<p>‘তোমার জানা উচিৎ, যে মানুষ একটি আদর্শের জন্য, দেশের জন্য এবং মানবতার কল্যাণে বাঁচে, জীবন তার কাছে অর্থবহ হয়ে উঠে। একইভাবে দুঃখ-কষ্ট তার কাছে গুরুত্বহীন হয়ে যায়।’</p> <p>১৯৫০ সালের ২৬ মে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সহপাঠী জিপুকে পাঠানো চিঠিতে এ কথা লেখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।</p> <p><img alt="" height="145" src="http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print Version Online/print /2023/01. January/05-01-2023/121/ffffff.jpg" style="float:left" width="300" />একইভাবে ১৯৫০ সালের ২১ ডিসেম্বর ফরিদপুর জেলা কারাগার থেকে দলীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে বঙ্গবন্ধু লেখেন, ‘আমি জানি, যে সকল ব্যক্তি কোন উদ্দেশ্যে মারা যেতে প্রস্তুত থাকেন তাঁরা কখনো পরাজিত হন না। মহৎ কিছু অর্জন করতে বড় কিছু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।’</p> <p>কারাগার থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লিখিত এমন ৩৫টি চিঠি নিয়ে ‘চিঠিপত্র : শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে বাংলা ও ইংরেজিতে দুটি বই সংকলিত হয়েছে।</p> <p>বই দুটি সম্পাদনা করেছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. এনায়েত করিম। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনস ‘পুলিশ সপ্তাহ-২০২৩’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী বই দুটির মোড়ক উন্মোচন করেন।</p> <p>এ বিষয়ে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত কারাগার থেকে যে চিঠিগুলো লিখেছেন, সেগুলো এতে প্রকাশিত হয়েছে।</p> <p>হাবিবুর রহমান বলেন, “কারাগার থেকে লেখা বঙ্গবন্ধুর চিঠিগুলো সংগ্রহ করে আমরা এর মধ্যে ৩৫টি চিঠি নিয়ে ‘চিঠিপত্র : শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে প্রথম বইটি প্রকাশের উদ্যোগ নেই। এটা হলো প্রথম খণ্ড। এরপর আরো ৯ খণ্ড হবে। এরপর যদি আরো চিঠি পাওয়া যায়, তা-ও প্রকাশ করা হবে।”</p> <p>হাবিবুর রহমান জানান, প্রথম বইটি তিনি ও মোহাম্মদ এনায়েত করিম প্রায় আড়াই বছর ধরে সংকলন ও লেখার কাজ করেছেন।</p> <p>চিঠিতে থাকা তথ্যের উদ্ধৃতি দিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন, তখন রাজনৈতিক কারণে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। বহিষ্কার হওয়া অনেকেই ১৫ টাকা জরিমানা ও মুচলেকা দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তা করেননি। সহপাঠী জিপু তাঁকে বলেছিলেন, ১৫ টাকা দিয়ে সমাধান করে নিতে। তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি কি অন্যায় করেছি যে টাকা দিয়ে সমাধান করতে হবে!’</p> <p>চিঠিগুলোতে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন রকমের ভাষা ও মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছিলেন বলে জানান হাবিবুর রহমান। যেমন তৎকালীন পুলিশের এক ডিআইজিকে চিঠির মাধ্যমে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘আমি (বঙ্গবন্ধু) যে মাসে চারটা সাক্ষাৎকার পাওয়ার অধিকারী, সেখানে আপনি এটা দিয়েছেন, ওটা দিয়েছেন, বাকিগুলো কোথায়?’</p> <p>কারাগারে বসে এ ধরনের প্রশ্ন তোলা বঙ্গবন্ধু ছাড়া সম্ভব ছিল না মন্তব্য করেন হাবিবুর রহমান।</p> <p>১৯৫০ সালের ৭ আগস্ট গোপালগঞ্জ থেকে এম হোসাইন কারাগারে বঙ্গবন্ধুকে পাঠানো চিঠিতে লিখেছেন, ‘আপনার ছেলেমেয়ে ভালো আছে। তারা সব সময় বাবা বাবা করে।’</p> <p>এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি হাবিবুর রহমান বলেন, কারান্তরিন থেকে বঙ্গবন্ধু তাঁর অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ও বয়ঃকনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোদ্ধার কাছে এবং নিজের বাড়িতে চিঠি লিখেছেন। তাঁর কাছেও অনেক চিঠি লেখা হয়েছিল। এঁদের মধ্যে ছিলেন ভাসানী ও সোহরাওয়ার্দী সাহেব, বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়-স্বজন ও অনুসারী।</p> <p>পুলিশ বিভাগের দায়িত্বের পাশাপাশি হাবিবুর রহমান লেখালেখি ও সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত। তিনি এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে নিয়ে ‘নন্দিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান’ গ্রন্থ সম্পাদনা করেন। ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’ নামে তাঁর গ্রন্থনা করা আরেকটি বইয়ে প্রথমবারের মতো বিস্তারিত উঠে এসেছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা। তাঁর গবেষণাধর্মী গ্রন্থ ‘ঠার’ আলোচিত হয়েছে। এই বইয়ে তিনি বেদে সম্প্রদায়ের বিলুপ্তপ্রায় ঠার ভাষা নিয়ে কাজ করেছেন।</p> <p>‘চিঠিপত্র : শেখ মুজিবুর রহমান’ বইটি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, পরিবেশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন। ২৫০ পৃষ্ঠার বইটির গায়ে লেখা দাম ৪০০ টাকা। এটি এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।</p>