<p>জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীনে যাওয়ার কথা প্রচলিত আছে। তবে সেই চীনেও জ্ঞান বিতরণ করতে যান অনেকে। বিস্ময়কর হচ্ছে সেই তালিকায় আছেন বাংলাদেশের অন্তত ৩০ জন টেনিস কোচ। টেনিসে এমন কোনো ঐতিহ্য নেই বাংলাদেশের। সেরা সাফল্য বলতে ১৯৮৯ সালে সিঙ্গাপুরে হওয়া ডেভিস কাপের সেমিফাইনালে পৌঁছানো। অথচ সেই দেশের কোচরা কিনা চীনা খেলোয়াড় গড়ার কারিগর! কারো কারো বেতন মাসে পাঁচ লাখ টাকারও বেশি। অথচ তাঁদের অনেকে টেনিস ফেডারেশনে চাকরি করে গেছেন পাঁচ হাজার টাকা বেতনে। এ জন্যই বলে ‘গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।’</p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2021/January/03/kalerkantho-2021-01-03-17.jpg" style="float:left; height:389px; margin:10px; width:150px" />লেভেল টু করা কোচ সুকুমার রায় ২০০৫ সালে পাড়ি জমান চীনে। নৌবাহিনীতে চাকরি করা এক বন্ধুর সহায়তায় কাজ পান বেইজিংয়ের ব্রডওয়েল টেনিস একাডেমিতে। পরের বছর যোগ দেন বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিতে। এখন আছেন বেইজিংয়েরই আসাকি টেনিস ক্লাবের দায়িত্বে। বাংলাদেশ থেকে পাঁচ কোচ চীনে নিয়ে গেছেন সুকুমার।</p> <p>বাংলাদেশের আরেক কোচ সারাফাত আবেদিন নিজে গড়ে তুলেছেন টেনিস একাডেমি। গুয়াংডং প্রদেশের শহর ডংগুয়ানে তাঁর ‘গ্যালপ টেনিস একাডেমি’তে টেনিসের পাঠ নেয় ৪০০ শিশু-কিশোর। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের আটজন কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন এই একাডেমিতে। তাঁদের অন্যতম জামিল ভূইয়া সহকারী কোচ ছিলেন টেনিস ফেডারেশনের। আরিফ বিন ইসলাম টেনিস খেলতেন নওগাঁয়। সাদির হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান গেছেন রাজশাহী থেকে। আর বিকেএসপিতে টেনিস শিক্ষার্থী ছিলেন শেখ হাসিবুল হক, উ সুয়ে সুয়ে, শরীফ আবেদিন ও রাইসুল ইসলাম।</p> <p>সাবেক টেনিস খেলোয়াড় শাহনেওয়াজ আহমেদ ও ইসরাত রুমা দম্পতি চীনে যান ২০১৭ সালে। শাহনেওয়াজের ব্যক্তিমালিকানায় এখন সাংহাইয়ে টেনিস একাডেমি আছে তিনটি। বাগেরহাটের মেয়ে আফরানা ইসলাম প্রীতি ২০১৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে যোগ দিয়েছিলেন গুয়াংজুর একটি একাডেমির কোচ হিসেবে। এ ছাড়া চীনের বিভিন্ন শহরের একাডেমিতে কাজ করছেন বাংলাদেশের সাফিনা লক্ষ্মী, নাইমুল ইসলাম, মাকসুদুল করিম, আখতার হোসেন, সাব্বির আহমেদসহ অনেকে। পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ওমর ফারুক সানি ও আখতার হোসেন রানা আর শ্রীলঙ্কার একটি একাডেমিতে কোচের চাকরি করছেন বিকেএসপির সাবেক ছাত্র সজল ও শুভ।</p> <p>সারাফাত আবেদিনের নাম ছড়িয়ে পড়েছে চীনজুড়েই। ২০০৬ সালে বিকেএসপি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি সহকারী কোচের চাকরি নিয়েছিলেন টেনিস ফেডারেশনে। এরপর বিকেএসপিরই সাবেক ছাত্র আখতার হোসেনের ডাকে সারাফাত যান চীনে। বেইজিংয়ের কয়েকটি একাডেমিতে কাজ করার পর চীনা ভাষাটা রপ্ত করে চলে আসেন গুয়াংডং প্রদেশের শহর ডংগুয়ানে। সেখানে সিটি কাউন্সিলের অনুমোদন নিয়ে ২০১২ সালে গড়ে তোলেন ‘গ্যালপ টেনিস একাডেমি’।<img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/2021/January/03/kalerkantho-2021-01-03-18.jpg" style="float:right; height:132px; margin:10px; width:150px" /></p> <p>২০১৮ সালে এই একাডেমির অ্যানি ও কোলেন নামে দুই খুদে খেলোয়াড় ডংগুয়ানে অনূর্ধ্ব-১০ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতায় সুনাম ছড়িয়ে পড়ে সারাফাতের। আই ছি নামে আরেকজন তো নাম লিখিয়েছেন ডাব্লিউটিএর র্যাংকিংয়ে। ‘উইচ্যাট’-এ সারাফাত জানালেন বাংলাদেশি কোচদের সাফল্যের কথা, ‘ডংগুয়ান স্পোর্টস সেন্টারের আটটি কোর্ট ইজারা নিয়ে ৪০০ জনের বেশি শিক্ষার্থীকে আমরা টেনিস শেখাচ্ছি। আমি দেশ থেকে এনেছি আট কোচ। দুই থেকে পাঁচ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক লাখ ৭০ থেকে পাঁচ লাখ টাকা) বেতন তাঁদের। আশা করছি আরো অনেককে আনতে পারব চীনে।’ এই আশাতেই তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বেতনের চাকরিটা করে যাচ্ছেন টেনিস ফেডারেশনের কোচরা, যদি ডাক আসে চীনের!</p> <p>বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনের কর্তাদের একহাত নিলেন ২০০৫ সালে চীনে যাওয়া সুকুমার রায়। ১৯৮০ সালের জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৮ টেনিসের শিরোপা জেতা সাবেক এই খেলোয়াড়ের পরামর্শ, ‘চীনে মাসে এক হাজার ডলারে শুরু করেছিলাম। এখন পাই পাঁচ হাজার ডলার। ফেডারেশনে সঠিক মানুষ সঠিক পদে নেই। আমাদের এখন স্কুল থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতে হবে। চীনে আমরা সফল হতে পারলে দেশে না পারার কারণ নেই।’</p>
