প্রশাসনের আমলনামা চেয়েছে সরকার

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
প্রশাসনের আমলনামা চেয়েছে সরকার

নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস পূর্তি হচ্ছে আজ (শুক্রবার)। এই সময়ে সরকারের ৫৮টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ৩৫৩টি দপ্তর ও সংস্থার প্রশাসনিক কাজের হিসাব (আমলনামা) চেয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। ৬ নভেম্বর সই করা এসংক্রান্ত একটি চিঠি গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সব সচিবের দপ্তরে পাঠানো হয়। এতে গতকাল বিকেল ৫টার মধ্যে তাঁর মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি, বদলি ও কতজনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ পাঁচটি বিষয়ের তথ্য পাঠাতে বলা হয়।

মাত্র এক দিনের নোটিশে এ ধরনের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত চাওয়ায় হুলুস্থুল পড়ে যায় প্রশাসনে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তর বিষয়টি নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সারা দিন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সচিবদের উদ্দেশে ওই চিঠিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর গত তিন মাসে আপনার মন্ত্রণালয়, বিভাগ, দপ্তর ও সংস্থা থেকে যেসব উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়েছে, তার একটি তালিকা ৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৫টার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালকের (প্রশাসন) ই-মেইলে পাঠানোর জন্য বলা হয়।

তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অবশ্যই নিচের তথ্যগুলো দিতে বলা হয়। এক. এই সময়ে আপনার মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে পদোন্নতি ও বদলি করা হয়েছে? দুই. কতজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? তিন. নতুন কী কী আইন, বিধি-বিধান তৈরি/সংশোধন করা হয়েছে? চার. কী কী নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে এবং পাঁচ. পাবলিক সার্ভিস ইনোভেশনের জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?

সচিবালয়ের একাধিক মন্ত্রণালয় গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, সচিবদের একান্ত সচিবরা (পিএস) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের ওই চিঠি দপ্তরপ্রধানদের মোবাইল ফোনের হোয়াটস অ্যাপে পাঠান। এরপর আবারও দপ্তরপ্রধানদের সরাসরি ফোনে কল করে বিকেল ৪টার মধ্যে সরকারের চাহিত তথ্য-উপাত্তের প্রতিবেদন পাঠাতে অনুরোধ জানান। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তর ছিল এ কাজে মহাব্যস্ত।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সচিবের পিএস কালের কণ্ঠকে বলেন, যেহেতু আজ সরকারের তিন মাস পূর্তি হচ্ছে, তাই এই অগ্রগতি প্রতিবেদন পাওয়ার পর হয়তো প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংবাদ সম্মেলন বা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতিকে জানানোর উদ্যোগ নেবে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের চিঠি ৬ নভেম্বরের হলেও পেলাম ৭ নভেম্বর দুপুর ১২টার দিকে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা দপ্তরপ্রধানদের ফরোয়ার্ড করেছি। তাঁদের সরাসরি সেল ফোনে তাগিদ দিয়েছি। সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় অনেক দপ্তর ও সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাওয়া যায়নি।

তার পরও মাত্র এক দিনের নোটিশে আমরা সর্বোচ্চ তথ্য-উপাত্তের প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে এ ধরনের তথ্যের জন্য অন্তত দু-তিন দিনের সময়সীমা দিয়ে নোটিশ দিলে ভালো হতো।

প্রশাসনে যেসব পরিবর্তন ঘটেছে : গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন এই সরকারের হাতে গত তিন মাসে প্রশাসনের শীর্ষপদে ব্যাপক রদবদলের ঘটনা ঘটেছে। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে সংযুক্ত থাকা উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার এখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় দেখভাল করছেন। শেখ হাসিনার সময় চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া অন্তত দেড় শ কর্মকর্তার নিয়োগ বাতিল হয়েছে। পাশাপাশি অবসরে থাকা হাসিনার সরকারের আমলে বঞ্চিত ১১ কর্মকর্তাকে সচিব পদে চুক্তিতে নিয়োগের পর তাঁদের সিনিয়র সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদসচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম হওয়া ড. শেখ আবদুর রশিদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. এম এ মোমেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক যোবায়ের এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এ এস এম সালেহ আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সচিব সাইফুল্লাহ পান্না। মূলত তাঁরাই এখন প্রশাসন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে।

বর্তমান প্রশাসনের হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া ১৭ জন সচিবকে ওএসডি করা হয়েছে, এখনো বহাল রয়েছে অন্তত তিন ডজন সচিব। পর্যায়ক্রমে তাঁদের অনেককে ওএসডি বা বিদায় করা হতে পারে। বিশেষ করে যেসব সচিব হাসিনা সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের দুই দিন আগে-পরে সরানো হবে। তবে তুলনামূলক ক্লিন ইমেজের সচিব বা যেসব সচিব হাসিনা সরকারের আমলে বিভাগীয় কমিশনার বা ডিসি পদে দায়িত্ব পালন করেনি, তাঁদের না সরানোর পক্ষে উপদেষ্টা পরিষদে জোরালো মত রয়েছে। পরিষদ মনে করে, এ ধরনের সচিবরা নিজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতার কারণে সচিব হয়েছেন। তাঁদের রেখে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরে হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া কর্মকর্তাদের সরিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়েছে। আরো করা হবে।

এদিকে গত সাড়ে ১৫ বছরে বিভিন্ন স্তরের পদোন্নতি বঞ্চিত অন্তত ৫০০ কর্মকর্তাকে ভুতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে পদায়ন করা হয়েছে। এই সময়ে রাজনৈতিক কারণে বঞ্চিত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি বঞ্চিতদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে। তাঁরাও এরই মধ্যে স্টেকহোল্ডারদের মতামত চেয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়া হাসিনা সরকারের নিয়োগ দেওয়া মাঠ প্রশাসনের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদেও পরিবর্তন আনা হয়েছে।

এ ছাড়া সরকারি কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব প্রতিবছর নির্দিষ্ট ফরমেটে জমা দিতে বাধ্যতামূলকভাবে নির্দেশনা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এমনকি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে সব সচিবের কাছে ৯ দফা নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেযোগ্য হলো কোনো অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আমন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার পূর্ব ইতিহাস সম্পর্কে খবর নিতে হবে। বিতর্কিত ব্যক্তির সঙ্গে কোনো অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়া যাবে না। অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র, ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট, সাজসজ্জা, ব্যানার, পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন, ট্রফি, স্যুভেনির ও লোগো ইত্যাদিতে বিতর্কিত কারো ছবি আছে কি না, খেয়াল রাখতে হবে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব দিবস বাতিল করা হয়েছে, সেগুলো যাতে পালন করা না হয় তা নিশ্চিত করা। বাতিলকৃত দিবস বা ব্যক্তি সম্পর্কে থাকা বই, স্যুভেনির, ক্রেস্ট, স্মারক অফিসে থাকলে সেগুলো সরানোর জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি সব ধরনের অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যের বাইরে কোনো স্লোগান বা জয়ধ্বনি থেকে বিরত থাকতে হবে। এ ছাড়া নিজ নিজ অধীন দপ্তর-সংস্থার কর্মচারীরা যাতে গুজবে বিভ্রান্ত না হয় তা নিশ্চিত করতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একইভাবে পুলিশ প্রশাসনেও আনা হয়েছে বড় ধরনের পরিবর্তন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিধিদের অপসারণ করে তাঁদের জায়গায় বসানো হয়েছে প্রশাসক।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সারজিস আলম

জুলাই আহতদের দেখতে উপদেষ্টাদের চেয়েও বেশি গেছেন সেনাপ্রধান

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
জুলাই আহতদের দেখতে উপদেষ্টাদের চেয়েও বেশি গেছেন সেনাপ্রধান

জুলাই আহতদের দেখতে উপদেষ্টারা যতবার হাসপাতালে গেছেন, তার চেয়েও বেশি গেছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলম গতকাল রবিবার তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুকে এক বার্তায় এ কথা জানান।

কয়েকটি আনপপুলার (অজনপ্রিয়) তথ্য দেই শিরোনামে সারজিস আলম লিখেছেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আজ অবধি সেনাপ্রধান প্রতি শনিবার সিএমএইচে গিয়ে জুলাইয়ে আহতদের দেখতে গেছেন। ব্যতিক্রম কয়েকটি সপ্তাহ ছাড়া এই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে, যা উপদেষ্টাদের সম্মিলিত ভিজিট সংখ্যার চেয়েও বেশি।

তিনি আরো উল্লেখ করেন, ঢাকা সিএমএইচেই সবচেয়ে গুরুতর আহতদের মানসম্মত চিকিৎসা ও ব্যয়বহুল সেবা নিশ্চিত করা হয়েছে, যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির চিকিৎসা ব্যয়ে সর্বোচ্চ বরাদ্দ হয়েছে। জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও সেনাপ্রধানই আহত ও শহীদ পরিবারদের আর্থিক সহায়তা ও পুনর্বাসনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছেন বলেও দাবি করেন সারজিস।

মন্তব্য

কেন্দ্রীয় বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কেন্দ্রীয় বাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির কার্যক্রম স্থগিত

চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম ঘিরে সমালোচনার মুখে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় ঢাকার শাহবাগে সংগঠন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে যারা কোনো প্রকার অপকর্ম করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও আহবান জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশীদ।

তিনি বলেন, গতকালের (২৬ জুলাই) ঘটনা  এবং তার মাঝের অনেকগুলো ঘটনায় আমরা দেখতে পেয়েছিবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে নামে-বেনামে অনেক ধরনের অপকর্ম করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা যেদিন আত্মপ্রকাশ করেছিলাম সেদিনই এ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলাম যে এ ধরনের কোনো কিছু বরদাশত করা হবে না।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কমিটিগুলো যখন গঠন করা হয়েছিল সেই কমিটি গঠনের দায়িত্বে যারা ছিল, তারা বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক দল ও মতের ভেতরে চলে গেছে। অনেক সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের যোদ্ধা যারা, তারাও বিপথগামী হয়েছে।

এর মধ্য দিয়ে তাদের মাঝে কিছু দুর্নীতির বিষয় আমার লক্ষ করেছি, যেটা এ মুহূর্তে কন্ট্রোল করা আমাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই সংগঠনের সব সদস্যের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন উপনীত হয়েছে যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারা দেশের সব কমিটির কার্যক্রম আজ (রবিবার) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করা হলো। আর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আগামী কার্যক্রম কোন উপায়ে পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে একটা রূপরেখা তৈরি করা হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি বলেন, যাঁরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঢাল হয়ে গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিটের ধারক ও বাহক হওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন, তাঁদের আমরা একটা কথা বলতে চাইএখান থেকে কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধা বা কোনো ধরনের ক্ষমতার অপব্যবহারের সুবিধা পাবেন না।

যাঁরা এ সংগঠনের সঙ্গে থাকার জন্য আশা ব্যক্ত করেছেন আপনাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব। শিগগিরই আমাদের আগামী সাংগঠনিক কার্যক্রম কোন উপায়ে পরিচালিত হবে তা জানিয়ে দেব।

সংবাদ সম্মেলনে গত শনিবারের ঘটনার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্বীকার করছে কি না, জানতে চাইলে রিফাত রশীদ বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কী করে? যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে তারা সে জিনিসটা নিয়ে ঘোরায়। তারা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকে অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে খেলার চেষ্টা করে।

আমরা দায় স্বীকার করেছি এবং দায় স্বীকার করে সারা বাংলাদেশে সব সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়েছি।

মন্তব্য
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি

বার্নে দীর্ঘ অপেক্ষা বাসায় ফিরল দুজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বার্নে দীর্ঘ অপেক্ষা বাসায় ফিরল দুজন

