জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্রসংসদ নির্বাচনের বিষয়টি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বা বিধিতে নেই। তবে তা আমরা সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। যদি সিন্ডিকেট হয়ে চ্যান্সেলরের মাধ্যমে এই সংশোধন হয়ে যায় তাহলে আমরা দ্রুতই ছাত্রসংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারব। আর যদি সংসদে যেতে হয় তাহলে হয়তো সময় লাগবে।’
জানা যায়, ২০১৯ সালের পর বাংলাদেশে আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। অনেক বড় বিশ্ববিদ্যালয়েও ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়নি। বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯২ সালে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯০ সালে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৮৯ সালে, বুয়েটে ২০০১ সালে, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৮ সালে এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৭ সালে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হয়েছে।
বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে এই মুহূর্তে চিন্তা করছি না। আমাদের অনেক ঝামেলা ছিল, সেগুলো ঠিক করতে হয়েছে। আমরা ক্লাস-পরীক্ষাগুলো যথাসময়ে করতে চেয়েছি, সেটা পেরেছি। আর ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্রদের মধ্যেও আগ্রহ নেই। এখন যদি ছাত্ররা চায় তাহলে আমরা অবশ্যই উদ্যোগ নিব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে গত মঙ্গলবার টাইমলাইন ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ডাকসু নির্বাচনের জন্য আগামী মে মাসের প্রথম অংশে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে ও ভোটার তালিকা মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রণয়ন করা হবে। তারপর নির্বাচন কমিশনার প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে উপাচার্যের সম্মতিতে নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করবেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন আগামী ২১ মের মধ্যে হতে পারে বলে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। এ উদ্দেশে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের ন্যূনতম ২১ দিন আগে অর্থাৎ ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে গঠিত নির্বাচন কমিশন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন আগামী জুনের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে হতে পারে বলে রোডম্যাপ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ১৩ মে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়নপত্র বিতরণ ১৫ মে থেকে শুরু হয়ে দাখিলের শেষ সময় ১৯ মে পর্যন্ত। ২০ মে মনোনয়নপত্র নিরীক্ষা ও বাছাই করা হবে। প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করা হবে ২২ মে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে। এরপর ২৭ মে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ভোটগ্রহণ হবে জুন মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহে।
জানা যায়, বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ব্যাপারে তেমন অগ্রগতি নেই।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কয়েকটিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য কমিটি গঠন করেছে। আবার কেউ কেউ কাঠামো ঠিক করতে কমিটি করেছে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নানা পর্যায়ে আলোচনা করছে। অর্থাৎ তারা নানাভাবে কালক্ষেপণ করছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নেই। ছাত্ররাও বলছে তারা ছাত্ররাজনীতি করবে না। তবে ৪০টির মতো সংগঠন আছে। সেগুলোর মাধ্যমেই ছাত্ররা তাদের সব কিছু পরিচালনা করে। তাই এ মুহূর্তে ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না।’
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আহবায়ক। এটি একটি বড় আয়োজন। ফলে এই ভর্তি নিয়ে আমরা ব্যস্ত সময় পার করছি। এরপর হয়তো ছাত্রসংসদ নির্বাচন নিয়ে আমরা কাজ করব।’