<div> অন্ধকার রাত। সুনসান নীরবতা। হিমশীতল হাওয়া বইছে চারদিকে। মাথার ওপর মেঘমুক্ত আকাশে জ্বলজ্বল করছে লাখো কোটি তারা। ওই তো সপ্তর্ষিমণ্ডল, ওই তো নীহারিকা। চন্দ্র, সূর্য, কালপুরুষ, সন্ধ্যাতারা একে একে সবাই যেন হাজির হয়েছে। কী বিশাল আকৃতি! কিন্তু মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য দেখার মধ্য দিয়ে জানার সুযোগ কোথায়? এ তো খালি চোখে দেখার সুযোগ নেই! আর সে জন্য চাই বিশাল আয়োজন!</div> <div> মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ও আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিস্ময়কর আবিষ্কার দেখার যথোপযুক্ত সুযোগ রাজধানী ঢাকাতেই রয়েছে। আগ্রহীদের স্বাগত জানাচ্ছে বিজয় সরণির বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার। বিশেষত শিশু-কিশোর ও তরুণদের মহাকাশবিজ্ঞান সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা ও জানার সুযোগ করে দেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই ব্যয়বহুল আয়োজন। ১৩৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি করা দেশের একমাত্র প্ল্যানেটরিয়াম এটি।</div> <div> বিশাল কলেবরে মোট ৫ দশমিক ৪ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত নজরকাড়া এই নভোথিয়েটারের ডিজাইন করেছেন স্থপতি আলী ইমাম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নভোথিয়েটার কমপ্লেক্সের সামনের অংশটি ছোট লনঘেরা। ইট আর কংক্রিট দিয়ে সাজানো হয়েছে নভোথিয়েটারের চারপাশ। প্রবেশমুখেই রয়েছে দুটি সিম্বল। একটি ডানা মেলা বকের, অন্যটি আর্কিটেক্ট সিম্বল। এর গঠনশৈলীও বেশ নান্দনিক, জ্যামিতিক প্যাটার্নে গড়া। মাঝখানে মেটালিক নীল রঙের ডোম। বাইরে থেকে গোল গম্বুজের মতো দেখায়।</div> <div> নভোথিয়েটারে ঢুকতে প্রথমেই এক্সিবিশন হল। মোট চারটি লেভেলে সাজানো হয়েছে হলটি। ‘হল অব দ্য ফেম’ নামে একটি আর্ট গ্যালারি রয়েছে বাঁ দিকে। গ্যালারিতে রয়েছে বিশ্বনন্দিত বিজ্ঞানীদের আবক্ষ মূর্তি। এক্সিবিশন হলে রয়েছে একটি ত্রিমাত্রিক মডেল সোলার সিস্টেম, সূর্য, চাঁদ আর পৃথিবীর একটি মডেল, সৌরজগৎ, তারাদের আকার, মহাকাশে তারাদের অবস্থান জানতে স্টার ফাইন্ডারসহ ন্যাশনাল জিওগ্রাফির নানা পোস্টার। প্রদর্শনী হলে দেখানো হয় মহাকাশবিজ্ঞান বিষয়ক নানা প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র।</div> <div> নভোথিয়েটার যেন আকাশ ছোঁয়ার ছাতহানি দিয়ে যাচ্ছে সবাইকে। থ্রিডি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ হলটিতে বসে শিশু-কিশোররা অপার বিস্ময় নিয়ে উপভোগ করে মহাকাশ নিয়ে নানা ধরনের প্রামাণ্যচিত্র, চলচ্চিত্র। প্রতিদিন এখানে প্রদর্শিত হয় মোট পাঁচটি প্রামাণ্যচিত্র।</div> <div> নভোথিয়েটার কমপ্লেক্সে কথা হলো পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আরমান জাভেদের সঙ্গে। হল থেকে বেরিয়ে এসে কথা বলতে গিয়ে আবেগে ওর গলা কেঁপে উঠছিল বারবার। বলল, ‘মনে হচ্ছিল হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে গ্রহ-নক্ষত্র। আনন্দে আমার চোখ বুজে আসছিল।’ জাভেদের মতো শত শত শিক্ষার্থী ও দর্শক বিনোদনের মাধ্যমে মহাকাশবিজ্ঞান সম্পর্কে সঠিক ধারণা ও তথ্য নিচ্ছে এই নভোথিয়েটার থেকে। বিস্ময় ও রহস্যের এক জগৎ এই নভোথিয়েটার। প্রযুক্তির কল্যাণে সুখকর অনুভূতি নিয়ে খুব কাছ থেকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ- এ এক অন্য রকম অনুভূতি। ব্যতিক্রমী অভিজ্ঞতা। রাজধানীর সরকারি ও আধাসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য সুখবর রয়েছে। নভোথিয়েটার দেখতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আর পরিবহন খরচ লাগবে না। শিক্ষার্থীরা নভোথিয়েটারে আসতে চাইলে এখন থেকে কর্তৃপক্ষই বিনা মূল্যে পরিবহনের ব্যবস্থা করবে। এ জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে একটি বাস সংগ্রহ করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে বাসটির উদ্বোধন করেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক আরশাদ হোসাইন এনডিসি।</div> <div> মহাপরিচালক জানালেন, শিশুদের চিত্তবিনোদন ও বিজ্ঞান সম্পর্কে কৌতূহল জাগাতে থিয়েটারে বর্তমানে মহাকাশবিষয়ক শো ‘মহাশূন্যে মহাকাশে’ এবং লার্জ ফরম্যাট ফিল্ম ‘এই আমাদের বাংলাদেশ’ নামে দুটি ফিল্ম প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ ছাড়া এই থিয়েটারে প্রবেশের পর দেখা যাবে চন্দ্রগ্রহণ, সূর্যগ্রহণ, উল্কাপাত, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বছরের বিভিন্ন সময়ের রাতের আকাশ ইত্যাদি।</div> <div> অবশ্য এই নভোথিয়েটারের কার্যক্রম নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগও তুলেছে এখানে আগতদের অনেকে। এখানে প্রামাণ্যচিত্র ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ফাঁকে বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য অধিক সময় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তা ছাড়া একই ছবি বা ডকুমেন্টারি দীর্ঘদিন ধরে দেখানো হয়। এর ফলে বৈচিত্র্য পাওয়া যায় না। বিশেষত অল্প সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার নভোথিয়েটারে গিয়ে সেই পুরনো ছবিই দেখতে হয়। ফলে একই দর্শক বারবার এখানে আসতে আগ্রহ হারাচ্ছে।</div> <div> এসব ব্যাপারে মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কালের কণ্ঠকে তিনি জানান, তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর নভোথিয়েটারের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনা নিয়েছেন। দর্শনী সংখ্যা এক থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্র ‘ইতিহাসের মহানায়ক’। পর্যায়ক্রমে বিজ্ঞানবিষয়ক আরো নতুন প্রদর্শনীও আসবে। নভোথিয়েটারের আধুনিকায়ন ও এর আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে নতুন কোনো উদ্যোগ আছে কি না জানতে চাইলে আরশাদ হোসাইন বলেন, ‘বিদ্যমান প্রদর্শনী ব্যবস্থা উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের লক্ষ্যে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও ডিজিটাল প্রদর্শনী বস্তু সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নভোথিয়েটারে শো শুরুর আগে প্রদর্শনের জন্য বঙ্গবন্ধুর জীবন সংগ্রামের ওপর ৩০ মিনিট দৈর্ঘ্যরে একটি থ্রিডি ডিজিটাল ফিল্ম তৈরি করা হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রটি কেবল বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটারেই প্রচার করা হবে। এ ছাড়া লেজার শো প্রদর্শনের মাধ্যমে দর্শকদের বাড়তি বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’</div> <div> বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নভোথিয়েটারের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। অন্যান্য বিভাগীয় শহরেও এ ধরনের নভোথিয়েটার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে প্রতিষ্ঠানের জন্য জমিও দেখা হয়েছে।’</div>