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ ৩৪ জন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে। তাদের বাসায় নিয়ে যেতে সাত দিন ধরে আইসিইউয়ের সামনে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন স্বজনরা। তবে গতকাল রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় নতুন করে কারো মৃত্যুর খবর জানায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বারবার হিসাবে গরমিল দেখা দিয়েছে।

ডিএনএ পরীক্ষার পর মোট নিহতের সংখ্যা কমে ৩৫ থেকে হয়েছে ৩৪। গতকাল বিকেলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, গত সোমবার রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনার পর আজ কাজী আমজাদ সাইদ (২০) ও সবুজা (৪০) নামের দুজনকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে চারজন রয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটে ৩৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মধ্যে ২৮ জনই শিশু।
ছয়জন প্রাপ্তবয়স্ক। এ ছাড়া মেডিক্যাল এইচডিইউতে চিকিৎসাধীন তিনজন, ফিমেল এইচডিইউতে ছয়জন, পোস্ট-অপারেটিভ ওয়ার্ডে আটজন এবং কেবিনে আছে ১২ জন। সিভিয়ার ক্যাটাগরিতে অর্থাৎ তাদের চেয়ে একটু কম গুরুতর অবস্থায় রয়েছে ৯ জন। বাকিরা অন্যান্য ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে।
আপাতত ভর্তি থাকা ৩৪ জন রোগীর মধ্যে শরীরে ৩০ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে এমন রোগী ছয়জন।

এখনো হাসপাতালে ৪৮ জন : এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৮ জন। এর মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ৩৬ জন, সিএমএইচে ১১ জন এবং জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে একজন চিকিৎসাধীন।

এর আগে সিআইডি জানায়, ডিএনএ ল্যাবের সদস্যরা সিএমএইচে রাখা অশনাক্ত মৃতদেহ ও দেহাংশ থেকে মোট ১১টি ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করেন। সেসব নমুনা বিশ্লেষণ করে মোট পাঁচজনের ডিএনএ প্রফাইল পাওয়া যায়।

শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু : মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের জন্য কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্ঘটনার পরপরই গত ২৩ জুলাই থেকে কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক এই কাউন্সেলিংয়ে অংশ নিয়েছেন।

গতকাল মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাউন্সেলিং কার্যক্রমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. শাহ পরানেওয়াজ ইশা বলেন, দুর্ঘটনার সময় আমাদের বেশ কয়েকজন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। মানসিকভাবে তারা এখনো ট্রমার মধ্যে আছে। কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে তাদের ভয় কাটিয়ে তুলে আবারও স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে তারা। ২ আগস্ট পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মন্তব্য
জুলাই ঘোষণা ৫ আগস্টের মধ্যেই!

অনেক রাজনৈতিক দল কিছুই জানে না

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
অনেক রাজনৈতিক দল কিছুই জানে না

জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মধ্যেই জুলাই ঘোষণা প্রকাশের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে বিএনপি, জামায়াতসহ কয়েকটি দলের কাছে ঘোষণাপত্রের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই ঘোষণাপত্র ৫ আগস্ট ২০২৪ থেকে কার্যকর বলে গণ্য হবে।

সরকারের একটি সূত্র বলেছে, আগামী ৫ আগস্টের মধ্যেই এই ঘোষণা হতে পারে।

সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক দলিল, যা ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানকে স্বীকৃতি দেবে, সেই ঘটনার পটভূমি ও পরিণতি তুলে ধরবে এবং ভবিষ্যতে এসব বিষয় সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার ভিত্তি গড়বে। সরকারের নেতৃত্বে এটি তৈরি হচ্ছে, তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতেই এর চূড়ান্ত রূপ দেওয়া হবে।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যদি সবাই বা বেশির ভাগ পক্ষ একমত হতে পারে, তাহলে ২০২৫ সালের ৫ আগস্টের আগেই এটি ঘোষণা করা হতে পারে।

যদিও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) হুঁশিয়ারি দিয়েছে, সরকার ব্যর্থ হলে ৩ আগস্ট তারা তাদের নিজস্ব বিকল্প ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি ছিল অভ্যুত্থানকারীদের। সে লক্ষ্যে গত ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও সরকারের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করতে হয়। এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও ঘোষণা না আসায় গত ২৯ জুন এক সভায় এনসিপি ঘোষণা দেয়, আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তারা জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে।

ওই সভায় দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকার বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো ঘোষণা প্রকাশে ব্যর্থ হয়েছে। তাই ছাত্র-জনতার ঐক্যে এনসিপি নিজ উদ্যোগেই এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জুলাই মার্চে অংশগ্রহণকারী সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতেই এ ঘোষণা তৈরি হয়েছে এবং এতে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকবে।

জানা যায়, এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। এরই মধ্যে জুলাই ঘোষণার একটি খসড়াও তৈরি করে তা কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির কাছে সরকার এই প্রস্তাব পাঠিয়েছে। কয়েকটি বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিএনপি তাদের মতামত সরকারের কাছে পাঠিয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে  তাদের মতামত সরকারের কাছে পাঠাবে। দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, আমরা একটি প্রস্তাব পেয়েছি। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে পাঠাব। সব দলের মতামত নিয়েই এটি চূড়ান্ত করা উচিত।

তবে অনেক দল এ বিষয়ে এখনো অন্ধকারে আছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বাম দলের অনেকেই জানিয়েছেন, তাঁদের কিছুই জানানো হয়নি। ইসলামী আন্দোলনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে আমাদের তেমন কিছু জানা নেই। আমাদের কাছে কিছু পাঠানো হয়নি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের আলোচনা অনেক দিন ধরেই চলছে। তবে এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সিপিবির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। ঘোষণাপত্র করতে হলে তা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই করতে হবে।

বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, খসড়া প্রণয়ন করতেও হলে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা হওয়া দরকার। এখনো বাসদকে কিছু জানানো হয়নি।

বাংলাদেশ জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. মুশতাক আহমেদ বলেন, অন্য কোনো দলের কাছে পাঠানো হলেও জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়া আমাদের কাছে পাঠানো হয়নি। এটি প্রণয়ন করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। খসড়া পেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মতামত দেওয়া হবে।

বাসদের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, গণ-আন্দোলন ও গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতির জন্য জুলাই ঘোষণাপত্র প্রয়োজন। কিন্তু এ বিষয়ে আমরা এখনো অন্ধকারে। গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে থাকা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই এটি প্রণয়ন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জানা যায়, জুলাই ঘোষণার খসড়ায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনামলকে একনায়কতান্ত্রিক ও গণবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যেখানে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, সংবিধান একপক্ষীয়ভাবে সংশোধনে সব কিছুই প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ও শাসনব্যবস্থার বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে।

এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে গণ-অভ্যুত্থান ঘোষণাপত্রের খসড়া প্রস্তুত করে। খসড়ায় উল্লেখ করা হয়, আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করিলাম। আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করা হবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।

এতে আরো বলা হয়, আমরা এই ঘোষণা প্রদান করলাম যে, ১৯৭২ এবং ১-১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আমাদের একটি নতুন জনতন্ত্র (রিপাবলিক) প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রে সকল ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটাবে এবং এ দেশের তরুণসমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারবে। আমরা এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম যে এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদান করা হবে। এ ছাড়া ঘোণাপত্রের খসড়ায় প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ (দ্বাদশ সংসদ) ভেঙে দেওয়ার এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের কথাও উল্লেখ করা হয়।

গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং তখন এই উদ্যোগের সঙ্গে সরকার সম্পৃক্ত নয় বলে জানায়। অবশ্য পরে ৩০ ডিসেম্বর রাতে জরুরি প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টি জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়।

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করতে গত ১৬ জানুয়ারি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