ফুলবাড়িয়ায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাণিজ্য

মো. আব্দুল হালিম, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)
মো. আব্দুল হালিম, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)
শেয়ার
ফুলবাড়িয়ায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাণিজ্য

সরকারি নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলিয়ে দেখিয়ে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাণিজ্য করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী, মফস্বল, পৌর ও উপজেলা এলাকায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি বাবদ নির্ধারণ করা হয়েছে (সেশন চার্জসহ) ১০০০ টাকা। কিন্তু ফুলবাড়িয়ার কলেজগুলোতে নেওয়া হচ্ছে এর তিন থেকে চার গুণের বেশি টাকা।

বাকতা নিশ্চিন্তপুর গ্রামের নরসুন্দর মজিবুর রহমানের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস গত শনিবার কেশরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে সরকারের নির্ধারিত ১০০০ হাজার টাকা নিয়ে একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি হতে যায়।

কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের নির্ধারিত ২৭০০ টাকা ছাড়া তাকে ভর্তি করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। সে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

আছিম ঘুঘুরাচালা গ্রামের কৃষক আব্দুল হালিম শিকদারের ছেলে রিফাত। আছিম শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান শাখায় ভর্তির জন্য ২০০ টাকা দিয়ে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে।

তিন হাজার টাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ ভর্তি না করলে সে বাড়ি ফিরে যায়। পরে তার বাবা ঋণ করে আরো ৫০০ টাকা রিফাতকে দিলে ৩৫০০ টাকা দিয়ে বিজ্ঞান শাখায় সে ভর্তি হয়। শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয় মোসাদ্দেক আলী। ভর্তির মূল রসিদে দেখা যায়, ভর্তি বাবদ তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৩৫০০ টাকা।
ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি হয়েছে আরেফিন জাহান। তার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪০৯০ টাকা। বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হওয়া চৌধার গ্রামের রুবেল মিয়ার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪২০০ টাকা। মানবিক শাখায় ভর্তি হওয়া সায়লা শিরিন বর্ণার কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ৪০৯০ টাকা।

সরকারি নির্ধারিত ভর্তি ফি পরও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।

গতকাল রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণির মানবিক শাখায় ভর্তি বাবদ ৪০৯০ টাকা, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বাণিজ্য শাখায় ৪২০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ভর্তি ফরম বাবদ নেওয়া হচ্ছে আরো ১০০ টাকা। আছিম শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজে মানবিক শাখায় ৩০০০, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বাণিজ্য শাখায় ভর্তি বাবদ ৩৫০০ টাকা এবং ভর্তি ফরমের জন্য নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা। কেশরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে মানবিক শাখায় ২৭০০, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় বাণিজ্য শাখায় নেওয়া হচ্ছে ২৮০০ টাকা।

শিক্ষার্থী রিফাত বলে, ‘কলেজে ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ায় আমাদের মতো দরিদ্র শিক্ষার্থীরা অনেকেই হতাশাগ্রস্ত। কোনো সুপারিশও শোনেন না স্যাররা।’

অভিভাবক আব্দুল কাদের মাস্টার বলেন, ‘সরকার শিক্ষাকে সহজলভ্য করার জন্য ভর্তি ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু কলেজগুলো তিন থেকে চার গুণ অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফুলবাড়িয়া কলেজে মানবিক শাখায় আমার মেয়েকে ভর্তি করিয়েছি ৪০৯০ টাকা দিয়ে।’

অভিভাবক আব্দুল হালিম শিকদার বলেন, ‘কৃষক মানুষ টাকা-পয়সা সব সময় হাতে থাকে না। অনেক কষ্ট করে তিন হাজার টাকা সংগ্রহ করে ছেলেকে ভর্তি জন্য পাঠিয়েছিলাম কলেজে। কিন্তু স্যাররা তিন হাজার ৫০০ টাকার কম ভর্তি করেনি।’

আছিম শাহাবুদ্দীন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মকবুল হোসেন বলেন, ‘একাদশ শ্রেণিতে সরকার যে নির্ধারিত ফি করেছে তা সরকারি কলেজগুলোর জন্য, বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য না। আমাদের কলেজে গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তেই একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ফি ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা।’

কেশরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আ. রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ফুলবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আবুল কালাম বলেন, ‘ভর্তির জন্য যে টাকা নেওয়া হচ্ছে তা গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তেই। এখানে আমার কিছু করার নেই।’

ফুলবাড়িয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার বলেন, যেসব কলেজের বিরুদ্ধে একাদশ শ্রেণির ভর্তির জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

