ঢাকা, মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫
৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৯ মহররম ১৪৪৭
আবারও আলোচনায় মঈনুল রোডের সেই বাড়ি

হাসিনার হিংসায় যেভাবে নিশ্চিহ্ন শহীদ জিয়ার স্মৃতিনিবাস

কাজী হাফিজ
কাজী হাফিজ
শেয়ার
হাসিনার হিংসায় যেভাবে নিশ্চিহ্ন শহীদ জিয়ার স্মৃতিনিবাস
ঢাকা সেনানিবাসের মঈনুল রোডে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতিধন্য খালেদা জিয়ার বাড়ি ভেঙে সেখানে বানানো হয়েছে বহুতল ভবন। ছবি : সংগৃহীত

আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই তো এই ক্যান্টনমেন্ট! আমি এই ক্যান্টনমেন্টে ঢুকলে আমার বিরুদ্ধে মামলা! সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ওই ক্যান্টনমেন্টে আর বসবাস করা লাগবে না। যেদিন সুযোগ পাব বের করে দেব। বের করে দিয়েছি।

হাসিনার প্রতিহিংসায় যেভাবে নিশ্চিহ্ন শহীদ জিয়ার স্মৃতিনিবাসগত বছর ২ অক্টোবর ব্রিটেনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা খালেদা জিয়াকে ঢাকা সেনানিবাসের শহীদ মঈনুল রোডের বাসভবন থেকে উচ্ছেদ প্রসঙ্গে এই স্বীকারোক্তি করেছিলেন; যদিও ক্যান্টনমেন্টের ওই ঘটনার চার বছর আগে ২০০০ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় তিনি ওই ভবন থেকে জিয়া পরিবারকে উচ্ছেদের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

২০০৯ সালের এপ্রিল মাসেও শেখ হাসিনা সংসদে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে বাড়িটি ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। জানিয়েছিলেন, বাড়িটি ছেড়ে দিলে সেখানে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে শহীদ সেনা পরিবারগুলোর পুনর্বাসন করা হবে। পরিবারপ্রতি দুটি ফ্ল্যাট দেওয়া হবে। একটি ওই পরিবারটির আবাসনের জন্য, অন্যটি ভাড়া দিয়ে তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য দেওয়া হবে।

গত বছরের প্রতিজ্ঞা ছিল, বের করে দিয়েছি’—এই স্বীকারোক্তির সময় এবং এখনো অনেকের মন্তব্য, এতে আবারও প্রমাণ হয় আইন লঙ্ঘন, আদালতের রায়এসব অজুুহাত মাত্র। স্বৈরাচার হাসিনার প্রতিহিংসার কারণেই ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে চরম অপমান করে ৩৮ বছরের স্মৃতিবিজড়িত নিজ বাসভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। সেই অমানবিক ঘটনায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি তিনি স্বাধীনতার ঘোষক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর-উত্তমের সহধর্মিণী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, দুইবারের বিরোধীদলীয় নেতা এবং দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন। বিবেচনায় নেওয়া হয়নি তার সন্তান-সন্ততির জন্ম ও বেড়ে ওঠার নানা দুর্লভ স্মৃতি ছড়িয়ে রয়েছে ওই ভবনেই।

এই মানবিক বোধও জাগেনি যে শরীরে ওয়ান-ইলেভেন-এর নিষ্ঠুর নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে খালেদা জিয়ার দুই সন্তানই দেশছাড়া, বিদেশে চিকিৎসাধীন। তার বিপরীতে দেশবাসীকে টেলিভিশনের পর্দায় সেদিন প্রায় নিঃসঙ্গ খালেদা জিয়ার কান্না দেখতে হয়। আমাকে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে’—এই অসহায়ত্বের কথা শুনতে হয়। উচ্ছেদের পরপরই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় শহীদ জিয়ার স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ভবনটিকে। সে সময় বিতর্কিত প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের কাছেও খালেদা জিয়া সুবিচার পাননি।
জিয়া এবং তার পরিবারের নাম-নিশানা নিশ্চিহ্ন করতে তড়িঘড়ি করে সেখানে গড়ে তোলা হয় সেনা কর্মকর্তাদের জন্য একাধিক বহুতল আবাসিক ভবন।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের মতে, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো ফাংশনাল ছিল না। বিচার বিভাগও এর বাইরে ছিল না। উচ্চ আদালত হচ্ছে সাধারণ মানুষের শেষ ভরসাস্থল। কিন্তু শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতারা বক্তৃতা-বিবৃতিতে যা বলতেন, উচ্চ আদালতে তারই প্রতিফলন ঘটত। খালদো জিয়াকে তার মঈনুল রোডের বাড়ি থেকে উচ্ছদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। ওই ঘটনায় শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা অমানবিক, অন্যায়।

