মায়ানমারের রোহিঙ্গা সংখ্যাগরিষ্ঠ আরাকান অঞ্চলে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল রবিবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে দলটির পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এর আগে সকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমানের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইইউর পর্যবেক্ষক পাঠানো এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
ঢাকায় চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে দলটি বলেছে, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পথ হিসেবে স্বাধীন আরাকান রাষ্ট্রের প্রস্তাবটি তুলে ধরা হয়েছে।
জামায়াতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দলটির নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তাদের মায়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, তাই একটি আন্তর্জাতিক প্রত্যাবাসন কমিটির মাধ্যমেই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।’
চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা প্রস্তাবটি গুরুত্বসহ সরকারের কাছে তুলে ধরবে এবং বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেবে।
ডা. তাহের বলেন, ‘আমরা চীন সরকারের আমন্ত্রণে গত ডিসেম্বরে সে দেশ সফর করেছি। তখনকার আলোচনার ধারাবাহিকতায় এই রাজনৈতিক সংলাপটি হয়েছে।
’
জামায়াত জানিয়েছে, দলটি একটি উদার, অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সব পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী।
বৈঠকে বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ আরো বাড়ানো, বিশেষ করে তিস্তা ব্যারাজ, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু, গভীর সমুদ্রবন্দর ও ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়। চীনের কাছে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণ জানানো এবং কয়েকটি চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করে দলটি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে চীনের প্রতিনিধিরা জানতে চাইলে জামায়াত জানায়, ‘অল্প সংস্কার হলে ডিসেম্বরেই, আর ব্যাপক সংস্কার হলে আগামী বছরের জুনে নির্বাচন হতে পারে।’
চীনা প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, তারা অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না, তবে বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে চায়।
বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও ‘ব্যালেন্স অব সিকিউরিটি’ নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জামায়াত চীনের শিক্ষাবৃত্তি কর্মসূচি আরো সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেয়, যেটি নিয়ে চীন ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়।
এর আগে সকালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা। সেখানে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পরে সংবাদ সম্মেলনে দলের নায়েবে আমির ডা. তাহের বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুরোধ করেছি, যাতে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রতিনিধিদল পাঠায় এবং প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনে সহযোগিতা করে।’
ডা. তাহের বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য এবং একই ব্যক্তির দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার প্রস্তাব তাদের জানিয়েছি।’
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে যৌনকর্মীদের লাইসেন্স প্রদানের বিরোধিতা করে জামায়াত জানায়, এটি নারীর মর্যাদায় আঘাত। তবে জামায়াতের ৪৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণের বিষয়টিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিবাচক হিসেবে দেখেছে বলেও জানায় দলটি।
আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘সম্প্রতি জামায়াত আমিরসহ আমরা ব্রাসেলস সফর করেছি। সেখানে বেলজিয়াম সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের একাধিক বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের পারস্পরিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, উন্নয়ন-অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’
বৈঠকে দলের আমির ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান।