<p>চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের কার্যক্রম এখন শুধু আইনি সহায়তা সেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বিরোধ মীমাংসারও অন্যতম কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছে। বিচারপ্রার্থীরা স্বল্প সময়ে বিনা খরচে আইনে প্রতিকার লাভে দ্বারস্থ হচ্ছে লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে। ফলে আদালতে কমছে মামলাজট। গত ১৫ মাসে আপস-মীমাংসায় এক হাজার ৬৫৭টি মামলা বিরোধ নিষ্পত্তি করেছে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাটি। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে আপস মীমাংসায় নিষ্পত্তির হার ছিল ৭৯.২০ শতাংশ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আপস-মীমাংসার নিষ্পত্তির হার ৬৬.৮৬ শতাংশ। সাধারণ মানুষ যেন সংস্থাটির সেবা সম্পর্কে ধারণা পেতে পারে সে জন্য থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিগুলো সক্রিয় করা হচ্ছে।</p> <p>চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে প্রি-কেইস এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) আবেদন জমা পড়ে এক হাজার ৬৩টি। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৫২টি। বিভিন্ন আদালত থেকে মামলা লিগ্যাল এইডে নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে এডিআরের মাধ্যমে আদালতের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৮টি। এ ছাড়া এক হাজার ৬০৬টি মামলায় সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। যেখানে আদালতে চলমান মামলায় নিষ্পত্তি হয়েছে ৪৪৩টি।  এডিআরের মাধ্যমে অর্থ আদায় হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। ২০২৩ সালে আপস মীমাংসায় নিষ্পত্তির হার ৭৯.২০ শতাংশ।</p> <p>অপরদিকে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে প্রি-কেইস এডিআর (বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি) আবেদন জমা পড়ে ৩০২টি। যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২১২টি। বিভিন্ন আদালত থেকে মামলা লিগ্যাল এইডে নিষ্পত্তির জন্য প্রেরণ করা হয়েছে ৩৬টি। এর মধ্যে এডিআরের মাধ্যমে আদালতের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে ১৪টি।  এ ছাড়া  ৪৫৩টি মামলায় সরকারি খরচে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে। যেখানে আদালতে চলমান মামলায় নিষ্পত্তি হয়েছে ৮৮টি। এডিআরের মাধ্যমে অর্থ আদায় হয়েছে ৪৯ লাখ ৪৭ হাজার ৪২০ টাকা।  ২০২৪ সালে আপস মীমাংসায় নিষ্পত্তির হার ৬৬.৮৬ শতাংশ।</p> <p>জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে এসে আইনি সুবিধা পেয়েছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগের বাসিন্দা মোহাম্মাদ কামাল উদ্দিন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্বাক্ষর জাল করে আমাদের জায়গার টাকা আরেকজন আত্মসাৎ করে। জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে গেলে তারা বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দেয়। আমরা আমাদের অর্থ ফেরত পাই স্বল্প সময়ে। সেখানে আমাদের কোনো টাকা খরচ হয়নি।’</p> <p>চট্টগ্রাম জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার (সিনিয়র সহকারী জজ) মুহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘লিগ্যাল এইড সেবাকে সবার কাছে পৌঁছে দিকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপজেলা, ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড পর্যায়ে যে লিগ্যাল এইড কমিটি আছে, সেগুলোকে সক্রিয় করার জন্য সচেতনতা করতেছি। যাতে সরকারি এই সুবিধা সম্পর্কে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে সংবাদটা পৌঁছে দিতে পারি। মানুষকে সরকারি এই সুবিধা জানানোর জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে উঠান বৈঠকসহ সভা-সেমিনার করা হবে। এ ছাড়া স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হবে। আগে দেওয়ানি মামলা কম নিষ্পত্তি হলেও বর্তমানে তার হার বাড়ছে। নিজে সরেজমিনে গিয়ে বা সার্ভেয়ার পাঠিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে।’</p> <p>লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের আইনি সহায়তা ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিস থেকে করা হচ্ছে। কেউ আইনি সমস্যায় পড়ে লিগ্যাল এইড অফিসে এলে বিনা মূল্যে আইনি সেবা দেওয়া হয়। এডিআর  বা আপস-মীমাংসা করা হয়। মামলার আগে এলে দুই পক্ষকে নোটিশ করে এনে আপস মীমাংসা করা হয়। যারা আর্থিকভাবে দুর্বল তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। ফৌজদারি, দেওয়ানি ও পারিবারিক—এই তিন ধরনের মামলায় লিগ্যাল এইড দেওয়া হয়।</p> <p>সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) চট্টগ্রামের সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী আখতার কবির চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, যাদের মামলা চালানোর সক্ষমতা নেই, তাদের সাহায্য করার জন্য ও তারা যেন সঠিক বিচার পান সেজন্য লিগ্যাল এইড স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু যে পরিমাণ মানুষের সেবা পাওয়ার কথা সেই পরিমাণে হচ্ছে না। এককথায় প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না।</p>