সেই ১৩ নভেম্বর এবং শেখ হাসিনার ওই স্বীকারোক্তি আবারও আলোচনায় গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতির কারণে। ওই অনুষ্ঠানে তিনিই ছিলেন মধ্যমণি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বলেন, খালেদা জিয়া আজ এখানে আমাদের মধ্যে উপস্থিত আছেন। এক যুগ ধরে তিনি এই মহাসম্মিলনীতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পাননি। আজ সুযোগ পেয়েছেন। আমরা সবাই আনন্দিত ও গর্বিত যে এই সুযোগ দিতে পেরেছি আপনাকে। এর পর থেকেই বিএনপি নেতাদের দাবি, মঈনুল রোডের বাড়িটি খালেদা জিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।

শেখ হাসিনার বক্তব্য ও বাস্তবতা : গত বছর ২ অক্টোবর স্বীকারোক্তির সময় শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের কারণে যে মামলার কথা বলেছিলেন সেটি ঘটেছিল ২০০৪ সালে। সে সময় একুশে বইমেলা থেকে বাসায় ফেরার পথে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের ফুটপাতে সন্ত্রাসী হামলায় মারাত্মক আহত হন লেখক ও ভাষাবিদ অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। তাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হলে শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সেখানে দেখতে যান। শেখ হাসিনার অভিযোগ ছিল, সেনানিবাসের প্রবেশপথে তার গাড়ি আটকে দেওয়া হলে তিনি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে হেঁটে সিএমএইচে পৌঁছেন। অন্যদিকে সে সময় আইএসপিআর জানিয়েছিল, তিনি সেনানিবাসের নিয়ম-শৃঙ্খলা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক শোডাউন করেছেন। এ বিষয়ে ব্রিটেনের ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তব্য ছিল, নামলাম, নেমেই হাঁটা শুরু করলাম। আমি যখন হাঁটতে শুরু করেছি তখন অনেক লোক জমা হয়ে গেছে। চার কিলোমিটার হেঁটে আমি সিএমএইচে গেলাম। ক্যান্টনমেন্টের রাস্তায় হাঁটলাম কেন? আমার সঙ্গে যারা ছিল সবার বিরুদ্ধে মামলা দিল।

১৩ নভেম্বর যা ঘটেছিল : ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়াকে তার ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করা হয়। ফজরের নামাজের আগে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজন মঈনুল রোডের ওই বাড়ি ঘিরে অবস্থান নেন। সকালে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার আরো লোকজন। জাহাঙ্গীর গেটসহ সেনানিবাসে প্রবেশমুখের রাস্তায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। সকাল ৮টার দিকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর লোকজন বাবুর্চিসহ খালেদা জিয়ার বাসায় যারা কাজ করতেন তাদের এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনকে বের করে দেন। সকাল ১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পুলিশ ও র‌্যাব বাড়ির প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় বাড়ির ভেতর ও বাইরে থেকে মাইকে খালেদা জিয়াকে বের হয়ে আসতে বলা হয়। খালেদা জিয়া তখন আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু উচ্ছেদকারীরা তাকে সেই সুযোগ না দিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসতে তাগিদ দেন। খালেদা জিয়া তাদের কথামতো বের হতে না চাইলে পুলিশ তার রুমের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এরপর ইচ্ছার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়াকে বাইরে বের করে এনে গাড়িতে তোলে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন সে সময়ের আর্মি সিকিউরিটি ইউনিটের কর্মকর্তা মেজর মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি ওই উচ্ছেদ অভিযানের ভিডিও ধারণ করেন। মুস্তাফিজুর রহমান পরে লে. কর্নেল পদে থেকে অবসর নেন এবং বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী। গত রবিবার তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি আমার ইউনিটের চারজন সৈনিক নিয়ে সেখানে উপস্থিত ছিলাম। সেদিন সরকার প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করেছি। দায়িত্বটা ছিল স্পর্শকাতর ওই উচ্ছেদ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করে আমার অধিনায়ক ও ডিরেক্টর মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সকে তাত্ক্ষণিকভাবে জানানো। আমি নিজে সেদিন উচ্ছেদ কার্যক্রমের ভিডিও ধারণ করি। সেখানে আরো দুটি ভিডিও ক্যামেরা সচল ছিল। ডিজিএফআইয়ের চার-পাঁচজন কর্মকর্তা ছিলেন। র‌্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে জিয়াউল আহসানও [সম্প্রতি চাকরিচ্যুত ও কারাবন্দি মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান] এসেছিলেন তার ব্রেক ইন ডিটাচমেন্ট নিয়ে। এই ব্রেক ইন ডিটাচমেন্টের কাজ হচ্ছে হাই পাওয়ার হ্যাকস প্লাইয়ার্স দিয়ে তালা বা গ্রিল কেটে বাসাবাড়িতে ঢোকা। হ্যাকস প্লাইয়ার্স দিয়েই প্রবেশপথের দরজা খোলা হয়।

লে. কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, দুই সপ্তাহ আগেই শেখ হাসিনার নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে দেওয়ার জন্য একটা প্ল্যান লে-আউট হয় বলে জেনেছিলাম। প্ল্যানটি ছিল খালেদা জিয়াকে উচ্ছদ করার পর ওই ভবনের নাম-নিশানা মুছে দিতে সেনা কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য দ্রুত কয়েকটি ভবন তৈরি করার। কিন্তু যেহেতু বাড়িটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত, সে কারণে পাবলিক সেন্টিমেন্ট নিয়ন্ত্রণ করতে প্রচার করা হয়, ওই জায়গায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারগুলোর বাসস্থান নির্মাণ করা হবে।

১৩ নভেম্বরের ঘটনায় লে. কর্নেল (অব.) মুস্তাফিজুর রহমানের ধারণ করা কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ তিনি ই-মেইলে এই প্রতিবেদকের কাছে পাঠান। এসব ভিডিও ক্লিপের একাংশ এবং মুস্তাফিজুর রহমানের বক্তব্য এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, একজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা দরজা ভাঙার বিষয়ে খালেদা জিয়াকে বলছেন, আপনাকে অনেকক্ষণ বলা হয়েছে, আপনাকে আসতে হবে। আপনি সহযোগিতা করেন নাই। এ জন্য বাধ্য হতে হয়েছে। এ ছাড়া ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, পুরো দরজা ভাঙা হয়নি। দরজা রিপেয়ার করে দেব।

মুস্তাফিজুর রহমান জানান, ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তার নাম তিনি এখন মনে করতে পারছেন না। তবে তিনি ছিলেন তিনটি স্টার (ফোর পয়েন্টেড স্টার) ব্যাজ ধারণকারী একজন কর্মকর্তা।

তিনি আরো জানান, উচ্ছেদের পরের দিন সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়ার সম্মানহানির উদ্দেশ্যে তার ফ্রিজে ও বিছানায় আপত্তিকর কিছু রেখে দেওয়া হয়। ডিজিএফআইয়ের মেজর পদবির একজন কর্মকর্তা এই কাজটি করেন। তবে তিনি নিশ্চয় তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ ছাড়া এই জঘন্য কাজটি করেননি।

ভিডিও ক্লিপে সাদা পোশাকে কয়েকজন পুরুষকেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে তর্ক করতে দেখা যায়। এদের একজন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের এক্সিকিউটিভ অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুুছ সাদাত সেলিম। খালেদা জিয়া তাদের বলছিলেন, আপিল বিভাগ ২৯ তারিখ (২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর) ডেট দিয়েছে। শুনানির সে সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অন্য পক্ষের বক্তব্য, হাইকোর্টের আদেশের ওপর আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ দেননি। সে কারণে অপেক্ষা করব না। এ সময় একজন বলেন, ধরে নিয়ে আয়।

ভিডিও ক্লিপে আরো দেখা যায় খালেদা জিয়াকে বাইরে বের করে আনা হলে তিনি অসহায়ভাবে বহুদিনের ওই স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটির দিকে চেয়ে দেখছিলেন।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে খালেদা জিয়ার তৎকালীন সহকারী একান্ত সচিব ড. মো. সুরুতুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, খবর পেয়ে আমি সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যেতে দেওয়া হয়নি।

খালেদা জিয়ার কান্না : উচ্ছেদের দিন সন্ধ্যায় গুলশানে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়া তাকে জোর করে, এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, সরকার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে আমাকে আমার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করেছে। যেভাবে আমাকে অপমান করা হয়েছে, তাতে আমি অপমানিত, লাঞ্ছিত, লজ্জিত বোধ করছি। প্রথমে আমার বাড়ির গেটের নেট কাটা হয়। এরপর তালা ভাঙা হয়। এরপর আমার স্টাডি রুমে ঢুকে জিনিসপত্র টানাটানি শুরু করে। আমার বেডরুমের দিকে যেতে চাইলে কাজের লোকজন বাধা দেয়। এর পরও তারা জোর করে আমার বেডরুমে ঢোকে। আমি প্রথমে চেয়ারে বসা ছিলাম। আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য উঠতে বলা হয়। আমি উঠতে চাইনি। এ সময় কেউ কেউ বলেছে, প্রয়োজনে কোলে উঠিয়ে নিয়ে আসো। তারা আমাকে জোর করে চেয়ার থেকে টেনে উঠিয়ে ধাক্কা দিয়ে গাড়িতে উঠিয়েছে।

