প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে এবং ৭ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ২০১৮ সালে ৫৬ শতাংশ কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হাইকোর্টের রায় বাতিল করে গতকাল রবিবার এ রায় দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নের্তৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ।
রায়ে বলা হয়েছে, যদিও কোটা নির্ধারণের বিষয়টি রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণী বিষয়। তার পরও সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদের এখতিয়ারবলে, সার্বিক ও যৌক্তিক বিবেচনায়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে সংবিধানের ১৯, ২৭, ২৮(৪), ২৯(১) ও ২৯(৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার জন্য কোটা প্রথা হিসেবে মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো।
২০২১ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিলের এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন। রিটে প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ওই বছর ৭ ডিসেম্বর রুল জারি করেন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত (২০১৩ সালের) উপেক্ষা করে কোটা পদ্ধতি বাতিল করা পরিপত্র কেন স্বেচ্ছাচারী ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। মন্ত্রিপরিষদসচিব, জনপ্রশাসনসচিব, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পাঁচ বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানির পর গত ৫ মে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন উচ্চ আদালত। এই রায়ের পর ফের কোটা সংস্কারের আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে প্রথম কয়েক দিন আন্দোলনকারীরা রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এদিকে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে সরকার আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করে। কিন্তু চেম্বার আদালত হাইকোর্টের রায়ে হস্তক্ষেপ না করে আবেদনটি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এতে আন্দোলনকারীরা আরো সংক্ষুব্ধ হয়ে তারা অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে। গত ৪ জুলাই প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনটি শুনানির জন্য ওঠে। শুনানির পর সর্বোচ্চ আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ‘নো অর্ডার’ দিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেন। রাষ্ট্রপক্ষের এই লিভ টু আপিল করার অপেক্ষার মধ্যে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ৯ জুলাই আবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। সে আবেদনে শুনানির পর গত ১০ জুলাই কোটা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিষয়বস্তুর ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দেন সর্বোচ্চ আদালত। সব পক্ষকে এই স্থিতাবস্থা মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই স্থিতাবস্থা আদেশের ব্যাখ্যায় আদালত বলেন, ২০১৮ সালে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে সরকার যে পরিপত্র জারি করেছিল, সেই পরিপত্রের ওপর স্থিতাবস্থা। অর্থাৎ হাইকোর্টের রায়ের আগে পরিপত্রটির যে কার্যকারিতা ছিল সেই কার্যকারিতা থাকবে। অর্থাৎ সরকার চাইলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা ছাড়া নিয়োগ দিতে পারবে। আদালত ৭ আগস্ট পরবর্তী শুনানির তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন শিক্ষার্থী দুই আবেদনকারীকে।
এই আদেশের পর আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরির সব ধরনের কোটা বাতিল চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার পাশাপাশি সরকারকে কোটা সংস্কারের আলটিমেটাম দেন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে আইনমন্ত্রী ও অ্যাটর্নি জেনারেল আশ্বস্ত করে আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরতে বলেছিলেন। তাঁরা আরো বলেছিলেন, আদালতে বিচারাধীন বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকার চাইলেই কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবে না। তাঁদের এমন বক্তব্যে আন্দোলনকারীরা কঠোর অবস্থানে যান। তত দিনে আন্দোলন ঢাকাসহ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাঙ্গন থেকে অবরোধের খবর আসতে থাকে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৬ জুলাই বাংলা ব্লকেড (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচির ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। সেদিন এই কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আন্দোলনকারীসহ ছয়জনের মৃত্যুর খবর জানা যায়। এর প্রতিক্রিয়ায় পরদিন টোটাল শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘাতের সঙ্গে মৃত্যুও বাড়তে থাকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত ১৪ জুলাই হাইকোর্টের রায় প্রকাশ পায়। ১৬ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিল করে। এদিকে বাড়তে থাকে সংঘাত ও প্রাণহানি। স্থবির হয়ে পড়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনজীবন। সরকারি স্থাপনায় হামলা-লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। এ অবস্থায় গত ১৮ জুলাই সরকারের আইনমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ঘোষণা দেন। আর অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দেন লিভ টু আপিলের শুনানি এগিয়ে আনার আবেদন করতে। ওই দিনই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে আদালত রবিবার সকাল ১০টায় লিভ টু আপিলের শুনানির সময় দেন। এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির মধ্যে সরকার কারফিউ ঘোষণা করে সেনাবাহিনী মাঠে নামায় এবং সোমবার পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। গতকাল সাধারণ ছুটি ও কারফিউয়ের মধ্যে লিভ টু আপিলের শুনানির পর রায় দেন সর্বোচ্চ আদালত।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক। এ ছাড়া কোটা এবং কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়, আদালতের এখতিয়ার নিয়ে মতামত তুলে ধরেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ, জেড আই খান পান্না, জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন, আহসানুল করিম, তানিয়া আমীর, সারা হোসেন ও আইনজীবী তানজীব উল আলম।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ৫ আগস্ট প্রথম কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করে সরকার। ২০১৩ সালে আপিল বিভাগ যখন ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত দেন, তখন কোটা পদ্ধতি ছিল। ২০১৮ সালে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কোটা পদ্ধতিটিই বাতিল করে দেয়। অর্থাৎ সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত হচ্ছে কোটা থাকবে না। হাইকোর্ট এখন যখন কোটা সংরক্ষণের বিষয়ে রায় দিলেন, তখন তো কোটা পদ্ধতিই নেই এবং আপিল বিভাগের সর্বশেষ (২০২২ সালের রায় অনুসারে) সিদ্ধান্ত অনুসারে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তে আদালত হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। এমনকি নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আদালত কোনো পরামর্শও দিতে পারেন না, যদি না সে সিদ্ধান্ত নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করে, সংবিধানকে লঙ্ঘন করে। ফলে হাইকোর্টের রায়টি (গত ৫ মে কোটা পুনর্বহালের রায়) বাতিল করা হোক।
আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যে সমর্থন জানিয়ে বলেন, হাইকোর্ট রায়ে বলার চেষ্টা করেছেন যে মুক্তিযোদ্ধারা অনগ্রসর অংশ। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা বরাদ্দ করা হয়েছে বিশেষ মর্যাদায়, অনগ্রসর হিসেবে নয়। মুক্তিযোদ্ধারা কখনোই অনগ্রর হতে পারেন না। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান এবং সবচেয়ে অগ্রগামী অংশ। তা ছাড়া সংবিধানের কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের অনগ্রসর হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি, বরং বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বাতিল চাচ্ছি। পাশাপাশি কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাচ্ছি। সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুসারে ন্যায়বিচারের স্বার্থে সর্বোচ্চ আদালত সে আদেশ দিতে পারেন।
রিটকারী পক্ষের আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী শুনানিতে বলেন, ১৯৭৫ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সুবিধা দেওয়া হলেও পঁচাত্তরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর এই কোটার কোনো বাস্তবায়ন ছিল না। মানছি কোটা পদ্ধতি রাখা না রাখা সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিষয়, কিন্তু ২০১৮ সালে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করে আর সব শ্রেণির চাকরিতে কোটা বহাল রাখল। এটা হতে পারে না। সরকারের এ রকম নীতিগত সিদ্ধান্ত কতটুকু যৌক্তিক? ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম কারণ তো থাকা দরকার ছিল।
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ শুনানিতে বলেন, কোটা পদ্ধতি নিয়ে হাইকোর্ট তাঁর রায়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছেন, কিন্তু এই হস্তক্ষেপের বিষয়ে রায়ে কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। ফলে রায়টি বাতিল করা হোক।
আইনজীবী আহসানুল করিম তাঁর মতামত তুলে ধরে শুনানিতে বলেন, আমাদের সংবিধান যাঁরা প্রণয়ন করেছেন, তাঁরা কখনোই মুক্তিযোদ্ধাদের অনগ্রসর অংশ হিসেবে বিবেচনা করেননি। সে জন্য তাঁদের অনগ্রসর অংশ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। কোটা ও মেধার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে মেধাই প্রাধান্য পাবে।
মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনির কোটা সুবিধা দেওয়া নিয়ে আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেন, যাদের জন্মই হয়নি, তারা কিভাবে অনগ্রসর হয়? তা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কখনোই অনগ্রসর হতে পারেন না। যদি তা না হয়, তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান বা নাতি-নাতনি কিভাবে অনগ্রসর হয়? তা ছাড়া যদি মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকে, তাহলে তা কত দিন থাকবে? তা ছাড়া যিনি রিট করেছেন, তাঁদের এই রিট করার এখতিয়ার আছে কি না।
আপিলের অনুমতি না দিয়ে (লিভ টু আপিল গ্রহণ না করে) হাইকোর্টের রায়ের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করা যায় কি না সে প্রশ্নে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানজীব-উল আলম শুনানিতে বলেন, ‘আমি মনে করি, লিভ টু আপিল গ্রহণ না করেই হাইকোর্টের রায় নিয়ে আপিল বিভাগে শুনানি হতে পারে। এমনকি হাইকোর্টের রায় বাতিলও করতে পারে। তা ছাড়া কোটা নিয়ে হাইকোর্ট যে বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন, তার বাইরে গিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। আর নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সরকারকে কোনো পরামর্শ দিতে পারেন না হাইকোর্ট। সুতরাং রায়টি বাতিল করা উচিত।’
আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকন অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যে একমত পোষণ করে শুনানিতে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন।