বিশেষজ্ঞ মত

ট্রাম্পের নীতির প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও

  • রুদাবেহ্ শহীদ
শেয়ার
ট্রাম্পের নীতির প্রভাব পড়বে বাংলাদেশেও
দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি : এএফপি

https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/08-11-2024/2/kalerkantho-ft-4a.jpgবিশ্বজুড়ে অনেককেই অবাক করেছে ২০২৪ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল। ক্ষমতাসীন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক পছন্দগুলোর জোরালো পরিবর্তনের প্রতিফলন। এগুলোর মূলে নবায়নকৃত রিপাবলিকান নেতৃত্বের আন্তর্জাতিক প্রভাবের পাশাপাশি অর্থনৈতিক হতাশা, অভিবাসন ঘিরে উদ্বেগ ও জাতিগত সমীকরণও ছিল। ভোটারদের মধ্যে ট্রাম্পের নতুন করে আবেদনের জোরালো কারণ এবং দক্ষিণ এশিয়া, বিশেষ করে বাংলাদেশের ওপর এর প্রভাবগুলো যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকার ও বিদেশে এর কৌশলগত বিন্যাসের মধ্যে গভীর আন্তঃসম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে।

 

ট্রাম্পের জন্য ভোট : অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণ

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পকে পুনর্বহাল করতে আমেরিকান ভোটারদের সিদ্ধান্তটি এসেছে ব্যাপক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে। মূল্যস্ফীতি বাড়াবাড়ি মাত্রায় বেশি। চাকরির অনিশ্চয়তা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। এর বিপরীতে স্থানীয় কর্মসংস্থান জোরদার এবং বিদেশি শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী এজেন্ডা উদ্বিগ্ন ভোটারদের অনুরণিত করেছে।

আমেরিকাই প্রথম নীতির প্রতি নতুন করে অঙ্গীকার এবং অবৈধ অভিবাসীদের ব্যাপারে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থান সীমান্তে কড়াকড়িপ্রত্যাশী ভোটারদের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলেছে।

অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনী দৌড়ে গত জুলাইয়ে কমলা হ্যারিসের আসার বিষয়টি ছিল প্রত্যাশিত সময়ের চেয়েও দেরিতে। তিনি একজন অশ্বেতাঙ্গ নারী। এসব কারণে মূল ভোটারদের মধ্যে কমলার ব্যাপারে আবেদন থাকতে পারে।

অনিশ্চিত এই সময়ে তাঁরা ট্রাম্পকে তুলনামূলক ভালো প্রার্থী হিসেবে দেখেছেন।

 

দক্ষিণ এশিয়ার মূল শক্তি ভারত

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে আছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বৈরিতা মূলত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রণয়নে ভূমিকা রেখেছে। সেখানে ভারত গুরুত্বপূর্ণ শক্তি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের নিবিড় ব্যক্তিগত সম্পর্ক হাউডি, মোদি! এবং নমস্তে ট্রাম্প’—এর মতো উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে প্রতিফলিত হয়েছে।

এগুলো ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কের সম্ভাব্য ধারাবাহিকতাকে নির্দেশ করে। এই সম্পর্ক সম্ভবত মোদির সরকারকে শক্তিশালী করবে। এটি চীনের প্রভাব মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের অংশ হিসেবে এই অঞ্চলে ভারতকে আরো প্রভাব খাটাতে ও স্বাধীনভাবে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিতে পারে।

 

সুরক্ষাবাদের নীতি : ট্রাম্পের বৈদেশিক কৌশল

ট্রাম্পের সুরক্ষাবাদী নীতি বা কৌশলগুলো প্রায়ই বিশ্ববাণিজ্য ও বৈদেশিক সম্পৃক্ততায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে পরিবর্তন করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের দৃষ্টি আমেরিকানদের চাকরি ও উৎপাদন খাতের সুবিধা নিশ্চিত করা। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুস্পষ্ট লাভ না হলে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জন্য বাণিজ্য সুবিধা কমতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর তাদের নির্ভরতা পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করবে, বিশেষ করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের মতো যারা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল। উপরন্তু, বিশেষ করে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নে প্রতিরক্ষা দপ্তরের অব্যাহত ভূমিকা, দক্ষিণ এশিয়ায় সুনির্দিষ্টভাবে ভারতের ভূ-রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করার আগ্রহের ইঙ্গিত দেয়।

 

ড. ইউনূস ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশের অনেকেই বিশ্বাস করেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে তাঁরা একটি পরিবর্তনশীল সময়ে প্রবেশ করেছেন। ক্লিনটন, ওবামাসহ ডেমোক্র্যাট নেতাদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততার জন্য পরিচিত ড. ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের সময় তাঁর নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জিং মনে করতে পারেন। ট্রাম্প প্রশাসন এই অঞ্চলে মানবাধিকার ও জলবায়ু সুশাসন ইস্যুতে খুব বেছে বেছে প্রভাব খাটায়। বাইডেনসহ ডেমোক্র্যাট প্রশাসনগুলো জলবায়ুবিষয়ক উদ্যোগ ও মানবাধিকারকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। এ দুটিই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদিকে ট্রাম্প প্রশাসন জলবায়ু ও মানবাধিকারকে ততটা অগ্রাধিকার না দিয়ে লেনদেনমুখী কূটনীতি অনুসরণ করতে পারে। এতে ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক মিত্র কমতে পারে।

ড. ইউনূসের কার্যালয় নিশ্চিত করেছে যে কয়েকজন রিপাবলিকানের সঙ্গে তাঁর ইতিবাচক সম্পর্ক আছে। তবে অন্য রিপাবলিকানদের চেয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গি ও অগ্রাধিকার আলাদাএ বিষয়টিও আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন।

 

দক্ষিণ এশিয়ায় মার্কিন নীতির ধারাবাহিকতা

অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে পক্ষপাতদুষ্ট বিভাজন সত্ত্বেও দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান প্রশাসনের মধ্যে সাদৃশ্য বজায় রেখেছে, বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে কৌশলগত মৈত্রীর মাধ্যমে চীনকে মোকাবেলা করার ওপর দুই দলেরই জোর দেওয়া একটি ঐক্যবদ্ধ ধারা হিসেবে রয়ে গেছে। বাংলাদেশের মতো দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জন্য এর অর্থ হলো, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ের গুরুত্ব বদলাতে পারে। তবে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক অবস্থান সম্ভবত অপরিবর্তিত থাকবে। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী হিসেবে ভারতের ভূমিকা সম্ভবত ট্রাম্পের সংরক্ষণবাদী আমেরিকাই প্রথম নীতের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হবে। এতে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে মোদি সরকার আরো স্বাধীনতা পাবে।

 

ভারতের বর্ধিত ভূমিকা এবং চীন সমীকরণ

ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোতে ভারতের অবস্থান আরো শক্তিশালী করবে। সীমান্ত নিরাপত্তা থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক নেতৃত্ব, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রভাব মোকাবেলায় মুখ্য বিষয় হিসেবে কাজ করবে।

ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ, নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে দৃঢ পদক্ষেপসহ আঞ্চলিক এজেন্ডা অনুসরণের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে কম চাপ অনুভব করতে পারে। ইন্দো-প্যাসিফিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ মার্কিন মিত্র হিসেবে কোয়াডে ভূমিকার মাধ্যমে ভারতের ক্রমবর্ধমান আঞ্চলিক দৃঢতা মধ্যম থেকে দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। যদিও তাৎক্ষণিক প্রভাব সীমিত হতে পারে। তবে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী প্রশাসন এই পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে কতটা নিখুঁতভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে তা দেখার বিষয়।

 

দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান জলবায়ু চ্যালেঞ্জের জন্য এর অর্থ কী

ট্রাম্পের লেনদেনভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতিতে জলবায়ু ইস্যু সম্ভবত পিছিয়ে যাচ্ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বিস্তৃত উপকূলরেখার বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু ইস্যুতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে আরো বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।

জলবায়ু চুক্তির বিষয়ে ট্রাম্পের ঐতিহাসিক অবস্থান, বিশেষ করে তাঁর প্রথম মেয়াদে প্যারিস চুক্তি থেকে প্রত্যাহার, বৈশ্বিক জলবায়ু উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন কমানোর ধারাবাহিকতা জরুরি জলবায়ু অভিযোজন চাহিদা মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে। জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্র্যাটদের অগ্রাধিকার। ট্রাম্পের এজেন্ডায় এটি গুরুত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এতে বাংলাদেশের উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোর ঝুঁকি বাড়বে।

 

নতুন কিন্তু পরিচিত অধ্যায়

ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন আমেরিকান সুরক্ষাবাদ এবং লক্ষ্যযুক্ত জোটের ওপর জোর দিয়ে পরিচিত নীতিগুলোর দিকে ঝোঁকার একটি ইঙ্গিত দেয়। দক্ষিণ এশিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রভাব সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে শক্তিশালী করা এবং চীনের প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করা ঘিরে আবর্তিত হবে। বাংলাদেশের জন্যও এটি একটি নতুন পর্যায়। পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে বাংলাদেশে সাবধানে খাপ খাইয়ে নেওয়া প্রয়োজন। আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় যুক্তরাষ্ট্র বিনিয়োগকারী হিসেবে থাকলেও জলবায়ু ও মানবাধিকার ইস্যুতে সমর্থন-সহযোগিতা কমতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে যে-ই থাকুক না কেন, তাকে বিবর্তিত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের মধ্যে দেশের জলবায়ু ও অর্থনৈতিক চাহিদাগুলো সুরক্ষিত করতে এই সূক্ষ্ম প্রেক্ষাপটে কাজ করতে হবে।

 

রুদাবেহ্ শহীদ : আটলান্টিক কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া সেন্টারের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মূল্যস্ফীতি কমে ৮.৪৮%, বেড়েছে  জিডিপি প্রবৃদ্ধি

বহুদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় সংকট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের অস্থিরতা। প্রায় তিন বছর ধরে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবনযাত্রা ব্যয় বেড়ে যায় ব্যাপকভাবে। তবে অবশেষে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এসেছে ৮.৪৮ শতাংশে, যা গত ৩৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন।

এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি নেমেছিল ৮.৯১ শতাংশে।

গতকাল সোমবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্যে এই চিত্র উঠে এসেছে। ভোক্তা মূল্য সূচকের (সিপিআই) তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.০৫ শতাংশ, জুনে তা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

মূল্যস্ফীতির এই পতন দেশের অর্থনীতিতে স্বস্তির বার্তা বয়ে আনলেও বাজারের বাস্তব চিত্র ভিন্ন।

রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। চাল, সবজি, মাছসহ খাদ্যপণ্যের দামে আগুন। তাই পরিসংখ্যানগত স্বস্তি বাস্তব জীবনে এখনো প্রতিফলিত হয়নি।

 

খাদ্যমূল্য কিছুটা নিয়ন্ত্রণে

বিবিএসের ভোক্তা মূল্যসূচক অনুযায়ী, খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুনে নেমে এসেছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা মে মাসে ছিল ৮.৫৯ শতাংশ।

একইভাবে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৯.৩৭ শতাংশে।

তবে বাজারের চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ঢাকার খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম বেড়ে ৮৫ থেকে ৯০ টাকা/কেজিতে পৌঁছেছে, যেখানে ঈদের আগে তা ছিল ৭২ থেকে ৮২ টাকা। মাঝারি মানের চাল ব্রি২৮ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৪ টাকা কেজি দরে, যা আগের তুলনায় তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সবজির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।

মাছের দামেও দেখা যাচ্ছে ১০ থেকে ৫০ টাকার বৃদ্ধি। এ অবস্থায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমার ঘোষণা ভোক্তা পর্যায়ে স্বস্তি দিতে পারেনি।

 

আয় বেড়েছে কম, ব্যয় বেড়েছে বেশি

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনে এক ধরনের অদৃশ্য কর-এর মতো। বিশেষ করে মজুরিনির্ভর মানুষের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। বিবিএসের তথ্য মতে, জুনে জাতীয় মজুরি হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮.১৮ শতাংশে, কিন্তু একই সময়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৪৮ শতাংশ। অর্থাৎ আয় বৃদ্ধির চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধির হার বেশি হওয়ায় প্রকৃত আয় কমেছে।

 

