‘মবে’র কবলে সাবেক সিইসি নুরুল হুদা, পরে গ্রেপ্তার

  • রাতে সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়ালকে ধরতে অভিযান
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘মবে’র কবলে সাবেক সিইসি নুরুল হুদা, পরে গ্রেপ্তার

সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রবিবার বিকেলে উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টর এলাকায় নিজ বাসা থেকে কে এম নুরুল হুদাকে আটক করে পরে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পুলিশ বলছে, কিছু লোক তাঁর বাসায় গিয়ে মব সৃষ্টি করে। পরে পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে আসে।

অন্যদিকে গতকাল রাতে সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও গ্রেপ্তার করতে রাজধানীর বারিধারা এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে রাত ১টার দিকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা রাতে বারিধারা এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক এমডি মনিরুল মওলাকে গ্রেপ্তার করেছি।

এর আগে রাত ৮টার দিকে নাসিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কে এম নুরুল হুদাকে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়।

সোমবার (আজ) সকালে তাঁকে শেরেবাংলানগর থানায় হস্তান্তর এবং সেখান থেকে আদালতে নেওয়া হতে পারে।

এর আগে গতকাল দুপুরে শেরেবাংলানগর থানায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দায়িত্বে থাকা তিন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করে বিএনপি। এর কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় উত্তরায় কে এম নুরুল হুদার বাসায় কিছু লোক উপস্থিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাতে থাকে।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/06.June/23-06-2025/kalerkantho-lt-6a.jpg

কে এম নুরুল হুদাকে আটকের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

তাতে দেখা যায়, একদল লোক মব সৃষ্টি করে ডিম ছুড়ে মারা, গলায় জুতার মালা পরানোসহ তাঁকে নানাভাবে হেনস্তা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।

কে এম নুরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটের আগের রাতে ব্যালট বাক্স ভরে রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সময় টিআইবির গবেষণায় ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য উঠে আসে।

 

মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে : সরকার

মব সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে সরকার।

গতকাল রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় উত্তরা থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এ সময় মব কর্তৃক সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে।

বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়,  অভিযুক্ত সব ব্যক্তির বিচার দেশের আইন মেনে হবে এবং বিচারাধীন বিষয় ও ব্যক্তির ব্যাপারে আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অভিযুক্ত ব্যক্তির ওপর আক্রমণ ও তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা বেআইনি, আইনের শাসনের পরিপন্থী ও ফৌজদারি অপরাধ। মব সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

গভীর রাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গভীর রাতে হাসপাতালে খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়া

জরুরি ভিত্তিতে শারীরিক কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টা ১৮ মিনিটে তিনি গুলশানের বাসভবন ফিরোজা থেকে হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার শারীরিক কিছু জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তাঁকে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, হার্ট, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছেন। গত ২৩ জুন তাঁর সফল অস্ত্রোপচার হয়।

২০২১ সালের নভেম্বরে খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বারবার আবেদন জানালেও শেখ হাসিনার সরকার তা আমলে নেয়নি।

রাতে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে রাখা হবে কি না, এমন প্রশ্নে শায়রুল কবির বলেন, আশা করছি, জরুরি পরীক্ষা শেষে তিনি আবার বাসায় ফিরে আসবেন।

মন্তব্য
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা

নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস নিষেধ

    পুরুষদের জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে যৌন হয়রানির অভিযোগ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে নির্ধারিত কমিটির কাছে পাঠাতে হবে নির্দেশনা না মানলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
নারী কর্মীদের ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক, লেগিংস নিষেধ

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কী ধরনের পোশাক পরতে হবে, তা ঠিক করে দিয়েছে। নারীদের জন্য শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না এবং অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক পরার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস অর্থাৎ ছোট হাতা ও ছোট দৈর্ঘ্যের পোশাক এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। নির্দেশনায় ফরমাল স্যান্ডেল বা জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ বা হিজাব পরতে বলা হয়েছে।

গত ২১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২ এ নির্দেশনা দিয়েছে। নির্দেশনায় পুরুষদের পোশাকের ক্ষেত্রে লম্বা হাতা বা হাফ হাতার ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) শার্ট ও ফরমাল প্যান্ট পরতে বলা হয়েছে। জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে। পরতে হবে ফরমাল জুতা।

নির্দেশনা না মানলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাংকে নবীন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ছে, যাঁদের অনেকে এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশের ধারাবাহিকতায় চলাফেরা করছেন। অফিসে এক ধরনের পেশাদার সাম্য ও ঐক্য নিশ্চিত করতেই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শালীন পোশাক যেকোনো প্রতিষ্ঠানের নারী-পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক।

