অনেকটা ঘটা করে ২০১২ সালের ৩০ জুলাই পুলিশের ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) পদকে দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে এবং উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) ও সার্জেন্ট পদকে তৃতীয় থেকে একধাপ ওপরে তুলে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এতে ইন্সপেক্টরদের বেতন দশম গ্রেড থেকে নবম এবং এসআই ও সার্জেন্টদের বেতন ১১তম থেকে দশম গ্রেডে আসে। তারও আড়াই বছর পর একধাপ নামিয়ে আগের গ্রেড নির্ধারণ করে ইন্সপেক্টর এবং এসআই ও সার্জেন্টদের নতুন পদ সৃজনে অনুমোদন দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এতে বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা করছেন পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশে একই পদে দুই রকমের বেতন
আবুল কাশেম, ঢাকা ও এস এম রানা, চট্টগ্রাম

২০১২ সালে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্য দিয়ে মানমর্যাদার সঙ্গে ওপরের ধাপে বেতন-ভাতা নিশ্চিত হওয়ার খবরে থানায় থানায় মিষ্টি বিতরণ হয়েছিল। এর ভিত্তিতে ইন্সপেক্টর আর এসআই ও সার্জেন্টরা উচ্চধাপে বেতন-ভাতা, মানমর্যাদা পেলেও এক বাক্যের ওই প্রজ্ঞাপন মোটেও স্বস্তি দিচ্ছিল না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও পুলিশকে। কারণ নিম্নতর পদে থাকা পুলিশ সদস্যদের কিভাবে ওপরের পদে নেওয়া হবে, সে সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে কোনো কিছুরই উল্লেখ নেই। এ অবস্থায় নতুন করে পুলিশের পদ সৃজন ও নিয়োগের ক্ষেত্রে ইন্সপেক্টর, এসআই ও সার্জেন্টদের বেতন ফের একধাপ নিচে নামিয়ে এনে তাতে অনুমোদন দিচ্ছে অর্থ বিভাগ।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পুলিশে ৫০ হাজার নতুন পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেন। তারপর থেকেই পুলিশের তরফ থেকে আবেদন আসতে থাকে। তাতে অন্যান্য পদের সঙ্গে ইন্সপেক্টর, এসআই ও সার্জেন্ট পদ সৃষ্টিরও প্রস্তাব আসে। ২০১২ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এসব প্রস্তাব পাঠানোর পর স্বরাষ্ট্র ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইন্সপেক্টরদের জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড অনুযায়ী ১১০০০-২০৩৭০ টাকা এবং এসআই ও সার্জেন্টদের দশম গ্রেড অনুযায়ী ৮০০০-১৬৫৪০ টাকার স্কেল প্রস্তাব করে অনুমোদন চায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু ইন্সপেক্টরদের বেতন দশম গ্রেড (৮০০০-১৬৫৪০) এবং এসআই ও সার্জেন্টদের ১১তম গ্রেড (৬৪০০-১৪২৫২) এর স্কেলে রেখে নতুন পদ সৃজনে সম্মতি দিচ্ছে অর্থ বিভাগ।
এর কারণ সম্পর্কে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'এটি খুবই টেকনিক্যাল বিষয়। নিশ্চয়ই সব ধরনের নিয়ম-কানুন মেনেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়ন শাখা থেকে এটি করা হয়েছে।'
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাস্তবায়ন শাখার কর্মকর্তারা জানান, পুলিশের দাবি ছিল, তাঁদের পদমর্যাদা বাড়ানো হোক। তাই ২০১২ সালের প্রজ্ঞাপনে ইন্সপেক্টর, এসআই ও সার্জেন্টদের বেতন-ভাতা অপরিবর্তিত রেখে তাঁদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় এবং দ্বিতীয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চাপ দিয়ে উচ্চতর গ্রেডে বেতন-ভাতাও ভোগ করছেন তাঁরা, যা কখনই অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেনি। তাই ইন্সপেক্টরদের পদমর্যাদা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হলেও অর্থ বিভাগের হিসাবে তাঁদের বেতন-ভাতা জাতীয় বেতন স্কেলের ১০ নম্বর গ্রেডে এবং এসআই ও সার্জেন্টরা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা পেলেও বেতন-ভাতা ১১ নম্বর গ্রেডেই অনুমোদিত রয়েছে। আর নতুন করে এসব পদ সৃজনের ক্ষেত্রে আগের গ্রেডেই বেতন-ভাতা নির্ধারণ করছে অর্থ বিভাগ।
অর্থাৎ এত দিন ধরে পুলিশ বাহিনীতে থাকা ইন্সপেক্টররা জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেডে এবং এসআই ও সার্জেন্টরা দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা পেলেও নতুন যেসব ইন্সপেক্টর এবং এসআই ও সার্জেন্ট আসবেন, তাঁরা পূর্বসূরিদের চেয়ে একধাপ নিচের গ্রেডে বেতন-ভাতা পাবেন। ফলে বাহিনীতে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হবে। এতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এখন সার্জেন্ট, এসআই ও ইন্সপেক্টররা যে সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, নতুন নিয়োগ পাওয়ারা তার চেয়ে একধাপ নিচে বেতন-ভাতা পাবেন, যা পুরো পুলিশ বাহিনীর জন্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে।
পুলিশ সপ্তাহের ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী এ বাহিনীতে ৫০ হাজার পদ সৃজনের ঘোষণা দেন। তারপর থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে নতুন পদ সৃজন করে জনবল নিয়োগের প্রস্তাব আসতে থাকে। এরই অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৫টি ইন্সপেক্টর, ২০০ এসআই এবং ৪০টি সার্জেন্টের পদসহ মোট এক হাজার ২৯৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব পাঠায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব পদের জন্য বেতন কাঠামোর গ্রেড নির্ধারণ করে তা অনুমোদনের জন্য পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। তাতে ইন্সপেক্টরদের জাতীয় বেতন স্কেলের নবম গ্রেড এবং এসআই ও সার্জেন্টদের দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু অর্থ বিভাগ ইন্সপেক্টরদের দশম গ্রেড এবং এসআই ও সার্জেন্টদের ১১তম গ্রেডে রেখে অনুমোদন দিয়ে গত ১১ জুন তা অনুমোদন করে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন অনুবিভাগের উপসচিব জিন্নাত আরা স্বাক্ষরিত ওই অনুমোদনপত্র পুলিশের হাতে পৌঁছালে তা নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইন্সপেক্টর পদকে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করার ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি থাকলেও এসআই ও সার্জেন্টদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার ব্যাপারে আপত্তি ছিল। তা ছাড়া প্রজ্ঞাপনের আগে ইন্সপেক্টর, এসআই ও সার্জেন্টদের যোগ্যতা, দক্ষতা যাচাই-বাছাই না করে সরাসরি ওপরের শ্রেণিতে সবাইকে বেতন-ভাতা দেওয়ার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের। সরকারের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার সরকারি কর্ম-কমিশনের (পিএসসি)। কিন্তু পুলিশের ক্ষেত্রে তা উল্টো। প্রভাব খাটিয়ে সার্জেন্ট, এসআই ও ইন্সপেক্টর নিয়োগের ক্ষমতা নিজেদের হাতেই রেখেছে পুলিশ। এ নিয়ে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ক্ষোভও রয়েছে।

যুক্তরাজ্যে সাধারণ মানুষের মতো লোকাল বাসে চলাচল করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান


মির্জা আব্বাস
পিআর পদ্ধতির কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না
নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘পিআর পদ্ধতির (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) নির্বাচন জনগণের মাথায় ঢোকানোর আগে, তাদের ভোট দেওয়া শেখান। নতুন পদ্ধতির কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যাবে না।’ তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শহীদ ফারুক সড়কে গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় যাঁরা জীবন দিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রমাণ করে, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আর কোনো তালেবানি নির্বাচন চলবে না, জনগণ তা মেনে নেবে না। বিএনপির বিরুদ্ধে মানুষকে ভুল-বোঝানোর চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যারা একসময় ভাত খেতে পারত না, আজ তারা টাকার কুমির হয়েছে। আমরা সরকারের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, তারা এত টাকা কোথায় পেল?’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে এবং সদস্যসচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন, নবী উল্লাহ নবীসহ দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

জামায়াতের জাতীয় সেমিনার
ভবিষ্যৎ সরকারকে জুলাই সনদ মেনে দেশ চালাতে হবে
বিশেষ প্রতিনিধি

বর্তমান ও ভবিষ্যতের সরকারকে জুলাই সনদ মেনে দেশ পরিচালনা করতে হবে। তা না হলে আবারও জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে মাঠে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জুলাই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান : প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে এসব কথা বলেন জামায়াত নেতারা। সেমিনারে ১২ খণ্ডে প্রকাশিত ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যারা’ বইয়ের বাংলা, ইংরেজি, আরবি ও তুর্কি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘জুলাইয়ের গণজাগরণকে টেকসই করতে হলে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মৌলিক সংস্কার করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’
তাঁর অভিযোগ, প্রশাসনের ভেতরে এখনো ‘আওয়ামী ফ্যাসিস্ট’ শক্তির দোসররা সক্রিয় রয়েছে এবং তারা রাষ্ট্রে অস্থিরতা তৈরি করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে গোলাম পরওয়ার বলেন, এখনই সময় নিজেদের অভ্যন্তরে গণতন্ত্র, ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক সহমর্মিতার সংস্কৃতি গড়ে তোলার।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আরো বলেন, ‘জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান অসুস্থতার কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের পর এবার আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখন দরকার তৃতীয়বার স্বাধীনতার লড়াই, যেখানে মানুষের গোলামির জায়গায় আল্লাহর গোলামি প্রতিষ্ঠিত হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘জাতীয় সংসদে আল্লাহর আইন পাস করতে হবে।
সেমিনারে আরো বক্তব্য দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ লইয়ারস কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, গুমের শিকার লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ।
সেমিনারে জামায়াত নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে মুসলমানদের ‘জঙ্গি’ আখ্যা দিয়ে নির্যাতন চালানো হয়েছে, মসজিদের ইমামদের হত্যা করা হয়েছে। এখন আবার দক্ষিণপন্থার নামে আতঙ্ক ছড়িয়ে নতুন ষড়যন্ত্র চলছে, যার বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।