প্রবৃদ্ধিতে ফিরছে গতি

মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও কিছুটা ইতিবাচক পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) স্থির মূল্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮৬ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৪.৪৮ শতাংশ।

তবে পুরো অর্থবছরের (জুলাই-মার্চ) প্রথম তিন প্রান্তিক মিলিয়ে গড় প্রবৃদ্ধি মাত্র ৩.৮১ শতাংশ। এই ধীরগতির প্রবৃদ্ধির বিষয়ে সতর্কবার্তা আগেই দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বিশ্বব্যাংক ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে ৩.৩ শতাংশ, আর এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ৩.৯ শতাংশ।

প্রবৃদ্ধির খাতভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, তৃতীয় প্রান্তিকে কৃষি খাত কিছুটা উন্নতি করলেও গতি কমেছে শিল্প খাতে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২.৪২ শতাংশ, যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৪ শতাংশ। শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬.৯১ শতাংশে, যা আগের প্রান্তিকে ছিল ৭.১০ শতাংশ। সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি তুলনামূলক ভালো৫.৮৮ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৪.৩১ শতাংশ। চলতি মূল্যে এই প্রান্তিকে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি পরিসংখ্যান বলছে মূল্যস্ফীতি কমেছে, প্রবৃদ্ধিও কিছুটা বাড়ছে। তবে বাজারে এর প্রতিফলন নেই। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো ঊর্ধ্বমুখী, মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির নিচে, ফলে মানুষের বাস্তব আয়ে ঘাটতি রয়ে গেছে।

মন্তব্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
শেখ হাসিনা-কামালকে অব্যাহতির আরজি মামুনের বক্তব্য নেই

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রাথমিক উপাদান (প্রাইমা ফেসিয়া) পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন রাষ্ট্র নিযু্ক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। মামলার অভিযোগ থেকে তাঁদের অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান তিনি।

এ সময় আদালতে উপস্থিত আরেক আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের আইনজীবী শুনানিতে অংশ নেননি এবং অভিযোগ থেকে তাঁর অব্যাহতিও চাওয়া হয়নি।

গতকাল সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ অভিযোগ গঠনের শুনানি চলাকালে আমির হোসেন ওই আরজি তুলে ধরেন।

তবে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করার আরজি জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।

শুনানির পর ট্রাইব্যুনাল আগামী ১০ জুলাই আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এর আগে গত ১ জুলাই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ করে প্রসিকিউশন।

ওই দিন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন মামলার অভিযোগ থেকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন : দাবি আইনজীবীর

অব্যাহতির আবেদনের শুনানিতে আমির হোসেন প্রসিকিউশনের অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, গত বছর ১৪ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলে উসকানিমূলক কোনো বক্তব্য দেননি। মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে তিনি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন। সেই জবাবেও তিনি আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বা রাজাকারের নাতি-পুতি বলেননি।

আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যু সনদে মৃত্যুর সঠিক কারণ লিখতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, মৃতদেহ হস্তান্তর না করে বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে গণদাফন, লাশ গুম করে ফেলার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও মনগড়া বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী। তিনি বলেন, এসব অভিযোগের দালিলিক কোনো প্রমাণ নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব অভিযোগ আনা হয়েছে তাঁদের হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য।

আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানিতে প্রসিকিউশন বলেছিল, জুলাই গণ-আন্দোলন চলার সময় বিটিভি ভবন, মেট্রো রেলসহ কেপিআইভুক্ত (কি পয়েন্ট ইনস্টলেশন) স্থাপনায় হামলা চালিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপানো হয়েছে। এই অভিযোগও অস্বীকার করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন।

তিনি বলেন, আন্দোলনের সময় মেট্রো রেলসহ যেসব স্থাপনায় হামলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এইসব স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এইসব স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংসের কারণে তিনি তখন বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। ব্যথিত হয়েছিলেন। এমনকি তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনেও গিয়েছিলেন।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলার সময় গত বছর ১৬ জুলাই রংপুরে গুলিতে শহীদ হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। এই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধ প্ররোচনা, সহায়তা ও ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা অস্বীকার করে আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদ আবু সাঈদের মা-বাবা, ভাই-বোনদের গণভবনে এনে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। ফলে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন।

গণ-অভ্যুত্থানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আন্দোলনের সময় পুলিশ মানুষের জানমাল রক্ষার স্বার্থে দায়িত্ব পালন করেছে। তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে বিভিন্ন আন্দোলনে বহু মানুষ হতাহত হওয়ার নজির আছে। কিন্তু এর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে কোনো দেশ বিচার করেছেএমন নজিরও নেই।

জুলাই গণ-আন্দোলনে আসামিদের বিরুদ্ধে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটিকে মিথ্যা দাবি করে আমির হোসেন বলেন, গণ-আন্দোলনের সময় এবং সরকার পতনের পরে দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালানো হয়েছে, থানা লুট করা হয়েছে। এমনকি পুলিশ হত্যা করা হয়েছে। ফলে পদ্ধতিগত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মনগড়া। পরে তিনি অভিযোগ থেকে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) অব্যাহতি দেওয়ার আরজি জানান।

ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ১৪ আগস্ট সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ দাখিল করা হয়। তদন্ত শুরু হয় গত বছর ১৪ অক্টোবর। ছয় মাস ২৮ দিনে তদন্ত শেষে গত ১২ মে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি বা ঊর্ধ্বতনের নির্দেশনার দায়সহ হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ব্যপক মাত্রায় পদ্ধতিগত হত্যা, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ, সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধ না করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়। গত ১ জুন প্রসিকিউশন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করলে তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।

মন্তব্য
মানবতাবিরোধী অপরাধ

চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

মেহেদী হাসান পিয়াস
মেহেদী হাসান পিয়াস
শেয়ার
চলতি বছর শেষ হতে পারে ৪ মামলার বিচার

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেসব মামলা হয়েছে, এর মধ্যে অন্তত চারটি মামলার বিচারকাজ চলতি বছর শেষ হতে পারে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়। চারটি মামলার অভিযোগই আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এখন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তবে মামলার তদন্ত ও বিচারে সময় নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ রয়েছে ভুক্তভোগী এবং শহীদ পরিবারের সদস্যদের।

চার মামলায়ই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে। তিনিসহ এই চার মামলায় মোট আসামি ৫৭ জন। তাঁদের মধ্যে পলাতক ৪১ জন। গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।

এ ব্যাপারে প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম কালের কণ্ঠকে বলেন, চারটি মামলা আনুষ্ঠনিক অভিযোগ গঠনের পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যে দুটি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়েছে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করলে বিচার হবে। অভিযোগ থেকে আসামিদের অব্যাহতি দিলে মামলা ওইখানেই শেষ।

আর যদি ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী আসামিপক্ষকে প্রস্তুতির জন্য ২১ দিন সময় দিতে হবে। প্রসিকিউশন থেকে আমাদের আরজি থাকবে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সূচনা বক্তব্য এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করার জন্য। যদি ট্রাইব্যুনাল আবেদন মঞ্জুর করেন, তাহলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

বিচারিক প্রক্রিয়া নিয়ে আইনি বিধান তুলে ধরে এই প্রসিকিউটর বলেন, আইনে আছে, অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে তা চলবে বিরতিহীনভাবে। কোনো পক্ষ মুলতবির আবেদন করতে পারবে না।