খালেদা জিয়া বলেন, আমি এর বিচার কার কাছে চাইব? বিচারের ভার আল্লাহ তাআলা ও দেশবাসীর কাছে দিলাম। আমি সারা দিন কিছু খেতে পারিনি। তারা প্রচারণা করছে, আমি নিজের ইচ্ছায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমি নিজে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসিনি। তারা আমাকে জোর করে উচ্ছেদ করেছে। আমার জিনিসপত্র টানতে টানতে নিয়ে এসেছে। কাজের লোকদের ধরে নিয়ে গেছে। তারা আমাকে নিয়ে আসতে চাইলে আমি বলেছি, আইনজীবীদের ছাড়া আমি কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। তখন তারা বলেছে, কাউকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমার পরিবারের সদস্যদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।

খালেদা জিয়া ওই দিন আরো বলেন, আমি এ বাড়িতে ৪০ বছর ধরে বসবাস করছি। জীবনের অনেক স্মৃতি এই বাড়ির সঙ্গে জড়িত। জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে সেই স্মৃতিগুলোর সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিন্ন করা হলো। সরকার প্রথমে অহেতুক বাড়িটি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে। পরে বেআইনিভাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাড়ির বিরুদ্ধে রায় দেয়। আমি উচ্চ আদালতে আপিল করি। একটি মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নজির কোথাও নেই। এতে করে আদালতের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে।

উচ্ছেদ নিয়ে মিথ্যাচার : খালেদা জিয়ার প্রেস ব্রিফিংয়ের আগে সন্ধ্যায় আইএসপিআরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন স্বেচ্ছায় তার সেনানিবাসের বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে বেগম খালেদা জিয়া মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা রেখে ৬ শহীদ মঈনুল রোডের বাড়ি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়ে আদালতের রায় বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেছেন। আওয়ামী লীগের পক্ষেও সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়, স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে অভিনন্দন।

খালেদা জিয়ার প্রেস ব্রিফিংয়ের পর আরেক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইএসপিআর বলে, তিনি বাসা ছেড়ে দিতে অহেতুক কালক্ষেপণ করেন। এই অবস্থায় দুজন মহিলা পুলিশ সদস্য তার রুমের জানালায় টোকা দিলে তিনি উত্তেজিত আচরণ করেন। বেগম খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছেন বলেও আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়। এর জবাবে বিএনপি ও সাবেক সেনা কর্মকর্তদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘটনার সময় আইএসপিআরের কোনো সদস্যই সেখানে ছিলেন না, সেনা সদস্যরাও ছিলেন না। আইএসপিআরকে দিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তার দায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ওপরই বর্তাবে।

বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব যে কারণে : ঢাকা সেনানিবাসের ৬ শহীদ মঈনুল রোডের বাড়িটি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত স্থান হিসেবেই পরিচিত। এ বাড়িটি নিয়ে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত অনুভূতিও গভীর আবেগের। ১৯৭২ সালে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে এ বাড়িটিতে সপরিবারে বসবাস করতেন জিয়াউর রহমান। সেনাপ্রধান হওয়ার পর তিনি সেনাপ্রধানের নির্ধারিত বাসভবনে না উঠে এই বাড়িতেই থেকে যান। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ এ বাড়িতেই জিয়াউর রহমানকে সপরিবারে অন্তরিন করেন। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সিপাহি-জনতা তাকে মুক্ত করে। এরপর রাষ্ট্রপতি হওয়া থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শহীদ জিয়া এ বাড়িতেই থেকেছেন। এই বাড়িতেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার দুই পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের সন্তানদের শৈশব এখানেই শুরু হয়।

১৯৮১ সালের ৩০ মে বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তার হাতে চট্টগ্রামের সার্কিট হাউসে শাহাদাতবরণের পর ওই বছর জিয়াউর রহমানের পরিবারকে বরাদ্দ দেওয়া হয় বাড়িটি। তৎকালীন জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেয়।