নারীদের ক্ষেত্রে শর্ট স্লিভ ও লেংথের ড্রেস এবং লেগিংস পরিহার করতে বলা হয়েছে। তবে কাউকে হিজাব পরতে বাধ্য করা হয়নি। যাঁরা পরবেন তাঁদের সাদামাটা রঙের হিজাব পরতে হবে।

আরিফ হোসেন খান আরো বলেন, কারো ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ নয়, বরং অফিস-সংস্কৃতিতে শৃঙ্খলা আনতেই এই সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিগত পরিসরে কে কী পোশাক পরবেন, সেটা একান্তই তাঁদের বিষয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর (বেনিফিটস অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন উইং) একটি বিভাগীয় মাসিক সভার এজেন্ডা ও কার্যবিবরণীতে নিয়মিত অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেসব সিদ্ধান্তের একটি ছিল পোশাক নিয়ে। গৃহীত সিদ্ধান্তের ১১(ঘ) নম্বরে বলা হয়, বাংলাদেশ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের (সি ও ডি শ্রেণিভুক্ত কর্মচারীর নির্ধারিত পোশাক ব্যতীত) সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় পেশাদার ও মার্জিত পোশাক পরিধান করতে হবে। যেমনপুরুষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে ফরমাল শার্ট লম্বা হাতা বা হাফ হাতা, ফরমাল প্যান্ট (জিন্স বা গ্যাবার্ডিন প্যান্ট পরিহার করতে হবে) এবং ফরমাল জুতা। মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ ও ওড়না, অন্যান্য পেশাদার শালীন পোশাক অবশ্যই সাদামাটা এবং পেশাদার রঙের হতে হবে (শর্ট স্লিভ ও লেন্থের ড্রেস, লেগিংস পরিহার করতে হবে) ও ফরমাল স্যান্ডেল-জুতা, সাদামাটা হেডস্কার্ফ-হিজাব।

১১ ক্রমিক নম্বরে আরো তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। ১১(ক) নম্বরে নারী কর্মীদের প্রতি আচরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক স্টাফ রেগুলেশন ২০০৩-এর ৩৯ ধারায় বর্ণিত নির্দেশনা মেনে চলতে বলা হয়েছে। যৌন হয়রানিসংক্রান্ত অভিযোগগুলো ঘটনা ঘটার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে মানবসম্পদ বিভাগ-১-এর নির্দিষ্ট পরিপত্রের মাধ্যমে গঠিত কমিটির কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

১১(খ) নম্বরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের বিষয়ে মানবসম্পদ বিভাগ-২-এর অফিস নির্দেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

১১(গ) নম্বরে ইতিবাচক কর্মপরিবেশ তৈরির জন্য দাপ্তরিক শিষ্টাচার ও আচরণবিধি তথা সততা, নৈতিকতা, সময়ানুবর্তিতা, শৃঙ্খলাবোধ, অর্পিত দায়িত্ব-কর্তব্য পালনে নিষ্ঠা ইত্যাদি, সহকর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ ও আন্তরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক (পারস্পরিক সম্মান, সৌজন্যবোধ, সহযোগিতামূলক মনোভাব ইত্যাদি) মেনে চলতে বলা হয়েছে।

গৃহীত সিদ্ধান্তের ১২ নম্বরে বলা হয়েছে, ১১ নম্বর ক্রমিকে দেওয়া নির্দেশনা পরিপালনের জন্য অফিস, বিভাগ, প্রকল্প, সেল, ইউনিটভিত্তিক পর্যবেক্ষণের জন্য একজন কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দিতে হবে। ওই নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি করবেন মনোনীত কর্মকর্তা। এর ব্যত্যয় হলে বিভাগীয় প্রধানকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে নির্দেশনা ও শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়ে অভিযোগ পাঠাবেন।

 

মন্তব্য

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত

শেয়ার
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত
রাজধানীর মাণ্ডা এলাকার ছোট শিশু সাফিন হাসান ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে। শ্বাসকষ্ট হওয়ায় তাকে নেবুলাইজার দেওয়া হচ্ছে। গতকাল তোলা। ছবি : মোহাম্মদ আসাদ
মন্তব্য
ফিরে দেখা ২৪ জুলাই ২০২৪

কারফিউ ৭ ঘণ্টা শিথিল, চিরুনি অভিযান গ্রেপ্তার ১৪০০

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কারফিউ ৭ ঘণ্টা  শিথিল, চিরুনি অভিযান গ্রেপ্তার ১৪০০