সব মিলিয়ে আশা করছি, চলতি বছরই চারটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয় বা তদন্ত সংস্থায় লিখিত অভিযোগ দিতে হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেলে মামলা হিসেবে তা নথিভুক্ত করে তদন্ত সংস্থা। এরপর অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই, পর্যালোচনা করে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ হিসেবে তা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। পরে এই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে তা আমলে নিতে ট্রাইব্যুনালের কাছে আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযোগ আমলে নেওয়া হলে আসামিদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। যে চার মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অন্যান্য অপরাধের পাশাপাশি গণ-অভ্যুত্থান চলার সময় পরিকল্পিতভাবে ড্রোন, হেলিকপ্টার, প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্মূলের অভিযোগ রয়েছে একটি মামলায়। মামলাটি ঊর্ধ্বতনের নির্দেশে দায় বা সুপিরিয়র কমান্ড রেসপন্সিবিলিটির মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এই মামলার আসামি। তাঁদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের পর আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়েছে। অন্য দুজন পলাতক। এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর উভয় পক্ষের শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ১০ জুলাই আদেশের দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ঘটনা ও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি তিনটি মামলাও বেশ আলোচিত।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে আবু সাঈদ হত্যা মামলা হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১০ জুলাই এ মামলায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। এ মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার চারজন। বাকি ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলাটিকে বলা হচ্ছে চানখাঁরপুল হত্যাকাণ্ড মামলা। সরকার পতনের আন্দোলন মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন ছয় তরুণ। গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় পুলিশ তাঁদের গুলি করে হত্যা করে। সেদিন শহীদ হন শাহরিয়ার খান আনাস, শহীদ শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, শহীদ মো. ইয়াকুব, শহীদ মো. রাকিব হাওলাদার, শহীদ মো. ইসমামুল হক ও শহীদ মানিক মিয়া। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর ছয় মাস ১৩ দিনে তদন্ত শেষ করে গত ২০ এপ্রিল প্রতিবেদন দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটিই ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার প্রথম তদন্ত প্রতিবেদন। গত ২৫ মে এই মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নেন। গত ৩ জুলাই এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শেষ হয়। আগামী ১৪ জুলাই এ বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করা রয়েছে। মামলার আট আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে চারজনকে।

আশুলিয়ায় মৃতপ্রায় একজন ও পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর মামলাটি লাশ পোড়ানোর মামলা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ১৯ জুন চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয় তদন্ত সংস্থা। গত ২ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হলে সেদিনই তা আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলার ১৬ জন আসামির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে ১১ জনের নাম প্রকাশ করে প্রসিকিউশন। এই ১১ জনের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রাখা হয়েছে।

প্রত্যাশার সঙ্গে আছে হতাশা

মামলার তদন্তকাজ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করলেও বিচার নিয়ে আশাবাদী শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই আবু হোসেন। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এই বিচারটা দেখতে পাব এবং ন্যায়বিচার পাব। কিন্তু তদন্তেই দীর্ঘ সময় লাগল। তার পরও বলতে চাই, যারা আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের সবার বিচার চাই। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কাউকে যেন এ মামলায় যুক্ত না করা হয়।

শেখ হাসিনার পতনের আগের দিন রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দেশ পলিটেকনিক কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়ার হাসান আলভীর। পরে ১৯ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাসহ ২৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শহীদ আলভীর বাবা মো. আবুল হাসান। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, অভিযোগটি কী পর্যায়ে আছে, জানি না। গত সপ্তাহেও আমি প্রসিকিউশনে গিয়েছিলাম। গেলে শুধু একটা কথাই বলে, কাজ করছি, বিচার হবে। কিন্তু আদৌ বিচার হবে কি নাজানি না। আসামিরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে আমরা হতাশায় ভুগছি।

মামলার বাদী এবং শহীদ পরিবারগুলোর জন্যও বিশেষ নিরাপত্তার দাবি জানান আবুল হাসান। 

প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, এই অভ্যুত্থানের সময় দেশজুড়ে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে ২৭টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মন্তব্য

বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বৃহস্পতিবার এসএসসির ফল প্রকাশের প্রস্তাব

আগামী ১০ জুলাই বৃহস্পতিবার এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করেছে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। এরই মধ্যে এই প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে সম্মতি পেলে ফল প্রকাশ করা হবে।

আন্ত শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কমিটির আহবায়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার কালের কণ্ঠকে বলেন, আগামী ১০ জুলাই এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ওই দিন বা এর আগে-পরে যেদিন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সম্মতি দেওয়া হবে, সেদিনই ফল প্রকাশ করা হবে। আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

সূত্র জানায়, সাধারণত পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গত ১০ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়।

এসএসসির লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৩ মে। ব্যাবহারিক পরীক্ষা ১৫ থেকে ২২ মের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের দাখিলের লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় ১৫ মে। সেই হিসাবে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ফল প্রকাশের সময় রয়েছে।

জানা গেছে, এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় মোট শিক্ষার্থী ছিল ১৯ লাখ ২৮ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। অন্যদিকে মাদরাসা বোর্ডের অধীন দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