চিং হ্লা মং মারী, যেন একটি নাম, একটি বিস্ময়! রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে জন্ম নেওয়া এই প্রতিভাবান পাহাড়ি তরুণ ফুটবলার ১৯৫১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত খেলোয়াড়ি জীবনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সাদা দল ও পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। ছিলেন পাকিস্তান ফুটবল দলের অধিনায়কও। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফুটবলে অসামান্য অবদান রাখায় অর্জন করেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারও।
তাঁর মৃত্যুর পর এই খেলোয়াড়ের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ রাঙামাটির প্রধান এ স্টেডিয়ামের নামকরণ করে ‘চিং হ্লা মং চৌধুরী মারী স্টেডিয়াম’।
সংক্ষেপে ‘মারী স্টেডিয়াম’ নামেই পরিচিত ১৯৮০ সালে নির্মিত প্রায় ছয় হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়াম। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, শুধু নামকরণ করেই যেন দায় সেরেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থা। স্টেডিয়ামটির কোথাও নেই মারীর নাম কিংবা কোনো চিহ্ন, এমনকি কে ছিলেন মারী, তা জানানোর জন্যও নেই কোনো স্মারক বা প্রতীকী আয়োজন। তাই নিজের নামের একমাত্র স্টেডিয়ামেও যেন অচেনা এক চরিত্র এককালের দাপুটে এই ফুটবলার। এমনকি তাঁর জন্ম বা মৃত্যুদিনে থাকে না কোনো আয়োজন।
জেলা ক্রীড়া সংস্থা মারীর জন্মদিন বা মৃত্যুবার্ষিকী কখনোই পালন করে না। কখনো আয়োজনও করা হয়নি তাঁর নামে কোনো টুর্নামেন্ট। অফিসে বা স্টেডিয়ামের কোথাও নেই মারীর জীবনবৃত্তান্ত, প্রতিকৃতি এমনকি নেই একটি ছবিও।
স্টেডিয়ামটির নামও লেখা নেই কোথাও। মারীর ইতিহাস জানার কোনো উদ্যোগও নেই কর্তাদের। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর ইসলাম ভুট্টো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁরা মুখে মুক্তিযুদ্ধের কথা বললেও একজন মুক্তিযোদ্ধা মারীকে তাঁরা সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন।’
রাঙামাটি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার বরুণ বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘মারী শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের নন, দেশের গর্ব। তাঁর সম্পর্কে যত জানা যাবে, তত আগ্রহী হবে নতুন নতুন খেলোয়াড়।
’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মো. শফিউল আজম বলেন, উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা মারীর একটি ম্যুরাল তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন। সেই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে স্টেডিয়ামের নামফলকের কাজটিও করিয়ে নেব।’