৬ শহীদ মঈনুল রোডের বর্তমান অবস্থা : ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের তিন মাসের মধ্যেই শহীদ মঈনুল রোডের সেই তিনতলা বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ওই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি বাড়ির বদলে সেখানে দেখা যায় ফাঁকা মাঠ। পরের বছর ২৮ জুন সেখানে দেখা যায় বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে গেছে। ওই বছরের ১৭ নভেম্বর দেখা যায় একটি ১৪ তলা ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পথে। বর্তমানে শহীদ মঈনুল রোডের ওই এলাকায় স্থান করে নিয়েছে আরশি, পড়শি, গাগরি, বিহঙ্গ ও আগামী নামের পাঁচটি বহুতল ভবন। প্রতিটি ভবনে ৫২টি সেনা কর্মকর্তা পরিবারের বাস। আরশি ও পড়শি লে. কর্নেলদের জন্য। আর গাগরি, বিহঙ্গ ও আগামী মেজর পদবির সেনা কর্মকর্তাদের জন্য। এই পাঁচটি ভবন ছাড়াও সেখানে মসজিদ, প্লেগ্রাউন্ডএসব আনুষঙ্গিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

  হাসিনার প্রতিহিংসায় যেভাবে নিশ্চিহ্ন শহীদ জিয়ার স্মৃতিনিবাস

এই বাড়িতেই জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানরা বাস করতেন। ফাইল ছবি

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদ

সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগকর্মী

রাজধানীতে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মীদের অংশগ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শুরু হওয়া বিক্ষোভ মিছিল শাহবাগ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও মিটফোর্ড হাসপাতালে গিয়ে শেষ হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুপুর ১টার দিকে ধানমণ্ডির আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাবে উপস্থিত হয়ে ১০ মিনিট অবস্থান করেন। এরপর তাঁরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ হয়ে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান।

বিক্ষোভে তাঁদের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে দেখা যায়। স্লোগানে বলা হয়, চাঁদা লাগলে চাঁদা নে, আমার ভাইকে ফিরিয়ে দে, চাঁদাবাজদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না ইত্যাদি।

এ সময় হাসপাতাল ও আশপাশে থাকা বিএনপির ব্যানার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায় কয়েকজনকে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ব্যানার পদদলিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

এসব ঘটনার ভিডিও ধারণ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় ফ্যাসিস্ট আখ্যা দিয়ে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোকে বয়কটের ঘোষণাও দেয় তারা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার পর অনেকেই সাধারণ শিক্ষার্থীর ছদ্মবেশে রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। কেউ কেউ আবার বিএনপির প্ল্যাটফর্মে ঢুকে অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে।

সরকারকে বিব্রত করতে এবং বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এসব অপকৌশল।

রাজনৈতিক পরিচয় : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্ষোভের বেশ কিছু ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া আইডিয়াল কলেজ শিক্ষার্থী ইয়ামিনকে তাঁর সহপাঠীরা নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে চিহ্নিত করেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। আগেও তাঁকে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে।

একইভাবে মিছিলে অংশ নেওয়া মিজু নামে আরেক শিক্ষার্থী সাভারের বাসিন্দা এবং তিনিও ছাত্রলীগের কর্মী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

নেপথ্যে রাজনৈতিক হিসাব : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. দিলারা চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, এটি রাজনৈতিক দলগুলোর ভিত নষ্ট করার একটি অপচেষ্টা। এর ফলে আবারও ১/১১-এর মতো সংকট সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক দলে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ বাড়ছে। সোহাগ, যিনি আগে হাজি সেলিমের সঙ্গে ছিলেন, এখন বিএনপির কর্মী। বিএনপি যদি নিজেকে রক্ষা করতে চায়, তাহলে শুদ্ধি অভিযান চালাতে হবে।

এ বিষয়ে জানতে কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ ইয়াসিন শিকদারের মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

জানতে চাইলে ডিএমপি উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই মিছিলে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের উপস্থিতির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ যেকোনো দলের কার্যক্রম রুখে দিতে পুলিশ সব সময় প্রস্তুত রয়েছে। এর আগেও রাজধানীতে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে যারা ঝটিকা মিছিল করেছে, তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। এই বিষয়টিও আমরা খতিয়ে দেখব।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল কালের কণ্ঠকে বলেন, যারা গুপ্ত রাজনীতি করে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে চায় তারা জল ঘোলা করতে এমন কর্মকাণ্ড করছে। তারা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারমান তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তিমূলক ভিডিও করেছে। তাদের ব্যানার পদদলিত করে আগুন জ্বালিয়েছে। যারা স্বৈরাচারের আমলে তাদের লুঙ্গির নিচে ছিল, তারাই এখন ঘোলা জলে মাছ শিকার করা চেষ্টা করছে। জনগণের কাছে তাদের অবস্থান না থাকার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পেছনে থেকে গুপ্ত হামলা করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তে এসেছে ব্যাবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকে সোহাগ হত্যাকাণ্ড। এর পরও আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে শোক জানিয়েছি, এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। একই সঙ্গে দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবিও জানিয়েছি।

মন্তব্য
বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি : প্রেস উইং

১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
১০ মাসে ৩৫৫৪ খুন, ৪১০৫ ধর্ষণ