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ব্যাপক সহিংসতা ও প্রাণহানির জেরে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাত ১২টায় সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। দুই দিন পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসে। এতে করে কারফিউ শিথিলের সময়ও প্রতিদিন একটু একটু করে বাড়ানো হচ্ছিল। ১৯ জুলাই কারফিউ জারির পর ২৪ জুলাই প্রথমবারের মতো টানা সাত ঘণ্টা কারফিউ শিথিল করা হয়।

এদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রাজধানীতে কারফিউ শিথিল ছিল।

দিনের বেশির ভাগ সময় কারফিউ শিথিল থাকায় এবং অফিস খোলায় এদিন নগরবাসীর জীবনে অনেকটা স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও টানা কয়েক ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। টানা পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর এদিন সচিবালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা ছিল।

ব্যাংকগুলোতে ছিল গ্রাহকদের ভিড়। উৎপাদনে ফেরে শিল্প-কারখানাগুলো। চলেছে দূরপাল্লার বাস। তবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল এদিনও বন্ধ ছিল।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) বলছে, সহিংসতায় নতুন করে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে আহত হয়ে এদিন চিকিৎসাধীন আরো চারজনের মৃত্যু হয়। ২৪ জুলাই সারা দেশে চিরুনি অভিযানে আন্দোলনকারীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রায় এক হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় গ্রেপ্তার হয় ৬৪১ জন। এ নিয়ে ১৭ থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত আট দিনে সারা দেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে চার হাজার। গ্রেপ্তারদের বেশির ভাগই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ পাওয়া যায় এদিন। নিখোঁজ হওয়ার পাঁচ দিন পর আসিফ ও বাকেরকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ফেলে যাওয়া হয় বলে দুজনই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জানান। কোটা সংস্কার আন্দোলনে ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ ছয়জন নিহতের ঘটনা তদন্তে ২৪ জুলাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে ১৬ জুলাই সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জানতে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনগণের কাছে তথ্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তদন্ত কমিটি।

রাজধানীসহ সারা দেশের পরিস্থিতি : কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি এদিন অনেকটা স্বাভাবিক ছিল। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়কের মোড়ে মোড়ে ছিল পুলিশের চেকপোস্ট। বিকেল ৫টার পর আবারও কারফিউ শুরু হলে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নেয় সড়কের। এদিন দেশে সহিংসতায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। টানা পাঁচ দিন পর এদিন চার ঘণ্টার জন্য সচিবালয় খোলা হলেও সচিবালয়ে প্রবেশে ব্যাপক তল্লাশি করা হয়। অন্য সময়ের তুলনায় নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল জোরদার। সচিবালয়ের সামনে সেনা সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। প্রবেশপথে ছিল বাড়তি পুলিশ।

টানা তিন দিন পর ব্যাংক খোলায় টাকা তোলার চাপ বাড়ে রাজধানীর ব্যাংকগুলোতে। এটিএম বুথে ভিড় ছিল অন্য দিনের তুলনায় বেশি। সকাল ১১টা থেকে লেনদেন শুরু হয়ে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলে। এ সময় ব্যাংকগুলোতে সীমিত পরিসরে সেবা দেওয়া হয়। বেশির ভাগ ব্যাংকে অর্থ লেনদেন ছাড়া অন্য কোনো কার্যক্রম তেমন হয়নি।

এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও নৃশংসতার কথা উল্লেখ করে বলেন, আশঙ্কা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসবে। সমৃদ্ধির পথে দেশের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে বিএনপি-জামায়াত জোট এ ধরনের হামলা করতে পারে।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার যত দিন চাইবে, সেনাবাহিনী তত দিন বেসামরিক প্রশাসনের সহযোগিতায় দায়িত্ব পালন করবে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ প্রসঙ্গে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, একটি অচল অবস্থা তৈরির জন্য স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-বিএনপি শক্তি ও জঙ্গিরা একত্র হয়ে এ ঘটনাগুলো একের পর এক ঘটিয়েছে। আমরা কোনো সময়ই দেখিনি থানা ভবন আক্রমণ করতে, কারাগার আক্রমণ করতে।

পরদিন থেকে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা : পরদিন ২৫ জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে ট্রেন চলাচলের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। তবে শুরুতে আন্তনগর ট্রেন চালানো হবে না বলে জানায় কর্তৃপক্ষ। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত স্বল্প দূরত্বের লোকাল-কমিউটার ট্রেন চলবে বলে জানায় রেলওয়ে।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