উক্তি

শেয়ার
উক্তি

আমার ফজু পাগলা নাম দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। আমাকে হত্যা করতে চায়।

ফজলুর রহমান

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

অত্যাবশ্যকীয় সব ওষুধের দাম নির্ধারণের নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
অত্যাবশ্যকীয় সব ওষুধের দাম নির্ধারণের নির্দেশ হাইকোর্টের

সরকারকে অত্যাবশ্যকীয় (জীবন রক্ষাকারী) সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে নির্ধারিত দাম যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গেজেট আকারে প্রকাশ করতেও বলা হয়েছে।

সাত বছর আগে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এই রায় দেন। রায়ে ১১৭টি ওষুধ বাদে বাকি সব অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ওষুধ কম্পানির হাতে ছেড়ে দিয়ে ১৯৯৪ সালে জারি করা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

ফলে এখন থেকে এসব ওষুধের দাম সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে।

রিটকারী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির এবং ওষুধ মালিক সমিতির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস কে   মোরশেদ।

১৯৮২ সালের ঔষধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ অনুযায়ী, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে ছিল।

সে অনুযায়ী ১৯৯৩ সালে সরকার ৭৩৯টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম নির্ধারণ করে। তবে ১৯৯৪ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক পরিপত্রের মাধ্যমে ১১৭টি ছাড়া বাকি সব ওষুধের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া হয় ওষুধ শিল্প মালিকদের হাতে।

এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট করে এইচআরপিবি। একই দিন আদালত রুল জারি করেন এবং পরিপত্রটি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান।

আইনজীবী মনজিল মোরসেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ১৯৯৪ সালের ওই পরিপত্রের ফলে ওষুধ কম্পানিগুলো ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণ করে আসছিল, যা নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকারে হস্তক্ষেপ করে। আদালতের রায়ে ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন অত্যাবশ্যকীয় সব ওষুধের দাম নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে।

এ বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির বলেন, সরকার এরই মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধসহ সব ধরনের ওষুধের দাম নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ১৯৯৪ সালের পরিপত্র অনুসারে ওষুধ কম্পানিগুলো ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েই দাম নির্ধারণ করছিল।

এখন সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ রায় হাতে পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জনমত জরিপেও এসেছে, নাগরিকদের বেশির ভাগই ওষুধের দাম নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ চায়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত ফেব্রুয়ারিতে একটি জরিপে দেখেছে, স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করতে সব ধরনের ওষুধের দাম সরকার নির্ধারণ করুকএমন মত দিয়েছেন ৯৭.৪ শতাংশ মানুষ।

এর ধারাবাহিকতায় গত ২৪ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ ও দাম নির্ধারণে ১৮ সদস্যের একটি টাস্কফোর্স গঠন করে। টাস্কফোর্সের কাজের মধ্যে রয়েছে তালিকাভুক্ত ওষুধের দাম নির্ধারণ ও অন্যান্য ওষুধের জন্য একটি সমন্বিত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি প্রণয়ন।

একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন ২০ আগস্ট দেওয়ার কথা থাকলেও তা প্রস্তুত না হওয়ায় আরো দুই সপ্তাহ সময় চাওয়া হয়েছে।

মন্তব্য

পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ

জুলাই জাতীয় সনদ-এর আইনগত স্বীকৃতি, পিআর (প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতিতে নির্বাচনলেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

ঢাকা মহানগরী উত্তর জামায়াতের উদ্যোগে গতকাল সোমবার দুপুরে রামপুরা কাঁচাবাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে মৌচাক এলাকায় গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মিছিলে নেতৃত্ব দেন মহানগর আমির ও জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মো. সেলিম উদ্দীন। মিছিল ও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মহানগর ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা।

সমাবেশে মো. সেলিম উদ্দীন বলেন, একটি দল ঘুমের মধ্যেও নির্বাচন চায়। কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কখনো বলে না। হাসিনা মার্কা প্রহসনের নির্বাচন দিয়ে তারা আবারও ক্ষমতায় যেতে চায়। বাংলাদেশে আর সেই ধরনের নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।

নির্বাচন অবশ্যই ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে, কোনো টালবাহানা চলবে না। জামায়াতের এই নেতা বলেন, আমরা জুলাই বিপ্লব-এর চেতনায় ঘরে ফিরে যাইনি। নির্বাচনে অংশ নেবতবে আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।

সংবিধান সংস্কার প্রসঙ্গে সেলিম উদ্দীন বলেন, আমরা সরকার গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বেশির ভাগে সমর্থন জানিয়েছি।

