<p>বিশ্বকে বাঁচাতে ক্ষতিকর ও ব্যয়বহুল জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তরুণ জলবায়ুকর্মীরা। তাঁরা জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের যুব প্ল্যাটফরম অ্যাক্টিভিস্টা বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে এই আহবান জানানো হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির ও ইয়াং পিপল টিম লিড মো. নাজমুল আহসান এবং তরুণ জলবায়ুকর্মী ফাহিদা সুলতানা। সমাবেশ শেষে একটি পদযাত্রা শিক্ষা ভবন হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে সমবেত হয়। সেখানে শতাধিক স্লোগানমুখর জলবায়ুযোদ্ধা জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানান।</p> <p>সমাবেশে আন্দোলনকারীরা জানান, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। তারা নব্য ঔপনিবেশিক শোষণ, যুদ্ধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই পৃথিবীকে ধ্বংস করছে। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে মানুষের চেয়ে মুনাফাই মুখ্য। এটি পৃথিবীতে বাস্তুতন্ত্র ও জলবায়ুকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এ অবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহবান এসেছে চলমান বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটে (গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক)।</p> <p>জলবায়ু সংকট নিরসন, এ বিষয়ে ন্যায়বিচার দাবি ও জনগণকে সচেতন করতে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ, অ্যাক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ২০টি সংগঠনের পাঁচ শতাধিক তরুণ জলবায়ুকর্মী এই ধর্মঘটে অংশ নেন। একই সময়ে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, জামালপুর, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, ভোলা, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নীলফামারী, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, বরিশাল, কক্সবাজারের টেকনাফ, বরগুনাসহ ২১টি জেলায় এবং বেশ কিছু লোকাল ইয়ুথ হাবের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরাও বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটে সংহতি প্রকাশ করেন।</p> <p>প্রাণবন্ত ও শান্তিপূর্ণ ধর্মঘটের মধ্য দিয়ে তরুণ জলবায়ুকর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক এবং পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানান। এ সময় এখনই জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে—এই মর্মে ‘ফিক্স দ্য ফিন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো’, ‘ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ এবং ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’ ইত্যাদি লেখা ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড হাতে অবস্থান নেন ধর্মঘটে যোগ দেওয়া জলবায়ুকর্মীরা।</p> <p>সমাবেশে জলবায়ুকর্মী ফাহিদা সুলতানা বলেন, ‘আমরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবিতে লড়াই করছি। বিত্তবানদের মুনাফা-ক্ষুধার মানসিকতা আমাদের ব্যথিত করছে। লোভী এই স্বার্থের জন্য আমাদের ভবিষ্যৎ সংকটে ফেলতে পারি না। তাই আমরা টেকসই ও নিরাপদ পৃথিবীর দাবিতে একত্র হয়েছি।’ সমাবেশে ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি ও যুদ্ধ বন্ধ করার আহবান জানানো হয়। যুদ্ধে অসংখ্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধের মৃত্যুতে গভীর সহানুভূতি ও শোক প্রকাশ করা হয়।</p>