<p>বাংলাদেশে দলীয় প্রতীক নিয়ে কোনো নির্বাচন করতে হলে আরপিও অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দলটির নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। আইনের এ বিধানের কারণে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। এই বাস্তবতা জেনেও ইসির নিবন্ধন ফিরে পেতে দলটির নেতাদের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এ কারণেই দলটির নিবন্ধন বাতিল করে পাঁচ বছর আগে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানির উদ্যোগ নেই। পাশাপাশি ইসিতে নিবন্ধন ফিরে পেতেও কোনো চেষ্টা নেই দলটির শীর্ষ নেতাদের।</p> <p>আর মাত্র তিন মাসের মধ্যেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে ইসি। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলো নির্বাচনের প্রচারণায় নেমেছে জোরেশোরেই। বসে নেই আরেক বড় দল বিএনপিও। বড় দলগুলো নিজস্ব দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারছে। কিন্তু জামায়াত সে সুযোগ হারিয়েছে। ১৯৭৯ সালের মে থেকে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ নামে বাংলাদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে গত প্রায় ৩৫ বছর দলীয় প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ নিয়ে নির্বাচন করেছে। ১৯৮৬ সালে দলটি জাতীয় সংসদে ১০টি আসন পায়। এরপর ১৯৮৮ সালের নির্বাচন ছাড়া ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সব নির্বাচনে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন দলটির নেতারা। কিন্তু নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টে রায়ের পর সেই সুযোগ হারিয়েছে দলটি।</p> <p>প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, জামায়াত দলীয় প্রতীক নিয়ে ১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০টি, ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ১৮টি, ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে তিনটি, ২০০১ সালের নির্বাচনে ১৭টি এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুটি আসনে বিজয়ী হয়। </p> <p><img alt="" src="/ckfinder/userfiles/images/print/Print- 2018/07 july/19-07-2018/Kalerkantho_18-07-19-29.jpg" style="float:left; height:176px; margin:8px; width:220px" />নিবন্ধন নিয়ে বিচারাধীন আপিল নিষ্পত্তির বিষয়ে জামায়াতের উদ্যোগ না নেওয়ার কারণ কী সে বিষয়ে দলটির পক্ষে হাইকোর্টে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার বেলায়েত হোসেন গণমাধ্যমে কোনো কথা বলতে রাজি নন। আইনজীবীদের মধ্যে দলটির কেন্দ্রীয় নেতা রয়েছেন এমন বেশ কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার চেয়ে বেশি দরকার দলকে সুসংগঠিত করা। সেদিকেই দলটির এখন নজর। কারণ সরকারের দমন-পীড়নের সবচেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এ কারণেই আপিল শুনানি করার উদ্যোগ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।</p> <p>ওয়ান-ইলেভেনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে ইসি রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দেওয়ার বিধান চালু করে। এ সময় জামায়াতে ইসলামীকেও নিবন্ধন দেওয়া হয়। কিন্তু জামায়াতকে ইসির দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি রুল জারি করেন। এ রুল জারির পর ২০০৯, ২০১০ এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বরে তাদের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়।</p> <p>এসব সংশোধনীতে দলের নাম ‘জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ’ পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ করা হয়। এরই মধ্যে রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় একই বছরের ২ নভেম্বর। এরপরই ইসি দলটির নিবন্ধন বাতিল করে। এ অবস্থায় জামায়াত নিজস্ব দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্য হওয়ায় দলটি নিবন্ধন ফিরে পেতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত আপিল করে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে আপিল করা হয়। এ আপিলে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চাওয়া হয়। কিন্তু ওই আবেদনের ওপর আর শুনানি করার উদ্যোগ নেননি জামায়াতের আইনজীবীরা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশ না নেওয়ায় তারা আপিল শুনানি থেকে দূরে থাকে।</p>