অনেক বিষয়ে নিজেদের মতামতও দিয়েছি। আমরা চাই, এসব সংস্কার সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হোক। অথচ এখন কেউ কেউ বলছেন, এসব তো সংবিধানে নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কোন সংবিধানের কথা বলছেন? সংবিধানকে কার্যকর করতে হলে জুলাই সনদকে আইনগত ভিত্তি দিতে হবে।

সমাবেশে আরো বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, সহকারী সেক্রেটারি ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য জিয়াউল হাসান, মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন, মাওলানা মুহিব্বুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন।

 

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

শেখ হাসিনার ফাঁসি চান শহীদ রাজ্জাকের মা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনার ফাঁসি চান শহীদ রাজ্জাকের মা

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নেওয়া ১১ জন চিরতরে দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন, আর এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন ৪৯৩ জন। দুই চোখে গুরুতর দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন ২৮ জন, আর এক চোখে দৃষ্টি স্বল্পতায় ভুগছেন ৪৭ জন।

গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১-এ দেওয়া সাক্ষ্যে এই তথ্য দেন হাসপাতালটির রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা নীলা। তিনি প্রসিকিউশনের ২১তম সাক্ষী।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে তিনি এই সাক্ষ্য দেন।

২২তম সাক্ষী ছিলেন জুলাই আন্দোলনে নিহত মারুফ হোসেনের বাবা ফুচকা-চটপটি বিক্রেতা   মো. ইদ্রিস, ২৩তম সাক্ষী লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার এবং ২৪তম সাক্ষী ছিলেন কুমিল্লার দেবীদ্বারে গুলিতে নিহত বাসচালক আবদুর রাজ্জাকের মা হাসনে আরা বেগম।

সাক্ষ্য নেওয়ার সময় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়। এই আসামি তাঁর অপরাধ স্বীকার করে অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হয়েছেন।

গত বছর ৪ আগস্ট দুপুরে দেবীদ্বারে গুলিতে শহীদ হন বাসচালক আবদুর রাজ্জাক। এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তাঁর মা হাসনে আরা বেগম বলেন, ওই দিন রাতে নয়ন দারোগা ফোন করে তাঁকে থানায় ডেকে রাজ্জাকের পোস্টমর্টেম করার জন্য একটি কাগজে স্বাক্ষর নেন। সে সময় থানায় উপস্থিত আওয়ামী লীগের নেতা মোস্তাফিজুর রহমান সরকার নগদ সাত লাখ টাকা, দুটি দোকান দেওয়ার কথা বলে হাসনে আরা বেগমকে মামলা করতে বারণ করেন। কিন্তু তিনি টাকা নেননি।

তিনি বলেন, মোবাইলে দেখেছি শেখ হাসিনা লোক দিয়ে আমার ছেলেকে মেরেছে। নৌকা পার্টির লোক সালাউদ্দিন আমার ছেলেকে গুলি করেছে। অন্যরা আমার ছেলেকে কুপিয়েছে। আমার ছেলে হত্যার জন্য শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই।

এর আগে শহীদ মারুফের বাবা তাঁর সাক্ষ্যে বলেন, গত বছর ১৯ জুলাই রাজধানীর বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গুলিবিদ্ধ হন মারুফ।

অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে রামপুরা ব্রিজের ওপর অ্যাম্বুল্যান্সটি আটকে দেয় আওয়ামী লীগ, পুলিশ ও বিজিবি। ১৫ থেকে ২০ মিনিট আটকে রাখার পর পুলিশ জানায় মারুফ মারা গেছে, তাকে হাসপাতালে নেওয়ার দরকার নেই। আটকে রাখার সময় পুলিশ সদস্যরা মারুফের গুলিবিদ্ধ ক্ষতস্থানটি রাইফেলের বাঁট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখে। পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ঢাকা মেডিক্যালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মারুফকে মৃত ঘোষণা করেন।

ছেলের হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান কামাল, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াকিল উদ্দিন, স্থানীয় কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম ও বিজিবির রেদোয়ানের বিচার দাবি করেন ট্রাইব্যুনালের কাছে।

আন্দোলনকারী আমেনা আক্তার সাক্ষ্যে বলেন, ৪ আগস্ট সকালে লক্ষ্মীপুর সদরের ঝুমুর চত্বরে তাঁদের ওপর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের এক শ-দেড় শজন অস্ত্রধারী হামলা করে। ছাত্রলীগের লোকজনের গুলিতে একজন ছাত্র ছাদ আল আফনান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমেনাকেও নির্যাতন করেছিল। তিনি লক্ষ্মীপুর আধুনিক হাসপাতালে দুই দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আজ মঙ্গলবার আবার সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য আছে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