<p>বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে সহকারী কেমিস্ট ও ফুয়েল চেকার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধাসহ তিনজনকে দুই বছর করে মোট চার বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মীর রুহুল আমিন এই রায় ঘোষণা করেন। দুই মামলার এই রায়ে নিয়োগপ্রত্যাশী পাঁচজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।</p> <p>ইউসুফ আলী মৃধা ছাড়া দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত অন্য দুই আসামি হলেন পূর্বাঞ্চলীয় রেলওয়ের সাবেক সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসার গোলাম কিবরিয়া এবং সাবেক অতিরিক্ত প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান চৌধুরী। এ ছাড়া খালাস পেয়েছেন সহকারী কেমিস্ট পদে নিয়োগপ্রার্থী সুলতানা বেগম, জহিরুল ইসলাম ও গণেশ চন্দ্র শীল এবং ফুয়েল চেকার পদে নিয়োগপ্রার্থী আবুল কাশেম ও আনিসুর রহমান।</p> <p>এর আগে জানা যায়, বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা অন্য এক মামলায় ঢাকার একটি আদালত ইউসুফ আলী মৃধাকে তিন বছরের সাজা দিয়েছেন।</p> <p>দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আদালত রায়ে ঘোষণা করেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু আদালত আসামিদের প্রমাণিত অভিযোগগুলোর ধারা অনুযায়ী সাজা দেননি। এ কারণে মামলার বাদীপক্ষ সংক্ষুব্ধ। তাই দুর্নীতি দমন কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।’ তিনি বলেন, আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের পরও দুর্নীতি দমন আইনের ১৯৪৭ সালের ৫(২) ধারায় আসামিদের সাজা দেওয়া হয়নি। ওই ধারায় আসামিদের সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। কিন্তু এই ধারাটি প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি আদালত রায়ে নিশ্চিত করলেও এই ধারায় দণ্ড দেওয়া হয়নি।</p> <p>দুদকের আইনজীবী জানান, দুই মামলায় চার বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলেও আসামিরা মূলত দুই বছর সাজা ভোগ করবেন। মামলার রায়ে আদালত আসামিদের হাজতবাস বাদ দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন কি না জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মিজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমি রায় পড়েছি। এতে হাজতবাস বাদ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। সে কারণে আসামিকে রায় ঘোষণার তারিখ থেকে দুই বছর কারাভোগ করতে হবে।’</p> <p>মিজবাহ উদ্দিন চৌধুরী আরো বলেন, দুই মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের পর আদালত রায় ঘোষণা করেছেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।</p> <p>রায় ঘোষণার আগে কারাবন্দি আসামিদের চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।</p> <p>২০১২ সালের ৯ এপ্রিল রাতে ঢাকায় বিজিবি সদর দপ্তরের ভেতরে ঢুকে যাওয়া একটি গাড়ি তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ টাকাসহ তৎকালীন রেলপথমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদারকে আটক করা হয়েছিল। ওই ঘটনার পর টাকাগুলো পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের বিভিন্ন পদে নিয়োগে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বলে প্রচারিত হয়। পরে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের তখনকার মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধাসহ কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া দুদক তদন্ত শেষে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মৃধাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলার মধ্যে গতকাল দুটি মামলার বিচার শেষে রায় ঘোষণা করা হলো।</p> <p>১৪ মামলার মধ্যে ফুয়েল চেকার পদে নিয়োগে দুর্নীতিসংক্রান্ত মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুর রেজা অভিযোগপত্র দাখিল করেছিলেন। পরে ২০১৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়। ওই মামলায় ১৮ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।</p> <p>সহকারী কেমিস্ট পদে নিয়োগে দুর্নীতির মামলার তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট। পরে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি আদালত অভিযোগ গঠন করেন। ওই মামলায়ও ১৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।</p> <p>২০১৪ সালের ৩ মার্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন ইউসুফ আলী মৃধা। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছিলেন। এরপর অন্য আসামি গোলাম কিবরিয়া ও হাফিজুর রহমান আত্মসমর্পণ করেন। সেই থেকে তাঁরা কারাগারে আছেন।</p>