এক বছর পর আগামীকাল আবার ৫ আগস্ট। গণ-অভ্যুত্থান ক্যালেন্ডারে দিনটি পরিচিত ‘৩৬শে জুলাই’ হিসেবে। এই দিন ঘোষিত হতে যাচ্ছে জাতির বহু প্রতীক্ষিত ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এ ছাড়া দিনভর রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে থাকছে নানা আয়োজন।
আর বিকেলের দিকে নাগরিকদের সামনে উন্মোচন করা হবে এই ঐতিহাসিক ‘ঘোষণাপত্র’। এমন আয়োজনে লোক জড়ো করতে সারা দেশ থেকে ঢাকার পথে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন বিনা ভাড়ায় দিচ্ছে সরকার।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণের জন্য এই বিশেষ ট্রেন পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীজুড়ে এরই মধ্যে বাড়ানো হয়েছে প্রস্তুতি।
আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পুরো অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য নেওয়া হয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়েও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রস্ততি রয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, ট্রেন পরিচালনার জন্য ইঞ্জিন হায়ার চার্জ, যাত্রীভাড়া ও অন্যান্য প্রযোজ্য খরচ মিটিয়ে পুরো ট্রেন দেওয়ার বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হবে। বিভিন্ন রুট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা ট্রেনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম, জয়দেবপুর-ঢাকা-জয়দেবপুর, নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী-ঢাকা-নরসিংদী, সিলেট-ঢাকা-সিলেট, রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী, রংপুর-ঢাকা-রংপুর ও ভাঙ্গা-ঢাকা-ভাঙ্গা রুটের ট্রেনের আদায়যোগ্য ভাড়া হচ্ছে ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৯ টাকা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ট্রেনগুলো বরাদ্দ নিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
জানা গেছে, এর আগে জামায়াতে ইসলামীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ব্যবহারে প্রায় ৩২ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। একইভাবে গতকাল রবিবার শাহবাগে ছাত্রদলের এক কর্মসূচিতে অংশ নিতে চট্টগ্রাম থেকে ২০ বগির একটি বিশেষ ট্রেন ভাড়া করা হয়েছে, যার ব্যয় প্রায় ১০ লাখ টাকা।
জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠ ঘিরে ব্যাপক আয়োজন : গণ-অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট দেশজুড়ে রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যায়। ইতিহাসের পৃষ্ঠায় যুক্ত হয় একটি নতুন অধ্যায়, আর ‘৩৬শে জুলাই’ হয়ে ওঠে স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিন।
এ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার। আজ বিকেল ৫টায় ঘোষণা হবে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’। এ ছাড়া গান ও বিশেষ ড্রোন ড্রামাসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়। গতকাল রবিবার সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ আয়োজনের বিস্তারিত অনুষ্ঠানসূচি প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সহযোগিতায় এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করা হবে।
মানিক মিয়া এভিনিউতে ‘৩৬শে জুলাই’ উদযাপন ছাড়াও দেশের ৬৪ জেলায় সকাল ৯টায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। পাশাপাশি দেশের প্রতিটি ধর্মীয় উপাসনালয়ে মোনাজাত ও প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ‘বিজয় মিছিল’ নিয়ে ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউতে এসে সম্মিলিত হবে।
সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মানিক মিয়া এভিনিউতে অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল ১১টায়। অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন দেশবরেণ্য শিল্পী ও শিল্পীগোষ্ঠী সাইমুম ও কলরব শিল্পীগোষ্ঠী, জনপ্রিয় শিল্পী নাহিদ, তাশফিক, সায়ান, ইথুন বাবু ও মৌসুমী। পাশাপাশি থাকবে তরুণদের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘চিটাগং হিপহপ হড’ এবং ক্লাসিক ব্যান্ড ‘সোলস’, ‘ওয়ারফেজ’ ও ‘আর্টসেল’। অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে থাকবে ‘ফ্যাসিস্টের পলায়ন উদযাপন’ এবং ব্যতিক্রমী নাটক ‘ডু ইউ মিস মি’। রাত সাড়ে ৮টায় আর্টসেলের পরিবেশনার মাধ্যমে পর্দা নামবে উত্সবের।
এ বিষয়ে গতকাল রবিবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক বার্তায় বলা হয়, ৩৬শে জুলাই—গত বছর এই দিনে পৃথিবী দেখেছিল এক অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান। ফ্যাসিস্ট শাসনের পতন ঘটেছিল এই দিনে। বহু শহীদের রক্ত আর অকুতোভয় যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ এক হয়েছিল। পথে পথে ছিল উল্লাসমুখর জনতার ঢল। সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতায় মুখর ছিল দেশবাসী।
দিনটির তাত্পর্য তুলে ধরে বার্তায় আরো বলা হয়, এই দিনটি আমাদের ইতিহাস, আমাদের গৌরব। ৫ আগস্ট মানিক মিয়া এভিনিউয়ে অনুষ্ঠেয় এই আয়োজনে অংশ নিতে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে পরিবার-পরিজনসহ উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানানো হয় বার্তায়।