<p>সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলিয়ে দেখিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, মফস্বল, পৌর ও উপজেলা এলাকায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাবদ নির্ধারণ করা হয়েছে (সেশন চার্জসহ) ১০০০ টাকা। কিন্তু ফুলবাড়িয়ার কলেজগুলোতে নেওয়া হচ্ছে এর তিন থেকে চার গুণের বেশি টাকা।</p> <p>বাকতা নিশ্চিন্তপুর গ্রামের নরসুন্দর মজিবুর রহমানের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস গত শনিবার কেশরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে সরকারের নির্ধারিত ১০০০ হাজার টাকা নিয়ে একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি হতে যায়। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত ২৭০০ টাকা ছাড়া তাকে ভর্তি করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। সে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।</p> <p>আছিম ঘুঘুরাচালা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম শিকদারের ছেলে রিফাত। আছিম শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখায় ভর্তির জন্য ২০০ টাকা দিয়ে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে। তিন হাজার টাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি না করলে সে বাড়ি ফিরে যায়। পরে তার বাবা ঋণ করে আরো ৫০০ টাকা রিফাতকে দিলে ৩৫০০ টাকা দিয়ে বিজ্ঞান শাখায় সে ভর্তি হয়। শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয় মোসাদ্দেক আলী। ভর্তির মূল রসিদে দেখা যায়, ভর্তি বাবদ তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩৫০০ টাকা। ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি হয়েছে আরেফিন জাহান। তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪০৯০ টাকা। বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হওয়া চৌধার গ্রামের রুবেল মিয়ার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪২০০ টাকা। মানবিক শাখায় ভর্তি হওয়া সায়লা শিরিন বর্ণার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪০৯০ টাকা।</p> <p>সরকারি নির্ধারিত ভর্তি ফি পরও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।</p> <p>গতকাল রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি বাবদ ৪০৯০ টাকা, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বাণিজ্য শাখায় ৪২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভর্তি ফরম বাবদ নেওয়া হচ্ছে আরো ১০০ টাকা। আছিম শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজে মানবিক শাখায় ৩০০০, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বাণিজ্য শাখায় ভর্তি বাবদ ৩৫০০ টাকা এবং ভর্তি ফরমের জন্য নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। কেশরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে মানবিক শাখায় ২৭০০, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বাণিজ্য শাখায় নেওয়া হচ্ছে ২৮০০ টাকা।</p> <p>শিক্ষার্থী রিফাত বলে, ‘কলেজে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় আমাদের মতো দরিদ্র শিক্ষার্থীরা অনেকেই হতাশাগ্রস্ত। কোনো সুপারিশও শোনেন না স্যাররা।’</p> <p>অভিভাবক আব্দুল কাদের মাস্টার বলেন, ‘সরকার শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কলেজগুলো তিন থেকে চার গুণ অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফুলবাড়িয়া কলেজে মানবিক শাখায় আমার মেয়েকে ভর্তি করিয়েছি ৪০৯০ টাকা দিয়ে।’</p> <p>অভিভাবক আব্দুল হালিম শিকদার বলেন, ‘কৃষক মানুষ টাকা-পয়সা সব সময় হাতে থাকে না। অনেক কষ্ট করে তিন হাজার টাকা সংগ্রহ করে ছেলেকে ভর্তি জন্য পাঠিয়েছিলাম কলেজে। কিন্তু স্যাররা তিন হাজার ৫০০ টাকার কম ভর্তি করেনি।’</p> <p>আছিম শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে সরকার যে নির্ধারিত ফি করেছে তা সরকারি কলেজগুলোর জন্য, বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য না। আমাদের কলেজে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফি ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।’</p> <p>কেশরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আ. রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।</p> <p>ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম বলেন, ‘ভর্তির জন্য যে টাকা নেওয়া হচ্ছে তা গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তেই। এখানে আমার কিছু করার নেই।’</p> <p>ফুলবাড়িয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, যেসব কলেজের বিরুদ্ধে একাদশ শ্রেণির ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।</p>