে, নাকি আবারও চলবে এড়িয়ে যাওয়ার নীলনকশা? যদি তা-ই হয়, তবে আগামী দিনগুলো আরো অস্থির, আরো উত্তাল হবে।
‘যেখানে বাধাগ্রস্ত হবে, সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে’—এই চেতনা দেরিতে এলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে রাষ্ট্রযন্ত্রের চেহারার ভেতরে, যা দিন দিন হয়ে উঠছে আরো দুর্বিনীত, অসহনশীল ও জনবিচ্ছিন্ন। যখন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পাস করার পর চাকরির জন্য ঘুরে বেড়ান, তাঁদের দাবি উপেক্ষা করে, বিরোধিতা করে, এমনকি দমন করতে গিয়েই সরকার তার আসল চেহারা উন্মোচন করে। ঠিক এখানেই জুলাই এসে দাঁড়িয়েছিল প্রতিবাদের ভাষা হয়ে। এটি কেবল একটি মাস নয়, এটি একটি ধারণা, একটি রাজনৈতিক চেতনা, একটি ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতার নাম, যা শেখায় জুলুমের বিরুদ্ধে চুপ থাকা মানেই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া। তাই যখনই কোথাও প্রতিবাদ বাধাগ্রস্ত হবে, যখনই মত প্রকাশের অধিকার পদদলিত হবে, তখনই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে প্রতিরোধের এক ছায়াছবির মতো।
বাবনপুরে শায়িত জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ, তাঁর জীবন দিয়ে আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, প্রতিবাদের মুখ বন্ধ করে রাখা যায় না। তাই তাঁর মৃত্যু আর দশটি মৃত্যুর মতো নয়, বরং এটি এক বিস্মৃত সময়কে জাগিয়ে তোলার মুহূর্ত, যেখানে জুলাই আবার ফিরে এসেছে জনতার পাশে দাঁড়াতে।
এখন বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে, কর্মক্ষেত্রে, সংবাদমাধ্যমে, এমনকি সংসদের ভেতরেও যদি অন্যায় চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে সেখানেই জুলাইকে তুলে ধরতে হবে। কারণ এই মাস শেখায় শুধু স্মৃতিচারণা নয়, স্মৃতি দিয়ে বাস্তব পরিবর্তনের দাবিও তোলা যায়।
তাই আমাদের দায়িত্ব এই শহীদের মৃত্যু যেন অন্ধকারে হারিয়ে না যায়। রাষ্ট্র যদি কখনো ন্যায়ের পথ ছেড়ে নিপীড়নের দিকে হাঁটে, তাহলে প্রতিটি গ্রামে বাবনপুরের মতো একেকটি জুলাই জন্ম নিতে পারে।
এমন সময় হয়তো আবারও প্রশ্ন উঠবে, জুলাই-জুলাই বলে এত মাতামাতি কেন? আমরা তখন উত্তর দেব, এর কারণ আমাদের প্রতিবাদের জায়গাগুলো একে একে নিঃশব্দ হয়ে যাচ্ছে। আর যেখানে হাতে মুষ্টি তুলে পথে নেমে সমস্বরে চিৎকার করা নিষিদ্ধ, সেখানে জুলাই-ই হয়ে উঠতে পারে একমাত্র ভাষা।
শহীদ আবু সাঈদের মৃত্যু কেবল একটি গুলি বা একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল না। এটি একটি সাবধানবাণীও ছিল। বেরোবির পার্কের মোড়ের অদূরে যা ঘটেছিল, তা ছিল আসলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি। যেখানে কথা বলা মানেই অপরাধ, দাবি জানানো মানেই রাষ্ট্রদ্রোহ মনে করা হয়েছিল।
সেদিন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন রাষ্ট্র কী করেছিল? তারা কেন সেদিন তাঁদের দিকে বন্দুক তাক করল? সেদিন যে তরুণ শহীদ হলেন, তিনি যেন গোটা বাংলাদেশের হয়ে প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন, তৎকালীন ক্ষমতাধরদের কাছে তা অনুধাবন করা কি খুব জটিল বিষয় ছিল?
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিবাদের ঐতিহ্য খুব গর্বের। ভাষা আন্দোলন, গণ-অভ্যুত্থান, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন—সবখানেই ছাত্রসমাজ পথ দেখিয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসেও ছাত্রসমাজের কণ্ঠ রোধ করতে গুলি ব্যবহার করতে হয়, এটি কি রাষ্ট্রের দুর্বলতা নয়? আগামী দিনে আমরা এ ধরনের আর কোনো রাষ্ট্রীয় দুর্বলতা ও ভয় দেখতে চাই না।
জুলাই বিপ্লবের এই প্রথম শহীদ শব্দটি যেন আমাদের সবার কাঁধে নতুন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়। এর মানে, আরো অনেক শহীদ আসতে পারেন, যদি রাষ্ট্র তার দমননীতি থেকে ফিরে না আসে। যদি কথা বলার জায়গা, ভিন্নমতের জায়গা একে একে নিঃশব্দ হয়ে যায়, তাহলে শেষ ভরসা হয় রক্ত। বেরোবির ইংরেজি পড়ুয়া অকুতোভয় ছাত্র আবু সাঈদ পুলিশের তাক করা বন্দুকের নলের সামনে বুক উঁচিয়ে গুলি খেতে দ্বিধাহীন না থাকলে আজ কী করতাম আমরা, তা কি কেউ ভেবে দেখেছেন?
জন্ম নিলেই সবাইকে একদিন না একদিন নির্বাক হতে হয়। কিন্তু সবার কথা কি সব মানুষের অনন্তকালব্যাপী মনে থাকে? শহীদ আবু সাঈদ বাবনপুরে শুয়ে আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন, দেশের যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে নির্বাক থাকার দিন শেষ।
লেখক : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন
fakrul@ru.ac.bd