গত ১০ মাসে (২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত) দেশে তিন হাজার ৫৫৪ জন খুনের ঘটনা ঘটেছে। একই সময়ে ডাকাতি হয়েছে ৬১০টি, দস্যুতা এক হাজার ৫২৬টি, দাঙ্গা ৯৭টি, ধর্ষণ চার হাজার ১০৫টি, এসিড নিক্ষেপ পাঁচটি, নারী ও শিশু নির্যাতন ১২ হাজার ৭২৬টি, অপহরণ ৮১৯টি, সিঁধেল চুরি দুই হাজার ৩০৪টি, চুরি সাত হাজার ৩১০টি এবং এই সময়ে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা এক লাখ ৪৪ হাজার ৯৫৫টি।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে প্রকাশিত ১০ মাসের অপরাধ পরিসংখ্যানে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এসব পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশে বড় ধরনের সহিংস অপরাধের সংখ্যা বাড়েনি। 

অপরাধ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৭টি, খুন হয়েছে এক হাজার ৯৩৩টি এবং ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৭৪৪টি। এ সময় নারী নির্যাতন ছয় হাজার ১৪৪টি এবং শিশু নির্যাতনের দুই হাজার ১৫৯টি ঘটনা ঘটেছে।

এর আগের বছর ২০২৪ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪৯০টি, খুন চার হাজার ১১৪টি, ধর্ষণ চার হাজার ৩৯৪টি, নারী নির্যাতন ১০ হাজার ১৯৮টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯৬৪টি।

২০২৩ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩১৯টি, খুন তিন হাজার ২৩টি, ধর্ষণ পাঁচ হাজার ১৯১টি, নারী নির্যাতন ১১ হাজার ২৭টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৭১৩টি। ২০২২ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৪০৬টি, খুন তিন হাজার ১২৬টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩২টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৫১৮টি এবং শিশু নির্যাতন তিন হাজার ২০৫টি। ২০২১ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০৮টি, খুন তিন হাজার ২১৪টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৩৪১টি, নারী নির্যাতন ১২ হাজার ৮৫৫টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৯২৮টি। ২০২০ সালে ডাকাতি হয়েছিল ৩০২টি, খুন তিন হাজার ৫৩৯টি, ধর্ষণ ছয় হাজার ৫৫৫টি, নারী নির্যাতন ১৩ হাজার ৪৩১টি এবং শিশু নির্যাতন দুই হাজার ৫১৫টি।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, চলতি বছর দেশে অপরাধের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরে জনমনে আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত সরকারি অপরাধ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছর বড় ধরনের অপরাধের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছেএমন দাবি সঠিক নয়। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১০ মাসে বড় ধরনের অপরাধের প্রবণতা স্থিতিশীল রয়েছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিসংখ্যানে বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বাড়ার কোনো লক্ষণ নেই। বাস্তবে বেশির ভাগ গুরুতর অপরাধের হার কমছে বা একই পর্যায়ে রয়েছে।

তবে কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের ক্ষেত্রে সামান্য বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

প্রেস উইং নাগরিকদের প্রতি সতর্ক থাকার আহবান জানিয়ে বলেছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ওপর আস্থা রাখতে হবে। কারণ অপরাধের হার মোটামুটি স্থিতিশীল, যাতে বোঝা যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
মা-সন্তানসহ ৫ জেলায় সাতজনকে হত্যা

ময়মনসিংহের ভালুকায় দুই সন্তানসহ মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জে শিশুকে হত্যা করে ঘরে লুকিয়ে রেখেছে সত্মা। এ নিয়ে দেশের পাঁচ জেলায় সাতজনকে খুন করা হয়েছে। আর তিন জেলা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারজনের লাশ।

কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত :

ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পৌর এলাকার পনাশাইল রোডে এক ভাড়া বাসায় মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়। নিহতরা হলো নেত্রকোনার কেন্দুয়ার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ময়না বেগম (২৫), মেয়ে রাইসা (৭) ও ছেলে নীরব (২)।

স্থানীয় ও থানা সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলাম এখানে ভাড়া থেকে ভালুকায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। রবিবার রাত ৮টার সময় তিনি কর্মস্থলে যান এবং গতকাল সকালে ফিরে বাসার বারান্দার দরজা তালাবদ্ধ দেখেন।

দীর্ঘ সময় ডাকাডাকি করেও সাড়াশব্দ না পেয়ে অন্য একজনকে নিয়ে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে বিছানার ওপর স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলাকাটা লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