৫০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি
পলাতক ছাত্রনেতা অপু গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর গুলশানে আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদের বাসায় চাঁদাবাজির ঘটনায় পলাতক গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক জানে আলম অপুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকালে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। গতকাল বিকেলে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে তিনি ব্রিফ করে তাঁর গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান।
চাঁদাবাজির ঘটনায় এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা আবদুর রাজ্জাক বিন সোলাইমান ওরফে রিয়াদ, ইব্রাহিম হোসেন ওরফে মুন্না, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব ও অপ্রাপ্তবয়স্ক একজনকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানার পুলিশ।
ব্রিফিংয়ে তালেবুর রহমান জানান, গত ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে অপু ও রিয়াদ গুলশানের বাসায় গিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ওই দিন ১০ লাখ টাকা চাঁদা দেওয়া হয় তাঁদের। পরে আবার তাঁরা গত ১৯ জুলাই বাকি ৪০ লাখ টাকা আনতে যান।
এ ঘটনায় গুলশান থানায় মামলা করেছেন সিদ্দিক আবু জাফর। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ছাড়াও আরো কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছে মামলায়।
পুলিশ জানায়, শাম্মী আহমেদের বাসা থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার পর রিয়াদসহ কয়েকজন তা ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন। নিজের ভাগের পাঁচ লাখ টাকা রিয়াদ তাঁর বাড্ডার মেসে রাখেন। এর মধ্যে দুই লাখ ৯৮ হাজার টাকা গত বৃহস্পতিবার উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে গত বুধবার ডিএমপির এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, রিয়াদের পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার চারটি চেক উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, এই সোয়া দুই কোটি টাকার চেক নেওয়া হয় রংপুর-৬ আসনের (পীরগঞ্জ) আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আবুল কালাম আজাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ‘ট্রেড জোন’ থেকে। রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। চাঁদাবাজির ঘটনায় জানে আলম ও রিয়াদকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চাঁদা দাবি, যুবক আটক : চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবঞ্জ শহরের স্বরূপনগর মহল্লার একটি বাড়িতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য পরিচয়ে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি ও স্বর্ণালংকার ছিনতাইয়ের পর স্থানীয় লোকজন গণপিটুনি দিয়ে সোহেল রানা (২৩) নামের এক যুবককে পুলিশে দিয়েছে। তবে এ সময় সোহেলের সহযোগী আরো তিনজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় যুবকদের মারধরে আহত ওই বাড়ির দুই নারীকে জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আটক সোহেল শহরের নয়াগোলা মহল্লার মৃত শরিফুল ইসলামের ছেলে।
এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য লিয়াকত আলীর বাড়িতে কলিং বেল চেপে ওই বাড়িতে বাল্যবিবাহ হচ্ছে অভিযোগে প্রবেশ করেন চার যুবক। বাড়ির দরজা খোলা মাত্র তাঁরা বাড়িতে প্রবেশ করে চাঁদা দাবি করেন এবং বাড়ির নারীদের মারধর করে দুজনের গলায় থাকা দুটি সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন। এদিকে ঘটনার সময় বাড়ির লোকজনের চিৎকার-চেঁচামেচিতে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে সোহেলকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার ও আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
বরিশালে দুই সমন্বয়ক মুচলেকায় মুক্ত : ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগের ঠিকাদারের বিলের তদবির করতে এসে জনতার হাতে আটক দুই সমন্বয়ক সদর থানায় মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
এই দুই সমন্বয়ক হলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম (২৪) ও বরিশাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মো. মেহেদী (২৫)। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ১০ মিনিটে সদর থানায় লিখিত অঙ্গীকার দিয়ে তাঁরা ছাড়া পান।
অভিযোগ রয়েছে, ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর কম্পিউটার অপারেট শাওন খানের ব্রিজ ও সড়কে তিন কোটি টাকার কাজের চূড়ান্ত বিল তুলতে দুই মাস ধরে দুই সমন্বয়ক নলছিটি উপজেলা প্রকৌশলীকে চাপ দিয়ে আসছিলেন। এক পর্যায়ে তাঁরা উপজেলা প্রকৌশলীকে বিল ছাড়ানোর জন্য ঘুষ দেওয়ার প্রস্তাব দেন বলেও অভিযোগ করেন প্রকৌশলী।
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, এলজিইডিতে দুই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ককে স্থানীয় ঠিকাদাররা আটক করেছেন—এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়ে তাঁদের দুজনকে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। তখন এলজিইডি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, এই সমন্বয়করা তাদের অনৈতিকভাবে হয়রানি করে আসছেন। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ নেই। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের নিয়ে বসে বিষয়টির সমাধান করেছেন।