রফিকুলের ভাই নজরুল ইসলাম একই বাসায় পাশাপাশি কক্ষে থাকেন। নিজ এলাকার একটি হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামি নজরুল ভালুকায় অটো চালাতেন। ঘটনার পর থেকে তিনি নিরুদ্দেশ, তাঁর মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।

সিরাজগঞ্জ : কামারখন্দ উপজেলায় সাত বছর বয়সী এক কন্যাশিশুকে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ঘরে লুকিয়ে রেখে এক সত্মা পালিয়ে যান। রবিবার রাত ১০টার দিকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ওই রাতেই সত্মাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহত শিশু হাজেরা খাতুন উপজেলার কুটিরচর এলাকার হারুনার রশিদের মেয়ে। শিশুটির দাদি মনোয়ারা খাতুন জানান, রবিবার দুপুরে শিশু হাজেরা স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

এদিকে ছেলের বউ রুবি ওষুধ আনার কথা বলে তার নিজের দুই সন্তান রেখে বাড়ির বাইরে গেলেও সন্ধ্যা পর্যন্ত সে বাড়ি ফিরেনি। তার যমজ শিশু দুটি নিজেদের ঘরের ভেতর যেতে ভয় পাচ্ছিল। সন্দেহ হলে ঘরের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করে খাটের নিচ থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় হাজেরার মরদেহ পাওয়া যায়। 

এদিকে সিরাজগঞ্জ সদর ও তাড়াশ উপজেলা থেকে গতকাল সকালে দুই যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সদরে উদ্ধার হওয়া আনুমানিক ৩৫ বছর বয়সী যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। সদর থানার এসআই শফিউল আলম জানান, তাঁর মাথা ও পায়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। 

অন্যদিকে তাড়াশে নিহত সেলুনকর্মী শান্ত (২০) ঈশ্বরপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে। তাড়াশ থানার ওসি জিয়াউর রহমান জানান, সকালে নিজ ঘর থেকে শান্তর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

বারহাট্টা থানার ওসি কামরুল হাসান জানান, আহাদুলের সঙ্গে প্রতিবেশী মনহর আলী ও তাঁর চার ছেলে আলমগীর, অনিক, নির্ঝর ও বাবুর জমিসংক্রান্ত বিরোধ ছিল। তার জেরেই ওরা ঢাকা থেকে এসে হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

চট্টগ্রাম : পতেঙ্গা থানার কাটগড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে ছুরিকাঘাতে ফেরদৌসী আক্তার নামের এক নারী খুন হয়েছেন। রবিবার রাত ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত ফেরদৌসী এলাকার লোকমান হোসেনের স্ত্রী। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিক কলহের জেরে ফেরদৌসীর দেবর তাঁর ঘাড়, পিঠ ও পেটে ছুরিকাঘাত করে।

নিহতের ভাই মামুন খান বলেন, বিয়ের পর থেকে আমার বোনকে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি পরিবারের লোকেরা নির্যাতন করে আসছিল। আমরা একটি সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছি, লোকমানের বড় ভাই সোলেমান ও ছোট ভাই রনির হাতে ছুরি। আমরা খুনিদের বিচার চাই।

ঘটনার পর ফেরদৌসীর স্বামী লোকমানকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। শ্বশুরবাড়ির বাকি লোকজন পলাতক।

বারহাট্টা (নেত্রকোনা) : জমিসংক্রান্ত বিরোধে আহাদুল মিয়া (২৬) নামের এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুরে তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নেত্রকোনা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে রবিবার রাতে উপজেলার বাউশী ইউনিয়নের শাসনউড়া গ্রামে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। আহাদুল মিয়া ওই গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার ছেলে।

নরসিংদী : এক মাদক কারবারির বাড়ি থেকে সাজিদ হোসেন (২২) নামে এক তরুণের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের বাগহাটা টেকপাড়া গ্রামে দুলালের বাড়ি থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, নিহত যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। আবার  যার বাড়ি থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে তারাও চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তবে নিহতর পরিবারের অভিযোগ, মাদক ব্যবসায়ী দুলালের বাড়িতে নির্যাতন করে সাজিদকে হত্যা করা হয়েছে।

পাবনা : পুকুরে ভাসমান অবস্থায় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে শহরের লাইব্রেরি বাজার এলাকার কলাবাগান কলোনির মিঠুর পুকুর থেকে এ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তবে আনুমানিক বয়স হবে ৪০ বছর।

গাজীপুর : নিখোঁজের ছয় দিন পর এক শিশুর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল বিকেলে মহানগরীর ধীরাশ্রম এলাকা থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত নাবিলা কানিজ সাবা ধীরাশ্রমের দাখিনখান এলাকার নাসির মিয়ার মেয়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার শিশুটি বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে রাতে শিশুটির মা খাদিজা বেগম সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। গতকাল বাড়ির পাশে ঝোপের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা বস্তাটির সন্ধান পায়। বস্তা খুলে সাবার গলিত লাশ পাওয়া যায়।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক আয়কর গোয়েন্দা

হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাজার কোটি টাকা কর ফাঁকি দিয়েছেন ১৮৩ ভিআইপি

যাত্রা শুরুর মাত্র সাত মাসের মধ্যেই কর ফাঁকিবাজদের আতঙ্ক হয়ে উঠেছে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। এ সময় ১৮৩ জন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এক হাজার ৮৭৪ কোটি টাকার কর ফাঁকি উদঘাটন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ১১৭ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বাকি টাকা আদায়ের প্রচেষ্টাও চলছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এক হাজার ৭৮৮টি বিভিন্ন শ্রেণির ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি ও অর্থপাচার মামলা তদন্ত করছে আয়কর গোয়েন্দা। এঁদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, ডাক্তার, আইনজীবী, প্রকৌশলী, শিক্ষক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ সব পর্যায়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি রয়েছেন। এনবিআরের অধীন ৪১টি কর অঞ্চল ও দেশের ৬৪ জেলার করদাতারাও এ কার্যক্রমের আওতায় রয়েছেন।

এয়ার টিকিট সিন্ডিকেট, পরিবহন ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজার, আমদানি ও মজুদকারী, চালান জালিয়াতকারী, জুয়াড়ি, ক্ষমতার অপব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির পাশাপাশি কমেছে জনদুর্ভোগ।

কর ফাঁকির তথ্য পাওয়ায় শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ করে রেখেছে আয়কর গোয়েন্দা। এই গোয়েন্দা ইউনিটে চালুর অপেক্ষায় ডিজিটাল অফিস ম্যানেজমেন্ট ও ডেটা এনালিসিস ব্যবস্থা।

আয়কর গোয়েন্দার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারি। তবে কর্মচারী নিয়োগ ও ভাড়া অফিসে স্থানান্তরের পর মূল কার্যক্রম চালু হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর।

প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার হিসেবে শুরু থেকেই যুক্ত আছেন আয়কর ক্যাডারের ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. আবদুর রকিব। তাঁর নেত্বত্বে বিভিন্ন পর্যায়ের মেধাবী আয়কর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আয়কর গোয়েন্দারা তাঁদের লক্ষ্য অনুযায়ী এগিয়ে যাচ্ছেন।

কর প্রশাসনে দক্ষ গোয়েন্দা গঠন, কর ফাঁকি, অর্থপাচার, বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ শনাক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, রাজস্ব পুনরুদ্ধার করা, স্বচ্ছতা-জবাবদিহি, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, কর ফাঁকির তদন্তে অর্থের উৎস যাচাই করা ও দায়িত্বশীল অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে যৌথ কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে এই বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

জানা গেছে, বিশেষায়িত এই গোয়েন্দা ইউনিট অল্প সময়ের ব্যবধানে সফলতা দেখালেও তার নেই প্রয়োজনীয় জনবল ও স্থায়ী অফিস ভবন। শুরুতে এনবিআর ভবনে অস্থায়ী কার্যালয় থাকলেও পরে ভাড়া করা অফিসে যাবতীয় কাজ করছে রাজস্ব ফাঁকি ঠেকিয়ে দেওয়া প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া লজিস্টিক সীমাবদ্ধতা, যানবাহন, গোয়েন্দা কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থারও ঘাটতি আছে এই ইউনিটে।

জানতে চাইলে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনার মো. আবদুর রকিব কালের কণ্ঠকে বলেন, আয়কর গোয়েন্দা অল্প সময় ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই ইউনিটের সদস্যসংখ্যা কম হলেও তাঁরা মেধাবী ও পরিশ্রমী। তাঁদের কাজের প্রতি একাগ্রতা থাকায় আমরা সামগ্রিকভাবে ভালো করতে পারছি। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট পেলে এই ইউনিট দেশের জন্য আরো অনেক কিছু করতে পারবে। আমরা চাই দেশে একটি নতুন কর সংস্কৃতি। যেখানে কেউ কর ফাঁকি দিতে পারবেন না।

জানা গেছে, ভবিষ্যতে এই ইউনিটের জন্য ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থাপনের চিন্তা করা হচ্ছে। কর ফাঁকি-অর্থপাচার রোধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সম্পর্ক, প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। এ ছাড়া কর ফাঁকিবাজদের ডেটাবেইস তৈরি, নিয়মিত তল্লাশি-জব্দকরণ অভিযান পরিচালনা, কর নেটের বাইরে থাকা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজও করবে এই ইউনিট।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